এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নামে পরিচিত ব্যবসা পদ্ধতিটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে বিদ্যমান। অবশ্য দেশ ও এলাকাভিত্তিক এ পদ্ধতিকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। যেমনঃ কেউ কেউ বলে ডাইরেক্ট মার্কেটিং সিস্টেম, আবার কেউ কেউ বলে টিমওয়ার্ক মার্কেটিং সিস্টেম, কেউ বা ফ্রিডম এন্টারপ্রাইজ, কেউ বলে হোম বেইজ মার্কেটিং, কেউ বলে হলিডে বিজনেস ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমএলএম এর আবিস্কার :
১৯৪০ সালে আমেরিকার একজন কেমিস্ট ডাঃ কার্ল রেইন বোর্গ কর্তৃক সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয় এ পদ্ধতিটি। তার কোম্পানীর নাম ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানী। ১৯৪০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ১২৫০০ এর বেশি কোম্পানীর অধীনে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি ডিষ্ট্রিবিউটর কাজ করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমনঃ ডেসটিনি-২০০০ লিঃ, সেপ প্রাঃ লিঃ, ড্রিম বাংলা, নিউওয়ে বাংলাদেশ, আল-ফালাহ কমিউনিকেশন বিজনেস, ডটকম শ্যাকলী, ট্যাংচং এফ.আই.সি, আয়্যমওয়ে কর্পোরেশন, জিজি এন, মডার্ণ হারবাল ফুডস প্রাঃ লিঃ, মেরিকে কসমেটিক ইত্যাদি। তন্মধ্যে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ ও এফ.আই.সি. উল্লেখযোগ্য।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধতার দাবি রাখে এ নিয়ে ইতোমধ্যে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বই-পুস্তক প্রকাশ ও যুক্তি-তর্ক শুরু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ইসলামের দৃষ্টিতে এমএলএম পদ্ধতি ব্যবসাটির বিধান সম্পর্কে কিছু লেখা সময়ের দাবি বলে মনে করি। প্রথমে বুঝা যাক এমএলএম ব্যবসাটির ধরণ বা পদ্ধতি কি? ও এমএলএম বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কাকে বলে?
এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর রূপরেখা :
এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতি সম্পর্কে লেখা বিভিন্ন বইপত্র, কোম্পানীগুলোর নীতিমালা, ফরম ও পণ্য তালিকা, তাদের সেমিনারের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট লোকদের ব্যাখ্যাসমূহ থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলোঃ-
১. এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং)পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশক নিয়োগ করে থাকে।
২. পরিবেশক হতে হলে তাদের থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য খরিদ করতে হয়।
৩. পণ্য খরিদ করা ছাড়া যেহেতু তাদের ডিষ্ট্রিবিউটর (পরিবেশক) হওয়া যায় না, এজন্য তাদের কর্মীবাহিনীর উপাধি হল ক্রেতা-পরিবেশক।
৪. কোম্পানীর পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি কোম্পানীর নিয়মে দু’জনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এর বিনিময়ে সে কোম্পানী হতে কমিশনের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পায়। এরপর এ দু’ব্যক্তি যদি আরো চারজনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এ দু’ব্যক্তি ও প্রথমোক্ত ব্যক্তি কমিশন পাবে। এভাবে দু’দিকের নেটওয়ার্ক যতই দীর্ঘ হবে ততই উপরের লোকদের কমিশন বাড়তে থাকবে।
৫. চার নম্বরে বর্ণিত নেট সিস্টেমটিই হল এমএলএম এর মূল বৈশিষ্ট। পুঁজি ছাড়া রুজী এর উপরই তাদের প্রচারণার ভিত্তি। এ শ্রম ছাড়া বিনিময়ের আশায় লোকজন তাদের সাথে যোগ দেয়।
৬. মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির মূল বৈশিষ্টে সব কোম্পানী একমত। তবে কোম্পানী ভেদে প্রত্যেকের নিয়মাবলী, কমিশন বন্টনের পদ্ধতি ও কমিশনের পরিমাণ ভিন্ন রকম।
৭. ডান ও বাম উভয় পার্শ্বের নেট না চললে কোন ব্যক্তি কমিশন পাবে না। যেমন কেউ যদি শুধু একজন ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে সেও কমিশন পাবে না, তার উপরের স্তরের ব্যক্তিগণও কমিশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে না।
ডেসটিনি-২০০০ লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত “বিক্রয় ও বিপণন পদ্ধতি” পুস্তিকা থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর পদ্ধতি নিম্নে তুলে ধরা ধরছি। উক্ত পুস্তিকার ১০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে:
মূল ধারণাটি হচ্ছে এ রকম, (ধরুণ আপনি) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পণ্য (৫০০-১০০০) পয়েন্ট ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানীর একজন সক্রিয় ক্রেতা-পরিবেশক হলেন। প্রাথমিকভাবে দু’জন ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজস্ব সেলস টিম তৈরির প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে। এরপর পরবর্তী ক্রেতা-পরিবেশকদ্বয়কে একইভাবে তাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ব্যাপারে সর্বাত্নক সহযোগিতা করতে পারবেন। এভাবে ১২ থেকে ১৩টি ধাপে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং টিম তৈরির কাজ করার পর ঐ সমস্ত ক্রেতা-পরিবেশকদের অধীনে গড়ে বাত্তসরিক ৪০০০ ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টি করা সম্ভব।
উপরোক্ত পুস্তিকার ৯ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
যিনি ইচ্ছে করবেন তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের একজন ক্রেতা-পরিবেশক হয়ে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে এবং দলের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে পণ্য বিপণনে অংশগ্রহণ করে বিক্রিত লভ্যাংশের অংশীদার হতে পারবেন। অন্তত একবার পণ্য ক্রয় করা ছাড়া কিংবা অন্য ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে তার ডিলারশীপ যোগ্যতা ক্রয় বা হস্তান্তর করা ছাড়া আপনার পক্ষে এখানকার ডিষ্ট্রিবিউটর হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
সহজ করে বুঝার জন্য বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত “ইসলামের দৃষ্টিতে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা” বই হতে ছক আকারে বিষয়টি তুলে ধরা হল।
—————————————-A
১ম লেভেল ———-B———————————-C
২য় লেভেল —D———–E——————-F————-G
৩য় লেভেল –H-I———J-K—————–L-M———-N-O
৪র্থ লেভেল PQ-RS–TU-VW–XY-Z AB– BC CD– DE EF
পূর্বের ছকটির আলোকে ধরা যাক, একটি কোম্পানী নির্ধারিত পণ্য বিক্রয়ের উপর নিম্ন হারে কমিশন দিয়ে থাকে।A নামক এক ব্যক্তি যখন B ও C নামের দু’ব্যক্তিকে ক্রেতা-পরিবেশক বানাল তখন সে পেল ৬০০ টাকা। এরপর ২য় লেভেলের ৪ জন যোগ হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি (A) পেল ১২০০ টাকা। আর B ও C প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ১২০০ টাকা। এরপর ৩য় লেভেলের ৮ জন (২য় লেভেলের ব্যক্তিদের মাধ্যমে) কোম্পানীর ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি পেল আরো ৩৬০০ টাকা এবং ২য় (১ম লেভেল-B ও C ) ২ জনের প্রত্যেকে পেল ১২০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। আর ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। এরপর ৪র্থ লেভেলের ১৬ জন (৩য় লেভেলের লোকদের মাধ্যমে) ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় ১ম ব্যক্তি A পাবে ৭২০০ টাকা, ২য় ২ জনের (১ম লেভেলের B ও C) প্রত্যেকে পাবে ৩৬০০ টাকা করে ৭২০০ টাকা, ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা, ৩য় লেভেলের ৮ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ৪৮০০ টাকা।
(উল্লেখ্য এখানে টাকার অংক উদাহরণস্বরূপ দেখানো হয়েছে যা প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে)। সূত্র- বেফাক।
এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা হারাম ও নাজায়েজ :
এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) কারবারে শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেকগুলো বিষয় যুক্ত হওয়ার কারণে উক্ত পদ্ধতির ব্যবসাটি সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম। যেমন এতে রয়েছেঃ-
১. শর্তসহ ইজারা চুক্তি
২. শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি
৩. ধোকা বা গারার
৪. শ্রমবিহীন বিনিময়
৫. বিনিময়বিহীন শ্রম
৬. জুয়া বা কেমার
৭. সুদের সন্দেহ
৮. বিদেশী পণ্য দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ।
উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত নিষিদ্ধ। নিম্নে এক একটি করে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল।
শর্তসহ ইজারাচুক্তি :
উল্লিখিত বর্ণনা ও উদ্ধৃতি দ্বারা বুঝা গেল কোম্পানী শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, সাথে সাথে ক্রেতা-পরিবেশকও হয়ে যাচ্ছ। অপরদিকে কেউ যদি পরিবেশক বা ডিলার হতে চায় তাহলে সে ডিলার হতে পারছে না। ডিলার হওয়ার জন্য পণ্য কিনা শর্ত। তাদের ভাষায় ডিলার/পরিবেশক/ডিষ্ট্রিবিউটর বা অন্য কোন নাম হলেও ফিকাহ শাস্ত্রের ভাষায় মূলত ঐ ব্যক্তি আজির বা দালাল এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরণের ডিষ্ট্রিবিউটর নিয়োগকে ইসলামী ফিকাহর ভাষায় “আকদে ইজারা” বা ইজারা চুক্তি বলা হয়। ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য পণ্য ক্রয় (عقد بيع) শর্ত করা হল। এখানে এক চুক্তির মাধ্যমে দুই চুক্তি হয়ে গেল। যাকে হাদীস ও ফেকাহ শাস্ত্রের ভাষায় “ صفقتان في صفقة “ এক চুক্তির মাঝে দুই চুক্তি” বলা হয়। এই ধরণের কারবার হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে নাজায়েজ। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস অনুবাদসহ উল্লেখ করা হল।
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صفقتين في صفقة واحدة. رواه أحمد في مسنده ج1 ص398 ، وقال الهيثمي في مجمع الزوائد ج4 ص48 رجال أحمد ثقات.
একই চুক্তিতে দুটি চুক্তি করা থেকে নবীজী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। মুসনাদে আহমদ, খন্ড১, পৃঃ৩৯৮।
ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেন-
لا تحل صفقتان في صفقة. رواه الطبراني في المعجم الأوسط ج1 ص32 وابن خزيمة في صحيحه برقم 176
একই আকদে দুই আকদ করা হালাল নয়। তাবারানী খন্ড১, পৃঃ৩২, ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৭৬।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন-
صفقتان في صفقة ربا. أخرجه ابن أبي شيبة ج8 ص192 ، وإسناده صحيح. إرواء الغليل ج5 ص148
একই আকদে দু’টি আকদ করা এক প্রকার সুদ। ইবনে আবী শায়বা, খন্ড৮, পৃঃ১৯২।
تفسد الإجارة بالشروط المخالفة لمقتضى العقد ، فكل ما أفسد البيع مما مر يفسدها. الدر المختار ج3 ص46
আকদে ইজারার প্রাসঙ্গিক নয় এমন শর্তারোপে ইজারা ফাসিদ হয়। তাই পূর্বে বিবৃত যে সব বিষয় বেচাকেনা চুক্তি তথা আকদে বাইকে ফাসিদ করে দেয় সেগুলো ইজারা চুক্তিকেও ফাসিদ করে দেয়। (দুররুল মোখতার, খন্ড৩ পৃঃ৪৬)।
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোম্পানী কর্তৃক ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর তথা দালাল নিযুক্তির সাথে কোম্পানী থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয়ের শর্তারোপ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি শর্ত। তাছাড়া এতে রয়েছে বিক্রেতা পক্ষ বা কোম্পানীর স্বার্থ। তাই এ শর্তের কারণে ইজারা চুক্তিটি ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে ফাসিদ বলে গণ্য হবে। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয়চুক্তি :
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে যেমন রয়েছে শরীয়ত নিষিদ্ধ শর্তসহ ইজারা চুক্তি (إجارة مع العقد) তেমনি রয়েছে শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (بيع مع الشرط)।
ক্রয়-বিক্রয়ের মূলনীতি হল, ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে যদি ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গ নয় এমন কোন শর্ত লাগানো হয় যাতে ক্রেতা বা বিক্রেতার স্বার্থ জড়িত থাকে তা বিক্রিত পণ্যের (তা প্রাণী জাতীয় হলে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ হয়ে যায়। যেমন হেদায়া গ্রন্থ প্রণেতা এ মর্মে লিখেন-
كل شرط لا يقتضيه العقد وفيه منفعة لأحد المتعاقدين أو للمعقود عليه وهو من أهل الاستحقاق يفسده. الهداية ج3 ص34
” যে শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির প্রাসঙ্গিক নয়, অথচ এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কোন একজনের বা বিক্রিত পণ্যের (জীবজন্তু হওয়ার ক্ষেত্রে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে এরূপ শর্ত আকদে বাইকে (ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি) ফাসিদ করে দেয়। ” হেদায়া, খন্ড৩, পৃঃ৩৪।
এ মর্মে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে-
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيع وشرط. رواه الطبراني في المعجم الأوسط والحاكم في علوم الحديث كذا في نصب الراية ج4 ص17.
রাসূলুল্লাহ (সঃ) শর্তারোপ করে বেচা-কেনা থেকে নিষেধ করেছেন। তাবারানী আলমুজামুল আওসাত ও হাকিম উলুমুল হাদিস গ্রন্থে। নাসবুর রায়াহ গ্রন্থেও এরূপ বর্ণিত আছে। খন্ড৪ পৃঃ১৭।
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর প্রচলিত ব্যবসা পদ্ধতিতে বিক্রেতার পক্ষ থেকে ডিলারশীপ পাওয়ার শর্তটি অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার সাথে সাথে ক্রেতার জন্য লাভজনক একটি শর্ত। তাই এ শর্তারোপের দরুণ ক্রয়-বিক্রয়টি অবশ্যই ফাসিদ, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় বলে গণ্য হবে।
ধোকা বা গারার :
এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল ধোকা যার আরবী শব্দ গারার। হাদীস নিষিদ্ধ ধোকা বা গারার সম্বলিত হওয়ার কারণে এ পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ। ধোকা বা গারার এর সংজ্ঞা নিম্নে দেয়া হল।
ইমাম সারাখসী (রঃ) বলেন-
الغرر ما يكون مستور العاقبة
” যার পরিণাম লুকায়িত (অস্পষ্ট) তাই গারার।” কিতাবুল মাবসুত, খন্ড১২ পৃঃ১৯৪।
ইমাম কাসানী (রঃ) বলেন-
الغرر هو الخطر الذي استوى فيه طرف الوجود والعدم بمنزلة الشك
“গারার হচ্ছে এমন একটি অনিশ্চয়তা যাতে হওয়া এবং না হওয়া উভয় দিকই সন্দেহের সাথে বিদ্যমান থাকে।” বাদায়েউস সানায়ে, খন্ড৪, পৃঃ৩৬৬।
ইমাম সীরাজী (রঃ) বলেন-
الغرر من انطوى عنه أمره وخفي عليه عاقبته
“পরিণাম অজানা থাকাই গারার।” শরহুল মুহাযযাব, খন্ড৯ পৃঃ৩১০।
ইমাম ইবনুল আসীর জাযারী (রঃ) বলেন-
الغرر ما له ظاهر تؤثره وباطن تكرهه ، فظاهره يغر المشتري ، وباطنه مجهول.
“যার এমন একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু এর মধ্যে এমন অদৃশ্য কারণ রয়েছে যে কারণে তা অস্পষ্ট। অতএব এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোকায় ফেলে। আর এক ভিতরের রূপ অজানা।” জামেউল উসুল, খন্ড১ পৃঃ৫২৭।
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম জাওযী (রঃ) বলেন-
بيع الغرر هو بيع ما لم يعلم حصوله أو لا يقدر على تسليمه أو لا يعرف حقيقة مقداره
“বায়উল গারার ঐ কারবারকে বলা হয় যাতে পণ্য বা সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা অনিশ্চিত অথবা চুক্তিভুক্ত ব্যক্তি নিজে তা যোগান দিয়ে অক্ষম অথবা যার পরিমাণ অজানা।” যাদুল মাআদ, খন্ড৫ পৃঃ৭২৫।
উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো দ্বারা বুঝা যায়, হওয়া বা না হওয়ার অনিশ্চয়তার নামই হল ধোকা বা গারার। আর এটি যে কারবারে বিদ্যমান থাকবে সে কারবারই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ হবে।
এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসানীতিতেও ধোকা বা গারার রয়েছে। কারণ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম ডিষ্ট্রিবিউটর লোকটি তার ডাউন লেভেল থেকে কমিশন লাভ করতে থাকবে। অথচ তার নিজের বানানো দু’ব্যক্তি ব্যতিত অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনিশ্চিত এবং অন্যের কাজের উপর নির্ভরশীল। কারণ তার নিচের নেটগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অগ্রসর না করলে লোকটি কমিশন পাবে না, যে কমিশনকে কেন্দ্র করে সে কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে।
نقل أبراهيم الحربي أنه سئل عن الرجل يكتري الديك ليوقظه لوقت الصلاة ، لا يجوز ، لأن ذلك يقف على فعل الديك ، ولا يمكن استخراج ذلك منه بضرب ولا غيره ، وقد يصيح ، وقد لا يصيح ، وربما صاح بعد الوقت ، نقله الإمام شمس الدين بن قدامة المقدسي في الشرح الكبير على متن المغني ج3 ص319 (باب الإجارة)
ইবরাহীম হারবী (রঃ) বর্ণনা করেন, তাকে প্রশ্ন করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে একটি মোরগ ভাড়া করে তাকে নামাযের সময় ঘুম থেকে সজাগ করার জন্য। তিনি উত্তর দিলেন- “জায়েজ হবে না। কারণ এটা মোরগের মরজির ওপর নির্ভরশীল। তার থেকে মারপিট বা অন্য কোন পন্থায় আওয়াজ বের করা সম্ভব না। কোন সময় আওয়াজ করবে, আবার কখনো কখনো করবে না, কখনো বা নামাজের সময়ের পরে আওয়াজ করবে।” শারহুল কাবীর, খন্ড৩ পৃঃ৩১৯।
সুতরাং এখানে যেমন মোরগ থেকে উপর্কৃত হওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হয়েছে, এমএলএম কারবারেও নীচের লেভেলের মাধ্যমে কমিশন পাওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হবে।
শ্রমবিহীন বিনিময় :
এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির ব্যবসাটি নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে রয়েছে শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম যা শরীয়ত সমর্থন করে না।
এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির নীতিমালায় রয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্যের পণ্য খরিদ করে ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি দু’জন ক্রেতা কোম্পানীর জন্য নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরো চারজঙ্কে এবং এ চারজন আরো আটজনকে কোম্পানীর সাথে যুক্ত করে তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দুই ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানী থেকে কমিশন পেয়ে থাকে।
অথচ এ আটজনের কাউকেই তারা (প্রথম ব্যক্তি এবং ২য় স্তরের দু’জন) কোম্পানীর সাথে যুক্ত করেনি, বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর আইন অনুযায়ী এরা কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং নির্ধারিত হারে কমিশন পাচ্ছে। বুঝা গেল এমএলএম কারবারে শ্রমবিহীন বিনিময় বিদ্যমান।
বিনিময়হীন শ্রম :
এমনিভাবে এতে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম। কেননা, কোম্পানীর নীতিমালা অনুযায়ী কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে। কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে না পারে অর্থাৎ ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চলে, সে কমিশন পায় না। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানীকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানীর নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল খরিদ করে তাও ঐ ব্যক্তি কমিশন পায় না। যেমন ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এবং সেপ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে তার ডান এবং বাম উভয় পাশে দু’জনের নিকট নূয়নতম ৫০০ করে ১০০০ পয়েন্টের পণ্যের ক্রেতা আনতে হয়। যদি কেউ একজন ক্রেতার নিকট ৫০০ পয়েন্টের পণ্য বিক্রি করাল কিন্তু অন্যজন আনতে ব্যর্থ হল তবে এর জন্য লোকটি কোন কমিশন পাবে না। এমনিভাবে যদি কোন ক্রেতা-পরিবেশক উভয় পাশে ১০০ পয়েন্ট করে ২০০ পয়েন্ট পরিমাণ পণ্যের ২জন ক্রেতা কোম্পানীকে এনে দেয় তবে ঐ ২০০ পয়েন্ট বিক্রির জন্য লোকটি কোম্পানী থেকে কমিশন পাবে না। কিন্তু ঐ দু’জন কোম্পানীর (অন্তর্বর্তীকালীন) পরিবেশক হিসাবে যুক্ত হয়ে তাদের নেট অগ্রসর করার সুযোগ পেয়ে যায়। সুতরাং এ কারবারে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম।
শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম এ দু’টিই বাতিল পন্থায় উপার্জন। কেননা, আকদে ইজারার দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে।
১ শ্রম
২ বিনিময়
এই দু’টি বিষয় সুস্পষ্ট থাকা এই আকদের অপরিহার্য শর্ত। দু’টির একটিও যদি পাওয়া না যায় তাহলে তা ফাসেদ হয়ে নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل
তোমরা বাতিল পন্থায় একে অন্যের সম্পদ খেয়ো না। (সূরা বাকারা ১৮৮, সূরা নিসা ২৯)
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন
أن يأكله بغير عوض অর্থাৎ (বিনিময়ের শর্তযুক্ত আকদে) বিনিময়হীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থায় উপার্জন। আহকামুল কুরআন, জাসসাসঃ ২/১৭২।
এমএলএমকারবারজুয়ারএকপ্রকার :
এমএলএম কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এ পদ্ধতির ব্যবসাও এক প্রকার জুয়া। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রঃ) গারার এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-
الغرر هو مجهول العاقبة ، فإن بيعه من الميسر الذي هو القمار
যে কারবারের পরিণাম অজানা সে কারবার জুয়ার শামিল। তাকে কেমার বা মাইসির (জুয়া)ও বলা হয়। কুরআন পাকে আল্লাহতায়ালা জুয়াকে হারাম করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه
মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্রকার্য বৈ তো আর কিছু নয়। সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাক। (সূরা মায়েদা ৯০)
এমএলএম কারবারে যে ক্রেতা-পরিবেশক হবেন তিনি কোম্পানীর নীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যের দু’জন ক্রেতা যোগাড় করতে পারবেন কিনা? পরিণাম অনিশ্চিত, তাই জুয়ার সাদৃশ্য হয়ে হারাম হবে।
বাজার প্রভাবিতকরণ :
এমএলএম নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ বহির্শক্তি দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ। এ ধরণের ব্যবসাগুলোর মূল উদ্দেশ্য পণ্য কেনা-বেচা নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর সেজে কোম্পানী থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ করা। অর্থাৎ কমিশন অর্জন করা। এ ধরণের কোম্পানীর নিকট পণ্যের গুণগতমান বিবেচ্য নয়। এবং এ নিয়ে তাদের প্রতিযোগিতায়ও পড়তে হয় না। বরং কমিশনের লোভ দেখিয়ে গুণগত বিষয় থেকে পার পেয়ে যায়। তাদের এ পদ্ধতি সহজেই বাজারের সাধারণ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এবং ক্রেতাগণ টাকার লোভে তাদের দিকে ঝুকে পড়ে। আর সাধারণ পদ্ধতিতে একজন ক্রেতা পণ্যের গুনাগুণ যাচাই করার সুযোগ পায় বিধায় পণ্য বিক্রেতাকে পণ্যের গুণাগুণের প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়। এমএলএম পদ্ধতি এর বিপরীত। এ পদ্ধতিতে কমিশনের কারণে বাজার একপেশে হয়ে যায়। এবং পণ্যের গুণগতমান এবং ক্রেতার স্বাধীন যাচাই বাছাইয়ের সুবিধা হ্রাস পায় যা ইসলাম পছন্দ করে না। কারণ ক্রয়-বিক্রয় ও যাবতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি হলো- বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে পণ্যের গুণগতমান ও ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি উপস্থিতিতে। অন্য কোন পন্থায় বাজার প্রভাবিত করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। এ জন্যেই তো বাজারে প্রবেশের আগেই রাস্তায় গিয়ে বিক্রেতা থেকে পণ্য কিনে এনে বাজারে বিক্রয় করাকে এবং গ্রাম্য ব্যক্তির পক্ষ হয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করাকে শরীয়ত নিষেধ করেছে। হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى أن يبيع حاضر لباد
হুজুর (সাঃ) শহুরে ব্যক্তিকে গ্রাম্য ব্যক্তির উকিল হয়ে বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)
نهى النبي صلى الله عليه وسلم أن يتلقى الجلب
হুজুর (সাঃ) কোন কাফেলা মালামাল নিয়ে শহরে প্রবেশ করার আগেই সেই মাল কেনার থেকে নিষেধ করেছেন। মুসলিম
সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য :
এমএলএম পদ্ধতি কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে শরীয়তে নিষিদ্ধ شبهة الربا বা সুদের সন্দেহ এবং সাদৃশ্য রয়েছে। অথচ এমন কারবার বর্জন করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে শরীয়তে। খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর (রাঃ) বলেন دعوا الربا والريبة “তোমরা সুদ বর্জন কর এবং এমন জিনিসও বর্জন কর যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে।” মুসনাদে ইমাম আহমদ ১/৩৬,৫০ হাদীস ২৪৬, ৩৫০। সুনানে ইবনে মাজা ২/৭৬৪ হাদীস ২২৭৪। এই উক্তি এবং শরীয়তের অন্যান্য দলীলের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম এমন বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন যেগুলোতে সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য রয়েছে।
এমএলএম এ শুবহাতুর রিবা বা সুদের সাদৃশ্য :
আলোচিত মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে শরীয়তে নিষিদ্ধ সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য পরিস্কারভাবে বিদ্যমান যার দরুণ এ কারবার নাজায়েজ ও বর্জনীয়।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝা যাক। মনে করি জাকের নামের এক ব্যক্তি ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ১০,০০০ টাকা দিয়ে একটি পণ্য নিল (যার পয়েন্ট ৫০০) এবং নিয়ম অনুযায়ী সে ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেল এবং সে আরো দু’জন ক্রেতা জোগাড় করার মাধ্যমে কমিশন পেল ৬০০ টাকা। এরপর এ দু’জনের বানানো চার ব্যক্তির কারণে আরো পেল ১২০০ টাকা।(এরপর তো কমিশন ও বোনাস চালু থাকছেই)। বলা বাহুল্য, এ সকল সুবিধাই জাকেরকে উদবুদ্ধ করেছে এ কোম্পানীর পণ্য কিনতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে ১০,০০০ টাকা শুধু ঐ পণ্যটির জন্য দেয়নি বরং তা দেওয়ার পিছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐ কমিশন বা বোনাসগুলো পাওয়া। আর স্বভাবতই তা (পণ্য ও কমিশন) লোকটির দেওয়া টাকা থেকে বেশি যা পরিস্কারভাবেই সুদের সন্দেহ সৃষ্টি করে।
তাছাড়া এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও বক্তব্য বিষয়টিকে আরো পরিস্কার করে তোলে। কোন একটি কোম্পানীর পণ্য তালিকা হাতে নিলেই দেখা যাবে তাতে পণ্যের নাম ও মূল্যের পাশাপাশি আরেকটি সংখ্যাও উল্লেখ রয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে পয়েন্ট। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্য প্রদান করলে সে শুধু পণ্যই পাচ্ছে না, পাচ্ছে নির্ধারিত সংখ্যার পয়েন্টও; যা তাকে পরবর্তীতে কমিশন পেতে সাহায্য করবে। এবং তার উপরের লেভেলের ব্যক্তিদেরকে প্রদান করবে নির্ধারিত কমিশন।
এখন যদি কেউ নেট চলার কারণে কমিশন পায় তাহলে বোঝা যাবে, নির্ধারিত টাকার মোকাবেলায় নেওয়া পণ্যের সাথে যে পরিবেশক স্বত্বটি সে পেয়েছে এটির ফলেই সে কমিশন পাচ্ছে, যা সুস্পষ্ট সুদ সাদৃশ্য। অন্যদিকে যদি কারো নেট একেবারেই অগ্রসর না হয় তবে সে ক্ষেত্রেও সুদের সন্দেহ থাকছেই। কারণ, সে তো টাকা দিয়েছিল দু’টি উদ্দেশ্যে।
১ পণ্যের জন্য
২ পরিবেশক হয়ে কমিশন পাওয়ার জন্য।
অথচ ২য়টির কোন সুবিধাই সে পায়নি। অর্থাৎ কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদ এর আওয়াভুক্ত হয়ে অবশ্যই নাজায়েজ ও বর্জনীয়।
উল্লেখ্য যে, কোন কোন এমএলএম কোম্পানী তাদের সদস্য হওয়ার জন্য পণ্য খরিদের পাশাপাশি নির্ধারিত সংখ্যক নগদ টাকা প্রদানেরও শর্ত করে থাকে। (যেমনঃ নিউওয়ে, ড্রিম বাংলা)। আর এ ক্ষেত্রে ঐ কারবারে সুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। – সূত্র বেফাক।
Note: This article is free from the editorial policy of this blog and does not necessarily hold the view of ‘Return of Islam’