জাতীয় বাজেট, পুঁজিবাদের ভয়াল ছোবল

খবর: জাতীয় সংসদে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব দিলেন, আকারে তা বিশাল, ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এই বাজেট হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, যা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে জিডিপি যতটা বেড়েছে, বাজেট সেই তুলনায় বাড়েনি, বরং কমেছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদায়ী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।ব্যয় করতে না পারায় অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের বাজেটে বড় ধরনের সংশোধন করেছেন। এতে বাজেট হচ্ছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সংশোধন করায় আগের বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেট খানিকটা মোটাতাজা দেখালেও তা বাস্তবায়ন না করতে পারার সুফল। কেননা, মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় সবগুলো সূচকই নিম্নগামী। যেমন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ, হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। আর নতুন বাজেট প্রস্তাব হচ্ছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রীর সমস্যা বাজেট পরিকল্পনায় নয়, বাজেট বাস্তবায়নে। আপনারা যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর বোঝা বাড়তে পারে। কারণ, রাজস্ব আয়ের যে পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রী নিয়েছেন, তা আগের তুলনায় ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, ‘সত্যিই উচ্চাভিলাষী।’ (প্রথম আলো ০৫-০৬-২০১৫)

সমস্যা:

– ইনকাম ট্যাক্স এর মত একটি হারাম জিনিস মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন:

(لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ صَاحِبُ مَكْسٍ)

কর সংগ্রহকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” [মুসনাদ আহমাদ]

– পুঁজিবাদী বাজেটে রাজস্বের অন্যতম খাত হল ‘আয় কর’ (ইনকাম ট্যাক্স)। এবার প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত করের বোঝার ভার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের বহন করতে হবে।

– ২৪ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ।

– ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ

– যদি কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক ঋণ না পাওয়া যায় তাহলে ভরসা ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণ। এতে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও প্রবল। আর বেসরকারি খাত তো বঞ্চিত হবেই।

– পুঁজিবাদী আদর্শ সমস্ত কিছু চিন্তা করে লাভের ভিত্তিতে এবং কিভাবে গুটি কয়েক পুঁজিপতিদের বাঁচিয়ে রাখা যায় তার ভিত্তিতে সুতরাং এই লাভ করতে গিয়ে আর পুঁজিপতিদের বাঁচাতে গিয়ে যদি দেশের সাধারন জনগন নির্যাতনের যাঁতাকলে পৃষ্টও হয় তবুও তাদের কিছুই যায় আসে না।

বাজেট হচ্ছে একটি দেশের বাৎসরিক আয়ব্যয়ের হিসাব নিকাশ। আর এই হিসাব নিকাশে সাধারণ মানুষের জন্য কোন সুখবর নেই। ফলে বাড়তি করের বোঝা নিয়ে এই বাজেট কতটা স্বস্তি দেবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। দুই বছর আগে অর্থমন্ত্রী যাকে ‘অশোভনীয় আশাবাদ’ বলেছিলেন, তাকে এবার সংশোধন করে বলেছেন, ‘অশোধনীয় আশাবাদ।’ এই বাজেট কতটা পূরণ করবে তা?

সমাধান:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:

তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে রয়েছে সেই সমস্ত”। (সূরা বাকারা: ২৯)

ইসলামি অর্থ ব্যাবস্থা ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পুরনে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। ইসলামি অর্থনীতি মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে খিলাফত রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পুরনে খলিফাকে বাধ্য করে। রাসূল(সা) বলেন

বাস করার জন্য একটি গৃহ, আব্রু রক্ষার জন্য একটুকরো কাপড়, আর খাওয়ার জন্য একটুকরো রুটি ও একটু পানি, এসবের চেয়ে অধিকতর জরুরী কোন অধিকার আদম সন্তানের থাকতে পারেনা” (তিরমিজী)

সুতরাং, চাহিদা নয়, ইসলামের অর্থনীতি জিনিসপত্রের সরবরাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন কে ইসলাম মূল সমস্যা হিসাবে দেখে। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

যেন সম্পদ তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়
(হাশর: ৭)

ইসলাম সমস্ত কিছু চিন্তা করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ অনুযায়ী হালাল এবং হারামের ভিত্তিতে। এতে না ক্ষতিগ্রস্ত হয় ধনী ব্যাক্তি না সাধারন জনগণ, সমাজে একটি চমৎকার সমতা বিরাজ করে যা আমারা ১৩০০ বছর খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় দেখতে পেয়েছি।

ইসলাম, খিলাফত সরকারকে কোনো ভিত্তি ছাড়াই ইচ্ছামত টাকা ছাপানোর অনুমতি দেয়না। ফলে সরকারের হাতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ তথা ইচ্ছা মত সংকোচন ও সম্পসারনের নীতির কোন হাতিয়ার নেই। ইসলাম টাকা ছাপানোর সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম প্রদান করেছে আর তা হল স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা। স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থায় সরকার ইচ্ছা মত মুদ্রা সরবরাহ করতে পারেনা তাই মৌলিক ভাবেই এই মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল। আর স্বর্ণ ও রুপার উভয়ের নিজস্ব মূল্য রয়েছে যা বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রার নেই। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতি হয়ার কোন ভয় নেই।

এছাড়া, অসৎ ব্যবসা বা ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, ভেজাল ইত্যাদি কঠোর হস্তে দমন করার জন্য খিলাফত রাষ্ট্রের বিচারক কাজী উল মুহতাসিব সবসময় বাজার পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবেন।

সুতরাং, এই মুহূর্তে জাতির জন্য বাধ্যতাতামুলক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মানব রচিত পুঁজিবাদী আদর্শকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যাবস্তা এবং তার অর্থনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:

আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা তাদের নিজেদের মধ্যে যা আছে তা পরিবর্তন করে
(সূরা রা’দ: ১১)

মোহাম্মদ সালাহ্‌উদ্দীন

Leave a Reply