বইমেলা ২০১২ – কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা

অনেক ব্যস্ততা সত্ত্বেও আজ গিয়েছিলাম একুশে বই মেলায়। সেই মেলার শুরু দিন থেকে যাবো যাবো করে আর যাওয়া হচ্ছিলো না। আগামীকাল শেষ হয়ে যাবে ভেবে শেষে জরুরী কিছু কাজ বাদ রেখেই আজকে গেলাম। ঘুরে আসলাম আমাদের জাতীয় জীবনের খুবই উল্লেখযোগ্য একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, মাসব্যপী অনুষ্ঠিত একুশে বই মেলায়। পুরো মেলা ঘুরে বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা ও খানিকটা সুখস্মৃতি নিয়ে অবশেষে ফিরে এলাম নিজ গন্তব্যে। প্রিয় পাঠকদের সাথে তা শেয়ার করার লোভ সংবরণ করতে না পেরে শেয়ার করছি। লেখক এবং প্রকাশক হিসেবে খুব বেশি না হলেও প্রায় ১২ বছরের সামান্য কিছু অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের বই মেলা সম্পর্কে সংক্ষেপে আমার মূল্যায়ন।

প্রথমেই মেলার ভালো দিক এবং সুখকর বিষয়

১. গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারই সম্ভবত: সর্বাধিক সংখ্যক ষ্টলের সমন্বয়ে বই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি খুবই ভালো একটি দিক। এর ফলে অধিক পরিমাণে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে।

২. এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী অনেক নতুন প্রকাশনা ও প্রতিষ্ঠান মান সম্মত অনেক গুলো নতুন বই প্রকাশ করেছে। এটা খুবই ভালো একটি দিক। এজন্য উদ্যেগ নেয়া ও এগিয়ে আসা সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতীয় পর্যায়ে এমন উদ্যোগের আরো ব্যাপকতা প্রয়োজন।

৩. বাংলা একাডেমি চত্বর ও মেলার ভেতরের পরিবেশ বেশ সাজানো গোছানো। সব গুলো ষ্টলই খুব সুন্দর লাগছিলো। তবে ফুটপাতে হকারদের উৎপাত রাস্তার পাশের ষ্টল গুলোর সৌন্দর্য্য ম্লান করছিলো। এগুলোকে প্রবেশ পথের আরেকটু দূরে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।

কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা

আমাদের দেশে ‘ডান পন্থী’ এবং ‘বামপন্থী’ বলে দু’টি মেরুকরণ রয়েছে। প্রকাশনার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। দেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, একুশে বই মেলায় সাধারণত: ‘বামপন্থী’ ঘরানার লোকজনই নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তারা অত্যন্ত পরিস্কারভাবেই ‘ডানপন্থী’ বা ইসলামী প্রকাশনাকে একুশে বই মেলায় আসতে সর্বাত্মকভাবে বাঁধা দিয়ে থাকেন। অনেক কষ্টে দু’ চারটি প্রকাশনী ‘তদবিরে’র জোড়ে ঢুকে পরে। এই যা।

আমি নিজেও ২০০৮ সালে বই মেলায় আমার প্রকাশনীর জন্য ষ্টলের আবেদন জমা দিয়েছিলাম। সে বছর এ ব্যাপারে অনেক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সুযোগ হয়েছে। বাংলাবাজারের সম্ভ্রান্ত অনেক ইসলামী প্রকাশনীকেই প্রথম বাছাইতেই বাদ দেয়া হয়। আমারটিরও একই অবস্থা হয়েছিলো। এমনকি অতীতে যারা ষ্টল পেয়েছিলো তাদের অনেকেও ‘মান সম্মত’ ও ‘সৃজনশীল’ বই না থাকার অভিযোগে বঞ্চিত হন। ডজন ডজন গবেষণাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী প্রকাশনা বাদ পড়লেও ‘মান সম্মত’ ও ‘সৃজনশীল’ বইয়ের সংজ্ঞায় বামপন্থী এবং রামপন্থী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনেকেই ষ্টল পান যথারীতি।

জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত একটি বই মেলায় এই বিভক্তি দু:খজনক। ‘বামপন্থী’ ঘরানার মহামান্য ব্যক্তিরা অন্য ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগীতা ও মেধা বিকাশের কথা বললেও, মুসলিম সন্তানদেরকে নাস্তিকতার সবক দেয়ার সময়, রামপন্থী লেখকদের যৌন সুরসুরি মূলক ফালতু বইয়ের বিশাল সরবরাহকে মেনে নিলেও; ঈমান ও তাওহীদের এবং মানসম্মত ইসলামী প্রকাশনার অনুপ্রবেশ কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। এটা সুস্পষ্টভাবেই তাদের নৈতিক পরাজয়ের প্রমাণ বহন করে। তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, সৎ সাহস থাকলে মান সম্মত ইসলামী প্রকাশনা গুলোকে আপনারা সুযোগ দিন। তারপর একসাথে প্রতিযোগিতায় আসুন। দেখা যাক, জনগণ কাকে গ্রহণ করে!

এবারের বই মেলায় সবচেয়ে বাজে এবং দুঃখজনক যেই বিষয়টি দৃষ্টিকটু পর্যায়ে চোখে লেগেছে সেটি হচ্ছে বিভিন্ন অযাচিত সংগঠনের নামে অহেতুক অনেক গুলো ষ্টল অপচয়। প্রায় অর্ধশত ষ্টল ফালতু দলীয়করণ, ও বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা হয়েছে। এসকল ষ্টল বরাদ্দপ্রাপ্তদের অধিকাংশই সরকারী দলের সাথে সম্পৃক্ত। তাদের ষ্টল গুলোতে বিক্রি হচ্ছে মানহীন একেবারেই ফালতু বই-পুস্তক। পরিচিত প্রকাশনীর মালিক ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এগুলো যারা বরাদ্দ নিয়েছেন তারা ষ্টলপ্রতি বেশ মোটা অংকের টাকা নিয়ে ষ্টল গুলো অধিকাংশই হকারদেরকে দিয়ে দিয়েছেন। তারা এখানে মানহীন সস্থা বই এনে ২৫% কমিশনের চড়া মূল্যে বিক্রি করে নিজেদের পুঁজি উঠিয়ে লাভ নিশ্চিত করছেন। অথচ একই বই বাইরে ৫০-৫৫% কমিশনে বিক্রি হচ্ছে।

ইসহাক খান

ইসলামী আকীদা

Leave a Reply