কিছু কিছু মুসলিমের চিন্তা যুক্তিনির্ভর সাদৃশ্যতা (Rational Analogy) দ্বারা প্রভাবিত। এই সাদৃশ্যতা বিবেচনায় তারা শারী’আহ্ প্রদত্ত ইঙ্গিত অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দলিলে উল্লেখিত ইল্লাহ্ (হুকুমের পেছনে ঐশী বা শারী’আহ্ প্রদত্ত কারণ) এর উপর নির্ভর করে না। তাদের মতে চিন্তা ব্যবহার করে সমগ্র শারী’আহ্ হতে যুক্তিনির্ভর ক্বিয়াস (Rational Qiyas) অনুধাবন করা যায়, তার জন্য নির্দিষ্ট কোন দলিলের প্রয়োজন নাই। শারী’আহ্ প্রদত্ত সুস্পষ্ট কোন ইঙ্গিত ছাড়াই এক হুকুমের সাথে অন্য হুকুমের সাদৃশ্যতা বিবেচনা করে মানব চিন্তা তা অনুধাবনে সক্ষম। শারী’আহ্ হুকুম ও অন্যান্য হুকুমের মধ্যে মাসলাহা’র (সুবিধা) ভিত্তিতে প্রাধান্য বিবেচনা করেও তা উপলদ্ধি করা সম্ভব।
উপরের যুক্তিগুলো কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের দৃষ্টিতে সমস্ত শারী’আহ্ আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, জীবন, চিন্তা, বংশীয় ধারা এবং সম্পদের সুরক্ষার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছে। সুতরাং যা কিছু এই পাঁচ বিষয়ের সুরক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই শারী’আহ্’র নির্দেশনা, শারী’আহ্ দলীলে তা উল্লেখ না থাকুক কিংবা তা বিবেচনায় কোন শারী’আহ্ ইল্লাহ্ (ঐশী কারণ) না থাকুক। দুটি বিষয়ের মধ্যে তুলনামূলক সাদৃশ্যতা বিবেচনা করার কারণেই তারা এরুপ করে থাকে। তাদের আরও যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু জরুরী প্রয়োজনে শারী’আহ্ হারাম কিছু ভক্ষণ ও মদ পান করাকে বৈধতা দিয়েছে সেহেতু দুটি বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্যতা বিবেচনা করে জরুরী প্রয়োজনে সুদের সম্পৃক্ততাও অনুমোদিত।
এ ধরনের বোধ সঠিক চিন্তার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও বৈপরীত্যপূর্ণ। এ ধরণের পদ্ধতির ধরণ হতে এর অসততার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এ ধরনের পদ্ধতির উপর না নির্ভর করা যায়, না গ্রহন করা যায়। কারণ যুক্তিনির্ভর সাদৃশ্যতার ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়সমূহকে এক জায়গায় এনে তাকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়সমূহ হতে আলাদা রাখতে হয়। কিন্তু আমরা দেখি শারী’আহ্ একই ধরনের অনেক বিষয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন রায় দিয়েছে এবং অন্যদিকে একাধিক ভিন্ন বিষয়ে একই প্রকার রায় দিয়েছে। তাছাড়া এটা এমন কিছু বিধানও দিয়েছে যা আমাদের চিন্তার আওয়ার বাইরে। তাই এই পদ্ধতিকে সমূলে প্রত্যাখ্যানে এতটুকুই যথেষ্ট।