সিরিয়ার গণজাগরণ কেন ভিন্ন?

গত ২৬ মাসে সিরিয়ায় যা ঘটেছে তা থেকে এটি প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, সিরিয়ার গণজাগরণ ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিত অন্য সবগুলোর মত নয়, বরং এটি একটি অনন্য গণজাগরণ।

বর্তমানকে অনুধাবন ও ভবিষ্যতের আশাবাদের জন্য অতীতের যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। সিরিয়ার গণজাগরণের বর্তমান বাস্তবতা ও অবস্থা বুঝতে একজন সক্ষম হবে না, যদি না সে সেই ইতিহাসকে অনুধাবন করে যা গণজাগরণ শুরু হওয়ার গতিপ্রকৃতিকে নির্ধারণ করেছে।

প্রথম মহাযুদ্ধ : বিভক্তি ও আধিপত্য বিস্তার

সর্বশেষ বৈধ ইসলামী রাষ্ট্র উসমানীয় খিলাফত প্রথম মহাযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর বিজয়ীরা, বিশেষতঃ ব্রিটেন ও ফ্রান্স মুসলিম ভূমিসমূহ দখল করে নেয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মাইলফলক এ কারণে যে, ইতিহাসে প্রমবারের মত সমগ্র মুসলিম বিশ্বজুড়ে এর প্রতিপক্ষ আধিপত্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়। ইউরোপীয় শক্তিসমূহ মুসলিম বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং মুসলিম ভূমিসমূহকে ‘বিভক্তি ও আধিপত্য বিস্তারকরণ’ কৌশলের আওতায় বিভক্ত করে।

আল-শাম (বৃহত্তর সিরিয়া)-কেও বিভক্ত করা হয়। সিরিয়া ও লেবাননকে দু’টি ভিন্ন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয় যখন জর্ডান ও ফিলিস্তিনকে (যা পরবর্তীতে ইহুদীদের দ্বারা দখলকৃত) বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং নতুন জাতিরাষ্ট্রের পৃথক সীমান্ত রেখাসমূহ তৈরী করা হয়।

এ সময়টি ছিল একটি যুগের শেষ ও অন্য একটি যুগের শুরু। দু’টি বাস্তবতা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত নতুন যুগকে পশ্চিমারা আজকে পর্যন্ত ধরে রেখেছে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যতদিন ধরে রাখা যায়। প্রথমটি হল শাসনব্যবস্থা হিসেবে শারী’আহ্‌’র অপসারণ এবং সাধারণভাবে মুসলিমদের উপর পশ্চিমা জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ আইনের প্রয়োগ, আর বিশেষতঃ সিরিয়া এখানে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু।

দ্বিতীয়টি হল সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্য ও শোষণ অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একধরনের পরোক্ষ উপনিবেশবাদ জারি রাখা। নতুন বিশ্বব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য এগুলো ছিল কৌশলগত লক্ষ্য – যা ইসলামের উপর পশ্চিমাদের আধিপত্য ও স্বার্থকে সুনিশ্চিত করে। দালাল শাসকদের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করার মাধ্যমে অথবা নতুন বিশ্বব্যবস্থার ধারক প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেমন: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং বিশ্বব্যাংক এর মাধ্যমে এ বাস্তবতা ধরে রাখা হয়।

সে কারণে ১৯৪৬ সালে সিরিয়া থেকে ফরাসি সৈন্য সরিয়ে নেয়া ও একই বছর তথাকথিত স্বাধীনতা ঘোষণা করা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। কেননা, যদিও ফ্রান্স বাহ্যিকভাবে সিরিয়া পরিত্যাগ করে, কিন্তু চাপিয়ে দেয়া দালাল শাসকের মাধ্যমে সরাসরি প্রভাব বজায় রাখে।

সিরিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা

১৯৪৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ প্রাধান্য বিস্তার ও স্বার্থরক্ষার জন্য ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে এ প্রতিযোগিতায় সিরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৭১ সালে আমেরিকার সমর্থন নিয়ে আসাদ পরিবার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো মিলিটারী ক্যু এর মাধ্যমে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালায়। যদিও আসাদ পরিবারের শাসন আমলে পিতা-পুত্র উভয়ই ফাঁকা বুলির মত প্রচার করেছে যে, তারা ‘ইসরাইল ও আমেরিকা বিরোধী’, কিন্তু তাদের কথার সাথে কাজের ভিন্নতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের কখনওই কথা নয় বরং কর্মকান্ডকেই অধিকতর বিবেচিত বিষয় হিসেবে দেখা উচিত।

আসাদের শাসনামলের বাস্তবতা

আসাদ পরিবারের শাসনামলে সিরিয়া ছিল ভয়, নিষ্ঠুরতা ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। আসাদ সরকার বাথ পার্টি, গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে পুরো জাতির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখত। সরকার সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে নিষিদ্ধ করে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমন নিপীড়ন চালায় – বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনসমূহ দমন নিপীড়নের বেশি শিকার হয়। অব্যাহত ইসরাইলি আক্রমণ ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সংযম অবলম্বন ও ফাঁকা বুলির মাধ্যমে কপট রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেও নিজের জাতির বিরুদ্ধে সামান্যতম অসন্তুষ্টি প্রকাশের কারণে দমন নিপীড়ন চালানোর ক্ষেত্রে আসাদ সরকার ছিল বেশ তৎপর। ১৯৮২ সালে কুখ্যাত হামা গণহত্যার মাধ্যমে সিরিয়ার মুসলিমদের বিরুদ্ধে আসাদ সরকার সবচেয়ে পাশবিক আক্রমণটি চালায়, যেখানে ৪০,০০০ লোককে হত্যা করা হয়েছিল।

আরব বসন্ত

আরব বিশ্বের সাধারণ জনগণের ফুঁসে উঠাই ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিতি পেয়েছে এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ শ্লোগাণ ছিল, ‘উম্মাহ্‌ এ শাসনের পতন চায়’। আর এটি থেকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, প্রথম মহাযুদ্ধের পর পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিমদের উপর যে বাস্তবতা চাপিয়ে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে এ উম্মাহ বিদ্রোহ করেছে এবং তারা এর আমূল পরিবর্তন চায়। আরব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলন এ অঞ্চলে পশ্চিমাদের কৌশলগত স্বার্থের প্রতি ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে পশ্চিমারা তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া ও ইয়েমেনে গণজাগরণের উত্তাল ঢেউ-এর লাগাম টেনে ধরে বসেছিল এবং দাবি করছিল তারাও সেসব দেশের জনগণের দাবির সাথে একমত পোষণ করে – যদিওবা তারাই (পশ্চিমারা) দশকের পর দশক ধরে অত্যাচারী শাসক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছিল। তারই ফলশ্রুতিতে পশ্চিমারা এসব গণআন্দোলনকে ছিনতাই করতে ও প্রাণান্তকর (?) প্রচেষ্টায় কিছু বাহ্যিক (কসমেটিক) পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হয়। কিন্তু আজকে সেসব দেশে যা ঘটছে তা হল, অব্যাহত বিরাজমান সামাজিক অস্থিরতা ও অসন্তুষ্টি – যা স্ব স্ব জাতিকে একথা ভাবতে বাধ্য করছে যে, তাদের বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি।

এখানে মূল কথা হল, পশ্চিমারা এসব গণআন্দোলনের উপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয় যে, তা এ অঞ্চলে পশ্চিমাদের কৌশলগত স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলতে পারেনি। আর এটি করা হয়েছে কসমেটিক পরিবর্তন করার মাধ্যমে – যা কেবল সমস্যার উপসর্গকে টার্গেট করেছিল, মূল সমস্যাকে নয়। উদাহরণস্বরূপ, মিডিয়ার ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে আমরা মোবারক ও তার পুত্রদের সম্পদ এবং তার শাসনামলের দুর্নীতির ব্যাপারে জানতে পেরেছি। এর দ্বারা রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকারব্যবস্থার প্রকৃত পরিবর্তন নয়, বরং শুধু রাষ্ট্রপ্রধান তথা ব্যক্তি পরিবর্তনের দিকে জনগণের দৃষ্টিকে কেন্দ্রীভূত রাখা হয়।

সিরিয়ার গণ-জাগরণ

১৫ মার্চ ২০১১ তারিখে ‘আরব বসন্ত’-এর ধাক্কা সিরিয়ায় পৌঁছে। অন্যান্য দেশের মত সিরিয়ার বিক্ষোভকারীরা আসাদ সরকারের নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির দাবি তোলে। আসাদ সরকারের নিপীড়নমূলক প্রকৃতি জানা থাকার কারণে কয়েক মাসের মধ্যে এ গণ-জাগরণ দমন করা যাবে-এ ব্যাপারে আমেরিকা আত্মবিশ্বাসী ছিল। ফলে সে সময় আমেরিকার কৌশল ছিল সিরিয়ার জাগরণকে পাত্তা না দেয়া এবং গণ-জাগরণকে দমন করার জন্য প্রচ্ছন্নভাবে তার আজ্ঞাবহ দালাল আসাদকে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগ করার একের পর এক সুযোগ করে দেয়া।

তবে ঘটনা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়েছে এবং কয়েক মাস পর সিরীয় সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈন্যদের মধ্য থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ না মেনে পদত্যাগ করা শুরু হল। এ প্রবণতা আরও এগিয়ে যায় এবং পদত্যাগী সেনাসদস্যরা জাতিকে সরকারের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে Free Syrian Army (FSA) গড়ে তুলে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী পর্যায়ে অসংখ্য সশস্ত্র ব্রিগেড গঠিত হয়।

মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ক্রমাগত সশস্ত্র ব্রিগেডগুলোর পক্ষে চলে যাওয়ায় এ ব্রিগেডগুলো সমর্থিত সাধারণ সিরীয়দের হাতে দালাল আসাদের পতন হতে পারে-এ হুমকি বুঝতে পেরে আমেরিকা এই উত্তাল গণ-জাগরণের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা শুরু করে। অন্যান্য ‘আরব বসন্ত’ এর দেশগুলোর মত গণজাগরণের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমেরিকা নতুন এক কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করল। সেকারণে আমেরিকা Syrian National Coalition (SNC) গঠন, অতঃপর অন্তঃর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও আসাদ পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য নেতৃত্ব উপহার দেয়ার জন্য বিরোধী ব্যক্তিত্ব তৈরিতে সহায়তা করা শুরু করে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের সরে যাওয়ার পথকে সুগম করার জন্য আমেরিকা ‘ইয়েমেনি সমাধান’ এর দিকেও আহ্বান জানায়।

কিন্তু বাস্তবে মাঠে যা ঘটে তা আমেরিকা ও পশ্চিমাদের জন্য ভয়ঙ্কর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গণজাগরণ যতই এগুতে থাকল ততই সিরিয়ার জনগণ ও সশস্ত্র ব্রিগেডগুলোর শ্লোগাণ ও প্রকাশিত লক্ষ্য ক্রমাগতভাবে ইসলামি প্রকৃতির হতে থাকল। এটি সুস্পষ্ট হতে থাকল যে, সিরিয়ার মুসলিমগণ কেবল প্রেসিডেন্টের অপসারণ চান না। কেননা তা মূল সমস্যার উপসর্গ অর্থাৎ প্রতিদিনকার বঞ্চণা ও দুর্নীতি এর সমাধানকল্পে এটি একটি কসমেটিক পরিবর্তন। সে কারণে তারা পশ্চিমা প্রস্তাবনাকে প্রত্যাখ্যান করল এবং পশ্চিমা সমর্থিত ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীদলকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। এটি সুস্পষ্ট হতে থাকল যে, সিরিয়ার মুসলিমদের দাবি তাদের আক্বীদা ও উচ্চ রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে উদ্ভূত। তারা অনুধাবন করতে পারল যে, মূল সমস্যা হল প্রম মহাযুদ্ধের পর চাপিয়ে দেয়া পশ্চিমা জীবনব্যবস্থা। আর তারপর থেকে যে সমস্যাসমূহ উদ্ভূত হয় তা ঐ মূল সমস্যার উপসর্গমাত্র। তারা আরও অনুধাবন করতে পারল যে, কেবলমাত্র ইসলামের মাধ্যমে তাদের বর্তমান সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। সে কারণে দক্ষিণে দেরা, রাজধানী দামেস্ক, পশ্চিমে হোমস, উত্তরে আলেপ্পো ও ইদলিব, পূর্বে আল রাকাসহ পুরো সিরিয়াব্যাপী অসংখ্য বিক্ষোভকারী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানায়। প্রকৃত অর্থে, ইসলামী খিলাফত ধ্বংস হওয়ার পর এই প্রথমবার মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার সাধারণ জনগণ খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানায়।

সিরিয়ার মুসলিমগণের প্রতিরোধ ও দৃঢ়তা পুরো বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে এবং পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের কাছে আসন্ন পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হল, গণজাগরণ চলাকালীন সময়ে আসাদ সরকার কর্তৃক ভয়াবহ গণহত্যা ও জঘন্য বর্বর অপরাধ সংঘটিত করার পরও সিরিয়ার মুসলিমগণ এমন কোন রাজনৈতিক সমাধানের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে – যা সরকার কাঠামোকে অক্ষত রেখে প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করবে, হত্যাকান্ডের অবসান ঘটাবে।

সিরিয়ার গণজাগরণের ফলাফল যাতে কোনভাবেই খিলাফত প্রতিষ্ঠার দিকে না যায় এবং সিরিয়াসহ পুরো অঞ্চলজুড়ে পশ্চিমা আধিপত্য খর্ব না হয় সে জন্য আমেরিকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। আসাদ সরকারকে সামরিক ও অবকাঠামোগতভাবে সাহায্য করতে এটি রাশিয়া ও ইরানের সাথে কাজ করছে এবং একই সময়ে তথাকথিত উগ্রবাদী শক্তিসমূহকে দুর্বল করতে সেলিম ইদরিসের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সমর্থিত Supreme Military Council কে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে। এছাড়াও সিরিয়ায় শেকড় রয়েছে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটানোর জন্য রাজনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে এ প্রচেষ্টা পূর্বে SNC এবং অতি সম্প্রতি ঘাসান হিট্টুকে অন্তঃর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।

সিরীয় জাগরণের ভবিষ্যত

বিগত ২৬ মাসে কমপক্ষে এক লক্ষ সিরীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে সিরীয় মুসলিমগণ খুব ভালভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে যে, এ পথে আরও ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রয়োজন। তারা আরও বুঝতে পেরেছে যে, এ সংগ্রামের প্রকৃতি হল একদিকে মুসলিম উম্মাহ্‌ সত্যিকারের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং অন্যদিকে পশ্চিমাবিশ্ব মুসলিম বিশ্বে ব্যবস্থার পরিবর্তন নয় বরং চেহারার পরিবর্তন সুনিশ্চিত করতে চাচ্ছে যাতে করে মূল সমস্যা নয় বরং এর উপসর্গ মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।

আরব বিশ্বে সংঘটিত হওয়া অন্যান্য গণজাগরণের মত না হওয়ায় সিরীয় গণজাগরণ অনন্য – যা সভ্যতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়। নবী (সাঃ) আল শামের ভূমি ও এর অধিবাসীদের বিষয়ে অনেকগুলো হাদীস উল্লেখ করেন – যেগুলোতে সে ভূমির রহমতপূর্ণ প্রকৃতি ও এর মুসলিমদের দৃঢ়তার কথা বিবৃত হয়েছে। তাছাড়া মুসলিমদের ইতিহাসে বর্ণিত আছে, এই বিশেষ ভূমিতে ক্রুসেডার ও মঙ্গলদের পরাজিত করে মুসলিমগণ তাদের হৃত শাসনক্ষমতা ও পুনঃজাগরণ ফিরে পায়।

সে কারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, শতাব্দীকালের উপনিবেশবাদ, লাঞ্ছণা এবং নিষ্ঠুরতাকে পেছনে ফেলে আল শামের মুসলিমগণ উম্মাহ্‌’র পুনঃজাগরণকে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে তো?

আনাস আলওয়াহ্‌ওয়াহ্‌
মে, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ

Leave a Reply