গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশানের এক সড়কের ফুটপাতে ইতালিয় নাগরিক সিজার তাবেলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর কয়েক দিন যেতে না যেতেই রংপুরে খুন করা হয় জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে। যদিও খুন হত্যা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। দেশে গড়ে প্রতিদিন ১০টির অধিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় এর মাঝে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় গড়ে ২-৩ টি। দেশীয় হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা না হলেও সিজার এবং কুনিও হোশিকে হত্যার পর দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। উত্তেজনা তৈরি হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক যেহেতু তারা দুজনই ছিল দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিক। কারা এবং কেন এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংগঠিত করেছে সে ব্যাপারে নিরাপত্তা বাহিনী এখনো পর্যন্ত কোন পরিষ্কার ধারনা দিতে পারেনি। বরং একেক নিরাপত্তা বাহিনী একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে এবং এর মাঝে প্রধানমন্ত্রী এটাকে তদন্তের ফলাফল পূর্ব নির্ধারণ সরূপ বিরোধী দলের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন। অতীতেও আমারা বিডিআর এ সামরিক বাহীনির ৫৭জন আফিসারের হত্যাকাণ্ড, সাগর-রুনি, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীসহ বহু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কোন সুরাহা পাইনি।
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার তা হলো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দালাল শাসকেরা যুগ যুগ ধরে দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে সেভাবে বিদেশী সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ বুঝতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই পুঁজিবাদি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্স বুঝতে হবে। এই ব্যবস্থার চিন্তার মূলেই রয়েছে যে কোন উপায়ে নিজ বা নিজ দল বা দেশের কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করা। সেটা হোক অন্য কোন দেশের উপর অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে বা নিজ দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করে অথবা ভিনদেশি নাগরিক খুন করে। মানবরচিত এই ব্যবস্থায় নিরাপত্তা শুধুই শাসকবর্গের জন্য। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা যেকোন ধরনের নির্লজ্জ কাজ করতে পিছপা হয়না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মোড়ল স্বয়ং আমেরিকায় প্রতি বছর সিআইএ কর্তৃক বহু দেশের অসংখ্য নাগরিককে হত্যা করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের কারণে। আবার ব্রিটেন অতীতে তার গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চালিয়েছে বহু হত্যাকাণ্ড। তাদের অনুকরনে নব্য আধিপত্যবাদী ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহে “র” এর মাধ্যমে চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে বহু হত্যাকান্ড। আবার আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার জন্য বা টিকে থাকার জন্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে খুন করিয়েছে বহু মানুষ। কুফর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা আশা করা একটি আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। স্বয়ং আমেরিকায় কোন কৃষনাংগ কে হত্যা করা হলে শ্বেতাঙ্গ হত্যাকারীকে নিষ্পাপ বলে মুক্তি দেয়া হয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দালাল শাসকবর্গ কিভাবে জনগণ এবং বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যেখানে তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সার্বক্ষণিক চিন্তার মধ্যে থাকে। এই মানব রচিত ব্যবস্থা এবং এর শাসকবর্গ সারা বিশ্বে মানুষদেরকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ইসলাম হচ্ছে একমাত্র শাসনব্যবস্থা যার মাধ্যমে খলীফা খিলাফত রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসরত সকল মুসলিম-অমুসলিম এবং বিদেশী নাগরিকদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। খিলাফত রাষ্ট্রে খলীফার মূল কাজই হল জনগণের দেখাশোনা করা। বর্তমান মেরুদন্ডহীন দালাল শাসকবর্গের মত খলীফা কখনোই কাফেরদের তাবেদারী করবেনা। তার আনুগত্য শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করল সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল এবং যে কারো জীবন রক্ষা করল সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করল“। (সূরা মায়িদাহ: ৩২)
খিলাফত রাষ্ট্র পরিচালিত হবে শরীয়াহর মাধ্যমে। খিলাফত রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল অমুসলিম একজন মুসলিম এর মত সকল নাগরিক অধিকার পাবে। খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ সকল রাষ্ট্রের নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। খিলাফত রাষ্ট্রের খলীফা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসকদের মত কৌশলগত বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজ দেশের নিরীহ মানুষদের হত্যা করার মত জঘন্য কাজ করবে না।
মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে এক ব্যক্তি যার ব্যাপারে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে মুসলিমদের নির্যাতনের শাস্তি সরূপ মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল যখন উসমান (রা) তাকে নিরাপত্তা দিলেন (একজন মুসলমান কাউকে নিরাপত্তা দিলে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া সকল মুসলমানের জন্য ওয়াজিব) এবং সে ক্ষমা চাইতে আসল। রাসূলুল্লাহ (সা) কিছুক্ষণ নিরব থেকে লোকটিকে ক্ষমা করেন। লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (সা) সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি চাইছিলাম যে তোমরা কেউ যেন তাকে হত্যা কর“। তখন উমার (রা) বলেছিলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা) আপনি যদি ইশারা করতেন তাহলে আমি তাকে মেরে ফেলতাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সা) বললেন, “কোন নবীর জন্য এটা শোভা পায়না যে সে ইশারায় মানুষ হত্যা করবে“। অথচ একজন রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে চাইলেই রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে হত্যা করতে পারতেন।
খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় খলীফাগণ অতীতে নির্যাতিত অমুসলিমদের আহবানে সাড়া দিয়ে তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। স্পেনের রাজা রডরিকের জুলুম থেকে তরুণ সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ স্পেনের অমুসলিমদেরকে রক্ষা করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে রাজা দহিরের অত্যাচারের দরুন মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধ প্রদেশ মুক্ত করেন। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আসন্ন খিলাফত এর প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে খলীফা সারা বিশ্বের নির্যাতিত মুসলিম এবং অমুসলিমদেরকে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“এর দ্বারা আল্লাহ্ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন।” (সূরা মায়িদা: ১৬)
দেলোয়ার হোসেন সুমন