চিন্তা ও জাতিসমূহের অগ্রাধিকার

আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া একটি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। কিন্ত বাস্তবে আমরা এরূপ বলতে শুনি না। বরং একটি জাতির প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ, তার দক্ষ মানবসম্পদ, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি ইত্যদিকে উন্নয়নের নিয়ামক মনে করা হয়। আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া একটি জাতিকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন করে, সঠিক পূর্ণজাগরণ সুনিশ্চিত করে এবং সঠিক ও টেকসই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় যে, দক্ষ মানবসম্পদ, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রগতি জাতির আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ফল। আবার আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া না থাকলে প্রচুর প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদ থাকলেও সে জাতি পৃথিবীর সর্বাধিক অধপতিত অবস্থায় উপনীত হতে পারে।

উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া বা আদর্শিক আদর্শিক চিন্তা সব জাতির মধ্যে না থাকলেও মূলত: চিন্তাই একজন ব্যক্তির মত জাতিরও কর্মকান্ডের পরিচায়ক অথবা জাতির কর্মকান্ডে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে। বিভিন্ন জাতিসমূহের দিকে অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখলে আমরা এ বিষয়টি খুব সহজে বুঝতে পারব। যেমন: চীনাদের আত্মরক্ষামূলক মানসিকতাই তাদের চারপাশে মহাপ্রাচীর তৈরি করতে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। যদিও এরকম বলা হয়ে থাকে, যে খরচ, আয়োজন ও সময় নিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে তার চেয়ে কম প্রচেষ্টায় তারা শত্রুকে পরাজিত এবং চীনের আশেপাশের দেশসমূহ দখল করে রাষ্ট্রের আয়তন বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সুসংহত করতে পারত। অপরদিকে এই চিন্তার কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার কোটি কোটি মানুষকে অভূক্ত রেখে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার ও মহাকাশ গবেষণায় বিলিয়ন বিলিয়ন রুবল খরচ করেছে। পাকভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল যখন একে একে বৃটিশদের উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে তখন মোঘল সম্রাট শাহজাহান তখন তাজমহল ণির্মানে ব্যস্ত। একধরনের অনাদর্শিক অবনতিশীল চিন্তার কারণে বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের শাসকগণ কোটি কোটি মুসলিম আবাল বৃদ্ধ বণিতাকে অভূক্ত রেখে কেউ বা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাংকে পাচার করছে, আবার কেউ সুরম্য অট্টালিকা, শপিং মল, নাইটক্লাব, ক্যাসিনো, ফাইভ স্টার, সেভেন স্টার হোটেল নির্মাণ করে সেবা খাতের বিকাশ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশের মত একটি দেশে এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিং মল কিংবা ক্রিকেট খেলার পেছনে শত শত কোটি টাকা অথবা ঢাকার রাস্তার সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে যখন এদেশের অধিকাংশ মানুষ দু’বেলা পেট পুড়ে খেতে পায় না, যখন শতকরা ৪৭ ভাগ শিক্ষিত তরুণ বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে টারজান বা কলম্বাস ভিসায় সোনার বাংলা ছেড়ে অবৈধভাবে পাড়ি জমাতে গিয়ে মরুভূমি বা সমুদ্রে ভাসমান দিনের পর দিন, যখন ইউরোপমুখী অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশীরা সর্বাধিক।

খোলাফায়ে রাশেদীনদের মধ্যে আমরা আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া লক্ষ্য করি এবং সে কারণে তারা দ্বিধাহীনভাবে আদর্শিক অগ্রাধিকারও নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন। যখন উমর (রা) কে বলা হল, কাবা শরীফের গিলাফগুলোকে নবায়ন করতে হবে; তখন তিনি বললেন, এর চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম শিশুদের উদরসমূহ পূর্ণ করা। যখন উম্মাহ’র শাসক, আলেমগণ ও জনগন আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুত হল তখন এর পতন ত্বরান্বিত হল। আরবী ভাষা নয় নিজ নিজ মাতৃভাষায় ইসলাম বুঝতে যাওয়া, ইজতিহাদ বন্ধ করা, জিহাদ বন্ধ করা ইত্যাদি কর্মকান্ডই আদর্শিক চিন্তা থেকে বিচ্যুতির পরিচায়ক। সেকারণে উম্মাহ’র সন্তানদের আদর্শিক চিন্তা ও উৎপাদনমুখী চিন্তা প্রক্রিয়ায় সমৃদ্ধ হতে হবে।

রাফীম আহমেদ

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply