মুহাম্মদুর রাসূল (সা)-এর শাসনকালেই খ্রিস্টান রোমানরা মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা শুরু করে। মুহাম্মদুর রাসূল (সা)-এর ইন্তিকালের পর তাদের শত্রুতার মাত্রা বেড়ে যায়।
আবু বকর আস্ সিদ্দিক (রা)-এর শাসনকালে মুসলিম বাহিনী সিরিয়ার বহু জনপদ থেকে রোমানদেরকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। রোমানরা বিশাল সেনাবাহিনী সংগঠিত করে সিরিয়ার অন্তর্গত ইয়ারমুক উপত্যকায় মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে এক লাখ বিশ হাজার খ্রিস্টান রোমানদের মুকাবিলা করেন মাত্র ছাব্বিশ হাজার মুসলিম।
যুদ্ধ চলাকালেই আল-মদিনায় আবু বকর আস্ সিদ্দিক (রা) ইন্তিকাল করেন। আমিরুল মুমিনীন হন উমর বিন আল-খাত্তাব (রা) বিপুল সংখ্যক রোমান সৈন্য মুসলিমদের হাতে নিহত হয়। যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয়ী হন। তবে বেশ কিছু নামীদামী মুসলিমও এই যুদ্ধে শহীদ হন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন হারিস ইবনু হিশাম, ইকরিমা বিন আবী জাহেল এবং আইয়াশ বিন আবী রাবিয়া (রা)। যুদ্ধের পূর্বে ইকরিমা (রা) বক্তব্য ছিল: আমার ইতিপূর্বের জীবনে আমি রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রচন্ড বিরোধিতা করেছি। সুতরাং আজকে আমি এই (যুদ্ধ করতে করতে শত্রুদের) ভীড়ে ঢুকে পড়ব এবং আর বের হব না। কে আছো যে রাসূলুল্লাহ (সা) কে কোনো বার্তা দিতে চাও।
যুদ্ধের পূর্বে এই তিন বীর একে অপরের কাছ হতে মৃত্যুর বা’য়াত গ্রহণ করে অর্থাৎ আমৃত্যু তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন।
পরে যুদ্ধে আহত হয়ে ময়দানে পাশাপাশি পড়ে ছিলেন এই তিন মুসলিম বীর: হারিস ইবনু হিশাম, ইকরিমা বিন আবী জাহেল এবং আইয়াশ বিন আবী রাবিয়া (রা)। জখম থেকে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। তাঁরা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। বাঁচার কোনো আশাই ছিল না।
“পানি, পানি” বলে চিৎকার করছিলেন হারিস ইবনু হিশাম (রা)। একজন মুসলিম সৈনিক এক পেয়ালা পানি নিয়ে ছুটে আসেন তাঁর কাছে। তিনি পানি পান করতে যাবেন, এমন সময় দেখেন ইকরিমা (রা) তাকিয়ে আছেন পেয়ালার দিকে। হারিস ইবনু হিশাম (রা) পেয়ালাধারী সৈনিককে বললেন, “আগে ইকরিমাকে পানি পান করাও।”
সৈনিকটি পেয়ালা হাতে ছুটে আসেন তাঁর কাছে। ইকরিমা পানি পান করতে যাবেন, এমন সময় দেখতে পান আইয়াশ ইবনু আবী রাবিয়া (রা) তাকিয়ে আছেন পেয়ালার দিকে। ইকরিমা (রা) বললেন, “আগে আইয়াশকে পানি পান করাও।” পেয়ালা হাতে সৈনিকটি আইয়াশ বিন আবী রাবিয়া (রা)-এর কাছে পৌঁছার আগেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সেনিকটি পেয়ালা হাতে ইকরিমা (রা)-এর কাছে। দেখেন ইকরিমা (রা) শহীদ হয়ে গেছেন। এবার পেয়ালা নিয়ে সৈনিকটি ছুটে আসেন হারিস বিন হিশাম (রা)-এর কাছে। দেখেন, তিনিও আর বেঁচে নেই।
ইন্তিকালের পূর্বে প্রচণ্ড পিপাসায় ছটফট করাকালেও অপর ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা তারা ভূলে যান নি যদি প্রত্যেকেই অত্যন্ত বেদনা ও পিপাসায় কাতর ছিলেন। আসহাবে রাসূল এমন কঠিন মুহূর্তেও স্থাপন করে আত্ম-ত্যাগের অনন্য উদাহরণ।
মূল: এ কে এম নাজির আহমেদ কর্তৃক লিখিত আসহাবে রাসূলের জীবনধারা