‘জিহাদ’ শব্দটি এসেছে ‘জাহাদা’ শব্দ থেকে যার অর্থ ‘দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া’। আরবদের কাছে শাব্দিকভাবে ‘জিহাদ’- এর অর্থ হলো ‘কোনো কাজ বা মত প্রকাশ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা বা কঠোর সাধনা করা’। আরো যেসব অর্থে জিহাদ শব্দটি ব্যবহার হয়:
১. اَلْجَد বা প্রচেষ্টা ব্যয় করা
২. الطَّاقَةُ বা কঠোর সাধনা করা
৩. السَّعْىُ বা চেষ্টা করা
৪. اَلْمُشَقَّةُ বা কষ্ট বহন করা
৫. بَذْلُ القُوَّةِ বা শক্তি ব্যয় করা
৬. النِهايَةُ والغايَةُ বা শেষ পর্যায়ে পৌঁছা
৭. الارْضُ الصلبة বা শক্তভূমি
৮. الكفاح বা সংগ্রাম করা
ইমাম নিশাপুরী (রহ)-এর তাফসীরে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ‘আল-জিহাদ অর্থ হলো কোনো উদ্দেশ্য বা ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালানো’।
মোট কথা, শাব্দিক অর্থে ‘জিহাদ’-এর সংজ্ঞা হলো, অন্তত দুটি পক্ষের মধ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা ও সক্ষমতার প্রকাশ ঘটানো।
শাব্দিক অর্থ মোতাবেক, এই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সশস্ত্র কিংবা নিরস্ত্র উভয়ই হতে পারে; অর্থ ব্যয় করেও হতে পারে, ব্যয় না করেও হতে পারে। একইভাবে, দুটো পরস্পরবিরোধী প্রবৃত্তির মধ্যেও পরস্পরকে দমানোর জিহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা) হতে পারে। এই জিহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা) কেবল কথার মাধ্যমেও হতে পারে, অথবা কোনো একটি কাজ না করা বা কোনো একটি বিশেষ কথা না বলার মাধ্যমেও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কোনো ব্যক্তিকে যদি তার পিতামাতা আদেশ করে আল্লাহকে অমান্য করার জন্য আর সেই ব্যক্তি যদি পিতামাতার নির্দেশ অমান্য করে ও সবর অবলম্বন করে, তবে তা-ও জিহাদ। আবার কোনো ব্যক্তি যদি প্রবৃত্তির তাড়নাকে অগ্রাহ্য করে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তবে তা-ও জিহাদ।
জালালাইন শরীফ-এর হাশিয়াতুন জামাল-এ আছে: ‘জিহাদ হলো প্রতিকূলতার মুখে সবর করা। এটা যুদ্ধের সময়ও হতে পারে, নফসের মধ্যেও হতে পারে।’
‘জিহাদ’ শব্দের এই শাব্দিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী মুসলিমদের জিহাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান, দখলদার কিংবা কাফের শক্তি। পাশাপাশি, এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জিহাদ হতে পারে আল্লাহর পথেও (জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ)। তাই এই জিহাদ হতে পারে আল্লাহকে খুশি করার জন্য, আবার হতে পারে শয়তানকে খুশি করার জন্যও। যেমন: কাফেরদের জিহাদ হলো শয়তানকে খুশি করার জন্য। ইমাম নিশাপুরী (রহ) বলেন, ‘এটি [জিহাদ] হলো কোনো উদ্দেশ্য বা ইচ্ছাকে অর্জন করার জন্য প্রচেষ্টা চালানো, উদ্দেশ্যকারীর উদ্দেশ্যের ধরন যা-ই হোক না কেন।’ কাফের পিতারা তাদের মুমিন সন্তানদের সত্য বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করানোর জন্য যেসব কাজ করতো, সেগুলোকে কুরআনে জিহাদ বলা হয়েছে:
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِى مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَا
“তোমার পিতামাতা যদি জিহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা) করে যে, তুমি আমার সাথে এমন কিছু শরীক কর যে সম্বন্ধে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদেরকে অমান্য কর।” [সূরা লুকমান: ১৫]
ইসলামী শরীয়াতে ‘জিহাদ’ শব্দটিকে এর সাধারণ শাব্দিক অর্থে না রেখে কুরআন-হাদীসে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট অর্থে সীমিত করা হয়েছে। শরীয়াতের পরিভাষায় জিহাদের অর্থ হচ্ছে ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সরাসরি বা আর্থিকভাবে বা মুখ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো’। এই বিশেষ অর্থটি প্রদান করা হয়েছে মদীনায়, যেখানে সশস্ত্র যুদ্ধকে ফরয করা হয়েছিল। মক্কায় সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি ছিল না, তাই মাক্কী সূরাসমূহে ‘জিহাদ’ শব্দটি শরয়ী অর্থে নয়, বরং শাব্দিক অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন: সূরা লুকমানের ১৫নং আয়াত, যেটি ইতোমধ্যে উদ্ধৃত হয়েছে। এরূপ আরো উদাহরণ হলো:
وَمَن جَاهَدَ فَإِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَنِيٌّ عَنِ ٱلْعَالَمِينَ
“আর যে ব্যক্তি সাধনা (জিহাদ) করে, সে তো নিজেরই জন্য সাধনা করে। আল্লাহ্ তো বিশ্বজগত থেকে অমুখাপেক্ষী।” [সূরা আনকাবুত: ৬]
وَوَصَّيْنَا ٱلإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِى مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَآ
“আমি মানুষকে স্বীয় মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছি, তবে তারা যদি তোমার উপর চাপ (জিহাদ) দেয়, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যে সম্বন্ধে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, এক্ষেত্রে তুমি তাদের আনুগত্য করবে না।” [সূরা আনকাবুত: ৮]
وَٱلَّذِينَ جَاهَدُواْ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ
আর যারা আমার উদ্দেশ্যে কষ্ট সহ্য (জিহাদ) করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ নেককারদের সাথে আছেন। [সূরা আনকাবুত: ৬৯]
فَلاَ تُطِعِ ٱلْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَاداً كَبيراً
“অতএব আপনি কাফেরদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের সঙ্গে কুরআনের সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম (জিহাদ) চালিয়ে যান।” [সূরা ফুরকান: ৫২]
মদীনায় অবতীর্ণ ২৬টি আয়াতে জিহাদের বিষয়টি এসেছে এবং এগুলোর অধিকাংশই সুস্পষ্টভাবে ‘যুদ্ধ’ (কিতাল) অর্থ বহন করে। যেমন:
لاَّ يَسْتَوِى ٱلْقَاعِدُونَ مِنَ ٱلْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُوْلِى ٱلضَّرَرِ وَٱلْمُجَاهِدُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى ٱلْقَاعِدِينَ دَرَجَةً وَكُـلاًّ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلْحُسْنَىٰ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلْمُجَاهِدِينَ عَلَى ٱلْقَاعِدِينَ أَجْراً عَظِيماً
“সমান নয় সেসব মুমিন যারা বিনা ওজরে ঘরে বসে থাকে এবং ওইসব মুমিন যারা আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে। যারা স্বীয় জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের ওপর যারা ঘরে বসে থাকে। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনদের মহান পুরস্কারের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যারা ঘরে বসে থাকে তাদের ওপর।” [সূরা নিসা: ৯৫]
এই আয়াতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, জিহাদ মানে যুদ্ধের জন্য বের হওয়া এবং ঘরে থাকার চেয়ে সেটা উত্তম। সূরা তওবায় রয়েছে:
ٱنْفِرُواْ خِفَافاً وَثِقَالاً وَجَاهِدُواْ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
“তোমরা অভিযানে বের হয়ে পড়, হালকা অথবা ভারী অবস্থায়; এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে নিজেদের মাল দিয়ে এবং নিজেদের জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।” [সূরা তাওবা: ৪১]
ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধের সময় প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাযিল হয়। তাবুক যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল খেজুর কাটার মৌসুমে। তখন গরমও ছিল খুব বেশি। তাই কেউ কেউ ক্ষেত-খামার, ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার অজুহাতে, কেউ পারিবারিক কাজের অজুহাতে, কেউ বা অসুস্থতার বাহানা তুলে যুদ্ধ না যাওয়ার অনুমতি চাইলো। আল্লাহর তখন এই আয়াত নাযিল করে তাদের প্রার্থনা বাতিল করে দিলেন এবং ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক, খুশি-অখুশি, সশস্ত্র-নিরস্ত্র, ধনী-গরিব সবার জন্য যে কোনো অবস্থায় যুদ্ধে যাওয়া ফরয করে দিলেন। এখানে ‘জিহাদ’ শব্দটি পরিষ্কারভাবে ‘যুদ্ধ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একই অর্থ রয়েছে এই সূরার ৮৮ নাম্বার আয়াতে:
لَـٰكِنِ ٱلرَّسُولُ وَٱلَّذِينَ آمَنُواْ مَعَهُ جَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ وَأُوْلَـٰئِكَ لَهُمُ ٱلْخَيْرَاتُ وَأُوْلَـٰئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ
“কিন্তু রাসূল ও যারা তাঁর সঙ্গে ঈমান এনেছে, তারা জিহাদ করেছে নিজেদের মাল ও নিজেদের জান দিয়ে, তাদেরই জন্য রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই প্রকৃত সফলকাম।” [সূরা তাওবা: ৮৮]
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, মাদানী আয়াতসমূহে ‘জিহাদ’ বলতে যুদ্ধ/লড়াইকে বোঝানো হয়েছে। যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। এই আয়াতসমূহ জিহাদের পূর্বশর্ত বা জিহাদের বৈধতার শর্তও স্পষ্ট করে দেয়। আর এই শর্তগুলো হলো: অমুসলিমদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেওয়া এবং/অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব মেনে নেওয়া।
রাসূল (সা)-এর শতশত হাদীসে ‘জিহাদ’-কে শরয়ী অর্থে অর্থাৎ যুদ্ধ ও যুদ্ধের উপায়-উপকরণ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা) বলেছেন,
مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ الْقَانِتِ بِآيَاتِ اللَّهِ لَا يَفْتُرُ مِنْ صِيَامٍ وَلَا صَلَاةٍ حَتَّى يَرْجِعَ الْمُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى
“আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের তুলনা ওইরূপ রোযাদার, যে নামাযে দাঁড়িয়ে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে যাচ্ছে – যে তার রোযা ও নামায আদায়ে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি প্রকাশ করে না; (সে এরূপ সওয়াব পেতেই থাকবে) যতক্ষণ না আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় মুজাহিদ ফিরে আসে।” [বুখারী, মুসলিম]
এই হাদীসে পরিষ্কারভাবেই ‘মুজাহিদ’ বলতে যোদ্ধাকে বোঝানো হয়েছে – যে যোদ্ধা ‘যতক্ষণ না ফিরে আসে’ ততক্ষণ পর্যন্ত হাদীসে বর্ণিত সওয়াবসমূহ পেতেই থাকে। অন্য হাদীসে, আবদুল্লাহ বিন হুবশী (রা) বলেন,
قِيلَ فَأَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ قَالَ مَنْ جَاهَدَ الْمُشْرِكِينَ بِمَالِهِ وَنَفْسِهِ قِيلَ فَأَيُّ الْقَتْلِ أَشْرَفُ قَالَ مَنْ أُهَرِيقَ دَمُهُ وَعُقِرَ جَوَادُهُ
“লোকেরা রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোন জিহাদ উত্তম?’ তিনি (সা) জবাব দেন, জীবন ও সম্পদ দিয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, কী ধরনের মৃত্যুবরণ করা উত্তম? তিনি (সা) জবাব দিলেন, ওই ব্যক্তি যার রক্ত প্রবাহিত করা হয় এবং সাথে তার সওয়ারী ঘোড়ার পাও কেটে ফেলা হয়।” [আবু দাউদ]
মুসনাদে আহমদ-এ বর্ণিত আরেকটি হাদীসে আছে,
… أَيُّ الْجِهَادِ أَفْضَلُ قَالَ مَنْ عَقَرَ جَوَادَهُ وَأُهْرِيقَ دَمُهُ
“রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল] কোন জিহাদ উত্তম? তিনি (সা) বললেন, যে (যুদ্ধরত অবস্থায়) তার ঘোড়ার পা কর্তন করে ফেলল এবং তার রক্তও প্রবাহিত হয়েছে (তার জিহাদ)।”
আরেক হাদীসে ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন,
لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ بِأُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ فَلَمَّا وَجَدُوا طِيبَ مَأْكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ وَمَقِيلِهِمْ قَالُوا مَنْ يُبَلِّغُ إِخْوَانَنَا عَنَّا أَنَّا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ نُرْزَقُ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجِهَادِ وَلَا يَنْكُلُوا عِنْدَ الْحَرْبِ فَقَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ أَنَا أُبَلِّغُهُمْ عَنْكُمْ
“যখন উহুদ যুদ্ধে তোমাদের ভাইয়েরা নিহত হলো, আল্লাহ তাদের রুহগুলোকে সুবজ পাখির পালকের ভিতরে স্থাপন করে মুক্ত করে দেন। তাঁরা জান্নাতের ঝরণা ও উদ্যাসমূহ থেকে নিজেদের রিযিক আহরণ করেন এবং অতঃপর তাঁরা সেই আলোকধারায় ফিরে আসেন, যা তাঁদের জন্য আল্লাহর আরশের নিচে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। যখন তাঁরা নিজেদের আনন্দ ও শান্ত্মিময় জীবন প্রত্যক্ষ করলেন, তখন বললেন, ‘আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা পৃথিবীতে আমাদের মৃত্যুতে শোকার্ত; আমাদের অবস্থা সম্পর্কে কি কেউ তাদের জানিয়ে দিতে পারে, যাতে তারা আমাদের জন্য দুঃখ না করে এবং তারাও যাতে জিহাদে (অংশগ্রহণের) চেষ্টা করে।’ তখন আল্লাহ বললেন, ‘তোমাদের এ সংবাদ তাদেরকে পৌঁছে দিচ্ছি।” এরই প্রেক্ষিতে সূরা আলে ইমরানের ১৬৯ নং আয়াত নাযিল হয়:
وَلاَ تَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمْوَاتاً بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
“আর যারা আল্লার পথে শহীদ হয়, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।” [আবু দাউদ, তাফসীরে কুরতুবী]
প্রকৃতপক্ষে সশস্ত্র যুদ্ধে অর্থাৎ জিহাদে মৃত্যুবরণ করা খোদ রাসূল (সা)-এরই একান্ত বাসনা ছিল:
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْلَا أَنَّ رِجَالًا مِنْ الْمُؤْمِنِينَ لَا تَطِيبُ أَنْفُسُهُمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي وَلَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ مَا تَخَلَّفْتُ عَنْ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ
“সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, যদি কিছু মুমিন এমন না হতো যারা আমার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ না করাকে আদৌ পছন্দ করবে না, অথচ তাদের সবাইকে আমি সওয়ারী দিতে পারছি না, এই অবস্থা না হলে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত কোনো ক্ষুদ্র সেনাদল হতেও দূরে থাকতাম না। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয় হলো, আমি আল্লাহর পথে নিহত হই, অতঃপর জীবন লাভ করি। আবার নিহত হই আবার জীবন লাভ করি এবং আবার নিহত হই তারপর আবার জীবন লাভ করি। আবার নিহত হই।” [বুখারী, মুসলিম]
শরয়ী অর্থ ও শাব্দিক অর্থের পার্থক্য
শাব্দিক অর্থ ও শরয়ী অর্থের এ পার্থক্য ইসলামের প্রত্যেকটি পরিভাষার ক্ষেত্রে রয়েছে। সুতরাং এ পার্থক্যকে না জানা অথবা না জানার ভান করা কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এরূপ পার্থক্যের কিছু উদাহরণ:
সালাত এর শাব্দিক অর্থ হলো, আগুনে পুড়ে বাঁশ বা সরু গাছ সোজা বা বাঁকা করে (ধনুক তৈরি বা অন্য কাজের) ব্যবহার উপযোগী করা। এছাড়া ব্যবহারিকভাবেও সালাত শব্দটি চার অর্থে প্রয়োগ হয়। যথা: ১. দরুদ ২. তাসবীহ ৩. রহমত ৪. ইস্তিগফার।
কিন্তু আমরা সালাত বলতে বুঝি নির্ধারিত সময়ে, বিশেষ নিয়মে, নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত করাকে।
সাওম এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কিন্তু সাওম বলতে আমরা বুঝি, নির্ধারিত সময়ে বিশেষ নিয়মে, নির্দিষ্ট কিছু ইবাদত করাকে।
হজ্জ এর আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা। কিন্তু হজ্জ বলতে আমরা বুঝি, নির্ধারিত সময়ে বিশেষ স্থানে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বিশিষ্ট ইবাদত পালন করাকে।
যাকাত এর আভিধানিক অর্থ পবিত্র করা, বৃদ্ধি করা। কিন্তু যাকাত বলতে আমরা বুঝি, বিশেষ শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা।
একইভাবে জিহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ কষ্ট করা, চেষ্টা করা হলেও জিহাদ বলতে আমরা বুঝবো ইসলামী খিলাফতের পক্ষ থেকে, খলীফার নির্দেশে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে।
আমরা জানি হযরত মুহাম্মদ (সা) ও সাহাবায়ে কিরামের মক্কী জীবনে দাওয়াত-তাবলীগ ছিল, আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারসহ যিকির-ফিকির ও জালিমের সামনে হক কথা বলা ছিল, ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। কিন্তু এতসব কর্মকাণ্ডকে মক্কী জীবনে জিহাদ বলা হয়নি। সাহাবায়ে কিরামও দাবি করেননি এসব সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা প্রাণান্তকর চেষ্টার নাম জিহাদ ছিল।
শরয়ী অর্থে জিহাদের প্রয়োগ
কুরআন-সুন্নাহর এসব উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ ‘জিহাদ’ শব্দটিকে সাধারণ অর্থ থেকে বিশেষ অর্থ ‘কিতাল’ বা যুদ্ধ ও যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষ পরোক্ষ বিষয়াদিতে রূপান্ত্মর করেছেন। উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস-সহ আরো বিপুল সংখ্যক আয়াত-হাদীসে ‘জিহাদ’-কে যুদ্ধ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্যই দেখা যায় যে, ইসলামী আইনশাস্ত্রের গ্রন্থসমূহে আইবিদগণ ‘জিহাদ’-কে শরয়ী অর্থে তথা যুদ্ধ অর্থেই ব্যবহার করেছেন।
হানাফী মাযহাবের আইন গ্রন্থ ‘বাদাইস সানায়ী’-হতে জানা যায়, ‘জিহাদের শাব্দিক অর্থ চেষ্টা করা। শরয়ী অর্থে জিহাদ হলো নফস, অর্থ ইত্যাদি সবকিছু দিয়ে যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও শক্তি খাটানো।’ অপর হানাফী গ্রন্থ شَرْحُ الْوِقَايَةِ -এর গ্রন্থকার বলেন:
اَلْجِهَادُ هُوَ الدُّعَاءُ إِلَى الدِّيْنِ الْحَقِ وَالْقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ
“অর্থাৎ جِهَاد হচ্ছে সত্য দ্বীনের প্রতি আহ্বান করা এবং তা অগ্রাহ্যকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।”
শাফেই মাযহাবের আইনগ্রন্থ আল ইকনা-তে বলা হয়েছে, ‘জিহাদ হলো আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করা।’ আল-শিরাজী তার আল মুহাজাব-এ বলেন, ‘জিহাদ হলো কিতাল (যুদ্ধ)’।
বুখারী শরীফ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম ইবন হাজার (রহ) ফাতহুল বারী-তে বলেন, জিহাদ-এর শরঈ অর্থ হলো وَشَرْعًا بَذْل الْجَهْد فِي قِتَال الْكُفَّار কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা-সংগ্রাম করা।
মালিকী মাযহাবের আইনগ্রন্থ মানহুল জালীল-এ জিহাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে –
قِتَالُ مُسْلِمٍ كَافِرًا غَيْرَ ذِي عَهْدٍ لِإِعْلَاءِ كَلِمَةِ اللَّهِ
“আল্লাহর কালিমাকে সর্বোচ্চ করার জন্য কাফেরদের (যাদের সঙ্গে মুসলিমদের চুক্তি নেই) সঙ্গে মুসলিমদের লড়াই… …।”
হাম্বলী মাযহাবের আইনগ্রন্থ আল-মুগনী-তে ইবনে কুদামা-ও ভিন্ন কোনো সংজ্ঞা দেননি। “কিতাবুল জিহাদ’ অধ্যায়ে তিনি বলেন, যা কিছুই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেটা ফরয-ই-আইন বা ফরয-ই-কিফায়া যা-ই হোক না কেন, অথবা এটা মুমিনদেরকে শত্রু থেকে রক্ষা করা হোক বা সীমান্ত রক্ষা হোক – সবকিছুই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আরো বলেন, ‘শত্রুরা এলে সীমান্তরক্ষীদের ওপর জিহাদ করা ফরয-ই-আইন হয়ে যায়। যদি শত্রুদের আগমন স্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আমীরের নির্দেশ ছাড়া সীমান্তরক্ষীরা তাদেরকে মোকাবেলা না করে আসতে পারবে না। কারণ একমাত্র আমীরই যুদ্ধের ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারেন।”
এছাড়া বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাতসহ সকল হাদীস গ্রন্থে ‘কিতাবুল জিহাদ’ অধ্যায় কেবল সশস্ত্র যুদ্ধ বিষয়ক হাদীসই স্থান পেয়েছে।
অতএব এটা নিশ্চিত যে, ইসলামী শরীয়াতে ‘জিহাদ’ শব্দটিকে সাধারণ শাব্দিক অর্থ থেকে সুনির্দিষ্ট অর্থে রূপান্তর করা হয়েছে আর সেই অর্থটি যুদ্ধ/লড়াই ছাড়া অন্য কিছুই নয়। কিন্তু আজ অজ্ঞানতা, মূর্খতা, কাফেরদের ষড়যন্ত্র ও তাদের তাবেদার শাসকদের সহায়তায় জিহাদের মতো সুস্পষ্ট ব্যাপারকেও ধোঁয়াটে করে ফেলা হয়েছে।
বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীরা বলছে যে, জিহাদ দুই রকম: জিহাদ-আল-আকবর (বড় জিহাদ) যা নফসের বিরুদ্ধে করা হয় এবং জিহাদ-আল-আসগর (ছোট জিহাদ) যা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে করা হয়।
নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে তারা ‘তারীখে বাগদাদ’ গ্রন্থে উদ্ধৃত একটি হাদীস ব্যবহার করে, যেখানে দাবি করা হয় যে, রাসূল (সা) বলেছেন: ‘আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদে প্রবেশ করলাম।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো: বড় জিহাদ কী? তিনি (সা) বললেন, ‘নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ’।
যদিও এটা সত্য যে, নফস বা শয়তানের বিরুদ্ধেও জিহাদ রয়েছে, কিন্তু এই জিহাদ কখনোই আল্লাহর দৃষ্টিতে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জিহাদের চেয়ে বড় নয়। কেননা, প্রথমত, কুরআন-হাদীসের শত শত আয়াত ময়দানের জিহাদকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করে। দ্বিতীয়ত, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের ব্যবহৃত হাদীসটিকে ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ূতী তাঁর আল-জামী’ আস-সাগীর গ্রন্থে ‘জায়িফ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। ইমাম জাহাবী, দারা কুতনী, আহমদ ইবনে হাম্বলসহ বহু মুহাদ্দিস এই কথিত হাদীসটি বাতিল করে দিয়েছেন। একটি ‘জায়িফ’ হাদীস দিয়ে বিপুল সংখ্যক মুতাওয়াতির বর্ণনাকে অগ্রাহ্য করাটা মূর্খতা, গোঁড়ামির পরিচায়ক।
জিহাদ কি শুধু রক্ষণাত্মক?
কাফেরদের চক্রান্তে পা দেয়া আরেক দল জ্ঞানপাপী প্রচার করে যে, জিহাদ শুধুমাত্র রক্ষাণাত্মক – এটি আক্রমণাত্মক নয়। এদের এই বক্তব্য আল্লাহর কুরআন, রাসূল (সা)-এর সুন্নাহ ও মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাসের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন:
قَاتِلُواْ ٱلَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلاَ بِٱلْيَوْمِ ٱلآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِينُونَ دِينَ ٱلْحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُواْ ٱلْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
“তোমরা যুদ্ধ করতে থাক আহলে কিতাবের ঐ লোকদের বিরুদ্ধে, যারা ঈমান আনে না আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, এবং অনুসরণ করে না প্রকৃত সত্য দ্বীন, যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে, স্বহস্তে জিযিয়া প্রদান করে।” [সূরা তাওবা: ২৯]
রাসূল (সা) বলেন:
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ …
“আমি ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যতক্ষণ না তার সাক্ষ্য দেয় যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ এবং তারা নামায কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে…।” [বুখারী]
রাসূল (সা) হুনায়নের যুদ্ধে হাওয়াজিন আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন এবং মুতার যুদ্ধে রোমানদের আক্রমণ করতে সৈন্যদল পাঠিয়েছিলেন। এগুলো সবই আক্রমণাত্মক যুদ্ধ। বস্তুত রাসূল (সা)-এর জীবনে সংগঠিত ২য় হিজরীর বদর থেকে শুরু ৯ম হিজরীর তাবুক পর্যন্ত অধিকাংশ যুদ্ধই ছিল আক্রমণাত্মক।
হযরত আল্লামা ইদরিস কান্দলভী (রহ) এ সম্পর্কে অভিমত প্রকাশ করেন যে, “রাসূলে কারীম (সা) কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত অধিকাংশ যুদ্ধসমূহ ছিল আক্রমণাত্মক (offensive) এবং প্রতিরোধাত্মক (defensive) ছিল কম। অনুরূপভাবে ইসলামী খলীফা ও রাষ্ট্রপ্রধানগণের অধিকাংশ অভিযান ছিল আক্রমণাত্মক এবং তাৎক্ষণিক। যেসব লোক বলে যে ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ নেই, শুধু প্রতিরোধাত্মক জিহাদ আছে, তারা হল কুরআন ও সুন্নাহর বিকৃতকারী এবং বুজুর্গদের অতীত ইতিহাস গোপনকারী। বাতিলের ভয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত্র এসব মানুষের কোনো বক্তৃতা বা লেখার ওপর আস্থা রাখা উচিত নয়। [আল্লামা মোহাম্মদ ইদরিস কান্দলভী, ‘দসতুর-ই-ইসলাম’, লাহোর, পৃষ্ঠা: ৩০]
সাহাবীদের যুগেও আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমেই ইরাক, পারস্য, শাম, মিশর ও উত্তর আফ্রিকা বিজয় হয়েছে। তাই আক্রমণাত্মক জিহাদের বিষয়ে সাহাবীদের ইজমাও সুস্পষ্ট। স্পেন, ভারতবর্ষ, এমন কি বাংলাদেশও সাহাবীদের পরবর্তী যুগের আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমেই ইসলামের পতাকাতলে এসেছিল।
ইনশাআল্লাহ পরবর্তী খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আক্রমণাত্মক জিহাদের যাত্রা আবার সত্যিকার অর্থে শুরু হবে। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে শাহাদাতের পতাকা উড়বে ইনশাআল্লাহ।
أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ
“জান্নাত তরবারীসমূহের ছায়ার নিচে।” [বুখারী]
إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوفِ
“জান্নাতের দরজাগুলো তরবারীসমূহের ছায়ার নিচে।” [মুসলিম]
مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ
“যে ব্যক্তি যুদ্ধে কখনো অংশ নেয়নি এবং মনে মনে তার আকাঙ্ক্ষাও পোষণ না করে মারা যায়, সে মুনাফিকত্বের একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করলো।” [মুসলিম]