সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ দাওয়াতের একটি অংশ

এ ব্যাপারে ইমাম আন নববী (র) তার শরহে সহিহ মুসলিম-এ ’সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ শিরোনামে অধ্যায়ে বলেন,  “এ বিষয়ে অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নির্দেশ সম্পর্কে- যা বহুপূর্বে দেখা যেত , কিন্তু বর্তমানে তা পরিত্যাজ্য তবে সামান্যতম কিছু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।”

এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন মন্দ কাজ পরিব্যপ্তি লাভ করে, তখন ভাল ও মন্দ সব ধরনের লোক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। আর এমতাবস্থায় যদি কেউ অত্যাচারী শাসককে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবার জন্য উপদেশ না দেয় তাহলে আল্লাহ সবার উপর শাস্তি নাযিল করেন:

‘অতএব যারা রাসূলের আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে ¯পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’ (সূরা নূর: ৬৩)

যতদিন মানুষ বাঁচে ততদিন ’সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ তার নিজের নিরাপত্তা ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকবার জন্য অপরিহার্য। রাসূল (সা) এ বিষয়টি হাদীসের মাধ্যমে একটি উদাহরণ দিয়ে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখা করেছেন:

“যারা আলাহ্’র হুকুম মেনে চলে আর যারা সেগুলোকে নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়ালে লঙ্ঘন করে, (উভয়ে) যেন তাদের মতো যারা একই জাহাজে আরোহণ করে। তাদের একাংশ জাহাজের উপরের তলায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে এবং অন্যরা এর নিচের তলায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। যখন নিচের লোকদের পিপাসা মেটানোর প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের অতিক্রম করে যেতে হয়। (তাই) তারা (নিচতলার লোকেরা) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল, ‘আমরা যদি জাহাজের নিচের দিকে একটা ফুটো করে নিই তাহলে জাহাজের উপরের তলার লোকদের কোন সমস্যা করবো না।’ এখন যদি উপরের তলার লোকেরা নিচতলার লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয় তবে নিশ্চিতভাবেই তারা সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। আর তারা যদি তাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখে, (তবে) তারা (উপরতলা) রক্ষা পাবে এবং এভাবে (জাহাজের) সবাই রক্ষা পাবে।” (বুখারী)

এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি সামাজিক নিরাপত্তা ও জীবনের জন্য ’সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজের গুরুত্ব বুঝার ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের আত্মপ্রসাদ সেই জাহাজের নিমজ্জিত লোকদের মত অবস্থা হবে। সে অবস্থায় সবাই সমুদ্রের অতলে নিক্ষিপ্ত হবে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

পবিত্র কোরআনও বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে দাওয়াতের গুরুত্ব ও মানুষের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। কুরআন কেবলমাত্র দাওয়াতের বিষয়বস্তু তুলে ধরেনি, বরং in addition to ahadeeth (traditions) of the Messenger, এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরও অনেক কিছু যা দাওয়াতকে ঘিরে পরিগ্রহ করে তাও উপস্থাপন করেছে। সামগ্রিকভাবে না হলেও এদের কিছু আমরা এখানে উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি।

পবিত্র কুরআন দাওয়াতকে ’ আমর বিল মা’রূফ এবং নাহি আ’নিল মুনকার ’ বলে সম্বোধন করেছে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,

‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্ম, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আল ইমরান: ১১০)

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আরও বলেন,

‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আল ইমরান: ১০৪)

এ সর্ম্পকে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

“ঐ সত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অতি সত্বর আমর বিল মা’রূফ এবং নাহি আ’নিল মুনকার (সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ) কর। অন্যথায় অচিরেই তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আরোপিত হবে। অতঃপর তোমরা তাকে ডাকবে কিন্তু তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবেনা।” (তিরমিযী)

এবং তিনি (সা) আরও বলেন,

“তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন তার মুখ দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার এই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিহত করে (ঘৃণার মাধ্যমে), আর এটা হলো দূর্বলতম ঈমান।” (মুসলিম, তিরমিযী)

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply