সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করা মুসলিমদের অন্যতম দায়িত্ব

সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করা মুসলিমদের অন্যতম দায়িত্ব। ইসলাম একজন মুসলিমকে কেবল কিছু ব্যক্তিগত ইবাদাতের দায়িত্ব দিয়ে ছেড়ে দেয়নি বরং সমাজের প্রতি তার দায়িত্বগুলোও সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। তাই যখন সমাজে ইসলাম থাকেনা বরং মানবরচিত শাসনব্যাবস্থার ফলাফল হিসেবে সমাজের সর্বত্র বৈষম্য, জুলুম, বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ে তখন এই সমাজ পরিবর্তন করে ইসলামিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ না করে একজন মুসলিমের চুপচাপ বসে থাকার অনুমতি নেই।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

তোমাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তি অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন তার মুখ দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে (ঘৃণার মাধ্যমে), আর এটা হলো দূর্বলতম ঈমান।(মুসলিম, তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেন:

যারা আল্লাহ’র হুকুম মেনে চলে আর যারা সেগুলোকে নিজের প্রবৃত্তির খেয়ালে লঙ্গন করে, (উভয়ে) যেন তাদের মত যারা একই জাহাজে আরোহণ করে। তাদের একাংশ জাহাজের উপরের তলায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে এবং অন্যরা এর নিচের তলায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। যখন নিচের লোকদের পিপাসা মেটানোর প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের অতিক্রম করে যেতে হয়। (তাই) তারা (নিচতলার লোকেরা) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল, ‘আমরা যদি জাহাজের নিচের দিকে একটা ফুটো করে নিই তাহলে জাহাজের উপরের তলার লোকদের কোন সমস্যা করবোনা।’ এখন যদি উপরের তলার লোকেরা নিচতলার লোকদেরকে একাজ করতে দেয় তবে নিশ্চিতভাবেই তারা ধংসপ্রাপ্ত হবে। আর তারা যদি তাদেরকে একাজ থেকে বিরত রাখে, (তবে) তারা (উপরতলা) রক্ষা পাবে এবং এভাবে (জাহাজের) সবাই রক্ষা পাবে।(বুখারী)

তাই কেউ ব্যক্তিগত ইবাদত ঠিকমতো চালিয়ে গেলো আর সমাজে যেসব অব্যাবস্থাপনা চলছে সে ব্যাপারে কিছু করলো না বা বলল না এটা কোন ইসলামী চিন্তা নয়। উপরোক্ত হাদীসদ্বয় থেকে এটা পরিষ্কার যে, সমাজে যখন জুলুম, অনাচার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে তখন ঐ সমাজে বসবাসরত মুসলিমদের জন্য ঐ সমাজের পরিবর্তন করার জন্য কাজ করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। আর এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না আসলে সবাই একসাথে শাস্তিযোগ্য হবে।

রাসূললুল্লাহ (সা) বলেন:

এক শহরের অধিবাসীদের উপর আল্লাহ তা’আলা শাস্তি প্রদান করেন। তাদের মধ্যে আঠারো হাজার লোক এমন ছিল যাদের আমল ছিল নবীদের আমলের সমতুল্য।” জিজ্ঞেস করা হলো। ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! কেন তবে তাদের উপর শাস্তি এসেছিল?’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: এই কারণে যে, (বাকিদের পাপ কাজ করতে দেখেও) তারা আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বাকিদের উপর ক্রুদ্দ্বহতো না এবং তাদেরকে (পাপ কাজ থেকে) বারণ করত না।

কায়েস ইবনে আবি হাযমের বরাত দিয়ে আবুদাউদে বর্ণিতঃ আল্লাহ’র প্রশংসা এবং গুণগান গাওয়ার পর আবু বকর(রা) বললেন,’হে মানুষ! তোমরা এই আয়াতটি পড় কিন্তু এর মর্মার্থ বোঝ না’, “হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের অন্তরকে পাহারা দাও; তোমরা যদি সঠিক পথে নিজেদের পরিচালিত করতে পার, তাহলে যারা বিপথে গেছে তারা তোমাদের ক্ষতি করতে পারবেনা।” (সূরা আল মায়িদাঃ ১০৫) আমি রাসূল(সা)-কে বলতা শুনেছি: যখন কোন জাতি পাপাচারে লিপ্ত হয় এবং কেউই তাদের প্রতিরোধ করেনা তখন আল্লাহ গোটা জাতির উপর শাস্তি নাযিল করেন যা তাদের সকলকে ছেয়ে ফেলে।(আবু দাউদ/৩৭৭৫)

রাসূলুল্লাহ (সা) এর পবিত্র সীরাতের দিকে তাকালে দেখা যায় তিনি এমন একটি সমাজে এসেছিলেন যা ছিলো পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন, সব ধরণের অন্যায়, অত্যাচার, অনাচারে পরিপূর্ণ। ওই সমাজের লোকেরা মিথ্যা ইলাহদের পূজা করতো, ওজনে কম দিতো, এতিম ও দাসদের অধিকার বঞ্চিত করতো, কথায় কথায় যুদ্ধ আর হানাহানিতে মেতে উঠতো ইত্যাদি। এমনি এক পরিস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদের সাথে নিয়ে ঐ সমাজকে পরিবর্তনের কাজে ঝাপিয়ে পড়েন এবং সমাজের এসব অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে সমাজকে ইসলামের দিকে জোরালোভাবে আহবান করেন। তিনি কেবল ব্যক্তিদেরকে সংশোধনে ব্যস্ত থাকেননি বরং পুরো সমাজ দেহটাকেই সুস্থ করার লক্ষ্যে সমাজের সব প্রচলিত মিথ্যা ধ্যান-ধারণা ও অনাচারের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন।
অতএব, তাঁর অনুসরণে আমাদেরকেও বর্তমান ধ্বংসন্মুখ সমাজকে পরিবর্তন করার কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply