মুরসির পতন

মিশরে মুরসির পতনে যেসব ইসলামপন্থী ব্যথিত হয়েছেন, তাদের আবেগকে সম্মান জানাই।

মুরসির পতনে এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের মতো মিশরেও প্রকৃত শাসনকর্তৃত্ব মার্কিনপন্থী সেনাবাহিনীর হাতেই। এছাড়া বিচার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিডিয়া পশ্চিমাঘেঁষা হওয়ায় মিশরের সর্বময় কর্তৃত্ব পেছন থেকে মার্কিনীদের হাতেই ছিল এবং আছে।

অথচ মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসি এই মার্কিনীদের খুশি রাখার চেষ্টা কম করেননি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়ে গত ৩০ জুন ২০১২-তে ক্ষমতায় এলেও গত এক বছরে মিশরে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ মুরসি নেননি। বরং এমন একটি সংবিধান গ্রহণ করেছেন যেটি হোসনী মোবারক আমলের মতোই আলংকরিকভাবে ইসলামের কথা বলে – যেমনটা পাকিস্তানের সংবিধানে আছে বা বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীতে ছিল। তার ওপর পর্যটন, নাইটক্লাব ও এলকোহল ইস্যুতে মুরসি প্রশাসনের অবস্থান ছিল ইসলামের ঠিক বিপরীত। এগুলো সবই ছিল পশ্চিমাদের মনঃতুষ্টির প্রচেষ্টা।

ইসলামী আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে মুরসি সরকারের সবচেয়ে বড় ডিগবাজি ছিল ইসরাইল ইস্যুতে। মার্কিনসহ পশ্চিমাদের মন রাখতে ইসরাইলের সাথে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি নবায়ন করেছেন মুরসি। এক্ষেত্রে মোবারকের সাথে তার কোনো পার্থক্য নেই। অথচ এই ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির বিরুদ্ধে মুরসিসহ ব্রাদারহুড নেতারা জীবনভর কম গলাবাজি করেননি!

ফিলিস্তিনের হামাসের প্রতিও মুরসি তেমন কোনো সহযোগিতার হাত বাড়াননি। গত বছর গাজায় ইসরাইলের ন্যাক্কারজনক অপারেশন পিলার অফ ডিফেন্স চলাকালে মুরসি প্রশাসন কোনোভাবেই হামাসকে প্রতিরোধে সহায়তা করেনি। ওই অপারেশনে হামাসের সামরিক নেতৃত্ব ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর মুরসি এসেছিলেন স্রেফ যুদ্ধবিরতি করাতে!

ইরানের সাথে প্রত্যাশিত সম্পর্ক উন্নয়ন তো দূরের কথা, বরং শিয়া-সুন্নি বিভেদকে আরো উস্কে দিয়েছে মুরসি প্রশাসন। বোনাস হিসেবে লেবাননের শিয়া মিলিশিয়াদের সাথেও শত্রুতা বাধিয়ে গেছেন মুরসি। ইরান আর মিশরের মিত্রতার পথটি এখন আরো বেশি রুদ্ধ।

মুরসি প্রশাসনের আরো ন্যাক্কারজনক কাজ হলো, পাকিস্তান স্টাইলে সীমান্ত অঞ্চলে তথাকথিত আল-কায়েদাবিরোধী সামরিক অভিযান চালানো! মুরসি শাসনামলে মিশরের সীমান্তবর্তী সিনাই অঞ্চলে সেনাবাহিনী একের পর অভিযান চালিয়ে “Islamic Extremist”-দের দমন করেছে। এসবের মাধ্যমে আসলে তারা ইসরাইলবিরোধী ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর অস্ত্র সরবরাহের পথটি বন্ধ করেছে।

তাই স্বাভাবিকভাবে মুরসির বিদায়ে ইসরাইলের সবচেয়ে পুরনো ও প্রভাবশালী দৈনিক Haaretz ইসরাইল রক্ষায় মুরসির অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে:

http://www.haaretz.com/news/diplomacy-defense/four-reasons-why-israel-may-miss-morsi-after-all.premium-1.533603/four-reasons-why-israel-may-miss-morsi-after-all.premium-1.533603

মুরসির বিদায়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থীদের বোঝা উচিত, ক্ষমতায় যাওয়ার/থাকার জন্য তারা মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তির সাথে যতো বেশি কম্প্রোমাইজ করবেন, ততো বেশি তারা দু’কূলই হারাবেন। আল্লাহর অমোঘ বিধান:

“ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের জাতির/আদর্শের [مِلَّتَهُم] অনুসরণ করেন।” [আল কুরআন ২: ১২০]

“বস্তুতঃ তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে – যদি সম্ভব হয়।” [আল কুরআন ২: ২১৭]

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম প্রদর্শিত পথেই ক্ষমতায় যেতে হবে – ইসলাম প্রদর্শিত পথে শাসন করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে।

‘দূরের যাত্রী’ কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ হতে.

Leave a Reply