৯ম অধ্যায়: একাধিক ইসলামী দল বা আন্দোলন থাকা কি বৈধ?

এই বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে কোনো আন্দোলন বা দলের কর্মসূচীর জন্য একটি সামগ্রিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে আমরা চেষ্টা করেছি। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা একে ভারাক্রান্ত করে তুলিনি বরং যেসব মৌলিক বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে সেগুলো আমরা বর্ণনা করেছি এবং বিস্তারিত বর্ণনার বিষয়টি দল ও এর মুজতাহিদগণের উপর ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এমন অনেক কর্মপ্রচেষ্টা বিদ্যমান, যেগুলো কোনো সঠিক ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত না। অনেক দলের ক্ষেত্রে বলা যায় যে তারা শরীআ’হ’র প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ পূরণ করেনি। আংশিক কাজ করতে ইচ্ছুক এমন কিছু মুসলিমের সমষ্টি ছাড়া তারা আর কিছুই না। এমনকি তারা আংশিক সমস্যাসমূহের সমাধানও করতে পারে না এবং শরীয়াহ’র সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ধারণ করতেও ব্যর্থ। ফলে তারা ইসলামকে এমনভাবে বহন করেনা যা ইসলামী উম্মাহর দৈনন্দিন জীবনে ইসলামকে ফিরিয়ে আনবে। এ ধরনের দল এতটা ব্যাপকমাত্রায় বিদ্যমান যে কোনো একটি দেশে হয়ত এরকম শতশত দল রয়েছে। তারা হাটবাজারের মতো গড়ে উঠছে যেখানে লোকজন তাদের শক্তি খরচ করছে এবং এভাবে তারা সঠিক দিকনির্দেশনা ও কর্মকাণ্ড থেকে লোকজনকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এরকম অসংখ্য দৃষ্টি আকর্ষণকারী দলের (সংস্থা) মধ্যে কেবলমাত্র কয়েকটি দলের ক্ষেত্রে বলা যায় যে, তারা ইসলামের উদ্দেশ্যসমূহ এবং সেগুলো অর্জনের প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যেসব দল আমাদের দৃষ্টিতে হাটবাজারের মতো গড়ে উঠেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে সেগুলো বাদ দিয়ে যদি আমরা সেসব বৃহৎ দলের কথা চিন্তা করি যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং দায়িত্বপালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ তাহলে অবশ্যই একটি প্রশ্ন উত্থাপন করতে হয়; শরীয়াহ কি একটিমাত্র দলের নির্দেশ দেয়, যা প্রয়োজনীয় সকল বিষয়কে অনুধাবন করে এবং সেগুলোকে সম্পাদন করে? নাকি শরীয়াহ একাধিক দলের অনুমতি দেয় যারা শরীয়াহ’র নীতির অধীনে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করবে? আংশিক কর্মকাণ্ড এবং পরিপূর্ণ ও সুষম কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক প্রচেষ্টাসমূহের ব্যাপারে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী? 

এক বা একাধিক ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে এবং বিপক্ষে প্রচুর মতামত তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পরিবর্তন সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় ইসলামী কর্মকাণ্ড একক হওয়া বাধ্যতামূলক, আবার অনেকে মনে করেন একাধিক দল থাকার বিষয়টি অনুমোদিত। যদি এই আলোচনার গৌণ বিষয়গুলোকে আমরা ভিত্তির আলোকে চিন্তা করি, তাহলে শরঈ প্রমাণাদি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মতামতকে আমরা পৃথকভাবে চিনতে পারব যেভাবে আমরা গম থেকে তুষকে পৃথকভাবে চিনি।

যারা মনে করেন ‘ইসলামী কর্মকাণ্ড একক হওয়া বাধ্যতামূলক’ তারা মূলত দুটো কারণে তা মনে করেন।

প্রথমত, ইসলামী কর্মকাণ্ডের ঐক্য একটি ফরয বিষয়।

দ্বিতীয়ত, ইসলামী কর্মকাণ্ডের ঐক্য একটি সাংগঠনিক অপরিহার্যতা।

১. নিম্নোক্ত দলীলসমূহের আলোকে তারা একে একটি শরঈ বাধ্যবাধকতা বলে মনে করেন:

ক) প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম এবং উম্মাহকে এক থাকতে হবে। কারণ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মত হচ্ছে একটিই উম্মত এবং আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব (একমাত্র) আমারই ইবাদাত কর।”
(আল কুরআন ২১:৯২)

তিনি আরো বলেন:

“এবং নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মত হচ্ছে একটিই উম্মত এবং আমি তোমদের পালনকর্তা, অতএব আমাকেই ভয় কর।”
(আল কুরআন ২৩:৫২)

“পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি দিক থেকে মুমিনগণ একটি দেহের মতো। যদি কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে পুরো দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।”
(বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ থেকে বর্ণিত)

খ) প্রকৃতপক্ষে আমাদের ঐক্যের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে এবং বিচ্ছিন্নতাকে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“আর তাদের মতো হয়োনা, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শনসমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।”
(আল কুরআন ৩:১০৫)

তিনি আরো বলেন:

“নিশ্চয়ই যারা স্বীয় দ্বীনকে খণ্ড বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে (হে মুহাম্মাদ) আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহ তাআলার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দিবেন যা কিছু তারা করে থাকে।”
(আল কুরআন ৬:১৫৯)

গ) প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন দলে বিভক্ত না থেকে জামাতবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, রাসূল (সা) বলেন;

“এমন একটা সময় আসবে যখন প্রচুর ভুল-ভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে। সুতরাং কোনো বিষয়ে উম্মাহ একত্রিত হয়ে যাওয়ার পর যদি অন্য কেউ তাদেরকে বিভক্ত করতে আসে তাহলে তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত কর; সে যেই হোকনা কেন।”
[মুসলিম থেকে বর্ণিত] রাসূল (সা) আরো বলেন:

“রাসূল (সা) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাকে বাইআত দিলাম। তিনি আমাদের কাছে এই মর্মে বাইআত দিতে বললেন যে আমরা দুঃখ-কষ্টের দিনে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাঁর কথা শুনব ও তাঁকে মান্য করব এবং আমরা কর্তৃত্বশীল লোকজনের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাদে লিপ্ত হবনা যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এমন প্রকাশ্য কুফরে লিপ্ত হচ্ছে যার ব্যাপারে আমাদের নিকট আল্লাহর তরফ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে।”
[মুসলিম থেকে বর্ণিত] 

তিনি (সা) বলেন:

“জামাআত হচ্ছে রহমত এবং বিভক্তি হচ্ছে আযাব।”
[ইমাম আহমদ থেকে বর্ণিত]

তিনি (সা) বলেন:

“জামাআতের সাথে আছে আল্লাহর হাত।”
[তিরিমিযি এবং নাসাঈ হতে বর্ণিত]

২. সাংগঠনিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে ঐক্যবদ্ধ থাকার বহুবিধ প্রয়োজন রয়েছে:

ক) ইসলামী পরিবর্তন একটি কঠিন কাজ, কারণ বিদ্যমান জাহেলি শক্তিগুলোকে তাদের অবস্থান থেকে উপড়ে ফেলা কোনো সহজ ব্যাপার না। সামাজিক চিন্তা, কর্মকাণ্ড এবং ব্যবস্থার উপরে ইসলামের কর্তৃত্বের জন্য বিভিন্ন দলকে বিচ্ছিন্ন না রেখে একটি একক সত্তায় রূপান্তরিত করতে আমরা বাধ্য।

খ) ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের  বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দুষ্কর্মের আতাঁত আমাদেরকে বাধ্য করে ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়ে তাদের মুখোমুখী হতে। যেহেতু, বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন শক্তিসমূহ পরস্পরকে সাহায্য করছে এবং নিজেদের সামরিক শক্তিকে এক করছে সেহেতু তাদের সহজ শিকারে পরিণত না হওয়ার জন্য এবং বিচ্ছিন্ন ও পদদলিত না হওয়ার জন্য মুসলিম বিশ্বের ইসলামী শক্তিগুলোকে ঐক্যের দিকে ডাকাটা কি অধিক কল্যাণকর হবেনা?

আদর্শিকভাবে যদি ইসলামী কর্মকাণ্ডসমূহের ঐক্য একটি শরঈ বাধ্যবাধকতা না হতো তাহলেও তা এজন্য বাধ্যতামূলক হতো যাতে ইসলামের ভবিষ্যৎ রক্ষা পায় এবং দমন, নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ইসলামী কর্মকাণ্ড রক্ষা পায়। 

গ) মুসলিম বিশ্বে বিদ্যমান বিভিন্ন ইসলামবিদ্বেষী স্থানীয় শক্তি ও দলসমূহ শক্তিশালী জোট গঠন করছে। এসমস্ত জোট সমস্ত পর্যায়ে গবেষণা, পর্যবেক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রস্তুতি গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। এই বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করলে কোন বিষয়টি মুসলিমদের জন্য অধিক যুক্তসঙ্গত হবে ইসলামী শক্তিসমূহের খণ্ড-বিখণ্ড ও বিক্ষিপ্ত থাকা? নাকি তাদের ঐক্য ও সংহতিকে নষ্ট করতে চায় যেসব বিষয় ও কারণ সেগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া?

এসব বিষয় এবং এরকম অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করলে এমন একটি বৈশ্বিক আন্দোলন যা সমস্ত পর্যায়ে চিন্তা, সাংগঠনিক কার্যক্রম, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারবে তা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনোরকম সন্দেহ, অনিচ্ছা বা দ্বিধার বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকেনা।

এসমস্ত প্রমাণ ও যুক্তির আলোকেই এরূপ দাবি করা হয়ে থাকে যে, ইসলামী কর্মকাণ্ডের ঐক্য একটি বাধ্যবাধকতা এবং বিভিন্ন দলে বিভক্তি হওয়া নিষিদ্ধ। এসব প্রমাণাদি বাস্তবতার আলোকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বোঝার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের নির্ধারিত ইজতিহাদের পদ্ধতি অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে।

আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, মুসলিমরা বর্তমানে যে বাস্তবতায় বসবাস করছে তা হচ্ছে দারুল কুফর এবং একে দারুল ইসলামে রূপান্তরিত করা মুসলিমদের জন্য ফরয। আমরা এ-ও আলোচনা করেছি যে এই বিষয়টি উপলব্ধি করে এমন একটি দল থাকা অপরিহার্য যা তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে রাসূল (সা)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।

এই মতটিকে যারা ধারণ করে তাদের উপস্থাপিত প্রমাণাদির ব্যাপারে বিস্তারিত শরঈ আলোচনায় যাওয়ার আগে আমরা সেই দলটির বাস্তবতা আলোচনা করতে চাই যা এই কাজে জড়িত হবে। এটি কি পুরো মুসলিম সম্প্রদায় নাকি মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশবিশেষ? অন্যভাবে বলতে গেলে এটি কি মুসলিমদের মধ্য থেকে বের হওয়া একটি দল?

বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা বলে থাকি যে, আল্লাহ মুসলিমদের উপরে বিভিন্ন  বাধ্যবাধকতা  আরোপ করেছেন যেগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা বাধ্য। এসব বাধ্যবাধকতাসমূহের মধ্যে কিছু হচ্ছে ব্যক্তিগত যেগুলো পালন করতে প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তিগতভাবে বাধ্য এবং এগুলো পালন না করার আগ পর্যন্ত কোনো মুসলিম অপরাধ থেকে মুক্ত নয়। অন্যকিছু বাধ্যবাধকতা আছে যেগুলো পালন করার জন্য দলের প্রয়োজন। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি দ্বিতীয় ধরনের বাধ্যবাধকতা। আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত করা এমন একটি ফরয যা কোনো ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে করা সম্ভব না বরং এর জন্য প্রয়োজন লোকজনের একত্রিত হওয়া এবং গণমানুষের ইচ্ছাকে এক করা।

নিম্নোক্ত মূলনীতি অনুযায়ী বিষয়টি বুঝা যায়:

“কোনো ওয়াজিব পালনের জন্য যা প্রয়োজন তা নিজেও ওয়াজিব।”

ফরযে কিফায়াসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম একটি ফরয এবং একে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যে ব্যক্তি একে অবহেলা করবে সে বড় ধরনের গোনাহে লিপ্ত হবে। যাইহোক, বিষয়টির প্রকৃতিই এরকম যে একে প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত মুসলিমের প্রয়োজন নেই বরং মুসলিমদের মধ্য হতে একটি দল যারা এ কাজটি আদায়ের মতো সামর্থ্য রাখে তারাই এ কাজের জন্য পর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হবে। এই ফরযটি আদায়ের লক্ষ্যে যে দলটি কাজ করবে তার সদস্যরা গোনাহ থেকে মুক্ত থাকলেও যারা কাজটি আদায় করবেনা তারা গোনাহ থেকে মুক্ত থাকবে না। 

যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলিমদের মধ্য থেকে দলটি বের হয়েছে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য অথার্ৎ খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দলটি সংগ্রাম করবে এবং এজন্য দলটিকে নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রহণকৃত প্রয়োজনীয় চিন্তা ও আহাকামের ভুল বা যথার্থতার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

পুরো মুসলিম উম্মাহ এই দলটির অন্তর্ভুক্ত নয়, কারণ এমন অনেক মুসলিম আছে যারা এর সাথে সম্পৃক্ত না। হতে পারে, যে তারা অন্যকোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত (একাধিক দলের বৈধতা সম্পর্কে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব) অথবা কোনো দলের সাথেই সম্পৃক্ত না।

এই দলটি খলিফা নয় এবং খলিফার স্থলাভিষিক্ত হতেও পারে না। খলিফার জন্য নির্ধারিত আহকাম দলটির জন্য প্রযোজ্য না এবং খলিফার হাতে ন্যস্ত দায়িত্বসমূহ বাস্তবাবয়ন করার অধিকারও নেই দলটির।

বরং এটি কেবলমাত্র মুসলিমদের মধ্য থেকে বের হওয়া একটি দল এবং সামগ্রিকভাবে পুরো ইসলামী উম্মত হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায় (জামা’আতুল মুসলিমীন) যার অন্তভূর্ক্ত হচ্ছে বিভিন্ন দল, ব্যক্তিবর্গ এবং খলিফা।

ইসলামী উম্মত বলতে বোঝানো হয় মুসলিম সম্প্রদায়কে যারা শরঈ হুকুমের মাধ্যমে নয় বরং ইসলামী আক্বীদাহ’র মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ। মুসলিমরা ফুরু (মৌলিক হুকুমের সাথে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক হুকুমসমূহ) এর ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করতে পারে এবং এতে তাদের ভ্রাতৃত্ববোধে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। আহকাম যদি ভ্রাতৃত্ববোধের কারণ হতো তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই হতো না। ব্যক্তিগতভাবে অথবা দলীয়ভাবে যদি মুসলিমরা ইসলামী আক্বীদাহ’কে পরিত্যাগ করে তাহলে তাদেরকে ইসলামী উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং তাদের পরিণতি হবে আগুন। রাসূল (সা)-এর হাদিসে এই বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে:

“যে ব্যক্তি দ্বীন পরিত্যাগ করে এবং নিজেকে জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।” [বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণিত] অর্থাৎ এখানে মুসলিম সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন বলে বোঝানো হয়েছে। রাসূল (সা)-এর নিম্নোক্ত হাদিসটিতেও একই বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে;

“আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একটি দল বাদে বাকি সবাই জাহান্নামে যাবে।” তারা জিজ্ঞাসা করলেন: “সেই দলটি কারা, ইয়া রাসূলুল্লাহ?” তিনি (সা) বললেন: “আমি এবং আমরা সাহাবারা যার উপরে আছি (তার উপরে যারা থাকবে)।”
[আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ এবং ইবনে হাম্বল থেকে বর্ণিত]   

মুসলিম সম্প্রদায় হচ্ছে ইসলামী উম্মত যারা অন্যসব লোকের বাইরে আলাদা একটি উম্মত। মুসলিমদের রক্ত এবং সম্পদ হচ্ছে একটি একক বিষয়। জ্ঞান ও ইজতিহাদের দিক থেকে এদের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও এরা পরস্পর সহাবস্থান করে এবং অন্যদের বিরুদ্ধে একটি একক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

অতএব, জামাআতুল মুসলিমীন (মুসলিম সম্প্রদায়) এবং মুসলিমদের মধ্যকার একটি দলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দলীলগুলোকে মুসলিমদের মধ্যকার কোনো দলের উপর আরোপ করা বিভ্রান্তিকর।

এজন্যই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন:

“নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মত হচ্ছে একটিই উম্মত এবং আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব কেবলমাত্র আমারই ইবাদাত কর।”
(আল কুরআন ২১:৯২)

তিনি আরো বলেন:

“নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মত হচ্ছে একটিই উম্মত আমি তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমাকেই ভয় করো।”
(আল কুরআন ২৩:৫২)

রাসূল (সা) বলেন:

“পারস্পরিক ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিতে মুমিনগণ একটি দেহের মতো। যদি শরীরের কোনো অংশ ব্যথা পায় তবে পুরো দেহই নিদ্রাহীনতা এবং জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।”
[বুখারী, মুসলিম ও আহমাদ থেকে বর্ণিত]

এসমস্ত আয়াতে মুসলিমদের মধ্যকার কোনো দলকে বুঝানো হয়নি বরং পুরো ইসলামী উম্মতকে বোঝানো হয়েছে। যদি কোনো দল মনে করে যে তার কর্মকাণ্ড হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর কর্মকাণ্ড তাহলে সেটা হবে তার অদ্ভূত চিন্তা এবং স্পষ্ট বিভ্রান্তি; ফলশ্রম্নতিতে যে তার সাথে কাজ করবেনা তাকে সে নিজের ভাই বলে গণ্য করবে না; বরং দ্বীন পরিত্যাগকারী, মুসলিমদের জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন এবং জাহান্নামের পথযাত্রী বলে মনে করবে এবং এসব চিন্তা মোটেই সামান্য কোনো ব্যাপার না।

একাধিক দলের উপস্থিতিকে যারা নিষিদ্ধ বলে মনে করে তারা মূলত নিচের দলীলগুলোকে উপস্থাপন করে থাকে:

“আর তাদের মতো হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও বিরোধিতা শুরু করেছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।”
(আল কুরআন ৩:১০৫)

“নিশ্চয়ই যারা স্বীয় দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে তাদের সাথে (হে মুহাম্মাদ) আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহ তাআলার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দিবেন যা কিছু তারা করে থাকে।”
(আল কুরআন ৬:১৫৯)

এই দলীলগুলোও সেই বাস্তবতায় প্রয়োগ করা হয়নি যার জন্য এগুলো এসেছে।

দল সম্পর্কিত বিষয়ে এই আয়াত দুটোর কিছুই বলার নেই। শরঈ আহকামের সাথে এই আয়াতদ্বয়ের কোনো সম্পর্ক নেই বরং সম্পর্ক হচ্ছে আক্বীদাহ’র সাথে। ‘তাদের মতো হয়োনা যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পরও বিরোধিতা শুরু করেছে’এর তাফসীরে বলা হয়েছে বিশুদ্ধ আক্বীদাহ ও স্পষ্ট প্রমাণের কথা। এখানে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে:

“তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।” ইমাম আল বাইদাবী এই আয়াত সম্পর্কে বলেন:

‘তাদের মতো হয়োনা যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’ এর অর্থ হচ্ছে ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের মতো যারা তাওহীদের ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেছিল………………………………………………………… যেমনটি বলা হয়েছে

‘স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার’ পরেও।’ সত্যকে উপস্থাপনকারী নিদর্শন ও প্রমাণের ব্যাপারে অবশ্যই একমত থাকতে হবে। এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট যে উসূল (বিশ্বাস) এর ক্ষেত্রে বিভক্তি নিষিদ্ধ, ফুরু (আহকাম)-এর ক্ষেত্রে নয়; যা রাসূল (সা)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি থেকে বুঝা যাচ্ছে:

“কেউ যদি সঠিক ইজতিহাদ করে তাহলে সে দুটো সওয়াব পাবে আর কেউ যদি ভুল করে তাহলে সে একটি সওয়াব পাবে।” এবং

‘তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব’ এই আয়াতটি হচ্ছে তাদের জন্য ভীতিপ্রদর্শন যারা বিভক্ত হয়েছে এবং এদেরকে যারা অনুসরণ করে তাদের জন্য সতর্কবাণী।”

অন্যভাবে বলতে গেলে, যে দলটি পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে সে অন্যান্য দল থেকে শরঈ আহকামের দিক থেকে স্বতন্ত্র। এটি অন্যদের থেকে পৃথক এবং অন্যরা এর থেকে পৃথক কেবলমাত্র শরঈ আহকামের দিক থেকে। এটি মুসলিমদের একটি দল যার আক্বীদাহ হচ্ছে ইসলামি। অন্যান্যদের সাথে এর পার্থক্য আক্বীদাহ’র ক্ষেত্রে নয় বরং আহকামের ক্ষেত্রে। অতএব, এই আয়াত অনুযায়ী একজন লোক তখনই দ্বীন থেকে বের হয়ে যায় যখন সে মুসলিমদের আক্বীদাহ’র বিরুদ্ধে চলে যায় কিন্তু আহকামের ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করলে তা হবেনা। অতএব, ইজতিহাদের ভিন্নতার ব্যাপারে এ আয়াতের কিছুই বলার নেই।

কেউ যদি বলে যে, আয়াতটি আম (সার্বজনীন) এবং এজন্য ‘সুনির্দিষ্ট কারণের পরিবর্তে অর্থের সার্বজনীনতাকে বিবেচনা করতে হবে’, তাহলে জবাবে আমরা বলব ‘সার্বজনীনতা কখনো সে বিষয়ের বাইরে যায়না যে বিষয়ের জন্য আয়াতটি নাযিল হয়েছে।’ কেবলমাত্র ভিন্ন আক্বীদাহ’র ব্যাপারেই আয়াতটির সার্বজনীনতা প্রযোজ্য। এটি আলোচনার একটি দিক। অন্য একটি দিক হচ্ছে তাদের এই মত সেসব হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক যেগুলো ইজতিহাদী মতভেদকে অনুমোদন করে। তৃতীয় দিকটি হচ্ছে তাদের এই মতের অর্থ হবে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানে দ্বীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।

দ্বিতীয় আয়াত

“নিশ্চয়ই যারা স্বীয় দ্বীনকে খণ্ড—বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে তাদের সাথে (হে মুহাম্মাদ) আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহ তাআলার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দিবেন যা কিছু তারা করে থাকে।” (আল কুরআন ৬:১৫৯) এর ব্যাপারে ইবনে কাছীর বর্ণনা করেন; [মুজাহিদ, কাতাদাহ, আদ—দাহ্হাক এবং আস সুদ্দী বলেন: ‘আয়াতটি ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।’ আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসূল (সা) তাকে বলেছেন:

“তারা বিদআতের অনুসারী এবং তারা হচ্ছে শিয়া (সম্প্রদায়)” অর্থাৎ এসব সম্প্রদায় হচ্ছে মিলাল (ভিন্ন ধর্ম) ও নিহাল (ভিন্ন আক্বীদাহ) এবং খেয়াল-খুশী ও পথভ্রষ্টতার অনুসারী। হামযা ও আল কাসাই থেকে জানা যায় যে, আয়াতটির ব্যাপারে আলি বিন আবু তালিব বলেন:

‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে’ এর অর্থ হচ্ছে নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দ্বীনকে পরিত্যাগ করেছে এবং তারা হচ্ছে ইহুদী ও খ্রিস্টান;

‘তাদের সাথে (হে মুহাম্মাদ) আপনার কোনো সম্পর্ক নেই’  আল বাইদাবী বলেন: [অর্থাৎ তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের কেউ ঈমান আনল, কেউ কুফরে লিপ্ত হল আর এভাবেই বিভক্তির সূচনা হলো ]

প্রকৃতপক্ষে, ফুরু (হুকুম) এবং আক্বীদাহ’র ক্ষেত্রে মতভেদ দুটো ভিন্ন বিষয়। আক্বীদাহ সংক্রান্ত এসব প্রমাণ এবং এরকম অন্যান্য প্রমাণের ক্ষেত্রে মতভেদ করা হারাম, যাতে আমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের মতো না  হয়ে পড়ি কারণ তারা নিজেদের নবীদের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছিল, নিজেদের দ্বীনকে বিদআত ও পথভ্রষ্টতা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছিল এবং ভিন্ন সম্প্রদায় অর্থাৎ মিলাল ও নিহাল-এ পরিণত হয়েছিল। এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে:

“কিন্তু তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তাদের কেউ ঈমান এনেছে এবং অন্যরা কাফির হয়ে গেছে।”
(আল কুরআন ২:২৫৩)

অতএব, এটি ঈমান ও কুফরের বিষয়। দলীল ও এর অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে ভিন্নতার কারণে ফুরু (আহকাম)-এর ক্ষেত্রে সৃষ্ট মতভেদকে অনুমোদন করা হয়েছে এরকম প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে, তবে এর বাইরের অন্য কোনো বিষয়কে অনুমোদন করা হয়নি। মুসলিম উলেমাদের কাছে এই বিষয়টি শহড়হি known to necessity। শরঈ আহকামের ভিত্তিতে গঠিত একাধিক দলের উপস্থিতিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আক্বীদাহ’র ক্ষেত্রে মতভেদ নিষিদ্ধ হওয়ার দলীলগুলোকে ব্যবহার করা খুবই সাদামাটা এবং ঠুনকো পর্যায়ের কাজ।

নিচের দলীলগুলোর বিষয়:

“একসময় বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে, সুতরাং কোনো বিষয়ে উম্মতের লোকজন একমত হয়ে যাবার পর যদি কেউ তোমাদেরকে বিভক্ত করতে আসে তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত কর, সে যে-ই হোকনা কেন।” এবং

 “যে বিভক্তির সৃষ্টি করে যে আমাদের কেউ না” এবং

“রাসূল (সা) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাঁর (সা) নিকট বাইআত দিলাম। তিনি আমাদের কাছ থেকে এই মর্মে বাইআত চাইলেন যাতে আমরা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, কঠিন ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে তাঁর (সা)-এর কথা শুনি ও তাঁকে (সা) মান্য করি এবং ততক্ষণ পর্যন্ত কর্তৃত্বশীল লোকদের সাথে বিবাদে না জড়াই যতক্ষণ না তাদেরকে এমন প্রকাশ্য কুফরে (কুফরে বুআহ) লিপ্ত হতে দেখি যার ব্যাপারে আমাদের নিকট আল্লাহর তরফ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ আছে।”

এই দলীলগুলো খলিফা, তার নিকট বাইআত, তার প্রতি আনুগত্য এবং প্রকাশ্য কুফরে লিপ্ত না হলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সাথে সম্পর্কিত।

কেউ যদি উম্মাহকে বিভক্ত করার ইচ্ছা নিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে তাহলে তাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করতে বলা হয়েছে সে যে-ই হোকনা কেন। মুসলিমদের মধ্যকার কোনো দলের সাথে এসব দলীলের দূরবর্তী বা নিকটবর্তী কোনো সম্পর্ক নেই। খলিফার জন্য প্রযোজ্য হুকুমসমূহ দলের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং দল খলিফার স্থলাভিষিক্তও হতে পারে না বরং এটি কেবল খলিফাকে অস্তিত্বে আনতে এবং তাকে জবাবদিহি করার জন্য কাজ করে।

“আল্লাহর হাত রয়েছে জামাআতের সাথে” এবং

“জামাআত হচ্ছে রহমত এবং বিভক্তি হচ্ছে আযাব” একাধিক দলের উপস্থিতি নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে এসব হাদীসের কোনো সম্পর্ক নেই। মুসলিম সম্প্রদায় অথবা কোনো মুসলিম দলের ছায়ায় থেকে মুসলিমরা আল্লাহর রহমতকে অনুভব করবে। বিচ্ছিন্নতা ও বিভক্তি থাকলে শয়তান মুসলিমদের নিকটবর্তী হয়; এ ব্যাপারে রাসূল (সা) বলেন:

“প্রকৃতপক্ষে, কোনো বিচ্ছিন্ন ভেড়াই নেকড়ের শিকারে পরিণত হয়।” ফলে এর সাথে শাস্তির বিষয়টি জড়িত। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামী কর্মকাণ্ডসমূহকে এক করে ফেলার জন্য কোনোরূপ নির্দেশনাই নেই হাদীসদ্বয়ের মানতুক (শব্দ) এবং মাফহুম (অর্থ)-এর মধ্যে।

একাধিক দলের উপস্থিতিকে নিষিদ্ধ বলে প্রমাণ করতে এসব শরঈ দলীলই ব্যবহৃত হয় অথচ এদের কোনোটাই এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

এছাড়া একাধিক দল না রাখতে যেসব বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে এবং যেসব নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবৃত হয়েছে এদের কোনোটার জন্য কোনোকিছুকে প্রতিরোধ, নিষিদ্ধ বা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। বরং কোনোকিছুকে প্রতিরোধ, নিষিদ্ধ বা বাধ্যতামূলক করে কেবল শরীআ’হ। খারাপ পরিস্থিতি এবং এর বিস্তৃতি ও প্রভাবকে যথার্থরূপে বুঝতে হবে এবং তারপরে শরীয়াহ’র মধ্যে দলীল খুঁজতে হবে যেগুলো পরিস্থিতিকে সমাধান করার জন্য কোনোকিছুকে বাধ্যতামূলক বা নিষিদ্ধ করবে। অতএব, পরিস্থিতি থেকে কোনো শরঈ হুকুম গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

Leave a Reply