বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুৃম… আমাদের শাইখ… যে বলে যে, “আমরা ক্ষমতা অর্জন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে আল্লাহর রাসুল (সা) এর পদ্ধতি অনুসরণে বাধ্য নই” তার জন্য আমাকে কি যথার্থ উত্তর দিতে পারেন?
উত্তর: ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, সংক্ষেপে যথার্থ উত্তর হলো: যিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতা অর্জন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে আল্লাহর রাসুল (সা) এর পদ্ধতি অনুসরণে বাধ্য নই” উনাকে জিজ্ঞেস করেন: উনি ওযু করার জন্য কোন ধরণের দলীল-প্রমাণের সাহায্য নিবেন? ওযু সংক্রান্ত প্রমাণাদিই নিবেন না? নাকি হজ্জ্বের মাসলা মাসায়েল খু্ঁজবেন? তিনি উত্তর দিবেন যে, তিনি ওযুর দলীল-প্রমান চাইবেন।
তারপর জিজ্ঞেস করুন যে তিনি কি সিয়ামের নিয়ম জানতে সিয়াম সংক্রান্ত দলীল নিবেন? নাকি কি করে রোযা রাখতে হয় তা জানতে জিহাদের মাসআলা খুঁজবেন? তিনি উত্তর দিবেন যে তিনি সিয়ামের জন্য সিয়ামের দলীলই চাইবেন।
এরপর উনাকে জিজ্ঞেস করেন যে, এটা কি সঠিক নয় যে তিনি সালাতের ব্যাপারে জানতে সালাতের মাসআলাই তালাশ করবেন? নাকি যাকাতের দলীলপ্রমাণ খুঁজবেন? তিনি জবাব দিবেন যে, তিনি সালাতের দলীল-প্রমাণই চাইবেন। মোটকথা, এটাই পরিষ্কার যে তিনি যে কোন ইস্যুতে ঠিক ঐ বিষয়েরই শরয়ী দলীল-প্রমাণ চাইবেন।
এবার, তাকে বলুন যে, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কি তিনি রাসূল (সা) কিভাবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন এ বিষয়ে শরয়ী দলীল চাইবেন না? উদাহরণস্বরূপ, তিনি তো এ বিষয়ে জিহাদ, সালাত বা সিয়ামের দলীল খুঁজবেন না, বরং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত দলীল খুঁজবেন এবং আল্লাহর রাসূল (সা) একবারই রাজনৈতিক সংগ্রামের ধাপে এসে নুসরাহ অন্বেষণের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এতদর্থে, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হলো নুসরাহ তালাশ।
এখন প্রশ্ন হলো, নুসরাহ তালাশ কি ফরজ (অবশ্য পালনীয়), মানদুব (যেসব কাজে উৎসাহিত করা হয়েছে), কিংবা মুবাহ (যা অনুমতি প্রদানকৃত)? যদি নুসরাহ তালাশ ফরজ হয় তবে আমরা এই পদ্ধতিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ করতে বাধ্য, এ বিষয়ে অধ্যয়ন করে আমরা পাই: নুসরাহ তালাশ ফরজ, এটার প্রমাণ হলো আল্লাহর রাসুল (সা) উনার পদ্ধতি পরিবর্তন করেননি এমনকি চরম নির্যাতনের সময়েও। তিনি এটা তালাশ করেছেন বনু সাকিফের কাছে এবং তারা অত্যন্ত নিষ্ঠুর জবাব দিয়েছে উনার পা রক্তাক্ত করার মাধ্যমে… তবুও আল্লাহর রাসুল (সা) অন্য কোন পদ্ধতি গ্রহণ করেন নাই, বরং তিনি বিরামহীন নুসরাহ তালাশ করতে থাকেন গোত্রসমূহের কাছে। আশানুরূপ সাড়া না পেয়েও উনি বনু শায়বান, বনু আমেরসহ অন্যান্য গোত্রের নিকট নুসরাহ চেয়েছেন এবং বারবার চেয়েছেন। এত কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি পদ্ধতি পরিবর্তন করেন নাই।
উসুল আল ফিকহর প্রতিষ্ঠিত নীতি অনুযায়ী, কোন কাজ করতে গিয়ে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও বারবার তা করা ঐ কাজের ফরজ হওয়া নির্দেশ করে। অতএব, নুসরাহ তালাশ ফরজ এবং এটা আল্লাহর রাসূল (সা) অনুসৃত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র পদ্ধতি এবং তিনি এটা জারি রাখেন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা দ্বিতীয় আকাবার বায়’আতে আনসারদের বায়’আত (পূর্ণ আনুগত্য বা আনুগত্যের শপথ) প্রদানের মাধ্যমে উনাকে সম্মানিত করেন, তারপরই উনি (সা) মদীনায় হিজরতপূর্বক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই হৃদয়বান, শ্রোতা ও সাক্ষ্যদাতাদের জন্য সংক্ষিপ্ত উত্তর এবং এটাই গোঁড়া ও একগুঁয়েদের তর্কের উপযুক্ত জবাব। কারণ সে তো ওযু, সালাত আর সিয়ামের মাস’আলা নিয়েই সন্তুষ্ট যাতে সে কেবল এগুলোই করতে পারে এবং সে এমন কোন কাজের দলীল চায় না যা সে করতে রাজি নয় যদি তা তার জন্য ফরজ। যদি সে সূস্থ মস্তিষ্কের হয় তবে সে অবশ্যই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত দলীল প্রমাণ ব্যতিত সন্তুষ্ট হবে না, যদি সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজ করতে চায়। এই একটি দলীল প্রমাণই আছে যা আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদের দেখিয়েছেন উনার বানী ও কর্মের মাধ্যমে তা হলো নুসরাহ তালাশ। যা তিনি দাওয়ার রাজনৈতিক সংগ্রাম পর্যায়ের শেষের দিকে করেছিলেন। এটাই সংক্ষিপ্ত, যথার্থ ও পর্যাপ্ত উত্তর যে পদ্ধতি আমরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করি। পরিশেষে, আপনাকে সালাম এবং আল্লাহ যেন আপনার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন।
মূল: শায়খ আতা ইবন খলীল আবু রাশতা কর্তৃক এক প্রশ্নোত্তর
উৎস: ইংরেজি আরবী