আল ক্বাদা ওয়াল ক্বদর

আল ক্বাদা ওয়াল ক্বদর বিষয়টি একটি বহুল আলোচিত বিষয় এবং একটি গভীর চিন্তা-ভাবনার বিষয়। আল ক্বাদা ওয়াল ক্বদর বিষয়টি মানুষ তার কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন নাকি পরাধীন সে বিষয়ের আলোচনা। অতীতে বহু স্কলার বিভিন্নভাবে বিষয়টিকে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করেন কুর’আন এবং সুন্নাহ’র ভিত্তিতে। তারা বিষয়টিকে আল্লাহ’র সৃষ্টি, জ্ঞান ও তাঁর ইচ্ছার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে যৌক্তিক (logical) ভাবে আলোচনা করেন। এখানে উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসূল ও সাহাবীদের আমলে আল-কাদা ওয়াল কাদর অর্থাৎ মানুষ কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীন না পরাধীন – এ আলোচনা ছিল না, তাদের মধ্যে কেবল আল-কদর তথা আল্লাহর সুবিশাল জ্ঞান নিয়ে আলোচনা ছিল, অর্থাৎ আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই, সবকিছু তার জ্ঞান অনুযায়ী ঘটে। কিন্তু এ বিষয়টি মানুষকে স্বাধীন করে না পরাধীন করে, এ আলোচনা ছিল না। বরং তাবেঈ আমলে এ আলোচনাটি নব্য ইসলামে প্রবেশকারী গ্রীক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত মুসলিমদের হতে আলোচনাটি উম্মাহর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং উম্মাহর মাঝে তিনটি গোষ্ঠী তিনভাবে আলোচনাটি চলমান রাখে। যেমন: আহলুস সুন্নাহ তথা আশ’আরি, আল জাবরিয়াহ ও আল মু’তাজিলা। জাবরিয়্যাহগণ দাবী করেন মানুষ তার কাজের ক্ষেত্রে পরাধীন, মানুষের উদাহরন ঠিক সেরকম যেরকম একটি পাখির পালক বাতাসে ভেসে বেড়ায়, তার কোন নিজস্ব স্বাধীনতা নেই, বাতাস তাকে যেদিকে নেয়, সেদিকেই ভেসে যায়। অপরদিকে, মু’তাজিলারা দাবি করে, মানুষ তার কাজ ও ইচ্ছার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন, কারণ আল্লাহ হচ্ছেন আল-আদিল (ন্যায়পরায়ণ)। সুতরাং, তিনি যদি মানুষকে জোর করে সবকিছু করিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের শাস্তি দেবার ক্ষেত্রে তা যুলুম হয়, সুতরাং, মানুষ স্বাধীনভাবে সবকিছু করে এবং সে তার কাজের ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। এ দুই চিন্তার মাঝে সমাধান করার জন্য অপর এক চিন্তার উদ্ভব হয়, তারা নিজেদের আহলুস সুন্নাহ বলতো, তাদেরকে আল-আশআরীও ডাকা হয়। তারা বলেন মানুষ কেবল চিন্তার ক্ষেত্রে স্বাধীন, সে চিন্তা করলে আল্লাহ তাদের কাজ সৃষ্টি করে দেন, এভাবে স্বাধীন ইচ্ছার মাধ্যমে মানুষ তার কর্ম কামাই (কাসব ইখতিয়ারি) করে এবং তার জন্য জবাবদিহী করবে। এ তিন গোষ্ঠীই তাদের চিন্তা গায়েব সংক্রান্ত কুরআন ও সুন্নাহর দলীল দিয়ে করছিল।

প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, আমাদের সীমাবদ্ধ ও সংকীর্ণ জ্ঞান দ্বারা গায়েবের বিষয় তথা আল্লাহ’র জ্ঞান ও ইচ্ছা সম্পর্কে জানা অসম্ভব। আল্লাহ’র সৃষ্টির রহস্য, তিনি কিভাবে সবকিছু জানেন এবং তা লাওহে মাজফুযে লিখে রেখেছেন, তিনি কিভাবে ইচ্ছা করেন এবং তা কিভাবে মানুষের উপর কাজ করে এই বিষয়গুলো সবই মানুষের চিন্তার সীমার বাইরে। মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি খাটিয়ে এসব বিষয়ের গুঢ় রহস্যভেদ করতে অক্ষম। যেহেতু আল্লাহ’র জ্ঞান ও ইচ্ছা সম্পর্কে আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান বা বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োগ দ্বারা বুঝা অসম্ভব, তাই একে শুধুমাত্র আমাদের বিশ্বাসের অংশই করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজের ক্ষেত্রে প্রধানত বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জন অথবা আল্লাহ’র দেওয়া শাস্তি অথবা পুরষ্কার। অর্থাৎ একটি কাজ করার ক্ষেত্রে মানুষ চিন্তা করবে এ কাজে কি আল্লাহর পুরস্কার রয়েছে? যদি থাকে, তবে সে কাজটি করতে ধাবিত হবে। আর যদি কাজটিতে শাস্তি থাকে তাহলে সে কাজটি হতে বিরত থাকবে। এর বাইরে অন্য কোনো ভিত্তিতে সে চিন্তা করবে না। গায়েবের অচিন্তনীয় বিষয়াদিকে দুনিয়াবী বাস্তবতার উপর যৌক্তিকভাবে (logically) প্রয়োগ করা হতে বিরত থাকতে হবে এবং এ দুয়ের মাঝে মোটা দেয়ালের ব্যবধান রাখতে হবে।

এই মহাবিশ্বে যত ঘটনা ও কাজ হয় তা প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় মানুষ দুটো বলয় বা প্রেক্ষাপটের মাঝে অবস্থান করে। একটি বলয়কে সে নিয়ন্ত্রন করে, আর অপর বলয়ে তার নিয়ন্ত্রন থাকে না। মহাবিশ্বে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা, যেমন, সূর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়া, সূর্যের চারিপার্শ্বে গ্রহের আবর্তন, মানুষের জন্ম-মৃত্যু, মানুষ সুন্দর বা কুৎসিত হওয়া, প্রাকৃতিক দূর্যোগসমূহ ইত্যাদি কাজগুলো সংঘটনের ক্ষেত্রে মানুষের কোন চুড়ান্ত নিয়ন্ত্রন নেই এবং এই কাজগুলো মহাবিশ্বের নিয়মের অধীন। এই কাজগুলো দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়। আবার, কিছু ঘটনা রয়েছে যা মানুষ সূচনা করে, কিন্তু, পরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। যেমন: সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় একজন মানুষ পা পিছলে পড়া, হাত থেকে মোবাইল নিচে পড়ে যাওয়া, আপেল কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলা, পানি পান করতে গিয়ে নাকে পানি উঠে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, লক্ষস্থির করে কোনো কিছু নিক্ষেপ করার পর তা লক্ষচ্যুত হওয়া, কোনো দেয়ালের উপর দিয়ে হেটে চলার সময় পিছল খেয়ে নিচে কোনো কিছুর উপর পরা ইত্যাদি ঘটনাগুলো মানুষ দ্বারাই ঘটে; কিন্তু তা মানুষ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। এই ঘটনাগুলো দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয় এবং এগুলো মহাবিশ্বের কোন নিয়মের মধ্যে পড়ে না।

উপরের ঘটনাগুলোকে বিবেচনা করলেই সহজে বুঝতে পারি, কোন কাজগুলো মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে তথা আল্লাহ দ্বারা নির্দিষ্ট। সুতরাং, যে বলয়ে সংঘটিত ঘটনার ক্ষেত্রে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্তৃত্ব নেই, সে বলয়ের ঘটনাগুলোকে ক্বাদা বলা হয়, এবং এসব ক্বাদা – ভালো কিংবা মন্দ হোক – আল্লাহ পক্ষ হতে এবং এসব সিদ্ধান্ত আল্লাহর সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নিতে হবে। এই বলয়ে সংঘটিত কাজের জন্য তাকে আল্লাহর মুখোমুখি হতে হবে না অর্থাৎ কোন শাস্তি পাবে না। এসব বাস্তবতার বাইরে কুরআন সুন্নাহ হতেও আমরা বেশ কিছু ক্বাদার উদাহরণ পাই, যেমন, রিযক এর পরিমান নির্ধারিত, মানুষ যেহেতু জানে না কত পরিমান নির্ধারিত, তাই সে চেষ্টা করে এটি কামাই বা বেশি পাবার জন্য, কিন্তু সে ততটুকুই রিযক অর্জন করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই দিনের শেষে কম পেয়েছে মনে করে তার হতাশার কোনো কারণ নেই। এছাড়াও, আল্লাহর পথে, ইসলামের দিকে সমাজকে আহ্বান করার সময় আল্লাহর পথে জেল, যুলুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়াও এক প্রকার ক্বাদা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। সুতরাং, ক্বাদা তা আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হোক কিংবা মন্দ মনে হোক, তা আল্লাহর পক্ষ হতে আসা সিদ্ধান্ত এবং এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অসহিষ্ণু না হয়াই বাঞ্ছনীয়।

এ গেল যে বলয়ে মানুষের কোনে নিয়ন্ত্রন নেই। এখন, যে বলয়ে মানুষের নিয়ন্ত্রন রয়েছে অর্থাৎ, মানুষ কোন ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং কোন ক্ষেত্রে পরাধীন তা সহজেই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বোঝা যায়। মানুষের তার জীবিকা কিভাবে আহরণ করবে, এ ক্ষেত্রে সে কি ঘুষ, চুরি, ডাকাতি করবে নাকি ব্যবসা, চাকরি ইত্যাদি দিয়ে করবে; সে কী খাবে বা সে কী খাবে না, তা তার ইচ্ছাশক্তির সাথে সম্পর্কিত। এতে তার সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। এগুলো করার ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। এছাড়াও সে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে কি করবেনা, তাও তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির সাথে সম্পর্কিত। এ বলয়ে সংগঠিত কাজের ক্ষেত্রে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্তৃত্ব রয়েছে এবং সেগুলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া বিধান অনুযায়ী করলে পুরস্কৃত হবে আর না করলে শাস্তির মুখোমুখি হবে।

এক্ষেত্রে অনেকেই একটি বিভ্রান্তিতে থাকেন। অনেকে শরীআহ তথা হালাল-হারাম বহির্ভুত সেকুলার জীবনপ্রণালীতে অভ্যস্ত থাকায় মনে করেন, তারা যা করছেন তার বাইরে যাওয়াটি অসম্ভব, তারা এভাবেই সৃষ্ট। কেউ কেউ মনে করেন, তারা নিজেরাই নিজেদের প্রবৃত্তিকে সৃষ্টি করেন, এবং চাইলে এ প্রবৃত্তিকে দমন করা সম্ভব। আবার কেউ কেউ মনে করে নির্দিষ্ট কিছু বস্তুর বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট কিছু ফলাফল বা বিবর্তন বয়ে আনে, এতে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তারা বস্তুর বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তির প্রবৃত্তি সম্পর্কে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এক্ষেত্রে ক্বদর এর আলোচনা চলে আসে। ক্বদর শব্দের অর্থ হল বৈশিষ্ট্য। এই মহাবিশ্বে মানুষ ও বস্তু সমূহের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গুনাগুন রয়েছে। যেমন: পাতার রং সবুজ, সূর্যের তাপ, পানির স্বাদ ও রং, ছুরির ধার, আগুনের তাপ, লবনের স্বাদ, চিনির স্বাদ মিষ্টি ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যসমূহ নির্ধারিত ও অপরিবর্তনীয়। এছাড়া মানুষের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য দেয়া আছে, যেমন: প্রবৃত্তি ও জৈবিক চাহিদাসমূহ ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যসমূহ দিয়ে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেন। প্রবৃত্তিগুলো মানুষের মাঝে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়, যেমন, যৌনাকাংখা, আবেগ, লোভ, ক্ষমতার লিপ্সা, বাড়ি গাড়ির আকাঙ্ক্ষা, সন্তান, বাবা, মা ও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি। জৈবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য খাওয়া, ঘুমানো, পানি পান করা, নিশ্বাস নেয়া ইত্যাদি। বস্তু ও ব্যক্তির মাঝে এ বৈশিষ্ট্যগুলো থাকার ক্ষেত্রে মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই এবং এগুলোকে দমন বা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে মানুষের কোনো সক্ষমতা নেই, বরং এগুলো আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য। তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই সকল বৈশিষ্ট্য দ্বারা কখনো মানুষকে কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে বাধ্য করেন না। যেমন: যৌনাকাংখা কখনো মানুষকে তা পূরণে বাধ্য করে না কিংবা ব্যক্তি তা পূরণ করলেও কোনো নির্দিষ্টভাবে পূরণ করতে সে বাধ্য না। মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি দ্বারাই তা কোনো এক পন্থায় তা পূরণ করে। এই সকল বৈশিষ্ট্যকে মানুষ ভালো কাজে ব্যবহার করলে অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে ব্যবহার করলে পুরস্কার পাবে, আর ভুল কাজে ব্যবহার করলে শাস্তি পাবে। উদাহরণস্বরূপ, ছুরির ধার আল্লাহর দেয়া, এ ছুড়ি দিয়ে মানুষের ক্ষতি হতে পারে, আবার এ ছুড়ি দিয়ে মানুষ কল্যাণকর কাজও করতে পারে। এখন যে আল্লাহর বিধান অমান্য করে এ ছুড়ি দিয়ে অকল্যাণকর কাজ করবে, সে তার জন্য গুনাহগার হবে, আবার যে তা দিয়ে কল্যাণকর কাজ করবে, সে তার জন্য পুরস্কৃত হবে। আবার, যৌনাকাংখা মানুষের প্রজনন প্রবৃত্তির একটি প্রকাশ। এখন ব্যক্তি চাইলে তার প্রবৃত্তির এ তাড়না দিয়ে আল্লাহর হুকম অমান্য করে যেনায় লিপ্ত হতে পারে, আবার আল্লাহর হুকম অনুযায়ী বিয়ের মাধ্যমে তা পূরণ করতে পারে। প্রবৃত্তি এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ, প্রবৃত্তি মানুষকে কোনো নির্দিষ্ট জীবনপদ্ধতি দিয়ে তা পূরণ করতে বলে না, বরং মানুষ নিজেই তার স্বাধীন ইচ্ছা খাটিয়ে একটি জীবনপদ্ধতি অনুযায়ী চলে। অনেকে একটি জীবনপদ্ধতিতে লম্বা সময় ধরে চলা কারণে তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, এবং অন্য জীবনপদ্ধতিতে যাওয়াটিতে কষ্টকর মনে করেন। কিন্তু কোনো কিছু কষ্টকর হওয়া মানে তা অসম্ভব তা নয় কিংবা এ পথে তাকে তার প্রবৃত্তি বাধ্য করছে, তাও নয়। বরং, দৃঢ় প্রত্যয় অবলম্বন করে নতুন জীবনপদ্ধতিতে চলতে শুরু করলেই তা এক সময় সহজতর হয়ে যায়।

এ আলোচনা থেকে বোঝা গেল, আল-ক্বাদা ওয়াল ক্বদরের ঐতিহাসিক আলোচনার সাথে মানুষের কাজের কোনোই সম্পর্ক নেই। কুরআন, সুন্নাহর গায়েবি বিষয়াদি ও যুক্তির মাধ্যমে মানুষ স্বাধীন কি স্বাধীন না – এটি একটি অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক। বরং মানুষের কাজ করবার ভিত্তি হলো কাজটির মাঝে আল্লাহর তরফ হতে পুরস্কার না শাস্তি রয়েছে। আর জীবনের কোন ক্ষেত্রে মানুষ স্বাধীন বা পরাধীন – তা সে তার বুদ্ধিবৃত্তি খাটালেই বুঝতে পারবে। এই হলো আল-ক্বাদা ওয়াল ক্বদরের আলোচনা। যে আলোচনা উপলব্ধি করলে একজন মুসলিম সকল হতাশা, অদৃষ্টবাদ ঝেড়ে ফেলে ধাবিত হবে আল্লাহর পুরস্কার পাবার জন্য ও তাঁর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য। এ আলোচনা একটি সমাজকে কর্মবিমুখতা হতে বের করে পুনর্জাগরণের দিকে নিয়ে যাবে। সে সমাজে একজন মুসলিম তার সকল কাজ, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সকল সময় সতর্ক থাকবে। সে তার সকল কাজগুলোকে অতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের সাথে পালন করবে এবং এর বাইরে আরো কল্যাণকর কাজের দিকে ধাবিত হবে। সফল হলে সে শুকরিয়া আদায় করবে এবং বিফল হলে ধৈর্য্যধারণ করবে। যে কোন আপতিত ক্বাদা বা বিপদে তিনি ধৈর্য্যধারণ করবেন। কারণ সকল ভাল ও মন্দ বিপদ-আপদ আসে আল্লাহর পক্ষ হতে, আর মুমিনের দায়িত্ব হল আল্লাহর বিধান মেনে কাজটি সঠিক ভাবে করার চেষ্টা করা এবং ফলাফলের উপর আল্লাহর উপর নির্ভর করা। সে আখিরাতের শাস্তির ব্যাপারে ভীত থাকবে এবং পুরস্কারের আশায় থাকবে। এবং এর চাইতেও উত্তম বিষয় তার চুড়ান্ত আকাংক্ষায় থাকবে, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি (রিদওয়ান আল্লাহ)।

Leave a Reply