প্রতি নির্বাচনের পূর্বে আমরা আওয়ামী-বিএনপিসহ অন্যান্যদের দেখতে পায়, সংলাপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন হামকো-তুমকো কর্মকান্ডে, যদিও সারাবছর জনগণের স্বার্থে তাদের কোন খবর থাকেনা। বরং তাদের দাসত্ব করতে দেখা যায় তাদের প্রভু আমেরিকা-ভারতের; এর কারণও আছে বৈকি!
নির্বাচনের পূর্বেই আমেরিকার নিকট দেয় প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতেই তাদের এই ঋণ শোধের দাসত্ব। সরকারে আওয়ামী-বিএনপির যেই আসুক না কেন, ২০ বছর অবধি আমরা এই দাসত্বই দেখে আসছি দেশের স্বার্থ তাদের সামনে বলি দেওয়ার মাধ্যমে। অর্থ্যাৎ, আওয়ামী-বিএনপির জন্যই আমেরিকা আর আমেরিকার স্বার্থেই আওয়ামী-বিএনপি।
শুধু বাংলাদেশ নয়, তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে কেন্দ্র করেই আমেরিকার এই চক্রান্ত, যার অংশস্বরূপ বাংলাদেশ। আরব বিশ্ব থেকে বিতাড়িত আমেরিকা আজ এশিয়া উপমহাদেশে তার ঘাঁটি গড়তে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেকে টার্গেট করেই আগাচ্ছে। কারণ, এই দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে সামরিক শক্তি, কৌশলগত অবস্থান, খনিজের উৎস হিসেবে এই ভূমিদ্বয় আমেরিকার নিকট গুরুত্বপূর্ণ। আর তাছাড়া অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনকে নিয়ন্ত্রণ এবং এই অঞ্চলে ইসলামী রাস্ট্রব্যবস্থা খিলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে তার এই অঞ্চলে পাঁয়তারা।
আমেরিকা তার এই এজেন্ডাসমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশে তার দুই দালাল হাসিনা-খালেদাকে ৫ বছর পর পর নতুনরূপে নিয়ে আসে জনগণের সামনে, এবং তারা পিলখানা-টাইগার শার্ক-ক্যারাটের মাধ্যমে দেশের সম্পদ-স্বার্থ সমর্পণ করে আমেরিকার সামনে আর আমরাও তাদের উপর বিশ্বাস করি পুনর্বার, বারবার।
”হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু…” (সূরা মায়েদা: ৫১)
“আপনি মানবজাতির মধ্যে ইহুদী ও মুশরেকদেরকে মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসেবে পাবেন……” (সূরা মায়েদা: ৮২)
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন,
“মুমিন কখনো একই গর্তে দু’বার পা দেয়না”।
১৯৭১ পর থেকে ২০১৩ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আধারে ক্ষমতার পালাবদলে আমরা সমস্যার সমাধান খুঁজে আসছি। কিন্তু বাস্তব সত্য হল মিথ্যা স্বাধীনতা, মিথ্যা অধিকার, এক জাতি-ভূমির মিথ্যা শ্লোগানে আজ অবধি আমরা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছি নিজেদের জন্যই কসাই নির্বাচন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দলের ছায়াতলে বিভক্ত হওয়ার মাধ্যমে।
আমরা যতই বলি না কেন সকল ক্ষমতা জনগণের,জনগণের ভোটেই সরকার পরিবর্তন হয় তা মূলত eye wash ছাড়া আর কিছু না। নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী করা হয়, দেশের একমাত্র সমস্যা হলো একটা সুষ্ঠ নির্বাচন এবং নির্বাচন হলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আওয়ামীলীগ বা বি,এন,পি যে দলই ক্ষমতায় আসুক সীমান্তে হত্যাকান্ড কি বন্ধ হবে, দ্রব্যমূল্যের দাম কি জনগনের হাতের নাগালে আসবে,ইসলামী আকিদা কি সুরক্ষিত থাকবে, আমাদের নদীগুলোতে কি প্রাণ সঞ্চার হবে, জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা কি নিশ্চিত হবে, যদি উত্তর হয় ‘না’, তবে কিসের এই সাজানো নির্বাচন, কার জন্য এই নির্বাচন, আমাদের ছুড়ে ফেলে দেয়া দরকার এই নির্বাচনকে।
আসলে আওয়ামীলীগ, বি.এন.পি যতই মুখে বলুক ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করবে,এটা কখনোই সম্ভব নয়, কারণ যেই পুঁজিবাদী তথা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়ে সরকার পরিচালিত হয় সেই ব্যবস্থাই আজকে প্রশ্নের সম্মুখীন। যেই ব্যবস্থা আমেরিকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না, অর্থনৈতিক মন্দা দূর করতে পারছে না, সেই ব্যবস্থা কি ভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করবে?
আমাদের ফিরে যেতে হবে আমাদের বিশ্বাসের নিকট, বিশ্বাস থকে আসা ব্যবস্থার নিকট, যা রাসূল (সা) মদীনায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
“তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শাসন-কর্তৃত্ব দান করলে তারা নামায আদায় করবে যাকাত দেবে এবং সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎকাজকে নিষেধ করবে” (সূরা হাজ্জ: ৪১)
খিলাফাহ রাষ্ট্র সীমান্তে হত্যাকান্ড বন্ধ করবে, জনগনের মৌলিক অধিকার পূরণে সদা সচেষ্ট থাকবে এবং আকীদাকে সুরক্ষিত রাখবে।এ রাষ্ট্রের শাসকের জবাবদীহিতা শুধুমাত্র জনগণের নিকট থাকবে না, থাকবে আল্লাহর নিকট। এ রাষ্ট্র সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে বসিয়ে রেখে উম্মাহর আর্তনাদের দিকে চেয়ে থাকবে না বরং সেনাবাহিনী প্রেরণের মাধ্যমে উম্মাহর জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিবে।
তাই আমাদের উচিত পাতানো নির্বাচনী নাটককে জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে নামার মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দেয়া।
“হে ইমানদারগণ, যখন আল্লাহ ও তার রাসূল এমন কোন কিছুর দিকে তোমাদেরকে আহবান করেন যা তোমাদের মধ্যে জীবনের সঞ্চার করে তখন সেই আহবানে সাড়া দাও” (সূরা আনফাল: ২৪)