যারা স্রষ্টাতে বিশ্বাস করেনা, তারা প্রায়ই বলে থাকে স্রষ্টাতে বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস অর্থাৎ স্রষ্টাতে বিশ্বাস কোন যৌক্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। আরও বলা হয় যে, স্রষ্টাতে বিশ্বাস সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।
স্রষ্টাতে বিশ্বাস কি বিজ্ঞানভিত্তিক কি না বিচার করার আগে দেখা যাক বিজ্ঞান আসলে কী? আমাদের চারপাশে মহাবিশ্ব, তার অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণই বিজ্ঞান। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে মহাবিশ্বের কর্মধারা।
এটা বিজ্ঞানের আলোচ্য বা বিবেচ্য বিষয় নয় যে, কে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন বা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি। বিজ্ঞান শুধুমাত্র মহাবিশ্বের কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করে। সেক্ষেত্রে, স্রষ্টা আছেন কিনা তার উত্তর পেতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা ভুল। বরং এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ ব্যবহার করা উচিত।
সূর্য, চন্দ্র, তারা, গ্রহ, জীবজন্তু, মানুষ ইত্যাদি বস্তু দেখলেই এদের কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখতে পাই। যেমনঃ তাদের নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ আকৃতি আছে, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন ইত্যাদি গন্ডি আছে; এরা সকলেই নির্ভরশীল, দুর্বল এবং পরমুখাপেক্ষী। এসব কিছুই নির্দেশ করে যে এরা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি করেনি বা সেই যোগ্যতাও তাদের নেই। বরং তাদের উপর এসব বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকক্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন স্রষ্টা আছেন।
ইসলাম মানুষকে যৌক্তিক প্রমাণের মাধ্যমে আল্লাহ’র অস্তিত্বের স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। কুর’আনের শত শত আয়াতে মানুষকে এই মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণের জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ’র অস্তিত্বের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। সূরা আল ইমরানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“দেখুন! আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে দিবা-রাত্রির আবর্তনে অবশ্যই চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।”
আজকে আমাদের আল্লাহ’র অস্তিত্বের উপর ততটুকুই বিশ্বাস রাখি যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পূর্বপুরুষদের নিকট হতে পেয়েছি। আমাদের এই বিশ্বাস কোন বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ফলে, আমাদের জীবনের উপর এই বিশ্বাসের কোন কার্যকর প্রভাব নেই। তাই আমাদেরকে ইসলামিক মৌলিক বিশ্বাস (আকীদা) সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চিন্তা করা উচিত, তা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জীবনকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দান করবে।