মানুষ আর প্রাণীজগতের অন্য জন্তুগুলার মাঝে পার্থক্য কেবলই চিন্তা করিবার সামর্থ্যের উপর। প্রাণীকুলের চিন্তাশক্তি (intellect) না থাকায় ইহারা প্রবৃত্তি (instinct) দ্বারা পরিচালিত হয়। টিকিয়া থাকিবার প্রবৃত্তি তাহাদের ঐক্যবদ্ধ করে আর পারস্পরিক চাহিদা পূরণে দলবদ্ধভাবে শিকার করিয়া থাকে।
এই সময়ের রাষ্ট্রগুলা যেমন টিকিয়া থাকিবার প্রবণতা নামক জংলী নীতিতে গড়িয়া উঠিয়াছে, তেমনই মানুষের ঐক্যবদ্ধ হইবার যে বন্ধন তাহাও স্রেফ পারস্পরিক স্বার্থে। বস্তুগত লাভের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হইবার এই বন্ধনকে ডাকাতির বন্ধনও বলা যায়। কারণ ডাকাতগণ ডাকাতির মাল ভাগাভাগিতে খুব সততার পরিচয় দেয়। যদিও ইহাদের কর্মই অনৈতিক। এইখানে মুনাফাই নীতি, সর্বোচ্চ মুনাফাই বড় সাফল্য। আর এই নীতির আদর্শিক রূপকে আদর করিয়া পুঁজিবাদ নামে ডাকা হয়। যাহার রাষ্ট্রীয় শোষণ নীতির নাম হইল গণতন্ত্র।
এই রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি উপাদানের সহিত মুনাফা জড়িত। শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ, সংবাদপত্র, আইন রক্ষাকারী বাহিনী সবাই শীতের রাত্রিতে সারমেয় প্রজাতি যেমন খড়ের গাঁদা খুঁজিয়া নেয় তেমনই সুবিধা প্রদানকারী পক্ষ খুঁজিয়া নেয়। ইহারা মুনাফা অর্জনকারী যত দাবী আছে ঐগুলা নিয়া পড়িয়া থাকে এবং ইহাকেই গণদাবীরূপে উপস্থাপন করিবার প্রয়াস চালায়। যেমন করিয়া না খাইয়া মরা জনগণের প্রাণের দাবী কেয়ারটেকার সরকার বলিয়া একপক্ষ আবদার করে তো অপরপক্ষ শাসাইয়া কহে যুদ্ধাপরাধীর বিচার না করিলে এই জনগণ হার্ট অ্যাটাকে পটল তুলিবে।
এই ব্যবস্থার পরতে পরতে জংলী সৌন্দর্য প্রতিভাত হয়। গুলি করিয়া মারিবার ক্ষেত্রে যেমন মহামানবিক ধারাবাহিকতা, তেমনই শত খুনের অপরাধীকে ক্ষমা করিতে অমানবিক উদারতা। প্রতি পঞ্চবার্ষিক মেয়াদ শেষে ইহাদের নির্বাচন নামক শয়তানের আরাধনার আয়োজন করা হয় যাহার প্রস্তুতি হিসাবে কিছু মানব বলি দেওয়া লাগে পরাশক্তি নামক খোদাকে দেখাইতে যে আমরাই পরবর্তী মেয়াদে তোমার পূজার হকদার। শয়তানের কিছু প্রতিনিধি আছে যাহারা এই ব্যাপারগুলার দেখাশুনা করিয়া থাকে।
আবার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলাতেও পশুপাখির মত জংলী ঐক্য দেখা যায়। এই যেমন, কোন সাংবাদিক মরিল তো কেউ কিছু কহিবে না, খালি সাংবাদিকেরাই কাউয়াসদৃশ কা কা করিবে। পুলিশ মরিল তো কেবল পুলিশপ্রজাতি কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করিবে, নেতা মরিল তো কেবল তাহার দলের লোকজন শুয়োরের মত ঘোঁত ঘোঁত করিবে। আর আমজনতা হইল গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর মত। ইহারা মরিলে কিছু আসিবে যাইবে না। কেবল চিল, শকুনের মত কিছু লোক ছুটিয়া আসিবে এই লাশগুলা নিয়া কিভাবে ফায়দা হাসিল করা যায় এই নেক মকসূদ নিয়া।
তবুও আমরা আরেকটা নির্বাচনের আশায় বসিয়া থাকি। ভাবি এইবার কোন মহাত্মা আসিয়া আমাদিগকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাইবে। কিন্তু চিন্তা করিয়া দেখি না সমস্যা কোথায়। রাষ্ট্র চলিবে জঙ্গলের নীতিতে অথচ আশা করিতেছি এইখান থেকে মানুষ জন্মাইবে। যখন মানব সন্তান তাহার শ্রেষ্ঠত্ব যেই চিন্তা শক্তির কারনে তাহার ব্যবহার ব্যতিত শুধুমাত্র মুনাফার ভিত্তিতে জীবন চালাইবে তখন পরিণতি তো এইটাই হইবে। অথচ এই রাজনীতিবিদ, পুলিশ, বিচারক সব এই সমাজ হইতে জন্ম নিয়া এইখানেই বাড়িয়া উঠিয়াছেন। কিন্তু কুফর সিস্টেম তাহাদের রাক্ষসে পরিণত করিয়াছে। এইটা সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাহা কিছু মানুষকে আইন তৈরির খোদায়ী ক্ষমতা প্রদান করে। মজার ব্যাপার হইল ঐ আইন আবার তাহাদের উপরেও কার্যকর যাহারা ইহার স্রষ্টা। মানে এই যে, একজন মানুষ নামক সীমাবদ্ধ জীব তাহার এবং তাহারই মত অন্য মানুষের জন্য বিধান তৈরি করিবে অথচ সে নিজেই জানেনা তাহার উপযোগী বিধান কোনটা।
আজকে যখন এই সিস্টেমের মারপ্যাঁচে পড়িয়া পুরা জাতি এক গভীর সঙ্কটে। তখনও কিছু মাথাচেলা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি আলোচনার টেবিলে বসিয়া গণতন্ত্র আরও উত্তমরূপে চর্চা করিবার থিওরি কপচাইতে থাকেন। আর যখনই কেহ গণতন্ত্রের সমস্যা নিয়া কথা কহিতে যায় তাহাকে ইঙ্গ – মার্কিন পীরিতের দুশমন হিসাবে জঙ্গি ট্যাগ লাগাইয়া দেয়।
তাই যদি এখনও বুঝিবার সময় না আসে তবে অতি শীঘ্রই আমাদিগকে জঙ্গল যাত্রা করিতে হইবে আদৌ যদি সিস্টেমের চাপ সহ্য করিয়া টিকিতে পারি আরকি। আমাদের প্রত্যাবর্তন যদি ইসলামের দিকে হয়, তবে মহান খিলাফাহর আগমন শুনিব অতি শীঘ্রই ইনশাল্লাহ। অন্যথায়, জঙ্গলযাত্রা শুভহোক। ফি আমানিল্লাহ!!!!!!!!
আবদুর রহমান