‘দার’ শব্দটি আরবি ভাষায় বহু অর্থে ব্যবহার হয়, যেমন: এলাকা/মহল্লা, ঘর, বসতবাড়ি, ভূমি ইত্যাদি। শরীয়াতের পরিভাষায়, দারুল ইসলাম বলতে এমন ভূমিকে বোঝায় যেটি ইসলামের আইন দ্বারা শাসিত হয় এবং যার নিরাপত্তা রক্ষিত হয় ইসলাম দ্বারা অর্থাৎ মুসলিমদের কর্তৃত্ব ও প্রতিরক্ষা দ্বারা। এমন কি, যদি সেই ভূমির অধিকাংশ অধিবাসী অমুসলিমও হয়, তবুও সেটি দারুল ইসলাম।
দারুল কুফর বলতে এমন ভূমিকে বোঝায় যেটি কুফরের আইন দ্বারা শাসিত হয় এবং যার নিরাপত্তা ইসলাম দ্বারা রক্ষিত হয় না অর্থাৎ মুসলিমদের কর্তৃত্ব ও প্রতিরক্ষা দ্বারা এর নিরাপত্তা রক্ষিত হয় না। এমন কি, যদি সেই ভূমির অধিকাংশ অধিবাসী মুসলিমও হয়, তবুও সেটি দারুল কুফর।
মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ আলেমগণ দারুল ইসলাম ও দারুল কুফরকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করেছেন।
ইমাম আল-কাসানী (রহ) বলেন, হানাফী আলেমগণের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই যে, ইসলামের আইন কর্তৃত্বশীল হলে দারুল কুফর দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হয়। আমাদের ইমাম (আবু হানিফা) বলেন, তিনটি ক্ষেত্রে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হয়: যখন আইনগুলো কুফরের আইনে পরিণত হয়, যখন কুফর রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ছাড়াই ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত থাকে অথবা যখন মুসলিম কিংবা যিম্মিদের জন্য আর কোনো নিরাপত্তা অবশিষ্ট থাকে না। [বাদাইস সানাই, ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩১]
ইমাম আল-সারখাসী (রহ) বলেন, ইসলামী আইনসমূহ কর্তৃত্বশীল হলে একটি ভূমি দারুল ইসলামে পরিণত হয়। [শরহে সীরাতুল কাবীর, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১৯৭]
কাজি আবু ইয়া’লা (রহ) বলেন, যে দেশে ইসলামের পরিবর্তে কুফর বাস্তবায়িত হয়, তা দারুল কুফর। [আল-মু’তামাদ ফী উসুলিদ-দ্বীন, পৃষ্ঠা ২৭৬]
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) বলেন, জমহুর (অধিকাংশ) আলিমদের মতে, দারুল ইসলাম হলো সেই ভূমি যেখানে মুসলিমরা বসবাস করে ও ইসলামের আইনসমূহ কর্তৃত্বশীল। …. ইসলাম কর্তৃত্বশীল না হলে সেটি দারুল ইসলাম নয়। [কিতাব আহকাম আহলিল জিম্মাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৬]
শায়খ তাকিউদ্দিন আন-নাবাহানী (রহ) বলেন,
والحق أن اعتبار الدار دار إسلام أو دار كفر، لا بد أن ينظر فيه إلى أمرين: أحدهما الحكم بالإسلام، والثاني الأمان بأمان المسلمين أي بسلطانهم، فإن توفر في الدار هذان العنصران، أي أن تحكم بالإسلام، وأن يكون أمانها بأمان المسلمين، أي بسلطانهم كانت دار إسلام، وتحولت من دار كفر إلى دار إسلام، أما إذا فقدت أحدهما فلا تصير دار إسلام
দারুল ইসলাম বা দারুল কুফর বিবেচনা করার ক্ষেত্রে শুদ্ধ পদ্ধতি হলো দুটো বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রাখা: এক. ইসলামী আইনের শাসন, দুই. মুসলিমদের কর্তৃত্ব দ্বারা নিরাপত্তা। কোনো দেশ যদি এ দুটো উপাদান অর্জন করে অর্থাৎ ইসলামী শাসন ও মুসলিমদের কর্তৃত্বে নিরাপত্তা লাভ করে, তাহলে দেশটি দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হয়। আবার যদি দেশটিতে এ দুটো উপাদানের কোনো একটি না থাকে, তাহলে সেটি আর দারুল ইসলাম থাকে না। [আশ-শাকসিয়্যাহ আল-ইসলামীয়াহ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৯]
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর কোথাও বর্তমানে ইসলামী আইনের পরিপূর্ণ শাসন বা ইসলামী কর্তৃত্বে নিরাপত্তার বিধান নেই। সুতরাং নিঃসন্দেহে বাংলাদেশসহ প্রতিটি মুসলিম দেশ তথা সারা পৃথিবী বর্তমানে দারুল কুফর। বর্তমান বিশ্বে বিপর্যয়ের মূল কারণও হলো এই ইসলামী আইনের অনুপস্থিতি। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ) যথার্থই বলেছেন,
الْفِتْنَةُ إذَا لَمْ يَكُنْ إمَامٌ يَقُومُ بِأَمْرِ النَّاسِ
জনগণের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করার জন্য কোনো ইমাম না থাকলে ফিতনা [বিপর্যয় ও পাপাচার] সৃষ্টি হয়। [আল ফুরু’ লি ইবনে মুফলিহ]
বিপর্যয় ও পাপাচারপূর্ণ এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদেরকে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে দারুল ইসলামে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।