ইসলামী সমাজব্যবস্থায় নারীর সম্মান ও মর্যাদা

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য – তথা সমগ্র বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন একটি সমস্যা। কিন্তু এ সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনায় এমনভাবে এ ব্যাপারটিকে উপস্থাপন করা হয় যেন এটি শুধুমাত্র মুসলিম বিশ্বেরই একটি সমস্যা আর এর কারণ হিসেবে সব সময় দায়ী করা হয় ইসলামকে। ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন:

– ইসলাম পুরুষকে দিয়েছে নারী নির্যাতন করার অধিকার।

– নারীর নেই শিক্ষা গ্রহণ, রাজনীতি কিংবা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অধিকার।

– নারীর নেই কোন বিষয়ে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার।

– নারীর নেই স্বামী নির্বাচন বা তালাকের অধিকার।

– হিজাব বা পর্দাপ্রার মূল উদ্দেশ্য নারীদের অবরুদ্ধ করা।

– হিল্লা বিয়ে, গ্রামগঞ্জের মোলাদের অন্যায় ফতোয়া, অনার কিলিং ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদিত বিষয়।

কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, উপরোক্ত কোন প্রচারণার সাথেই নেই ইসলামের দূরতম সম্পর্ক। এখন থেকে চৌদ্দ’শত বছর আগে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে সকল প্রকার নারী নির্যাতন। উপযুক্ত সম্মানের সাথে নিশ্চিত করেছে নারীর সুষ্পষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার। কিন্তু, আজ সমস্ত বিশ্বব্যাপী ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে নারী বঞ্চিত হয়েছে তার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত সকল অধিকার থেকে।

ইসলাম নারীদের ভূমিকাকে যথার্থ সম্মান দিয়েছে। একটু বিশ্লেষন ও গবেষনা করলেই আমরা দেখবো মা, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে অথবা একজন পেশাজীবি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনকারী হিসেবে কীভাবে ইসলাম নারীদের মর্যদাকে সুউচ্চ করেছে।

১. সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি: পুঁজিবাদী সমাজে মূলতঃ নারীর সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠা। আর ইসলামী সমাজে নারীর সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে তার আলাহ্‌ভীরুতা বা তাকওয়া। রাসূল (সা) বলেছেন, “এই পৃথিবী এবং এর মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুই মূল্যবান। কিন্তু সবচাইতে মূল্যবান হচ্ছে একজন সৎকর্মশীল নারী।” (মুসলিম)

২. মাতৃত্বের সম্মান: পুঁজিবাদী সমাজ নারীর মাতৃত্বকে দেয়নি কোন সম্মান ও মর্যাদা। আর ইসলাম নারীকে মা হিসাবে করেছে সবচাইতে বেশী সম্মানিত। রাসূল (সা) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত।”

৩. গৃহকর্মের মর্যাদা: পুঁজিবাদী সমাজ নারীর গৃহকর্মের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজকে করেছে তুচ্ছতাচ্ছিল্য। আর ইসলাম নারীর গৃহের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সন্তান জন্মদান ও লালনপালন করাকে দিয়েছে জিহাদের মর্যাদা। মূলত এটিই একজন নারীর মৌলিক ও প্রধান কাজ। রাসূল (সা) বলেছেন, “ঘরে তোমরা (নারীরা) তোমাদের সন্তানদের যত্ন নাও আর এটাই তোমাদের জন্য জিহাদ।” (মুসনাদে আহমাদ)

৪. স্ত্রী হিসাবে সম্মান: স্ত্রী হিসাবেও নারীকে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা। রাসূল (সা) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম। আর নিশ্চয়ই আমি আমার স্ত্রীর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশী উত্তম।” (তিরমিযী)

৫. কন্যাসন্তানের সম্মান: পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক এই পৃথিবীতে এখনও কন্যাসন্তান অনাকাঙ্খিত। অথচ ইসলাম উত্তম রূপে কন্যা সন্তান লালন-পালন করাকেও ইবাদত হিসাবে গণ্য করেছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তির কোন কন্যা সন্তান থাকে এবং তাকে সে উত্তম শিক্ষা দেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।

৬. সর্বস্তরে নারীর সম্মান: ইসলাম সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নারীর সাথে সম্মানজনক আচরণ করার জন্য উৎসাহিত করেছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “শুধুমাত্র সম্মানিত লোকেরাই নারীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে। আর যারা অসম্মানিত, নারীদের প্রতি তাদের আচরণও হয় অসম্মানজনক।” (তিরমিযী)

এই হলো ইসলামে নারীর মর্যাদা আর এটা বর্তমান বিশ্বের প্রচলিত মূল্যবোধের মতো নয় যেখানে নারীদের দেখা হয় কেবলমাত্র যৌনতার প্রতীকরূপে এবং ভোগের উপাদান হিসেবে। এর ফলশ্রুতিতে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply