অন্যান্য মাযহাবের আলেমগণের মত হানাফী আলেমগণও খিলাফতের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন ক্রমাগতভাবে সকল যুগেই। বস্তুতঃ অন্যান্য আলেমগণের চেয়ে হানাফী আলেমগণকে শাসন ও সরকার পরিচালনার মত বিষয়গুলোতে বেশি বক্তব্য দিতে হয়েছে; কারণ অনেক খলিফারাই (মূলতঃ আব্বাসীয় ও উসমানীয় খলিফারা) হানাফী মাযহাবকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গ্রহণ করেছিলেন এবং তৎকালীন সময়ের হানাফী আলেমগণের নিকট পরামর্শ ও আইনের বিষয়ে জানতে চাইতেন। যেমন, আব্বাসীয় খলিফা হারুন আর রশিদ, আবু হানিফা (রহ.)-এর ছাত্র ও সহচর আবু ইউসুফ (রহ.)-এর নিকট প্রশ্ন লিখে রাষ্ট্রের অর্থায়নের ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে আবু ইউসুফ লিখে পাঠিয়েছিলেন তার বিখ্যাত ও চমৎকার রচনা “আল-খারাজ” যাতে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের নানাবিধ শারী’আহ্ নিয়মের বিশদ ব্যাখ্যা ছিল।
এই নিবন্ধে আমরা খিলাফত সম্পর্কে হানাফী আলেমগণের বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরবো যাতে উপমহাদেশের উলামা, শারী’আহ্ জ্ঞানের ছাত্রবৃন্দ ও খিলাফতের রাজনৈতিক কর্মীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়, যাদের অধিকাংশই হানাফী মাযহাবের অনুসারী।
ইমাম আন-নাসাফি (মৃ. ৫৩৭ হিজরী) খিলাফতের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন তার আক্বীদাহ্ বিষয়ক বিখ্যাত “আক্বাঈদ আল-নাসাফিয়া” রচনার ৩৫৪ নং পৃষ্ঠায়:
والمسلمون لا بد لهم من إمام يقوم بتنفيذ أحكامهم وإقامة حدودهم وسد ثغورهم وتجهيز جيوشهم وأخذ صدقاتهم وقهر المتغلبة والمتلصصة وقطاع الطريق وإقامة الجمع والأعياد وقطع المنازعات الواقعة بين العباد وقبول الشهادات القائمة على الحقوق وتزويج الصغار والصغائر الذين لا أولياء لهم وقسمة الغنائم.”
“মুসলিমদের অবশ্যই একজন ইমাম থাকতে হবে, যার দায়িত্ব হলো আহ্কাম বাস্তবায়ন, হুদুদ রক্ষণাবেক্ষণ, সীমান্তগুলো পাহারা, সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসস্ত্রে সুসজ্জিত, যাকাত গ্রহণ, বিদ্রোহী, চোর ও মহাসড়কের ডাকাতি নিয়ন্ত্রণ, জুমু’আ ও দুইটি ঈদ প্রতিষ্ঠিত, জনগণের মধ্যকার বিভেদের মীমাংসা, আইনী অধিকারের ভিত্তিতে স্বাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ; অভিভাবকহীন যুবক-যুবতীদের বিয়ের ব্যবস্থা এবং গণীমতের মাল বিতরণ করা।”
তিনি এখানে তুলে ধরেছেন ইসলামে খিলাফত রাষ্ট্র কতখানি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং দেখিয়েছেন যে, ইসলামের অসংখ্য মৌলিক দায়িত্বগুলো (ফরয) কিভাবে এর উপর নির্ভরশীল এবং সঠিকভাবে পালন করা অসম্ভব।
নাসাফি (রহ.)-এর এই বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্মব্য করতে গিয়ে ইমাম সাদ আল-দীন আল-তাফতাযানি (রহ.) যিনি একজন শাফী মাযহাবের আলেম কিন্তু ‘আক্বাঈদ আল-নাসাফি’-এর সবচেয়ে সুপরিচিত ব্যাখ্যাটি লিখেন এবং অসংখ্য চমৎকার গ্রন্থের রচয়িতা যেগুলো ব্যাপক হারে পাকিস্তানের মাদরাসাগুলোতে পঠিত হয় যেমন: বালাগার ক্ষেত্রে তাঁর ‘মুখতাছার আল মা’নী’-তে বলেন,
“ثم الإجماع على أن نصب الإمام واجب وإنما الخلاف في أنه هل يجب على الله تعالى أو على الخلق بدليل سمعي أو عقلي. والمذهب أنه يجب على الخلق سمعاً، لقوله عليه السلام: ((من مات ولم يعرف إمام زمانه مات ميتة جاهلية)) ولأن الأمة قد جعلوا أهم المهمات بعد وفاة النبي عليه السلام نصب الإمام حتى قدموه على الدفن، وكذا بعد موت كل إمام، ولأن كثيراً من الواجبات الشرعية يتوقف عليه.”
“আলেমগণের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে যে একজন খলিফা নিয়োগ করা আবশ্যিক (ফরয)। শুধুমাত্র এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে এই দায়িত্ব কি আল্লাহ্’র না মানুষের এবং এটার দলিল কি লিখিত (নাকলী) না যৌক্তিক (আকলী)। সঠিক মতামত হচ্ছে এই দায়িত্ব মানুষের যা লিখিত দলিল দ্বারা প্রমাণিত, কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বলেন, “যে তার সময়কার ইমামকে না জেনে মৃত্যুবরণ করলো তার মৃত্যু জাহেলী যুগের মৃত্যু” এবং এই কারণেও যে, উম্মাহ্ (সাহাবাগণ) রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর মৃত্যুর পর একজন ইমাম নিয়োগ করাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গ্রহণ করেন, এমনকি রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর দাফন-এর চাইতেও এই কাজকে অধিক গুরুত্ব দেন; একইভাবে সকল ইমাম এর মৃত্যুর পরও এমনই করা হয়েছে। এবং এছাড়া আরেকটি কারণ হচ্ছে অন্যান্য শারী’আহ্ দায়িত্বগুলো এর উপরই নির্ভরশীল।” (শরহু আল-আক্বাঈদ আল-নাসাফিয়া, পৃষ্ঠা নং ৩৫৩-৩৫৪)
ইমাম আল-তাফতাযানি (রহ.) এখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করেন। প্রথমত, খিলাফত রাষ্ট্র ফরয হওয়ার বিষয়ে আলেমগণের ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেন। মতপার্থক্যের বিষয়ে তিনি যা উল্লেখ করেন তা হচ্ছে মূলতঃ শিয়াদের ব্যাপারে যারা মনে করতো এটা ফরয কিন্তু আল্লাহ্’র উপর (এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে ইমামগণ আল্লাহ্ কর্তৃক মনোনিত) এবং মু’তাযিলাদের ব্যাপারে যারা মনে করতো এটা একটি ফরয বিষয় যা মনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত (মনের ভিত্তিতে কিছু ফরয দায়িত্ব আসতে পারে – যা তাদের উসুলের ভিত্তি)। যদিও তিনি উল্লেখ করেন যে চার মাযহাবের সকল আলেমগণের মতে সঠিক মতামত হচ্ছে লিখিত দলিল (কুর’আন ও হাদীস)-এর আলোকে খিলাফত রাষ্ট্র মানুষের উপর একটি ফরয দায়িত্ব।
দ্বিতীয়ত, সহীহ্ মুসলিম-এর ইমামত (সরকার পরিচালনা) অধ্যায়ের একটি হাদিস তিনি উলেস্নখ করেন যেখানে মহানবী (সা:) বলেন, “যে ব্যক্তি আনুগত্যের শপথ (একজন খলিফার নিকট বাই’আত) ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে তার মৃত্যু জাহেলী যুগের মৃত্যু।” এখানে জাহেলী যুগের মৃত্যু বলতে হারাম বুঝাচ্ছে; ইবনে হাযর তার ফাতহ্-আল-বারী’তে এমনই ব্যাখ্যা করেন।
তৃতীয়ত, তিনি একটি সুবিদিত সত্য ঘটনার উলেস্নখ করেন, মহান সাহাবাগণ (রা.) খিলাফতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর দাফন বিলম্বে করেন, খিলাফতকে অগ্রাধিকার দেন। চর্তুত, অন্যান্য সকল দায়িত্বের চেয়ে খিলাফতের দায়িত্ব যে অধিকতর গুরুত্ববহ তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: এটি শুধুমাত্র একটি ফরয দায়িত্ব নয় বরং এমন একটি ফরয দায়িত্ব যার উপর অন্যান্য ফরয দায়িত্বসমূহ নির্ভর করে (যেমন নাসাফি (রহ.) যে দায়িত্বগুলো উল্লেখ করেছেন), সুতরাং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মূলক।
এখানে আরো একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, খিলাফত সম্পর্কিত আলোচনাগুলো আক্বীদাহ্ বিষয়ক বইগুলোতে আলোচিত হয়েছে যদিও খিলাফত কোন আক্বীদাহ্’গত বিষয় নয় বরং ফিকহ্ সম্পর্কিত বিষয়। এর কারণ হচ্ছে খিলাফতের ব্যাপারে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসের মাযহাবের ভুল অবস্থান ছিল। সুতরাং এই বিষয়ক বির্তকের মূলে বিশ্বাসগত (আক্বীদাহ্’গত) কারণ ছিল এবং যেহেতু ইসলামে এটি খুবই গুরুত্ববহ ব্যাপার সেহেতু আলেমগণ আক্বীদাহ্’র বইতে খিলাফতের আলোচনা করেন।
এজন্যই অনেক আলেম খিলাফতকে ইমামত হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ শিয়াদের মত কিছু মাযহাবের লোকজনের সাথে বিতর্কে ‘ইমামত’ শব্দটি জনপ্রিয় ছিল। উলেস্নখ্য যে, ইমামত ও খিলাফত উভয় শব্দ সমার্থক এবং এর দ্বারা মুসলিমদের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বুঝায়, যিনি ইসলাম বাস্তবায়নের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ইমাম ও খলিফা শব্দ দুটোও সমার্থক এবং এমন একজন ব্যক্তিকে বুঝায় যার মাধ্যমে এই নেতৃত্ব বাস্তবরূপ লাভ করে অথবা আধুনিক পরিভাষায় খিলাফত রাষ্ট্রের প্রধানকে বুঝায়। মহানবীও (সা:) এই বিষয়ে উভয় শব্দই ব্যবহার করেছেন। যেমন, খিলাফতের ঐক্যের গুরুত্ব সংক্রান্ত মুসলিম শরীফের হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বলেন, “যদি দুইজন খলিফাকে আনুগত্যের বাই’আত দেয়া হয় তবে দ্বিতীয়জনকে হত্যা কর।” খিলাফতকে ঢাল হিসেবে বর্ণনা করে মুসলিম শরীফের হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বলেন, “প্রকৃত পক্ষে, ইমাম হচ্ছে ঢাল…”
উপমহাদেশের সুপরিচিত আলেম শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ দেহলভীও (মৃ. ১১৫২ হিজরী) খিলাফতের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে গুরুত্বরোপ করেন:
“اعلم أنه يجب أن يكون في جماعة المسلمين خليفة لمصالح لا تتم إلا بوجوده…”
“জেনে রাখ মুসলিম জামায়াতের জন্য একজন খলিফার উপস্থিতি অপরিহার্য কারণ তার উপস্থিতি ব্যতীত উম্মাহ্’র অনেক স্বার্থই সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।” (হুজ্জাত আল্লাহি আল-বালিগা, ২:২২৯)
অবশ্যই হানাফি ফিকহ্-এর অনেক বইতেও খিলাফতের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১২শ হিজরী শতকের দামাস্কাস-এর প্রখ্যাত শা’ম’ই আলেম মুহাম্মদ আমিন ইবনে আবিদিন (মৃ. ১২৫২ হিজরী) এর সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। যিনি সম্ভবত পরবর্তী যুগের হানাফী আলেমগণের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত, বিশেষতঃ এই উপমহাদেশে। তিনি হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত নিরীক্ষাকারী (খাতিমাত আল-মুহাক্কিকিন) হিসেবে পরিচিত। তার ‘রাদ আল-মুহতার’ (সংশয়ের জবাব) গ্রন্থ, যেটির অন্য নাম হাসিয়াত ইবন তাবিদিন; এটাকে হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ বিষয়ে চূড়ান্ত বক্তব্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এটি একটি বিশদ ব্যাখ্যামূলক রচনা ১১ হিজরী শতকের বিজ্ঞ হানাফী ফকিহ্ আলাদীন আল-হাসকাফি (১০৮৮ হিজরী) এর চমৎকার রচনা ‘দুর আল-মুখতার’ (মুক্তো বাছাই) গ্রন্থের, যেটি আবার গাজার আল-তুরতুমাশি (১০০৪ হিজরী) রচিত ‘তানউইর আল-আবাসা’ গ্রন্থের ব্যাখ্যা।
ইমাম আল-হাসকাফি তার ‘দুর আল-মুখতার’ গ্রন্থে লিখেন (ব্র্যাকেটে ইবনে আবিদিন এর ব্যাখ্যা),
“فالكبرى استحقاق تصرف عام على الأنام، وتحقيقه في علم الكلام، ونصبه أهم الواجبات (أي من أهمها لتوقف كثير من الواجبات الشرعية عليه)، فلذا قدموه على دفن صاحب المعجزات (فإنه – صلى الله عليه وسلم – توفي يوم الاثنين ودفن يوم الثلاثاء أو ليلة الأربعاء أو يوم الأربعاء ح عن المواهب، وهذه السنة باقية إلى الآن لم يدفن خليفة حتى يولى غيره).”
“মূল ইমামত (খিলাফত) হচ্ছে জনগণের উপর সাধারণ কর্তৃত্বের অধিকার। এর আলোচনা ইলম আল-কালামের অংশ এবং এটা প্রতিষ্ঠা করা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব (শারী’আহ্’র অসংখ্য দায়িত্ব পালন এর উপর নির্ভর করায় এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব)। আর একারণেই সাহাবাগণ (রা.) রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর দাফন এর চাইতে এটাকে অগ্রাধিকার দেন [তিনি (সা:) সোমবার মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে দাফন করা হয় মঙ্গলবার দিনে বা বুধবার দিনে বা রাতে (বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী), এবং এই সুন্নাহ্ এখনো চালু রয়েছে যে নতুন খলিফা নিয়োগের পূর্বে বিগত খলিফাকে দাফন করা হয় না] (রাদ আল-মুহতার আলা আল-দুর আল-মুখতার, ১:৫৪৮)
অতএব, ইমাম হাসকাফি খিলাফতকে সংজ্ঞায়িত করেন জনগণের উপর সাধারণ কর্তৃত্ব হিসেবে। এর মাধ্যমে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন জনগণের কর্মকান্ড ব্যবস্থাপনা করা একটি অধিকার এবং একটি চূড়ান্ত অধিকার যার অর্থ সামগ্রিকভাবে খিলাফত রাষ্ট্রে অবস্থানরত সকল জনগণ ও তাদের কর্মকান্ড এর আওতাভুক্ত। এই অধিকার গভর্ণর ও বিচারকদের সীমিত অধিকারের বিপরীত, যাদের অধিকার শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট এলাকার কিছু সংখ্যক মানুষের উপর বর্তায়।
এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ইবন আবিদিন (রহ.) উদ্ধৃত করেন ‘শরহু আল-মাকাসিদ’ গ্রন্থে তাফতাযানির সংজ্ঞাকে, যিনি খিলাফতকে সংজ্ঞায়িত করেন এভাবে, “দ্বীন ও দুনিয়ার কর্মকান্ডের উপর সাধারণ নেতৃত্ব যা রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর উত্তরসূরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।”
সংজ্ঞার শেষাংশ নির্দেশ করে যে খিলাফত হচ্ছে মহানবী (সা:)-এর উত্তরসূরীর পদ। এর অর্থ হচ্ছে মহানবী (সা) উত্তরসূরী হিসেবে শারী’আহ্ বাস্তবায়নই খিলাফতের কাজ। এ কারণেই তাকে বলা হয় খলিফা যার শাব্দিক অর্থ উত্তরসূরী।
তারপর আল-হাসকাফি খলিফা হওয়ার জন্য শর্তসমূহ আলোচনা করেন। সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত কিছু শর্ত যেমন: মুসলিম, মুক্ত, পুরুষ, সুস্থ মস্তিস্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম হওয়া এবং কিছু শর্ত যেগুলোর বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যেমন: কুরাইশ, মুজতাহিদ ও সাহসী হওয়া ইত্যাদি শর্তসমূহ উল্লেখ করেন। কিছু দলের দাবী অনুযায়ী হাশেমী, আলাওয়ী বা ত্রুটিমুক্ত হওয়ার শর্তসমূহ তিনি খন্ডন করেন।
শাসন ও সরকার পরিচালনার ফিকহ্ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আরও বলা যায়, এই বিষয়ে অনেক হানাফীদের কাজ রয়েছে যারা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন; আবু ইউসুফ (১৬২ হিজরী)-এর কিতাব আল-খারাজ থেকে শুরু করে ইমাম মুহাম্মদ ইবন আল-হাসান আল শায়বানি (১৮৯ হিজরী)-এর আল-সিয়ার আল-সাগীর ও আল-সিয়ার আল-কাবীর; দুইজনই আবু হানিফার ছাত্র। পরবর্তী যুগের অনেকেও এই বিষয়ে লিখেছেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে, হানাফী মাযহাবের আলেমগণ খিলাফতকে চূড়ান্তভাবে গুরুত্ব দিতেন। ফলে বর্তমানের আলেম ও শারী’আহ্ জ্ঞানের ছাত্রদের এই বিষয়ে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া এবং নবুয়্যতের আদলে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে অগ্রবর্তী হওয়ার জন্য এগুলো উৎসাহ হিসেবে কাজ করবে।
মূল: উসমান বদর কর্তৃক লিখিত নিবন্ধ (কিছুটা পরিমার্জিত)