হারামের উপায়ও হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হবে

শরীয়াহ’র নীতি (قاعِدَة) বলে-

إذا غلب على الظن أنها توصل إلى الحرام، فإن كان يُخشى أن توصل فلا تكون حراماً

“যদি নিছক পরিমাণ সন্দেহ প্রতিষ্টিত হত, যে এটি হারামের দিকে নির্দেশ করছে এমন হারামের উপায় নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। যদি শুধুমাত্র ভয়ের উদ্রেক হয় যে এটি হারামের দিকে নির্দেশ করে তাহলে এটি হারাম হবে না”

কুরআনে এই নীতিটির প্রমাণ পাওয়া যায়, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ

আল্লাহকে ছেড়ে যাদের তারা আরাধনা করে তাদেরকে তোমরা মন্দ বলো না। তাহলে তারা ধৃষ্টতায় অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে”। [সূরা আন-আম:১০৮]

কাফিরদের অপমান করা মুবাহ (অনুমোদিত) এবং আল্লাহ্‌ কুরআনে তাদেরকে অপমানিত করেছে। কিন্তু যদি এই অপমান আল্লাহ্‌কে অপমান করার দিকে কাফিরদের পরিচালিত করে, তাহলে তা করা হারাম। এটি এই কারণে যে আল্লাহ্‌কে অপমান করা হারাম। এবং এভাবেই শরীয়াহ নীতি প্রণীত হয়েছে, অর্থাৎ,

الوسيلة إلى الحرام محرمة

“হারামের উপায় নিষিদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়”।

যদিওবা হারামের উপায় অবধারিতরূপে হারামের দিকে পরিচালিত হলেই নিষিদ্ধ হয়। অর্থাৎ, যদি এমন উপায় যা হারামের দিকে নিছক পরিমাণ হারামের দিকে পরিচালিত করে, এবং তা শরীয়াহ নীতি দ্বারা প্রতিষ্টিত হয়, তখন এটি হারাম হবে। কাজেই, যদি হারামের দিকে পরিচালিত না করে, যেমন: যদি এটি শুধুমাত্র ভয়ের উদ্রেক হয় যে হারামের দিকে পরিচালিত করছে, অর্থাৎ মহিলাদের মুখ না ঢেকে বাহিরে যাওয়া এবং এ ভয় হয় যে এটা ফিতনা তৈরী করবে, এ ক্ষেত্রে হারাম হবেনা, কারণ কেবল ভয় হয় যে হারামের দিকে পরিচালিত করবে এমন বিষয় হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এটি এ মূলনীতির প্রমাণ।

আরেকটি একই রকম নীতি প্রযোজ্য হবে এভাবে, “যদি মুবাহ জিনিষের কোন সুনির্দিষ্ট উপকরণ হারামের দিকে পরিচালিত করে, ঐ সুনির্দিষ্ট উপকরণটি হারাম হবে কিন্তু জিনিষটি মুবাহ’ই থেকে যাবে”।

এটি বুখারী হতে বিবৃত নাফে’ হতে বর্ণিত, যিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমর তাকে বলেন:

أَنَّ النَّاسَ نَزَلُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْضَ ثَمُودَ الْحِجْرَ فَاسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا وَاعْتَجَنُوا بِهِ فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُهَرِيقُوا مَا اسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا وَأَنْ يَعْلِفُوا الْإِبِلَ الْعَجِينَ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْتَقُوا مِنْ الْبِئْرِ الَّتِي كَانَتْ تَرِدُهَا النَّاقَةُ

“কিছু লোক রাসূল (সা) এর সাথে ছামুদ আল হিজরে উপস্থিত হন, অতএব তারা ছামুদ আল হিজরের কূপ থেকে পানি নিল এবং তা দ্বারা খামির তৈরী করে নিল। রাসূল (সা) আদেশ দিলেন ঐ পানিগুলো ফেলে দিতে এবং খামিরগুলো পশুদের দিয়ে দিতে; এরপর তিনি পানি নিতে বললেন যেখান থেকে উষ্ট্রী পানি পান করত”

আরেকটি বর্ণনায় আসে, রাসূল (সা) বলেন: “এর কূপ থেকে কেউ পানি করবেনা এবং নামাযের ওযুর পানি হিসেবেও এটি কেউ ব্যবহার করবেনা, যে খামিরই এ পানি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে তা পশুদের দিয়ে দাও এবং এর কোন অংশ খাবেনা। কেউ রাতে সঙ্গীবিহীন একাকী বের হবেনা”।

পানি পান করা মুবাহ, কিন্তু ঐ নির্দিষ্ট পানিটি যেটি ছামুদের পানি তা রাসূল (সা) পান করতে নিষেধ করেন কারণ এটি হারামের দিকে পরিচালিত করে; তথাপি পানি মৌলিকভাবে মুবাহ’ই থেকে যায়। এছাড়াও রাতে কোন সঙ্গী ছাড়া বের হওয়া মুবাহ বিষয় কিন্তু রাসূল (সা) সৈন্যদের কেউ ঐ নির্দিষ্ট রাতে এবং ঐ নির্দিষ্ট জায়গায় একাকী সঙ্গীবিহীন যেতে নিষেধ করেন কারণ এটি হারামের দিকে পরিচালিত করে, অন্যথায়, সঙ্গীবিহীন রাতে বের হওয়া মুবাহ’ই থকে যায়। এটি প্রমাণ করে যে ঐ মুবাহ জিনিসের নির্দিষ্ট বিষয়টি হারাম হয় যদি তা হারামের দিকে পরিচালিত করে, এবং জিনিসটি সাধারণভাবে মুবাহ’ই থেকে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply