“ইসরাইল রাষ্ট্র”-এর বৈধতার ভিত্তি কী?

গাজা শহরের ওপর চলমান বর্বর ইসরাইলি আগ্রাসন দীর্ঘদিনের বিতর্ককে বিশ্বব্যাপী নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। “মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট” নিরসনের জন্য পশ্চিমা থেকে Two-State Solution [দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলকে মেনে নেয়া]-এর কথা বলা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের জনমত মূলত রাষ্ট্র হিসেবে “ইসরাইল”-এর অস্তিত্বেরই বিপক্ষে। খোদ ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনেই এসেছে – Two-State Solution এখন মৃত:
মধ্যপ্রাচ্যে এই আগ্রাসী সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের উপস্থিতি শুধু মুসলিমরাই মানছেন না, তা নয়। মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টান, এমনকি ইহুদি সম্প্রদায়ের একটি অংশও ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিতে অনিচ্ছুক। ১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার আগ থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে একটি ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নিয়ে বহু বিতর্ক চলছে। সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে এই বিতর্ক নতুনভাবে জমে উঠেছে:
ইহুদি-নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মিডিয়া বুদ্ধিজীবী মহল সুকৌশলে ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরোধিতা এবং/অথবা জায়োনিজম (Zionism)-এর বিরোধিতাকে ইহুদিবিদ্বেষ ও Anti-semitism হিসেবে চিহ্নিত করে। অথচ ইসরাইলবিরোধী এবং/অথবা জায়োনিজমবিরোধী হওয়ার সাথে ইহুদিবিরোধী হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা Judaism হলো একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম আর জায়োনিজম হলো সেই ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সব ইহুদি এই জায়োনিজমের সমর্থকও নন।

জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্রের সপক্ষে যেসব নৈতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভিত্তি দেখায়, সেগুলো বিবেচনা করা যাক:

নৈতিক ভিত্তি

ফিলিস্তিনে ১৯৪৮ সাল অবধি বসবাসরত আরব জনগোষ্ঠিকে জবরদস্তির মাধ্যমে বিতাড়ন করে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইল কখনো নৈতিকতা দাবি করতে পারে না। ১৮৮১ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে লক্ষ লক্ষ ইউরোপিয়ান ইহুদি ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশের কারণে বহু আরব তাদের বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন, জীবন ও জীবিকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করায় যারা অনৈতিক কিছু দেখেন না, তারাই আবার জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে-এর শ্বেতাঙ্গ-উচ্ছেদের কড়া সমালোচক!

কারো পুরো বাড়ি দখল করে বাড়ির মালিককেই টয়লেটে বসবাস করতে বলা কতটুকু নৈতিক? ইসরাইলি দখলদারদের নৈতিকতার দৌড় ওইটুকুই।

ঐতিহাসিক ভিত্তি
ইসরাইল রাষ্ট্রের দুর্বল নৈতিক ভিত্তিকে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার কথা বলে সবল করার চেষ্টা করে পশ্চিমারা। জায়োনিস্টরা দাবি করে, তাদের পূর্বপুরুষরা একসময় ফিলিস্তিনের অধিবাসী ছিল। তাই ফিলিস্তিনের ওপর রয়েছে ইহুদিদের ঐতিহাসিক অধিকার!

জায়োনিস্টদের এ-দাবি যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে ১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত দখলকেও তো মেনে নেয়া উচিত ছিল পশ্চিমাদের। কেননা কুয়েত তো ঐতিহাসিকভাবে মেসোপটেমিয়া [ইরাক]-এরই অংশ ছিল!

পূর্বপুরুষদের বসবাসের কারণে যদি ভূমির ওপর কোনো দাবি জন্মায়, তাহলে তো গোটা আমেরিকার মূল মালিক রেড ইন্ডিয়ানরা। আফ্রিকা থেকে আসা ওবামা বা ইউরোপ থেকে আসা জন কেরির তো সেক্ষেত্রে আমেরিকার উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা উচিত। ১৪৯২ সালে ইউরোপিয়ান নাবিক ক্রিস্টোফার কোলাম্বাস যখন আমেরিকায় পা রাখেন, তখন অন্তত এক কোটি রেড ইন্ডিয়ান সারা আমেরিকায় বসবাস করত। এখন জায়োনিস্টদের মতো করে রেড ইন্ডিয়ানরা যদি আমেরিকার স্বত্ব-স্বামিত্ব চেয়ে ইউরোপিয়ান বা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের কচুকাটা করতে থাকে, তাহলে সেটাকে ওবামা-কেরি কি রেড ইন্ডিয়ানদের “Right to Self-defense” বলবেন?

আসলে কারো পূর্বপুরুষ কোনো এক সুদূর অতীতে কোনো একটি ভূ-খণ্ডে বসবাস করার হাজার হাজার বছর পর তাদের উত্তরসূরিরা এসে সেই ভূ-খণ্ডে রাষ্ট্র গঠনের দাবি করলেই যদি তা মেনে নিতে হয়, তাহলে পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রই লোপ পাবে। পৃথিবীকে আবারও হয়ত গুহাচারী মানুষদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। আফ্রিকার গহীন জঙ্গলের গুহাচারী মানুষরাই হবেন বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র বৈধ অধিপতি। জায়োনিস্টরা নিশ্চয়ই আফ্রিকার সেসব গুহাচারীর কাছে তাদের সব বড় বড় ব্যাঙ্ক, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, টিভি চ্যানেল, নিউজপেপারগুলো ছেড়ে দেবে না!

তাছাড়া ফিলিস্তিনের ভূমির ওপর জায়োনিস্টদের ঐতিহাসিক দাবির পক্ষে কোনো নিরপেক্ষ প্রমাণ নেই। বরং অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, ফিলিস্তিনের সবচেয়ে পুরনো বাসিন্দা হলো কেনানবাসীরা:

http://en.wikipedia.org/wiki/Palestine#History

খ্রিস্টপূর্ব তিন সহস্রাব্দে কেনানিরা বর্তমান ফিলিস্তিন অঞ্চলে বসবাস করত। এর প্রায় একহাজার বছর পর খ্রিস্টপূর্ব দুই সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়া থেকে বনি ইসরাইলিরা এসে ফিলিস্তিনে আক্রমণ চালায় ও বসবাস শুরু করে। তাই ঐতিহাসিক ভিত্তিতে কেউ যদি ফিলিস্তিনের ভূমির ওপর অধিকার দাবি করে, সেটা করতে পারে কেনানি-মিশরীয়রা। জায়োনিস্টদের সেই অধিকার নেই।

ধর্মীয় ভিত্তি
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইসরাইল রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্ব নেই। কেননা খ্রিস্ট ধর্ম বা হিন্দু ধর্মের মতো ইহুদি ধর্মেরও কোনো সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কাঠামো বা শাসনব্যবস্থা নেই।

ইহুদি ধর্মগ্রন্থ তালমুদের Tractate Kesubos (p. 111a) অনুসারে, হযরত দাউদ (আ.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে একজন “মসিহ” না আসা পর্যন্ত কোনো ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Three_Oaths

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে শুরু হওয়া জায়োনিস্ট আন্দোলন তালমুদের এই বিধানকে অপব্যাখ্যা করে। জায়োনিস্টদের দেয়া অন্যতম অপব্যাখ্যা হলো, মসিহকে স্বাগত জানানোর জন্য আগে থেকেই একটি ইহুদি রাষ্ট্রকাঠামো প্রতিষ্ঠা করে রাখতে হবে।

জায়োনিস্টদের এসব ব্যাখ্যাকে বিশ্বের বহু ইহুদি এখনো মেনে নেননি। যেমন, ইহুদি গোষ্ঠি NETUREI KARTA, ইরানে বসবাসকারী Iranian Jewish Community.

NETUREI KARTA-র ইহুদিরা ইসরাইলকে বৈধ রাষ্ট্র মনে করে না। তারা সবসময়ই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরব:

http://tinyurl.com/n8gtktd

NETUREI KARTA-র ওয়েব সাইট ভর্তি ইসরাইলবিরোধী প্রচারণায়:

http://www.nkusa.org/

ইরানের ইহুদি এমপি Siamak Moreh Sedgh এক সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ইসরাইলের আচরণ নাত্সী জার্মানির মতো। The Times of Israel পত্রিকাতেই সেই সাক্ষাত্কার ছাপা হয়েছে:

http://tinyurl.com/o224mrp

রাজনৈতিক ভিত্তি

ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ইতিহাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে

২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে

৩. ইসরাইলের অধীনে ১৯৪৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত

এ-বিষয়ে কোনো ঐতিহাসিক দ্বিমত নেই যে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি নির্বিশেষে সকল নাগরিক শত শত বছর ধরে ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে নিরাপদেই বসবাস করত।

স্পেনে ১৪৯২ সালে খ্রিস্টানদের Inquisition (ধর্মীয় ভিন্নমত দমনে বিশেষ ট্রাইবুনাল)-এর সময় তুরস্কের উসমানিয়া খলিফা দ্বিতীয় বায়াজিদ ইহুদিদেরকে শুধু নিরাপদে আশ্রয়ই দেননি, তিনি খিলাফতের নৌবাহিনীর এডমিরাল কামাল রাইসের নেতৃত্বে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিলেন!

http://en.wikipedia.org/wiki/Kemal_Reis

 উসমানিয়া খলিফা দ্বিতীয় বায়াজিদ
উসমানিয়া খিলাফতের সেই যুদ্ধজাহাজ স্পেনের মুসলিম ও ইহুদিদেরকে উদ্ধার করেছিল। উদ্ধার পাওয়া ইহুদিদেরকে খলিফা বায়াজিদ তাঁর শাসনাধীন শহর ইস্তাম্বুল [বর্তমান তুরস্কে], সালোনিকা [বর্তমান গ্রিসে], ফিলিস্তিন প্রভৃতি শহরে নিরাপদে বসবাস করতে দেন। খলিফাদের উদার শাসনে এর পর থেকে বিভিন্ন যুগে ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে থাকে। বিশেষত ১৮৮২ সাল থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে পূর্ব ইউরোপে চলমান নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় ৩৫,০০০ ইহুদি উসমানিয়া খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের শাসনামলে ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নেয়।

http://en.wikipedia.org/wiki/First_Aliyah 

উসমানিয়া খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ

এ-সময়ই ১৯০১ সালে জায়োনিজমের প্রবক্তা, ইসরাইলের স্বপ্নদ্রষ্টা Theodor Herzl খিলাফতের রাজধানী ইস্তাম্বুলে গিয়ে খলিফাকে তিনশ মিলিয়ন পাউন্ডের টোপ দিয়ে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনের ভূমি চান।
সিংহহৃদয় খলিফা বলেছিলেন, Herzl-কে তার পরিকল্পনা বাদ দিতে বলা হচ্ছে। আমি তাকে ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি জমিও দেব না, কারণ এটা [ফিলিস্তিন] আমার একার নয়। মুসলিমরা জিহাদে রক্ত দিয়ে এই ভূমি চাষ করেছে। ইহুদিদের সম্পদ তাদের কাছেই জমিয়ে রাখুক, কারণ খিলাফত ধ্বংস হয়ে গেলে তারা ফিলিস্তিন বিনা পয়সাতেই পেয়ে যাবে। কিন্তু যতদিন আমি জীবিত আছি, আমি Herzl-এর তরবারিতে আমার শরীরের রক্ত ঝরাতে রাজি আছি, তবু ফিলিস্তিনকে খিলাফত থেকে ছাড়ব না।…

http://tinyurl.com/mj9y6po

১৯১৪ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় খিলাফতের অধীনে ফিলিস্তিনে ৬৫৭০০ আরব মুসলিম, ৮১০০০ আরব খ্রিস্টান ও ৫৯০০০ ইহুদি বসবাস করত।

১ম বিশ্বযুদ্ধে খিলাফতের কাছ থেকে ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। বিশ্বযুদ্ধে খিলাফতের পতন হলে ১৯২২ সালে ফিলিস্তিন তত্কালীন লিগ অফ নেশন্সের মাধ্যমে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে চলে যায়। “সুসভ্য”, “গণতন্ত্রবাদী”, “মানবহিতৈষী” ব্রিটিশদের আমল থেকেই ফিলিস্তিনের দুর্ভোগের সূচনা হয়। ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনের আরব মুসলিম ও আরব খ্রিস্টানদেরকে স্বভূমি থেকে সরিয়ে ইউরোপ থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনে জড়ো করতে থাকে।

ফিলিস্তিনি মুসলিম ও খ্রিস্টান অধিবাসীরা এ-সময় বহুবার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে ব্রিটিশরা অস্ত্রের জোরে সেসব বিদ্রোহ দমিয়ে দিয়েছিল। এভাবেই ব্রিটিশরা জায়োনিস্টদেরকে ফিলিস্তিন দান করে।

এর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৮ সালে তথাকথিত জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়া হয়।

সেই ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জায়োনিস্ট “ইসরাইল রাষ্ট্র”-এর হাতে রক্ত ঝরছে ওই ভূমির মূল অধিবাসী ফিলিস্তিনি আরবদের।

খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ঠিকই বলেছিলেন। ১ম বিশ্বযুদ্ধে খিলাফতের পতনের পর জায়োনিস্টরা ফ্রিতেই ফিলিস্তিন পেয়ে গেছে।

বিশ্বাসঘাতক জাতিসঙ্ঘের মাতৃত্বে ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর পিতৃত্বে প্রসবকৃত এই ভিত্তিহীন অবৈধ রাষ্ট্রটি গত ৬৬ বছর ধরে ফ্রিতেই মুসলিমদের রক্ত খেয়ে যাচ্ছে।

মুসলিমদের জন্য খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদদের মতো অভিভাবক শাসক না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলবে।

লেখক: দুরের যাত্রী

Leave a Reply