নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ তাকী উদ্দীন আন-নাবহানি (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক লিখিত ‘আদ-দাওলাতুল ইসলামীয়্যাহ’ (ইসলামী রাষ্ট্র) বইটির খসড়া অনুবাদ-এর একাংশ হতে নেয়া হয়েছে
দাওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে রাসুল (সা) যাদের মাঝেই ইসলাম গ্রহণ করার মতো মনমানসিকতা লক্ষ্য করতেন, জাতি, বর্ণ, বয়স, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি ভেদাভেদে তাদের কাছেই তাঁর এ আহবান পৌঁছে দিতেন। তিনি কখনো তাঁর নির্বাচিত কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে দ্বীনের আহবান পৌঁছে দেননি বরং সকল শ্রেনীর মানুষকে তিনি সমান ভাবে ইসলামের দিকে আহবান করেছেন এবং তারপর ইসলাম গ্রহণে তাদের মনমানসিকতা বিচারে সমর্থ হয়েছেন। এভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঈমান আনে এবং ইসলাম গ্রহণ করে।
নও মুসলিমদের পরিপূর্ণ ভাবে দ্বীন এবং কুরআন শিক্ষা দেবার ব্যাপারে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন থাকতেন। তিনি তাঁর সাহাবীদের মধ্য হতে একটি দল তৈরী করেন যারা পরবর্তীতে দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এ দলে নারী-পুরুষ সহ মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চল্লিশ জনে উন্নীত হয়। যদিও এরা ছিল বিভিন্ন বয়সের কিন্তু এদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই ছিল বেশী। এদের মধ্যে ছিল ধনী, গরীব, সবল এবং দূর্বল সবধরনের মানুষ।
মুসলিমদের এদলটি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভাবে ঈমান এনেছিল এবং এরাই মূলতঃ দাওয়াতের কার্য পরিচালনা করেছিল। এরা হলোঃ
১. ‘আলী ইবন আবু তালিব (৮ বছর)
২. যুবাইর ইবন আল ‘আওওয়াম ( ৮ বছর)
৩. তালহাহ্ ইবন আল ‘উবাইদুল্লাহ্ (১১ বছর)
৪. আল আরকাম ইবন আবি আল আরকাম (১২ বছর)
৫. ‘আব্দুল্লাহ্ বিন মাস’উদ (১৪ বছর)
৬. সাঈদ ইবন যায়িদ (বিশ বছরের নীচে)
৭. সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (১৭ বছর)
৮. সা’উদ ইবন রবি’য়াহ্ (১৭ বছর)
৯. জা’ফর ইবন আবি তালিব (১৮ বছর)
১০. শুহাইব আল রুমি (বিশ বছরের নীচে )
১১. যায়িদ ইবন হারিছা (প্রায় বিশ)
১২. ‘উছমান বিন ‘আফফান (প্রায় বিশ)
১৩. তুলাইব বিন ‘উমায়ির (প্রায় বিশ)
১৪. খাব্বাব ইবন আল আরাত (প্রায় বিশ)
১৫. ‘আমির ইবন ফুহাইরাহ (২৩ বছর)
১৬. মুসআব ইবন উমায়ির (২৪ বছর)
১৭. আল মিকদাদ ইবন আল আসওয়াদ (২৪ বছর)
১৮. ‘আব্দুলাহ ইবন জাহস (২৫ বছর)
১৯. ‘উমর ইবন আল খাত্তাব (২৬ বছর)
২০. আবু উবাইদাহ ইবন আল জাররাহ (২৭ বছর)
২১. ‘উতবাহ ইবন গাজওয়ান (২৭ বছর)
২২. আবু হুদাইফাহ ইবন ‘উতবাহ (৩০ বছর)
২৩. বিলাল ইবন রাবাহ (প্রায় ৩০ বছর)
২৪. ‘আইইয়াস ইবন রাবি’আহ (প্রায় ৩০ বছর)
২৫. ‘আমির ইবন রাবি’আহ (প্রায় ৩০ বছর)
২৬. না’ইম ইবন ‘আব্দুলাহ (প্রায় ৩০ বছর)
২৭. ‘উছমান (৩০ বছর) এবং
২৮. ‘আব্দুলাহ (১৭ বছর) এবং
২৯. কুদামাহ্ (১৯ বছর) এবং
৩০. আল সাইব (প্রায় ২০, এরা সবাই মাজ’য়ুন ইবন হাবিব এর চার ছেলে)
৩১. আবু সালামাহ ‘আব্দুলাহ ইবন ‘আবদ আল আসাদ আল মাখযুমি (প্রায় ৩০ বছর)
৩২. ‘আবদ আর রাহমান ইবন ‘আওফ (প্রায় ৩০ বছর)
৩৩. ‘আম্মার ইবন ইয়াসির (৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে)
৩৪. আবু বকর আল সিদ্দিক (৩৭ বছর)
৩৫. হামজাহ্ ইবন ‘আবদ আল মুত্তালিব (৪২ বছর)
৩৬. ‘উবাইদাহ ইবন আল হারিছ (৫০বছর)
কিছু সংখ্যক মহিলাও এদের সাথে ইসলাম গ্রহণ করে।
তিন বছর পর এ সকল সাহাবাদের হৃদয় এবং অন্তর যখন পুরোপুরি ইসলামের আদর্শ এবং ধ্যান-ধারনার ভিত্তিতে পরিপূর্ণতা লাভ করে তখন মুহাম্মদ (সা) আশ্বস্ত বোধ করেন। তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হন যে, তাদের হৃদয়ে ইসলাম গভীর ভাবে প্রোথিত হয়েছে এবং ইসলামি আকীদার ভিত্তিতে তারা উচ্চমান সম্পন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, এই দলের অর্ন্তভূক্ত মুসলিমরা যখন সমাজের মানুষকে মুকাবিলা করার জন্য যথাযথ যোগ্যতা এবং দৃঢ়তা অর্জন করে তখন আল্লাহর রাসুল (সা) দুশ্চিন্তা মুক্ত হন এবং আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কুরাইশদের মুকাবিলায় মুসলিমদের নেতৃত্ব দেন।