ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরে প্রধান প্রধান নাগরিক সমস্যাসমূহ কি কি?
- পর্যাপ্ত ও যথাযথ রাস্তাঘাটের অভাব
- অদক্ষ ও অপ্রতুল অবকাঠামোগত সেবা (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়নিষ্কাশন)
- যানজট ও অপ্রতুল পরিবহন
- জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা
সমস্যাসমূহের কারণ:
বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরীতে নাগরিক সমস্যাসমূহের প্রধান কারণঃ
১. পুঁজিবাদের প্রকৃতিই হল সব নাগরিক সুবিধাকে শাসকশ্রেণীর নাগালের মধ্যে রাখা ও এগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা। ঢাকা ও চট্রগ্রামে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, অফিস -আদালত, সচিবালয়, সশস্ত্রবাহিনীসমূহের সদর দপ্তর, প্রধান বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, কল কারখানা ইত্যাদি। একারণে গ্রাম থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা, চিকিৎসা, আইনি সহায়তা, জীবিকা অন্বেষণ ও উন্নত জীবনের আশায় এসব নগরীতে চলে আসছে এবং বিধায় নগরীগুলো আরও বেশী জনাকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এমকি ভিক্ষা করা, রিক্সা চালানো, গৃহকর্মীর কাজ, গার্মেন্টস ও দিনমজুরের কাজের জন্যও গ্রামের লোকজন ঢাকায় আসছে। নাগরিক সুবিধা থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, আইনগত সেবা, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, কল কারখানা ইত্যাদি বিকেন্দ্রীকরণ না করায় দলে দলে গ্রাম থেকে লোকজন ঢাকা বা চট্রগ্রামে আসছে এবং নাগরিক সমস্যাসমূহকে প্রকট থেকে প্রকটতর করছে।
২. কোন মৌলিক চিন্তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে উঠেনি। সেকারণে এখানকার মূলধারার রাজনীতবিদ ও শাসকগণ আদর্শিকভাবে দেওলিয়া, বিধায় নগরায়ণও অপরিকল্পিত। একসময়ের খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ বা বর্তমান সময়ের নিউইয়র্ক ও লন্ডনের মত কোন মাস্টারপ্লানিং এর মাধ্যমে ঢাকা বা চট্রগ্রাম নগরী গড়ে উঠেনি। এখানে গৃহায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন(রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, পয়নিষ্কাশন) সুপরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদী নয়। অনেকসময় পুঁজিবাদী হীন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে যথেচ্ছভাবে এগুলো করা হচ্ছে এবং বিধায় যানজট, অপ্রতুল অবকাঠামোগত সেবা, জলাবদ্ধতা ও অপরিচ্ছন্নতার সৃষ্টি হচ্ছে।
সমাধান:
১. সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যক্তি পরিবর্তন করে নাগরিক সমস্যার সমাধান করা যাবে না, বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ইসলাম দ্বারা প্রতিস্থাপনই সত্যিকারের সমাধান। এর আগেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা, মহিউদ্দিন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছিল এবং তারা প্রত্যেকেই ঢাকা ও চট্রগ্রামের নাগরিক সমস্যা সমাধানে কী দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছিল তা এসব নগরীর যানজট, উন্মুক্ত ডাস্টবিন, মশার উপদ্রব ও সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দেখলেই বোঝা যায়।
২. ইসলামে শাসন একটি ফরয ইবাদত হওয়ায় শাসকগণ নাগরিক সুবিধাকে কেন্দ্রীভূত করবে না, বরং খলীফা নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা(অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) এবং উম্মাহ’র অধিকার(চিকিৎসা, শিক্ষা ও নিরাপত্তা) তাদের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে বাধ্য থাকবেন। খলিফা উমার(রা) বলেছেন, “আমি নির্ঘুম রাত্রি কাটাই এ চিন্তায় যে, মসৃণ না করতে পারার কারণে কোন বকরী বাগদাদের রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় তার খোড়ায় চোট পেলে আল্লাহ সুওতা আমাকে হাশরের ময়দানে পাকড়াও করবেন।” যে শাসক বকরী বা ছাগলের চোট নিয়ে এত চিন্তিত তিনি মানুষের অধিকারের ব্যাপারে কতটুকু উদ্বিগ্ন ছিলেন তা বলাই বাহুল্য ।
৩. খিলাফত রাষ্ট্রের শাসক উন্নয়নকে বিকেন্দ্রীকরণ করবেন এবং সেকারণে ঢাকা বা চট্রগ্রামের মত হাতেগোনা দু’একটি নগীর উপর এত চাপ পড়বে না।
৪. আদর্শিক সত্তার(ব্যক্তি, দল ও রাষ্ট্র) চিন্তার প্রক্রিয়া হলো: লক্ষ্য ঠিক করা, লক্ষ্য অর্জনের জন্য চিন্তা করা এবং চিন্তার ভিত্তিতে কাজ করা এবং চিন্তার এ প্রক্রিয়াই ফলদায়ক ও টেকসই। খিলাফত রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি থাকায় তা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে যথেচ্ছভাবে উন্নয়ন করবে না এবং সেখানে উন্নয়ন হবে টেকসই ও সুপরিকল্পিত। অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্র অপিরকল্পিত নগরায়ণ করবে না এবং সেকারণে যানজট, অদক্ষ ও অপ্রতুল অবকাঠামোগত সেবা (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়নিষ্কাশন), জলাবদ্ধতা ও অপরিচ্ছনতার মত সমস্যাগুলো থাকবে না। খিলাফত রাষ্ট্র মধ্যযুগেই বাগদাদ নগরীতে নাগরিকদের জন্য রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট এবং ঘরে ঘরে পাইপের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছিল যখন ইউরোপের লোকেরা শৌচাগার ও গোসলখানা সর্ম্পকে কোন ধারণাই রাখত না।
রাফীম আহমেদ