বর্তমানে মার্কিন-ব্রিটিশ-ভারতের তাবেদার শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে একের পর এক বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছে তাতে করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। ক্ষমতায় আসার পর এ সরকার কর্তৃক পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হার এখন র্পযন্ত ২.৩৪ থেকে ৫.৬১ যা দিগুনেরও বেশি। এবার আরো একধাপ এগিয়ে ৩০ শতাংশ হারে দাম বাড়লে এ মূল্য দাঁড়াবে ৭.২৯ টাকায় যা প্রায় তিনগুন। শহরাঞ্চলের আবাসিক গ্রাহকরা যদি ৪০০ ইউনিটের মধ্যে ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন তাহলে ৩৫ শতাংশ হারে দাম বাড়লে প্রতি ইউনিটের জন্য তাদের গুণতে হবে ৫.৭৯ টাকা। আর ৪০০ ইউনিট কোনোভাবে পার হয়ে গেলে প্রতি ইউনিটের জন্য দিতে হবে ১০.৬১ টাকা। যা আসলে বিশাল এক জুলুম।
অনুসন্ধানে দেখা যায় পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় সবগুলোকে একত্রিত করে গড় করলে এর প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ১.৭০ টাকা। সঞ্চালন ও অন্যান্য সব মিলিয়ে গ্রাহক র্পযায়ে যেতে প্রতি ইউনিটের মূল্য শেষ র্পযন্ত ২.৭০ টাকায় পৌঁছায়। অথচ আইপিপি (Independent Power Producer) খাত থেকে প্রতি ইউনিট ৪.৫০ টাকা, আর ভাড়াভত্তিকি (Quick rental) বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এক ইউনিট ১২ টাকা দামেও বিদ্যুৎ কিনছে সরকার। তাহলে কার স্বার্থে সরকার কম মূল্যে বিদ্যুৎ না কিনে ভাড়াভত্তিকি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১২ টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনছে।
কারণ দেশের গ্যাস বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে সেই গ্যাস বেশি দামে কিনছে সরকার এতে বিদ্যুতের দাম যাচ্ছে বেড়ে। আইপিপি এবং ভাড়াভত্তিকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মালিক হল বিদেশী কোম্পানি এবং সরকারের দেশী আত্মীয়স্বজনদের কোম্পানি যাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সরকার জনগণের সম্পদ দিয়ে নিজেদের পকেট ভর্তি করছে। যেমন: সামিটগ্রুপ, ওরিয়নগ্রুপ, লং কিং, ভারতীয় এনটিপিসি, কোয়ান্টাম পাওয়ার লিঃ (অটবি লিঃ এর প্রতিষ্ঠান) ইত্যাদি। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা কর ও বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে এদের পকেটে।
আজ এই দালাল সরকার গুলো উম্মাহর সম্পদকে লুটেপুটে খাওয়া এবং সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিতে পারার মূল কারণ হল এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে মানুষের সার্বভৌমত্ব ও স্বেচ্ছাচারিতা হল শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এই ব্যবস্থায় ক্ষমতা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে সীমাবদ্ধ আর এই ক্ষমতাবানরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। তারা ইচ্ছামত নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে আইন তৈরী করতে পারে অথচ নিজেরা থাকে সকল আইনের উর্ধে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী জনগণের দায়িত্ব কাঁধে নেয়না। তারা ক্ষমতার রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য এবং জাতিকে দরিদ্র করে হলেও নিজেদের পকেট ভর্তি করতে সবসময় ব্যস্ত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকদেরকে কারো কাছে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। কারো কাছে তারা দায়বদ্ধ নয়। অর্থাৎ তাদের অবাধ ও নিরংকুশ ক্ষমতা আছে কিন্তু কোন দায়বদ্ধতা নেই।
খিলাফতই পারে এ সমস্ত সমস্যার মূলোৎপাটন করতে কারণ এটা হচ্ছে আমাদের স্রষ্টা, বিশ্বজাহানের মালিক, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক নাযিলকৃত ও মনোনিত একমাত্র ব্যবস্থা। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা। [সূরা নাহল : ৮৯]
তাই ইসলামে সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান (খলীফা) নিজে কোন আইন তৈরী করতে পারবেন না, তাই তাঁর স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হবার কোন সুযোগ নেই। খলীফা আল্লাহ্র প্রতি ভয় ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে দেশ শাসন করবেন। এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জনগণ তথা মুসলিম ও অমুসলিম সকল নাগরিকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
খিলাফত সরকারের বিদ্যুৎ নীতিমালা:
ইসলামি রাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে তার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে তবে ব্যক্তি বিদ্যুৎ বিপণনের জন্য উৎপাদন করতে পারবে না। কারণ তাহলে তা গণ-মালকিানাধীন সম্পদে পরণিত হয়। শরীয়াহ নীতি হচ্ছে,
উৎপাদনের নীতি নির্ধারিত হয় যা উৎপাদিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে।
যেমন: রাসুল (সা) মদের কারনে মদের উৎপাদনকে নিষিদ্ধ করেছেন।
রাসুল (সা) বলেন,
তিন জিনিসের মাঝে সকল মানুষ শরীক । এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারন ভুমি) ও আগুন।
এখানে আগুনের সাথে সামাঞ্জস্য র্পূণ যে কোন জিনিস যেমন: জ্বালানি, তাপ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে বিদ্যুতের উৎপাদন গণ-মালিকানাধীন সম্পদের মাঝে পরে।
এমন সম্পত্তি যা তার স্বাভাবিক সৃষ্টিগত কারনেই ব্যক্তি মালিকানার কবজায় যাওয়ার উপযুক্ত নয়। যেমন: নদী, বড় ময়দান, মহা সড়ক ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে রাসূল (সা) বলনে,
যে আগে আসে আমার দিক থেকে পরিবেশ তার অনুকুলে (র্অথাৎ আগে আসলে আগে পাবে)।
রাসুল (সা) বলনে,
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ছাড়া চারণ ভুমি আর কারো নয়।
তাই বিদুৎ বিপননের জন্য ব্যবহারিত খুঁটি, তার যা কিনা গণ-মালিকানাধীন সম্পদের উপর স্থাপিত হওয়ার কারনে গন-মালিকানাধীন সম্পদে পরিনত হয়।
নদী, জলপ্রপাত, লেক ইত্যাদি যত গন-মালিকানাধীন সম্পদ হতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গণ-মালিকানা সম্পদের হুকুমের মাঝে পড়ে।
যেহেতু গণ-মালিকানাধীন সম্পদে সকল জনগণের হক রয়েছে তাই খলীফা,
১। সকল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসবেন।
২। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন যাতে সকল মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারেন।
৩। জনগণকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবেন এবং বিদ্যুৎ খাত হতে আয়ের অর্থ জনকল্যাণ মুলক কাজে ব্যয় করবেন।
একমাত্র আল্লাহর দেয়া এই বিধানই আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রান দিতে পারে তাই আমাদের উচিৎ সেই খিলাফত ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যা দুনিয়াতে কল্যান নিয়ে আসবে। খিলাফত কায়েমের মাধ্যমেই আমাদের দূরবস্থার পরিসমাপ্তি সম্ভব, নতুবা যুগ যুগ ধরে এ মূল্যবৃদ্ধির ভোগান্তি আমাদের বয়ে যেতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলনে,
যে আমার বাণী (কুরআন) প্রত্যাখ্যান করবে তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে পুনরুথান দিবসে অন্ধভাবে তুলবো। [সুরা তোয়াহা-১২৪]
এন. মুহাম্মদ
সেপ্টেম্বর ২০১২