কিছু মুসলিম বলে যে, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার কাজের বাধ্যবাধকতা কেবলমাত্র শাসক ও তাদের পারিষদবর্গকে আহবানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত

মালা’আ হল একটি জনগোষ্ঠীর প্রধান। তাদের হাতে জনগনের সব বিষয় থাকে এবং তারা সব সময় শাসকদের চারপাশে থাকে। যদি তাদের ক্ষেত্রে দাওয়াত সফল হয় তাহলে ইসলামের সুবিধা হবে, সমাজকে সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। যে বিষয়টি দাওয়াত কেবলমাত্র শাসকশ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবার উপলদ্ধি তৈরি করেছে তা হল, সাধারণ জনগনকে দাওয়াত প্রদান করবার মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজ করা শুরু করলে তা তাদের জন্য শাসক কতৃক লাঞ্চণা বয়ে নিয়ে আসবে। তারা এমন বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়ে যাবে, যা বহনে তারা অক্ষম এবং মুসলিমদের এ অবস্থায় পর্যবসিত হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

‘মুসলিমদের নিজেদের অবমানিত করা উচিত নয়।’ যখন তাঁকে (সা) জিজ্ঞেস করা হল, ‘কীভাবে একজন নিজেকে অবমানিত করে?’ তিনি (সা) বলেন, ‘নিজেকে এমন ক্লেশের মধ্যে ঠেলে দিয়ে যা বহনে সে অক্ষম।’
(আহমেদ, তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ)

কেউ যদি যে পরিবেশে সমাজ পরিবর্তনের দাওয়াতের উত্থান ঘটে সে বাস্তবতা অধ্যয়ন করে, তাহলে দেখতে পাবে যে, তা এমন একটা সময়ে হয় যখন সমাজে থাকে অবিচার, নৈতিক অবক্ষয়, ধ্বংস, দূর্দশা এবং প্রতিকূলতা। সমাজে এসবই হয়ে থাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ও তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি ঈমানের অভাবের কারনে, এজন্য অতীতে নবীরা এবং আমাদের মহান রাসূল (সা) প্রথমেই দাওয়াত দিতেন ঈমান ও আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ইবাদতের প্রতি।  

অতীতে এবং আজকেও সমাজ শাসক ও তাদের পারিষদবর্গের দ্বারা পরিচালিত হয়। তারা নিজের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মনগড়া আইন ও মিথ্যা আক্বীদাভিত্তিক চিন্তা ধারণ করে। নিজের স্বার্থ ও সামাজিক মর্যাদার জন্য তারা এসব মিথ্যা বিশ্বাসকে রক্ষা করে। এ কারণে ইসলামের দাওয়াতের কথা প্রথমবার শুনবার পর একজন বিচক্ষণ বেদুইন নিম্নের গভীর ও সঠিক মন্তব্যটি করেছিল যে,‘অবশ্যই এটা এমন একটি বিষয় যা শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ার কারণ।’ সমাজের লোকেরা নিজেদের সমাজের শাসক ও তাদের পারিষদগবর্গের কাছে সমর্পন করে। একটি প্রতিক্রিয়া তৈরির বদলে তারা প্রভাবিত হয়। ঘৃণা করা সত্তেও তারা তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য করে। কারণ তারা জানে শাসকদের এ অবিচারের মূলোৎপাটন করা সহজসাধ্য নয়।    

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যখন কোন নবী বা রাসূল প্রেরণ করেন তা হয় তাদের লোকদের সত্য পথ নির্দেশ করবার জন্য। যারা এ ব্যাপারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং নবী রাসূলদের বিপক্ষে অবস্থান নেয় তারা হল এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ শাসক ও তাদের পারিষদবর্গ। মালা’আ গণ শাসকদের সাহায্যকারী। তারা স্বার্থলিপ্সু, ধনী ও অমিতব্যয়ী। তারা জনগনের নেতা ও প্রধান যারা শাসকদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাহক হয়ে উঠে। শাসকগণ তাদের উপর নির্ভর করে ও সাহায্য প্রার্থনা করে। তারা এমনসব লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন যে, যারা আল্লাহর নবীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তাদের মধ্যে তারা সম্মুখে থাকবে। কারণ তাদের হৃদয় টাকা ও পদমর্যাদার প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এবং স্বার্থের সাথে তাদের পদমর্যাদা সম্পর্কিত। সেকারণে যখনই আল্লাহসুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি দাওয়াতের কথা আসে তখনই তারা চিন্তা করে যে, এটা তাদের স্বার্থ ও পদমর্যাদার পথে অন্তরায়। তারা দাওয়াতের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং শাসকদের দাওয়াতকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও নির্মূল করতে প্ররোচিত করে। পাপ ও পঙ্কিলতার কারনে শাসক তাদের উপদেশ গ্রহণ করে। এ কারণে অবধারিতভাবে আল্লাহর নবীগণ ও মা’লার পাশে থাকা শাসকদের সাথে সংঘাত হয়েছে। আল্লাহর নবী, শাসক ও তাদের পারিষদবর্গদের মধ্যে সাধারণ লোকদের হৃদয় জয় করবার জন্য রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টার প্রতিযোগিতা হত। নবীগণ সত্য দিয়ে লোকদের আহ্বান করতেন। কিন্তু তারা ছিলেন দূর্বল, অরক্ষিত। কেবলমাত্র সত্য উচ্চারণের ক্ষমতা দিয়ে মানুষের হৃদয় মন জয় করে নিয়েছিলেন। শাসক ও তাদের পারিষদবর্গ প্রথমদিকে এ আহ্বানের বিরুদ্ধে অসত্য যুক্তি উপস্থাপন করে বলত এগুলো জাদুকরী মন্ত্র, পৌরাণিক গল্প, সত্য ধারণকারীরা মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসীরা বোকা অথবা হীন মানসিকতাসম্পন্ন। যখন এ পদ্ধতি কাজ না করত তখন নির্যাতন, বিতাড়ন, গ্রেফতার ও হত্যার পথ বেছে নেয়া হত। নবী ও তাঁর অনুসারীদের সাথে শাসক, তাদের পারিষদবর্গ ও রাজার ধর্ম অনুসারীদের মধ্যে সর্বাত্নক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। কুরআন বারংবার এ বিষয়টিকে একটি আইন বলে উল্লেখ করেছে।

সেকারণে আমরা দেখতে পাই যে, সাইয়্যিদিনা নুহ (আ) যখন লোকদের দাওয়াত দিচ্ছিলেন তখন সর্বপ্রথম বাধা এসেছিল এই পারিষদবর্গের কাছ থেকে। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘নিশ্চয় আমি নুহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহ্‌র এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি। তার সম্প্রদায়ের সর্দাররা বলল: আমরা তোমাকে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতার মাঝে দেখতে পাচ্ছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, আমি কখনও ভ্রান্ত নই; কিন্তু আমি বিশ্ব প্রতিপালকের রাসূল।’
(সূরা আ’রাফ: ৫৯-৬১)

সাইয়্যিদিনা হুদ (আ) তার কওম আ’দকে আহ্বান করেছিলেন। লোকদের মধ্যে নেতাগন সর্বপ্রথম এ দাওয়াতকে প্রত্যাখান করেছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বলল:  হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহ্‌র এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তার সম্প্রদায়ের সর্দাররা বলল: আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।’
(সূরা আ’রাফ: ৬৫-৬৬)

সাইয়্যিদিনা সালেহ (আ) তার কওম সামুদকে আহ্বান করেছিলেন। লোকদের মধ্যে নেতাগন সর্বপ্রথম এ দাওয়াতকে প্রত্যাখান করেছিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহ্‌র এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই……।’
(সূরা আ’রাফ: ৭৩)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরও বলেন,

‘তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা ঈমানদার দরিদ্রদেরকে জিজ্ঞেস করল: তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, সালেহকে তার প্রতিপালক প্রেরণ করেছেন? তারা বলল: আমরা তো তার আনীত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী। দাম্ভিকরা বলল: তোমরা যে বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আমরা তাতে অস্বীকৃত।’
(সূরা আ’রাফ: ৭৫-৭৬)

একইভাবে সাইয়্যিদিনা শোয়াইব (আ) মাদাইনের লোদের যখন আহ্বান করেছিলেন তখন নেতৃস্থানীয় লোকেরা অত্যন্ত ঔদ্ধ্যতের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, 

‘আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বলল: হে আমার সম্প্রদায়। তোমরা আল্লাহ্‌র এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নাই…।’
(সূরা আ’রাফ: ৮৫)

এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা বলল: হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে শহর থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করবে।’
(সূরা আ’রাফ: ৮৮)

যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সাইয়্যিদিনা মুসা (আ) কে ফিরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে প্রেরণ করলেন, তখন তারা তাকে প্রত্যাখান করল ও মুসার সঙ্গীদের ভয় পেল এবং তাঁকে হত্যা করবার জন্য পরামর্শ দিল। এ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

‘অতঃপর আমি তাদের পরে মূসাকে পাঠিয়েছি নিদর্শনাবলি দিয়ে ফেরাউন ও তার সভাসদদের নিকট। বস্তুত ওরা তার মোকাবেলায় কুফরী করেছে। সুতরাং চেয়ে দেখ, কি পরিণতি হয়েছে অনাচারীদের।’
(সূরা আ’রাফ: ১০৩)

এবং আল্লাহ বলেন,

‘ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ যাদুকর।’
(সূরা আ’রাফ: ১০৯)

‘ফেরাউনের সম্প্রদায়ের সর্দাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈচৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য।’
(সূরা আ’রাফ: ১২৭) 

‘আর কেউ ঈমান আনল না মূসার প্রতি তার কওমের কতিপয় বালক ছাড়া ফেরাউন ও তার সর্দারদের ভয়ে যে, এরা না আবার কোন বিপদে ফেলে দেয়। ফেরাউন দেশময় কর্তৃত্বের শিখরে আরোহণ করেছিল। আর সে তার হাত ছেড়ে রেখেছিল।’
(সূরা ইউনুস: ৮৩)

রাসূলুল্লাহ (সা) এর সীরাত অন্যান্য নবী রাসূল (সা) এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু ছিল না। দাওয়াতের গতিকে মন্থর এবং লোকদের দাওয়াত শোনা ও গ্রহণের ব্যাপারে বিতস্পৃহ করবার জন্য ব্যাপক নির্যাতন ও বিশ্বাসীদের উপর অত্যাচার চালানো হয়। বিশ্বাসীরা ভাবত ঈমানের জন্য নিজের লোকদের দ্বারা অত্যাচারিত হতে হবে। যে বিশ্বাস স্থাপন করতে চাইত সে ভেবে নিত যে, পূর্বের বিশ্বাসীদের মতই তার অবস্থাও করুণ হবে। বিশ্বাসী ও মা’লা নেতৃত্বাধীন তাদের অনুসারীদের মধ্যকার বিবাদ পর্যায়ক্রমিক সফলতার মাধ্যমে চলত। অতপর একসময় তাগুতের পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেল। পরবতীর্তে দাওয়াত বহনকারীরা ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরে।

ইবনে মাসঊদের বরাত গিয়ে সহীহ বুখারীতে বলা হয়েছে: 

‘যখন রাসূলুল্লাহ (সা) সিজদারত অবস্থায় তখন একদা কুরাইশের লোকেরা তার চারপাশে ছিল। এমতাবস্থায় উকবা বিন আবি মু’ইত উটের নাড়িভূড়ি নিয়ে এল এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর নিক্ষেপ করল। নবী (সা) তাঁর মাথা উঠালেন না। ফাতিমা (রা) দৌড়ে এলেন এবং নবী (সা) এর পিঠ থেকে উটের নাড়িভূড়ি সরালেন এবং যারা এ কাজটি করেছে তাদের অভিসম্পাত করলেন। নবী (সা) বললেন, ‘হে আল্লাহ! কুরাইশদের নেতা (মা’লা) আবু জাহেল বিন হিশাম, উতবা বিন রাবিয়্যাহ এবং উমাইয়্যা বিন খালাফ…..কে উঠিয়ে নাও।’ ইবনে মাসুদ অন্য একটি বর্ণণায় বলেন, ‘আমি তাদের বদরের দিন নিহত হতে দেখেছি এবং কূপে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।’

মক্কায় কেবল একজন নেতা ছিল না, অনেক মা’লা ছিল। এই লোকগুলো রাসূলুল্লাহ (সা) এর দাওয়াতকে বিরোধিতা করেছিল এবং লোকদের এ পথ থেকে বিভ্রান্ত করবার অপচেষ্টা করেছে।

অন্যান্য নবীদের কেবলমাত্র তাদের লোকদের কাছে প্রেরণ করা হত, কিন্তু মুহম্মদ (সা) এর দাওয়াত গোটা মানবতার জন্য।

কুরাইশদের পারিষদবর্গ দাওয়াতের কাজে ব্যাপক প্রত্যাখান ও বাধা সৃষ্টি করা শুরু করা সত্তেও দাওয়াত কেবলমাত্র তাদের মাঝেই পরিগ্রহ করেনি। দাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) কোন বৈষম্য করেননি। গরীব-ধনী, প্রভূ-ক্রীতদাস কারও ক্ষেত্রে তিনি ভেদাভেদ করেননি। তারপরেও ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) এর মত একজন অন্ধ দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি ভ্রম্নকুঞ্চিত করবার কারণে তাঁকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি নেতাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাবার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল ছিলেন এই আশায় যে, তারা ঈমান গ্রহণ করলে তাদের অনুসারীরাও ঈমান গ্রহণ করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কতৃক রাসূলুল্লাহ (সা) কে সতর্ক করা সত্ত্বেও নেতৃস্থানীয় লোকদের প্রতি দাওয়াত বন্ধ হয়নি। কারণ এ তিরষ্কার ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আহ্বানের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতাদের প্রতি দাওয়াত ও সাধারণ জনগনের প্রতি দাওয়াত একইরকম।

সীরাত থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ (সা) নেতা ও প্রধানদের কাছে কেবলমাত্র তাদের পদমর্যাদার কারণে দাওয়াত নিয়ে যাননি, বরং তারা বিশ্বাসী হলে তাদের অনুসারীরাও বিশ্বাসী হবে এ আশা থেকে তিনি (সা) দাওয়াত দিয়েছিলেন। এ কারণে দাওয়াতের আওতার মধ্যে সবাই অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও এমন লোক দাওয়াত গ্রহণ করেছিল যারা লোকদের নেতা ছিল না, যেমন: বিলাল, আম্মার (রা) এবং তাঁর মা ও বাবা। একই কথা শোয়াইব ও সালমান (রা) এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; কারণ তারা কেউ কুরাইশ নেতা ছিলেন না। আবার আমীর বিন ফুহাইরা, উম্মে আবিস, জুনাইরাহ, আন নাহদিয়্যা ও তাঁর কন্যা এবং বানু মু’মিল এর ক্রীতদাসী এর ক্ষেত্রেও এ কথা খাটে। কারণ আবু বকর (রা) ও প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীরা তাঁদের সবাইকে দাসত্ব মুক্ত করেছিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) প্রাথমিকভাবে তাদেরই দাওয়াত দিয়েছিলেন যাদের মধ্যে খায়ের ছিল। অতপর তিনি সবার কাছে গিয়েছিলেন। তরুণ ও বৃদ্ধরা সাধারণত সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। সাধারণ ও সম্মানিত লোকেরাও সাড়া দিয়েছিল।

দাওয়াতের পাত্র অনুসন্ধান করবার ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। এর মধ্যে সব ধরনের লোকেরাই থাকবে। আর পদ্ধতি হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা) এর পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই যার মাধ্যমে তিনি দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

Leave a Reply