ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ: আইনী প্রেক্ষিত
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, ইংরেজিতে International Society for Krishna Consciousness, সংক্ষেপে ISKCON/ইসকন-এর কার্যক্রম বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে বিভিন্ন নামে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যেভাবে বিদ্বেষমূলক ও সহিংস কর্মকাণ্ড করে বেড়াচ্ছে, তাতে জনমনে ইসকনসহ অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম কোর্টে ইসকন সমর্থকদের সন্ত্রাসী হামলা ও ভাঙচুর এবং তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ-কে হত্যার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়েছে।
“ইসকন বাংলাদেশ”-এর নেতৃবৃন্দ অবশ্য ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ফলে সংগঠনটির সঙ্গে বর্তমানে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে চিন্ময়ের কোনো কর্মকাণ্ডের দায় নেবে না ইসকন।
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার কোনো আলোচনা সরকারের মধ্যে হয়নি। …ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে সংস্থার অপরাধকে সরকার জড়িয়ে ফেলছে না।
বাংলাদেশে ইসকন বা অন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আসলে ঠিক কী ধরনের কর্মকাণ্ড করছে? তাদের কার্যক্রম কি রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক? তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার আইনগত ভিত্তি আছে কী? আজকের সেমিনারে আমরা এই প্রশ্নগুলোরই জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইন-শা-আল্লাহ।
ইসকনের পরিচয়:
অফিসিয়ালি ইসকন (ISKCON) একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্য হলো বৈষ্ণবধর্মের একটি বিশেষ শাখা, যা পঞ্চদশ শতাব্দীতে শ্রী চৈতন্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। “গৌড়ীয়” শব্দটি বঙ্গ বা গৌড় অঞ্চল (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কিছু অংশ) থেকে এসেছে, যা এই ঐতিহ্যের উৎসস্থান।
ইসকন ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অভয়চরণ দে (১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৬ – ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৭) নামের ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একজন হিন্দু ধর্মগুরু, যিনি সাংগঠনিকভাবে “স্বামী অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদ” নামে পরিচিত। তিনি গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধারার হিন্দু ছিলেন। অফিসিয়ালি ইসকনের প্রধান লক্ষ্য হলো শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি, বৈষ্ণবধর্ম প্রচার ও সনাতন ধর্মের মূল আদর্শ প্রচার করা। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশে ইসকনের লক্ষাধিক অনুসারী রয়েছে এবং তারা সেসব দেশে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ইসকনের প্রধান কার্যালয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মায়াপুরে অবস্থিত।
ইসকনের বিবর্তন:
প্রতিষ্ঠার প্রথম চার দশক ধরে ইসকন একটি বৈষ্ণব ভাব-আন্দোলন হিসেবে পরিচালিত হয়। তবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার পর বিশ্ব পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় সংগঠনটির কার্যক্রম ও উদ্দেশ্যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটে। নাইন-ইলেভেনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত “ওয়ার অন টেরর”-এ গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে ভারত আবির্ভূত হয়। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে “বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আমেরিকা”-র উত্তরসূরি হিসেবে “হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন” গঠিত হয়। [দেখুন: https://politicalresearch.org/2024/10/15/haf-way-supremacy] মূলত, এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা। এরই ধারাবাহিকতায় ইসকনের মতো হিন্দু সংগঠনগুলোকেও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থে সম্পৃক্ত করা হয়। [দেখুন: www.hinduamerican.org/press/caste-statement-iskcon-communications]
নাইন-ইলেভেন-পরবর্তী ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসকন ভারতের জন্য “সফট পাওয়ার” হিসেবে কাজ করছে। ইসকনের সদস্য এবং সাবেক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য তুলসি গ্যাবার্ড, যিনি মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত প্রথম হিন্দু, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে বহু কাজ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার পরিচালক হিসেবে মনোনীত তুলসি গ্যাবার্ড মার্কিন কংগ্রেসে তার কার্যকালীন সময়ে ভারত-মার্কিন কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে ইসকনের সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। [দেখুন: https://iskconnews.org/iskcon-pakistan-is-growing/] পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ভারত বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দিচ্ছে, এবং সেই অঞ্চলে ইসকনের কার্যক্রমকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়।
বিশ্বব্যাপী, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে, ইসকন ভারতের স্বার্থরক্ষার “সফট পাওয়ার” হিসেবে সফলতা অর্জন করেছে। ভারতের পর ইসকনের সর্বাধিক মন্দির ও ধর্মীয় কেন্দ্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং বাংলাদেশে। যেখানে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ বেশি, সেই অঞ্চলগুলোতেই ইসকন সক্রিয়ভাবে কাজ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ইসকনের নেতারা হোয়াইট হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। [দেখুন: tinyurl.com/bdcvm6au]
ভারতের বিজেপি সরকার ও ইসকনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নরেন্দ্র মোদী ইসকনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার মতে, “ইসকন বিশ্বকে জানিয়েছে যে ভারতের জন্য ধর্ম মানে উদ্দীপনা, মানবতার প্রতি বিশ্বাস এবং উদ্যম।” [দেখুন: tinyurl.com/3ew6fkxr] ইসকনের কার্যক্রম ও নেতাদের বক্তব্য বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও ইসকনের মন্দিরে গিয়ে কর্মীদের দীক্ষা গ্রহণে উৎসাহ দেন এবং সংগঠনের প্রশংসা করেন। [দেখুন: tinyurl.com/3aa9xh86]
বাংলাদেশে ইসকন:
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। তবে নাইন-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে এর কার্যক্রম ও সদস্যসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সালের দিকে বাংলাদেশে ইসকনের মন্দির সংখ্যা ছিল ৩৫টি। শেখ হাসিনার সরকার (২০০৯-২০২৪) আমলে এই সংখ্যা বেড়ে ১০০টির বেশি হয়েছে। বর্তমানে ইসকনের মন্দির ও ধর্মীয় কেন্দ্রগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট বিভাগে বেশি সক্রিয়।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল নিজেই ইসকনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। [দেখুন: www.youtube.com/watch?v=j8taQDKGQDY] তার মন্ত্রিত্বকালে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী বয়ান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফ্যাসিস্ট শাসনামলে প্রশাসন ও পুলিশের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার ইসকনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে।
ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক:
প্রাথমিকভাবে ইসকন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসকন নেতারা রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের প্রবর্ত্তক সংঘের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ এবং ইসকনের বিভিন্ন নেতার সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেশটির ধর্মীয় সহাবস্থানের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ২০২১ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবর্ত্তক সংঘের নেতারা ইসকনের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট ও বিদেশে পাচারেরও অভিযোগ করেন। প্রবর্ত্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, “ইসকনকে প্রবর্ত্তক সংঘ মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করে। সেখানে মন্দির তৈরি করে তা পরিচালনা করবে ইসকন। কিন্তু এখন তারা চুক্তির সব শর্ত ভঙ্গ করে প্রবর্তক সংঘের জমি দখলসহ সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। ইসকন নামীয় জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান ভূমি আগ্রাসন চলছে। তারা প্রবর্ত্তক মন্দিরের নাম ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ ভক্তদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে অন্যত্র পাচার করছে। তারা মন্দিরে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের জড়ো করে তাদের জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছে। ইসকন জঙ্গিরা নিজেরা বড় ধরনের কোনো নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়ে তা আমাদের নামে চালিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। সনাতন ধর্মে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এরা ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে। আমরা আগেই বলেছি এরা সাধুবেশে সন্ত্রাসী।” [দেখুন: tinyurl.com/4jvr43rd]
২০১৯ সালে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিশ্বনাথ ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার ও বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক শ্রী রনজিত চন্দ্র ধর অভিযোগ করেছিলেন যে, আদালতের নির্দেশনার পরেও অন্যের মালিকানাধীন ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি দাবি করে সিলেট ইসকন কর্তৃপক্ষ ভূমি দখল নেওয়ার পায়তারা করছে। [দেখুন: tinyurl.com/3aj63hxt]
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরের জমির দখল নিয়ে হিন্দুধর্মের মূলধারা ও ইসকন অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে অনুসারীদের সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইসকন ভক্তদের হামলায় ফুলবাবু নামের একজন সনাতন ধর্ম অনুসারী নিহত হন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন মন্দির সিলগালা করে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ওই মন্দিরের দখল নিয়ে মূলধারার হিন্দুদের সাথে ইসকন অনুসারীদের আবারও ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে স্থানীয় প্রশাসন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হয়। [দেখুন: www.amadershomoy.com/bn/2020/10/21/1233688.html]
এভাবে বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের মূল ধারার হিন্দুদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর ইসকন তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। ইসকন নেতারা নিত্য নতুন সাংগঠনিক নামের আড়ালে উগ্রবাদী রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে থাকেন। ইসকনের সাথে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের অন্যতম কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি চট্টগ্রামের ইসকন পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ-সহ আরও কিছু সংগঠনের ছদ্মাবরণে ইসকনই বাংলাদেশে ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএসের গেরুয়া পতাকা ব্যবহার করা শুরু করে। এদের সাম্প্রতিক মিছিল ও সমাবেশগুলোতে আরএসএসের গেরুয়া পতাকা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন, গত ৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে “বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট“-এর নাম ব্যবহার করে আয়োজিত সমাবেশে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেরুয়া পতাকা উড়ানো হয়। সেই সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “আপনারা বলেছেন, এ দেশে সহিংসতা হচ্ছে না, রাজনৈতিক নিপীড়ন হচ্ছে। তাহলে দুর্গাপূজায় কেন মাদ্রাসার ছাত্রদের নামিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন? এতেই প্রতীয়মান হয় এ দেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ।” প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের উদ্দেশে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, “পৃথিবীতে আপনি শান্তির বার্তা দিয়েছেন, শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা যদি নিরাপদ না থাকে, এ শান্তি স্থায়ীভাবে বিপন্ন হবে। এই দেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। রাজনীতি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হবে।” [দেখুন: www.prothomalo.com/bangladesh/9rwz8vu5xv]
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে “সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজ” নাম ব্যবহার করে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “আমরা সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা অবিভক্ত ভারতের ভূমিপুত্র। আমরা কোনো দেশ থেকে এখানে আসিনি। …আমরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য লড়তে জানি।” [দেখুন: bangla.bdnews24.com/ctg/aadfe522774d]
গত ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের লালদিঘিতে আয়োজিত বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশেও বিপুল পরিমাণ গেরুয়া পতাকা ওড়ানো হয় এবং ওই সমাবেশে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেন, “এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা। আমরা এ ভূমির ভূমিপুত্র, উড়ে আসিনি। আমরা মোগল, ব্রিটিশ,পর্তুগীজ নয়, আমরা এ ভূমির সন্তান। আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে। এ ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না।” [দেখুন: bangla.bdnews24.com/ctg/113f67e2f73e]
লালদীঘির ওই সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, যিনি বাংলাদেশে ইসকনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি ইসকনের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা গভার্নিং বডি কমিশন (GBC)-এর সদস্য। ওই সমাবেশে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারীও বক্তব্য রেখেছিলেন। দেখুন: www.prothomalo.com/bangladesh/district/jp9q1zmewi)
ইসকন সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড:
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা। এই অমিত সাহা ছিল ইসকনের সদস্য। [দৈনিক ইত্তেফাক: tinyurl.com/4b5fftjn] শহীদ আবরার হত্যাকাণ্ডে কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে অমিত সাহা এখন কারাগারে আছে।
গত ৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে “ইসকন নিয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্ট”-কে কেন্দ্র করে এক মুসলিম ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা করে ইসকন সমর্থকেরা। পরে পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথদল ওই অবরুদ্ধ দোকানিকে উদ্ধার করতে গেলে যৌথবাহিনীর ওপর হামলা ও এসিড নিক্ষেপ করে ইসকন সমর্থকেরা। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন মিডিয়াকে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ইসকন সমর্থকরা জড়িত। [দেশ রূপান্তর: tinyurl.com/ye2xujvh]
গ্রেফতারকৃত ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে আদালত জামিন না দেওয়ায় গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গনে ইসকন সমর্থকেরা নজিরবিহীন হামলা ও ভাঙচুর চালায়। ওই দিনের হামলায় নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের মধ্যে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ কান্তি দাশ একজন ইসকন অনুসারী। [দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: tinyurl.com/bdfajas6]
ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রেক্ষিত:
শহীদ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশের সচেতন মহলে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি উঠেছে।
ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসকন সমর্থকরা সরাসরি খুন, সংঘাত, সংঘর্ষ, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। কোনো সংগঠনের সদস্যরা এই ধরনের অপরাধে যুক্ত হলে সেই সংগঠনকে “সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯”-এর আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিধান রয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(১) ধারায় “সন্ত্রাসী কার্য”-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে:
যদি কোন ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক-
(ক) বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করিবার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোন অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোন ব্যক্তিকে কোন কার্য করিতে বা করা হইতে বিরত রাখিতে বাধ্য করিবার উদ্দেশ্যে-
(অ) অন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করিবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে; অথবা
(আ) অন্য কোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর জখম, আটক বা অপহরণ করার জন্য অপর কোন ব্যক্তিকে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা
(ই) অন্য কোন ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোন সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে বা করিবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে; অথবা
(ঈ) অন্য কোন ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোন সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করিবার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে;
…তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক ‘‘সন্ত্রাসী কার্য’’ সংঘটনের অপরাধ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।”
ইসকনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসকন সমর্থকরা সরাসরি খুন, সংঘাত, সংঘর্ষ, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত।
এখানে এই যুক্তি দেওয়া হাস্যকর যে, ইসকনের সমর্থকদের কর্মকান্ডের দায় সংগঠন হিসেবে ইসকনের উপর চাপানো যাবে না।
কেননা সংগঠনের নেতা কর্মীদের কর্মকান্ডই সংগঠনের চরিত্রের মূল পরিচয়ক। যেমন, সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র বা ওয়েবসাইটে ছাত্রলীগের মূলনীতি হিসেবে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির কথাই বলা আছে। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সরকার সংগঠন হিসেবেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে।
একইভাবে ইসকনের ওয়েবসাইটে বা গঠনতন্ত্রে ভাব আন্দোলনের কথা লেখা থাকলেও সংগঠনটির কি নেতাকর্মীরা বর্তমানে স্পষ্টই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত হয়ে পড়েছে।
ইসকনের কার্যক্রম শুধু সন্ত্রাসী কার্যই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপরও আঘাত:
বাংলাদেশের ইসকন নেতারা কৌশলে চিন্ময় দাসকে বহিষ্কারের গল্প শোনালেও ইসকনের আন্তর্জাতিক কমিটির অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে গত ২৫ নভেম্বরে চিন্ময় দাসকে “ইসকন নেতা” হিসেবে উল্লেখ করেই তার মুক্তি চাওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ কথাটি হলো, চিন্ময় দাসের মুক্তির বিষয়ে ইসকন সদর দপ্তর সরাসরিই ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। [দৈনিক সমকাল: tinyurl.com/mpca6uw7]
ইসকনের এই বিবৃতির পরদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনায় অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
অর্থাৎ ইসকনের সদর দপ্তর থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে এবং ভারত কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা ছাড়িয়ে সেই হস্তক্ষেপ করেছেও।
ইসকন সদর দপ্তরের এই বিবৃতি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ করে এমন কোনো সংগঠন বাংলাদেশ কোনোভাবেই বৈধ থাকতে পারে না। বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য এই একটি কারণই যথেষ্ট।
ইসকনের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাংলাদেশী আইনের কমপ্লায়েন্স ইস্যু
ইসকন তাদের সাংগঠনিক স্ট্যাটাসের বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখেছে। তারা বাংলাদেশে কোন্ আইনের অধীনে নিবন্ধিত কিংবা আদৌ নিবন্ধিত কিনা—সেটাও স্পষ্ট নয়। মিডিয়ায় এসেছে, ইসকন নাকি একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান, কিন্তু এনজিও হিসেবে কার্যক্রম চালালেও তাদের একাউন্টগুলোর দীর্ঘদিন কোনো অডিট হয় না। তাদের আয়-ব্যয়ের উৎস কেউ জানে না। এক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরোর সঠিক মনিটরিং প্রয়োজন।
বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ হিসেবে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অনুমোদনগুলো ইসকন আদৌ নিয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬-এর আওতায় ইসকনের ফান্ডিং প্রক্রিয়া আইনসম্মত কিনা, সেটাও তদন্ত হওয়া উচিত।
ইসকনের বাংলাদেশ শাখা ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একই কূটকৌশল অবলম্বন:
লক্ষণীয় যে, ইসকন সদর দপ্তরের বিবৃতিতে ও ভারতীয় মিডিয়ায় চিন্ময় দাসকে “ইসকন নেতা” হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে চিন্ময় দাসকে তথাকথিত “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট”-এর মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিন্ময় দাসের ইসকন পরিচয়টি লুকাতে চায়, যেভাবে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, চিন্ময় দাস নাকি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কর্মসূচির সঙ্গে ইসকনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই!
এই দাবির হাস্যকর দিকটি হলো, ইসকনের নিউ ইয়র্ক সদর দপ্তর ২৫ নভেম্বর ২০২৪ তারিখেও চিন্ময়কে “ইসকন নেতা”ই বলেছে এবং গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত চিন্ময় চট্টগ্রামে ইসকনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মূলত এমন মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজিই ইসকন ও ভারতের কৌশল। তথাকথিত একটি “ভাব-আন্দোলন”-কে ব্যবহার করে তারা তরুণদেরকে রেডিকালাইজ করে, তারপর বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নামে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মসূচি দিয়ে সেই তরুণদেরকে ব্যবহার করে সংঘাত ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে। চট্টগ্রাম জেলা আদালতের তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে এভাবেই ভিন্ন সংগঠনের নামে উগ্র ও সশস্ত্র তরুণদেরকে জড়ো করে হত্যা করা হয়েছে।
এভাবে ইসকনের নেতারা সাধুর ছদ্মবেশে বাংলাদেশে ক্রমাগত উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, বিভাজনমূলক প্রচারণা ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগ, রংপুর বিভাগ ও সিলেট বিভাগে ইসকন বেশি সক্রিয়। বাংলাদেশের এই বিভাগগুলো নিয়ে, বিশেষত চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগ নিয়ে, ভারতের কোনো কোনো মহলের বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক প্রকল্প ও বিচ্ছিন্নতাবাদের উস্কানির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়।
চলতি মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে সহিংসতায় জড়িত ইসকন সমর্থকদেরকে গ্রেফতারের সাথে সাথেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। মার্কিন-ভারতের মদদে বাংলাদেশে ইসকনের গেরুয়া রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মূল উদ্দেশ্য আসলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ধ্বংস করা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশকে মার্কিন-ভারতের অধীনস্ত রাখা।
উপসংহার
সার্বিক আলোচনায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ইসকন, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট, সম্মিলিত সনাতনী ছাত্র সমাজ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আসলে একই ধরনের বিদ্বেষ ও বিভাজনমূলক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইসকনের বিভিন্ন কার্যকলাপ বাংলাদেশের মূলধারার অনেক হিন্দুদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
সাধুর ছদ্মবেশে ইসকনের গেরুয়া রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে ভারতের “সফট পাওয়ার” হিসেবে বাংলাদেশে ইসকন এসব উগ্রতা ছড়াচ্ছে—এমন ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। তাই দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইসকন-সহ সকল উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান-সহ বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করা হয়। বাংলাদেশেও অবিলম্বে একই ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসকন-বিরোধী হিন্দু নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়ে সরকার এক্ষেত্রে আগাতে পারে।