অনেকে বলে থাকেন, চারটি যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইসরাইল নিজেকে অপরাজেয় প্রমাণ করেছে; মুসলিম উম্মাহ্’র উচিত এর অবস্থানকে মেনে নেয়া। আসুন আমরা বিশ্লেষন করে দেখি বিষয়টি কতটুকু সত্য:
১৯৪৮ সালে ইসরাইল সৃষ্টির পর থেকে এর সামরিক শক্তিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অপরাজেয় হিসেবে তুলে ধরবার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। মজার ব্যাপার হল এ ধরণের আষাঢ়ের গল্প ইসরাইল নিজে স্বপ্রণোদিত না হয়ে যতটা প্রকাশ করবার চেষ্টা করেছে তার চেয়ে বেশী কাজ করেছে বিশ্বাসঘাতক মুসলিম শাসকগুলো।
১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ এর যু্দ্ধগুলোতে পারদর্শিতা সামরিকক্ষেত্রে ইসরাইলের পরিষ্কার প্রাধান্যকে প্রমাণ করে। এ পরিষ্কার প্রাধান্য ও মুসলিম ভূমির জবরদখল আরব রাষ্ট্রসমূহকে এই ধারণা দেয় যে, সামরিক নয় বরং কূটনৈতিক সমঝোতাই একমাত্র বাস্তবসম্মত বিকল্প। সেকারণে শান্তি প্রক্রিয়ার নামে বিভিন্ন পরিকল্পনায় ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
ইসরাইলের এই সামরিক ক্ষমতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে কোন স্বার্থে এ ধরণের আষাঢ়ে গল্পের প্রচলন করা হয়েছে?
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ—ইসরাইলের সৃষ্টি
১৯৪৮ সাল ছিল ইসরাইল রাষ্ট্রের সৃষ্টির বছর। বাহ্যিকভাবে এটা বুঝা যাচ্ছে না কিভাবে ৪০ মিলিয়ন আরব মাত্র ৬০০০০০ ইহুদীর সাথে যুদ্ধে পেরে উঠল না। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমুহের বর্তমান ও অতীত ভূমিকা ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার পেছনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।
ট্রান্সজর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, মিশরের বাদশাহ ফারুক, প্যালেস্টাইনের মুফতিগণ সকলেই বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত দূর্বল শাসক ছিলেন—যারা প্রাথমিকভাবে ফিলিস্তিনীদের প্রতিনিধি ছিল। বাদশাহ আবদুল্লাহ নিজেকে ফিলিস্তিনীদের রক্ষাকবচ হিসেবে দাবী করাটা ছিল ছলনা মাত্র। শোনা যায় তিনি এবং ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ন একসাথে ইস্তাম্বুলে পড়াশোনা করতেন এবং একটি গোপন বৈঠকে আবদুল্লাহ আরব জনঅধ্যুষিত অঞ্চল ফিলিস্তিনের উপর জর্ডানের নিয়ন্ত্রনের বিনিময়ে ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাকে গ্রহণ করে নেবার প্রস্তাব করা হয়।
বাদশাহ আবদুল্লাহর বিদায়ের সময় আরব জনগণের মধ্যে ইংরেজ জেনারেল জন গ্লাবের নেতৃত্বে ৪৫০০ লোকের একটি সুপ্রশিক্ষিত ইউনিটও ছিল। গ্লাব তার স্মৃতিচারণে উলেখ করেছেন যে, বৃটেনের পক্ষ থেকে তাকে কড়া নির্দেশ দেয়া ছিল যাতে তিনি ইহুদী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে প্রবেশ না করেন। মিশর ইসরাইলের উপর আক্রমনের ধার কমিয়ে দেয় এবং তখন প্রধানমন্ত্রী নাকরাশি পাশা নিয়মিত সেনাবাহিনীকে আক্রমনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মাত্র সেবছরের জানুয়ারীতে গঠিত হওয়া স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রেরণ করে। জর্ডান তার অঞ্চল দিয়ে যাবার সময় ইরাকী সেনাবাহিনীর যাত্রাকে প্রলম্বিত করে ইসরাইলে হামলার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একারনে জর্ডানের সেনাবাহিনীর মনোবল জাগিয়ে তুলবার জন্য নিয়োগ পাওয়া একজন অন্ধ ইমাম যুদ্ধে অপ্রস্তত বাদশাহ আবদুল্লাহকে এই বলে অপমানিত করেছিলেন যে, “হে সেনাবাহিনী যদি তোমরা আমাদের হতে” (আরব অঞ্চল ব্রিটিশ কর্তৃত্বের অধিনস্ত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে)।
৪০০০০ মুসলিম সৈন্যের মধ্যে মাত্র ১০০০০ ছিল প্রশিক্ষিত। ইহুদীদের ৩০০০০ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল, ১০০০০ স্থানীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত এবং অন্য ২৫০০০ ছিল আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য। এছাড়াও ৩০০০ এর মত ইরগুন ও ষ্টার্ণ গ্যাং সন্ত্রাসী ছিল। সরবরাহ করা হয় সবার্ধুনিক মারণাস্ত্র এবং ব্রিটেন এবং আমেরিকার জায়নবাদী সংগঠনগুলো তাদের অর্থায়ন করে। ইহুদীদের প্রস্ততি ছাড়াও মুসলিম শাসকদের চরম বিশ্বাসঘাতকতা ফিলিস্তিনে জায়নবাদীদের আখড়া গড়তে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সংকট
এ যুদ্ধটি কোনক্রমেই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার জন্য ছিল না, বরং এটি ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খালকে নিয়ন্ত্রনের জন্য আমেরিকা ও বৃটেনের মধ্যকার একটি সংঘাত।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রতিপত্তিকে সুসংহত করবার জন্য মিশরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে দেখেছিল। সি.আই.এ—র সহায়তা নিয়ে ১৯৫২ সালে একটি অভূত্থানের মাধ্যমে বৃটিশ অনুগত বাদশাহ ফারুককে অপসারণ করে জামাল আব্দুল নাসেরের নেতৃত্বে ফ্রি অফিসার্স—কে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। “একজন মুসলিম বিলি গ্রাহাম— এর খোঁজে (The Search for a Moslem Billy Graham)” নামে ১৯৫১ সালে সি.আই.এ একটি প্রজেক্ট পরিচালনা করে। সি.আই.এ কর্মকর্তা মাইক কোপল্যান্ড ১৯৮৯ সালে ‘দি গেম প্লেয়ার’ নামক স্মারকগ্রন্থে উলেখ করেন কিভাবে তাদের প্রত্যক্ষ মদদে বৃটিশ পুতুল শাসক বাদশাহ ফারুককে ক্যু এর মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। এই প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা কোপল্যান্ড বর্ণণা করেন যে, ’অত্র অঞ্চলে আমেরিকাবিরোধী প্রচারণাকে রুখবার জন্য সি.আই.এ এর একজন অতি জনপ্রিয় তুখোড় নেতার দরকার হয়ে পড়েছিল।’ তিনি আরও উলেখ করেন যে, সি.আই.এ এবং নাসেরের মধ্যে ইসরাইলের ব্যাপারে একটি চুক্তি হয়। যদিও নাসেরের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধের ব্যাপারে আলোচনা করা ছিল নিতান্তই অযৌক্তিক। আলোচনার বিষয় ছিল সুয়েজ খালের উপর বৃটিশ কতৃর্ত্বকে খাটো করা। কেননা ব্রিটেন ছিল নাসেরের শত্রু“।
১৯৫৬ সালে নাসের আমেরিকার দাবি মোতাবেক সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করে। ব্রিটেনের প্রচেষ্টা ছিল এর সাথে ফ্রান্স এবং ইসরাইলকে সংযুক্ত করা। ঐতিহাসিক করেলি বার্নেট তার ‘দি কলাপ্স অব ব্রিটিশ পাওয়ার (ব্রিটিশ কর্তৃত্বের পতন)’ গ্রন্থে উলেখ করেন, ‘ফ্রান্স নাসেরের প্রতি বিরুপ ছিল কারণ মিশর আলজেরিও বিদ্রোহের সাহায্য করছিল এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স এই খালের সাথে সম্পর্কিত ছিল কেননা একজন ফরাসী এটি খনন করেছিলেন। ফিলিস্তিনের ফিদেইন হামলা এবং মিশর কর্তৃক তিরান প্রনালীর অবরোধের কারনে ইসরাঈল যেকোন উপায়ে নাসেরের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অপেক্ষায় ছিল। সেকারণে স্যার অ্যান্থনী এডেন (ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) ফ্রান্স এবং ইসরাইলের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় কূট পরিকল্পনা হাতে নেন ।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনাই উপদ্বীপ এলাকা দিয়ে ইসরাইল মিশরকে দখল করে নেবে। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তখন বিবদমান পক্ষগুলোকে যুদ্ধ বন্ধ করবার জন্য একটি সময়সীমা বেধে দেবে অথবা খালটিকে ‘রক্ষার’ জন্য হস্তক্ষেপ করবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সরে যাবার জন্য ব্রিটেনের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। রাশিয়া— লন্ডন এবং প্যারিসকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দেয়। ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স মিশর থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। আইজেনহাওয়ার এর নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে ইসরাইলকে অধিকৃত মিশরের ভূমি থেকে সরে আসবার জন্য চাপ দিতে থাকে—যদিও ইসরাইলের জন্য তখন এ ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছিল অসুবিধাজনক। আর এরপরই মার্কিনীরা মধ্যপ্রাচ্যে প্রাধান্য বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে আবিভূর্ত হয়।
১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধ
এ যুদ্ধটিও ছিল এ অঞ্চলে ইঙ্গ—মার্কিন আধিপত্যের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি হিসেবে ১১ বছর আগে ভূমিকা খর্ব হলেও জর্ডান, সিরিয়া ও ইসরাইলে ব্রিটেনের প্রতি অনুগত শাসকগণ তখনও ছিল। নাসেরকে দুর্বল করবার লক্ষ্যে ভবিষ্যত শান্তিপ্রক্রিয়ায় দর কষাকষির উপকরণ হিসেবে মিশরের কিছু ভূমি দখল করে নেবার জন্য ব্রিটেন ইসরাইলকে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। ১৯৬৭ সালের ৫ জুন তারিখে ইসরাইল আক্রমণ করে মিশরের শতকরা ৬০ ভাগ ভূমিতে অবস্থানরত বিমানবাহিনী এবং সিরিয়া ও জর্ডানের শতকরা ৬৬ ভাগ যুদ্ধরত বিমানবাহিনী ধ্বসিয়ে দেয়। জর্ডান নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ইসরাইল দখল করে নেয়। যুদ্ধের আগে বাদশাহ হোসেন তার সেনাবাহিনীকে মূল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দুরে সরিয়ে রাখে। মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পশ্চিম তীরের গুরুত্বপূর্ণ শহরসমূহ ইসরাইল দখল করে নেয়। যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনের মাথায় তারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। গোলান মালভূমিতে অবস্থানরত সিরীয় সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বেতারের মাধ্যমে জানতে পারে ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছে—যদিও তখনও গোলান মালভূমি সিরিয়ার অধিকারেই ছিল। তিরানে যাবার জলপথ শার্ম—আল—শেখ দখল করে নেবার মাধ্যমে ইসরাইল মার্কিনপন্থী নাসেরকে ভয়াবহ ধাক্কা দেয়। নাসেরের ক্ষমতাকে খর্ব করার লক্ষ্য অর্জিত হয় এবং অত্র অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য পাকাপোক্ত হয়। ইসরাইলের আরও ভূমি দখল করে নেবার সক্ষমতা ছিল এবং ১৯৪৮ সালের মত দখলের খাতিরে দখলের জন্য নয় বরং এটাকে এখন পর্যন্ত শান্তি প্রক্রিয়ায় দর কষাকষির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ বিভাজন পরিকল্পনার (UN Partition Plan) আওতায় ইসরাইলকে শতকরা ৫৭ ভাগ ভূমি ও ফিলিস্তিনীদের শতকরা ৪২ ভাগ ভূমি প্রদান করে। কিন্তু ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইল এটাকে বাড়িয়ে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের ৭৮ ভাগ দখল করে নেয়।
১৯৭৩ সালের যুদ্ধ
মিশর এবং সিরিয়া কতৃর্ক ইসরাইলের বিরুদ্ধে চালানো ১৯৭৩ সালের যুদ্ধ বিশেষণ করলে দেখা যায়—এর লক্ষ্য ছিল সীমিত এবং কখনওই এটা ফিলিস্তিনীদের মুক্ত করবার জন্য পরিচালিত হয়নি। এমনকি গোলান মালভূমিকে (যা ছিল সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যকার শান্তিচুক্তির বিষয়) মুক্ত করবার জন্যও এ যুদ্ধ পরিচালিত হয়নি। এ যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল অনেকটা সেনাঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অপেক্ষাকৃত নতুন রাষ্ট্রনায়ক আনোয়ার সাদাত ও হাফিয আল আসাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবার জন্য। সাদাতের অবস্থান এক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ছিল। কেননা তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় নাসেরের স্থলাভিসিক্ত হয়েছিলেন।
যুদ্ধের প্রত্যক্ষদশীর্ ও ১৯৫৭—১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আল আহরামের সম্পাদক মুহম্মদ হেকেল তার বই ‘দি রোড টু রামাদান’—এ এই যুদ্ধে আনোয়ার সাদাতের লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি সাদাতের একজন জেনারেল মুহম্মদ ফাউজীর বরাত দিয়ে বলেন, সংঘটিত যুদ্ধকে তুলনার জন্য একটি সামুরাই চিত্র যেখানে একটি লম্বা তলোয়ার ও খাটো তলোয়ার রয়েছে সেটি উপস্থাপন করা হয়। জেনারেল ফাউজী ছোট তলোয়ারটিকে দেখিয়ে বলেন, এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য অত্যন্ত সীমিত।
ইসরাইলের সাথে একটি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবার কোন অভিলাষ আনোয়ার সাদাতের ছিল না। সেকারণে যুদ্ধ জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি করা হয়। প্রথম ২৪ ঘন্টার যুদ্ধে মিশর মাত্র ৬৮ জনের প্রাণের বিনিময়ে সুয়েজ খালের পূর্বদিকে অবস্থিত বার—লেভ প্রাচীরগুলো গুড়িয়ে দেয়। ২ টি সিরীয় ডিভিশন ও ৫০০ ট্যাঙ্ক গোলান মালভূমির দিকে অগ্রসর হয়ে ১৯৬৭ সালে অধিকৃত কিছু অংশ পূর্ণদখল করে নেয়। মাত্র দু’দিনের যুদ্ধে ইসরাইল ৪৯ টি এয়ারক্রাফট ও ৫০০ টি ট্যাঙ্ক হারায়। এর মধ্যে আনোয়ার সাদাত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জারকে পাঠানো একটি খবরে যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উলেখ করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং কোন আংশিক সমঝোতা নয়’ এই খবরের অর্থ দাড়ায় যে, যদি ইসরাইল দখলকৃত ভূমি ছেড়ে চলে যায় তাহলে মিশর জাতিসংঘ কিংবা অন্য কোন নিরপেক্ষ কারও মধ্যস্থতায় শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে প্রস্তত।
কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্তেও আনোয়ার সাদাত শান্তি চুক্তিতে প্রস্তত ছিল। আনোয়ার সাদাতের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ছাড় দেবার কারণে ইসরাইল মার্কিনীদের সমর্থন নিয়ে অধিকৃত অঞ্চল ছেড়ে খুব সহজে সটকে পড়ে। আর এতে করে ১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবর তারিখে যুদ্ধের অবসান ঘটে।
ইসরাইলের সাথে সংঘটিত প্রতিটি যুদ্ধে মুসলিম প্রতারক শাসকগন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করবার জন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আন্তরিকতার সাথে লড়েনি। উপরের যুদ্ধের ঘটনাসমূহ সঠিকভাবে না জানা থাকার কারণে ইসরাইলের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ব্যাপক বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বাসঘাতক মুসলিম শাসকগন এ ধরণের বিভ্রান্তি সৃৃষ্টির পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ইসরাইলের আধিপত্যকে তারা লালন করেছে, উস্কে দিয়েছে এবং বহাল তবিয়তে বলবৎ রেখেছে। আরব বিশ্ব কখনই ইসরাইলকে উৎখাতের জন্য এককভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে কাজ করেনি। প্রতিটি যুদ্ধের পেছনে ইসরাইলের সমূল উৎপাটন কিংবা ফিলিস্তিন মুক্ত করবার বদলে অন্য উদ্দেশ্যগুলো কাজ করেছে। সম্মিলিতভাবে ব্যাপক শক্তিশালী আরব দেশসমূহ ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা ও বৈধতাকে কখনই আন্তরিকতার সাথে চ্যালেঞ্জ করেনি।