খিলাফত রাষ্ট্রের সঙ্গীত

অন্যান্য জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্র থেকে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রকে আলাদা করার জন্য বিশেষ কোন শ্লোগাণ বা সঙ্গীত গ্রহণ করা শারী’আহ্ কর্তৃক অনুমোদিত (মুবাহ্) একটি বিষয়। অতীতে মুসলিমদের নির্দিষ্ট শ্লোগাণ ছিল, যা তারা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রট্টপক্ষকে মুকাবিলা করার সময় ব্যবহার করতো। রাসূল (সা) এর সময়ই এ বিষয়টি প্রচলিত ও অনুমোদিত ছিল। খন্দক ও বনু কুরাইযা’র বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলিমদের শ্লোগাণ ছিল ‘হা মীম, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’। আর, বনু মুসতালিক এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের শ্লোগাণ ছিল ‘তোমরা, যারা সাহায্যপ্রাপ্ত, মৃত্যু বহন করে আনো, মৃত্যু বহন করে আনো’ ইত্যাদি। 

এছাড়া, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তি, এগুলো মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার রহমত হিসাবে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য এবং এ বিষয়গুলো দলিল অনুযায়ী ইবাহাহ্ বা মুবাহ (অনুমোদিত) বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং, মানুষ যা চায় বলতে পারে, যা চায় দেখতে পারে কিংবা, কোন বিষয়ে আবেগাপ্লুত হতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোন শারী’আহ্ দলিল থাকে।    

সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য একটি নির্দিষ্ট শ্লোগাণ বা সঙ্গীত গ্রহণ করা অনুমোদিত, যার মাধ্যমে তারা আবেগাপ্লুত হবে এবং যা দিয়ে তারা অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে নিজেদের পৃথক করবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হবে এবং খলীফা যখন আন্যান্য রাষ্ট্রে সফর করবেন তখন এটি তাকে সঙ্গ দেবে, অর্থাৎ, এ শ্লোগাণটি ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, এটি জনগণকে আবেগাপ্লুত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: সমাবেশ, গণজমায়েত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা, সম্প্রচার কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহার করা যেতে পারে। 

শ্লোগাণ ব্যবহার করার পদ্ধতির মধ্যে থাকবে: ব্যাপক শোরগোল, নাসিক্যের আওয়াজ ব্যবহার করে বা, না করে নিম্নস্বরে বা উচ্চস্বরে কথা বলা, ইত্যাদি; এসবই শারী’আহ্ কর্তৃক অনুমোদিত। কারণ, অতীতে সাধারণত: মুসলিমরা (রাসূলের (সা) সময়েও) বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে তাদের আবেগ প্রকাশের লক্ষ্যে উত্তেজিত ভঙ্গীতে কবিতা আবৃত্তি করতো।

খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য একটি শ্লোগাণ বা সঙ্গীত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনানুসারে এটি ব্যবহার করা হবে; বিশেষ করে খলীফা যখন অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন তখন এটি ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, বিভিন্ন উপলক্ষ্যে উম্মাহ্’র এটি ব্যবহার করবে। আল্লাহ্’র ইচ্ছায় যখন দ্বিতীয়বার নবুয়্যতের আদলে খিলাফত আসবে, তখন রাষ্ট্রের শ্লোগাণ বা সঙ্গীতের ব্যাপারে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ মনে রাখতে হবে: 

১. এতে উল্লেখিত থাকবে, রাসূল (সা) প্রদত্ত সুসংবাদ অনুযায়ী দ্বিতীয়বার খিলাফত ফিরে আসার ভবিষ্যতদ্বাণী পূর্ণ হবার কথা এবং আবারও উকাবের ব্যানার তথা রাসূলু (সা) এর ব্যানার উত্থিত হওয়ার কথা।

২. এতে উল্লেখিত থাকবে, আল্লাহ্’র রাসূল (সা) প্রদত্ত সেই সুসংবাদের কথা যে, যখন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন এ পৃথিবী তার সমস্ত সম্পদ উজাড় করে দেবে, আসমান তার সমস্ত রহমত বর্ষিত করবে এবং সমগ্র পৃথিবী জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতনে পরিপূর্ণ হবার পর আবারও ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ হবে। 

৩. এতে উল্লেখিত থাকবে, খিলাফত রাষ্ট্রের শাসন-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার পর সমগ্র বিশ্বব্যাপী এর জয়যাত্রা এবং সত্য ও ন্যায়ের আলোকদ্যুতি চর্তূদিকব্যাপী বিস্তারের কথা; বিশেষ করে তিনটি পবিত্র ভূমিতে: অর্থাৎ, যে ভূমিগুলোতে মসজিদ-উল-হারাম, মসজিদ-উল-নববী এবং মসজিদ-উল-আকসা, যেখান থেকে ইহুদীদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করা হবে।

৪. এটি শেষ হবে, এ উম্মাহ্’র পূণরায় শ্রেষ্ঠ উম্মাহ্ হিসাবে প্রত্যাবর্তনের বর্ণনা দিয়ে, যেভাবে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের দেখতে চেয়েছেন; যেখানে তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন, যিনি তাদের স্বীয় রহমত, ক্ষমা ও করুণার মাধ্যমে জান্নাতুল ফেরদৌস প্রদান করে সম্মানিত করবেন।

৫. এতে অবশ্যই তাকবীর ধ্বনিটি পুনঃ পুনঃ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। কারণ, ইসলাম ও মুসলিমদের জীবনে তাকবীর ধ্বনির রয়েছে বিশেষ প্রভাব। বস্তুতঃ তাকবীরই হচ্ছে সেই ধ্বনি যা মুসলিমদের বিজয় উৎসবে, অবকাশ যাপনের দিনগুলোতে, কিংবা, যে কোন অনুষ্ঠানে কার্যকরীভাবে এবং তাদের মুখ থেকে সবসময় উচ্চারিত হবে।  উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রেখে এই বইয়ের সূচীপত্রে এ রকম একটি সঙ্গীত একদিন সংযুক্ত করা হবে এবং আল্লাহ্’র ইচ্ছায় এর পরিবেশন পদ্ধতিও যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে, ইন্শাআল্লাহ্ । 

আমাদের শেষদোয়া হল শুধুই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রশংসা করা, যিনি এ বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রভু ও মহান প্রতিপালক।

Leave a Reply