নিম্নে আল-ওয়াই ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ দেওয়া হল, আরবি থেকে অনুবাদিত
জীবন একটি ছোট যাত্রা যা প্রতিটি প্রাণীর অনিবার্য মৃত্যুর সাথে শেষ হয়
১- মানুষ স্বভাবতই মৃত্যুকে ভয় পায় এবং এর আবির্ভাবের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। এমনকি সে মৃত্যু থেকে পালাতে চায়, এর শক্তি থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে। জীবনের অসংখ্য ঘটনা এই মানুষের এই প্রকৃতিকে প্রমাণ করে এবং মহান আল্লাহর কিতাবের অনেক আয়াতে (এ ব্যপারে) বলা হয়েছে:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُواْ مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللّهُ مُوتُواْ ثُمَّ أَحْيَاهُمْ إِنَّ اللّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَشْكُرُونَ
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন মরে যাও। তারপর তাদেরকে জীবিত করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ লোক শুকরিয়া প্রকাশ করে না [বাকারাহ: ২৪৩]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
وَجَاءتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذَلِكَ مَا كُنتَ مِنْهُ تَحِيدُ
মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে, এ থেকেই তুমি টালবাহানা করতে [ক্বাফ: ১৯]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ
বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে [জুমু’আ: ৮]
قُل لَّن يَنفَعَكُمُ الْفِرَارُ إِن فَرَرْتُم مِّنَ الْمَوْتِ أَوِ الْقَتْلِ
বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না। তখন তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে [আহযাব: ১৬]
এই আয়াতগুলো যেমন দেখিয়েছে যে মানুষ মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করে, তেমনি এও দেখিয়েছে যে মৃত্যু থেকে পালানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই, তা থেকে পালানোর কোন উপায় নেই, যেমনটি বলা হয়েছে, { তারপর আল্লাহ তাদেরকে বললেন ‘মরে যাও‘ } { মৃত্যুযন্ত্রণা নিশ্চিতই আসবে } { বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে } { বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে না } { প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে } [আম্বিয়া: ৩৫] { অবশেষে যখন তোমাদের কারো কাছে মৃত্যু আসে তখন আমাদের দূতরা তাকে গ্রহণ করে, আর তারা (দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে) অবহেলা করে না } [আন’আম: ৬১]
প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন যে, যদি মৃত্যু তাদের কাছে আসে, তাহলে তা থেকে তারা নিজেদের রক্ষা করে দেখাক, যেমনটি তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
বলুন, “তাহলে তোমরা নিজেদের থেকে মৃত্যুকে দূরে রাখো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও” [আলে ইমরান: ১৬৮]
তারা যদি মৃত্যু থেকে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে অথবা তাদের সময় এসে পৌঁছালে তা থেকে পালানোর চেষ্টা করে, তবুও তারা তা থেকে পালাতে পারবে না, যেমন মহান আল্লাহর বাণী:
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও [আন-নিসা: ৭৮]।
যেমন নূহ (আ)-এর পুত্রও চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে নিজেকে রক্ষা করতে সফল হয়নি, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার সম্পর্কে বলেছেন:
قَالَ سَآوِي إِلَىٰ جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِلَّا مَن رَّحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ
সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নূহ (আ) বল্লেন আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কোন রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হল [হুদ: ৪৩]
৩- যদি মৃত্যু অনিবার্য হয়, তবে প্রতিটি প্রাণীই অনিবার্যভাবে এর তিক্ততার স্বাদ গ্রহণ করবে, বিষয়টি পবিত্র কুরআন আমাদের এমনভাবে নির্দেশনা দেয় যেমনটি চোখ আছে এমন সকলের কাছে সূর্যের অস্ত্বিত্ব একটি স্পষ্ট বিষয়, তাহলে কে মানুষকে মৃত্যুর তিক্ততার স্বাদ গ্রহণ করায় এবং কে এর মাধ্যমে প্রত্যেক প্রাণীর সমাপ্তি ঘটায়? পবিত্র কুরআন এই প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর দেয় এই বলে যে, একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই হলেন তিনি যিনি প্রতিটি প্রাণীর জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করেছেন এবং তাদের বাধ্য করেছেন যে তারা এর পানপাত্র হতে পান করবে এবং তাঁর কর্তৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করবে, যেমনটি আমরা উপরে উদ্ধৃত আয়াতগুলোতে ব্যাখ্যা করেছি।
৪- যদিও কেউ কেউ অস্বীকার করে যে তাদের সৃষ্টিকর্তা আছেন এবং তিনিই তাদের জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, তবুও তারা অস্বীকার করতে পারে না যে তাদের চোখের সামনে জীবন ও মৃত্যুর দুটি প্রক্রিয়া চলছে, লক্ষ লক্ষ নতুন জীবিত মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং লক্ষ লক্ষ মৃত মানুষের মধ্যে। তবে, তারা এর জন্য সময় এবং অনন্তকালকে দায়ী করে, এ অস্বীকার করে যে এই পার্থিব জীবনের পরে আরেকটি জীবন আছে। এসব লোকদের বস্তুবাদী বলা হয়। পবিত্র কুরআন তাদের মিথ্যাচার লিপিবদ্ধ করেছে, যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ ۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ
তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে [আল-জাসিয়াহ: ২৪]
৫- আল্লাহ তাআলা কেবল প্রতিটি প্রাণীর জন্য মৃত্যু নির্ধারণ করেননি, বরং তিনি প্রতিটি প্রাণীর জন্য, পাশাপাশি প্রতিটি জাতির জন্য নিঃসন্দেহে একটি সময় নির্ধারণ করেছেন, যা বৃদ্ধি বা হ্রাস করে অতিক্রম করার ক্ষমতা কারও নেই। কুরআনের আয়াতগুলো স্পষ্টভাবে এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا
“আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে” [আলে ইমরান: ১৪৫], এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى
“অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে” [আয-যুমার: ৪২] এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَلَن يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
“প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন” [আল-মুনাফিকুন: ১১] এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
“প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে” [আল-আ’রাফ: ৩৪] তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِم مَّا تَرَكَ عَلَيْهَا مِن دَابَّةٍ وَلَٰكِن يُؤَخِّرُهُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
“যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না” (আন-নাহল: ৬১) আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
﴿قَالَ یَٰقَوۡمِ إِنِّی لَكُمۡ نَذِیرࣱ مُّبِینٌ 2 أَنِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُ وَأَطِیعُونِ 3 یَغۡفِرۡ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمۡ وَیُؤَخِّرۡكُمۡ إِلَىٰۤ أَجَلࣲ مُّسَمًّىۚ إِنَّ أَجَلَ ٱللَّهِ إِذَا جَاۤءَ لَا یُؤَخَّرُۚ لَوۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ﴾
“সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী। এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ তা’আলার এবাদত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার নির্দিষ্টকাল যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না, যদি তোমরা তা জানতে!” (নূহ ২-৪) সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন:
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ قَادِرٌ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ أَجَلًا لَّا رَيْبَ فِيهِ فَأَبَى الظَّالِمُونَ إِلَّا كُفُورًا
“তারা কি দেখেনি যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃজিত করেছেন, তিনি তাদের মত মানুষও পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম? তিনি তাদের জন্যে স্থির করেছেন একটি নির্দিষ্ট কাল, এতে কোন সন্দেহ নেই; অতঃপর জালেমরা অস্বীকার ছাড়া কিছু করেনি” [আল-ইসরা: ৯৯] সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন:
ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قُرُونًا آخَرِينَ ، مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ
এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি, কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট কালের অগ্রে যেতে পারে না এবং পশ্চাতেও থাকতে পারে না [আল-মু’মিনুন: ৪২-৪৩]
৬- যদি কিছু লোকের এই ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এমন ব্যক্তির উপর মৃত্যু চাপিয়ে দিতে সক্ষম যার সময় এখনও আসেনি, তাহলে কুরআন এই ভ্রান্ত ধারণাকে বাতিল এবং খণ্ডন করতে এসেছে। ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় তাদের ধ্বংস করা মূর্তিগুলির প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা তার জন্য আগুন জ্বালালো এবং তাকে তাতে নিক্ষেপ করলো, কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে তাদের চক্রান্ত এবং বিশ্বাসঘাতকতা থেকে রক্ষা করলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
﴿قَالُوا۟ حَرِّقُوهُ وَٱنصُرُوۤا۟ ءَالِهَتَكُمۡ إِن كُنتُمۡ فَٰعِلِینَ 68 قُلۡنَا یَٰنَارُ كُونِی بَرۡدࣰا وَسَلَٰمًا عَلَىٰۤ إِبۡرَٰهِیمَ 69 وَأَرَادُوا۟ بِهِۦ كَیۡدࣰا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَخۡسَرِینَ 70 وَنَجَّیۡنَٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِی بَٰرَكۡنَا فِیهَا لِلۡعَٰلَمِینَ﴾
“তারা বলল: একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম: হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম। আমি তাঁকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি” (আল-আম্বিয়া: ৬৮-৭১)
যখন ইউনুস আলাইহিস সালাম রাগান্বিত হয়ে তাঁর কওম ছেড়ে একটি জাহাজের কাছে এলেন, যা তাঁকে তাঁর কওম থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন উত্তাল ঢেউয়ের কারণে জাহাজের তালমাতাল অবস্থা হয়েছিল এবং তার যাত্রীরা (কুসংস্কারবশতঃ) তাদের কাউকে (কুলক্ষনে মনে করে) সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল এই আশায় যে অন্যরা ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। (এই প্রেক্ষাপটে) ইউনুস আলাইহিস সালামকে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছিলেন এবং একটি তিমি তাকে গিলে নিয়েছিল, (যদিও তা) তার জন্য কবর ছিল না, বরং একটি জীবন্ত-নৌকায় পরিনত হয়েছিল যা তাকে ছায়া ও খাবার সহ নিরাপদ তীরে নিয়ে গিয়েছিল। পবিত্র কুরআন এই মহান ঘটনার কথা উল্লেখ করে:
﴿وَإِنَّ یُونُسَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ 139 إِذۡ أَبَقَ إِلَى ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ 140 فَسَاهَمَ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُدۡحَضِینَ 141 فَٱلۡتَقَمَهُ ٱلۡحُوتُ وَهُوَ مُلِیمࣱ 142 فَلَوۡلَاۤ أَنَّهُۥ كَانَ مِنَ ٱلۡمُسَبِّحِینَ 143 لَلَبِثَ فِی بَطۡنِهِۦۤ إِلَىٰ یَوۡمِ یُبۡعَثُونَ 144 ۞ فَنَبَذۡنَٰهُ بِٱلۡعَرَاۤءِ وَهُوَ سَقِیمࣱ 145 وَأَنۢبَتۡنَا عَلَیۡهِ شَجَرَةࣰ مِّن یَقۡطِینࣲ﴾
“আর নিশ্চয়ই ইউনুস ছিলেন রসূলগণের অন্যতম। স্মরণ করো! তিনি বোঝাই করা জাহাজে গিয়ে উঠেছিলেন। তাই তিনি লটারী করেছিলেন, কিন্তু তিনিই হয়ে গেলেন নিক্ষিপ্তদের একজন। তখন একটি মাছ তাঁকে মুখে তুলে নিল, যখন তিনি নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছিলেন। আর তিনি যদি তাসবীহকারীদের অন্তুর্ভুক্ত না হতেন — তাহলে তিনি তার পেটে রয়ে যেতেন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তারপর আমরা তাঁকে এক বৃক্ষলতা শূন্য উপকূলে ফেলে দিলাম, আর তিনি ছিলেন অসুস্থ। তখন তাঁর উপরে আমরা জন্মিয়েছিলাম লাউজাতীয় গাছ” [আস-সাফফাত: ১৩৯-১৪৬]।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে মক্কার মুশরিকরা যখন দারুন-নদওয়ায় আল্লাহর রাসূল (সা)-এর জীবনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা এবং সমস্ত মানুষ বুঝতে পারেনি যে যদি সমস্ত সৃষ্টি কোনো কিছু দিয়ে কারো ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয় যা আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করেননি, তবে তারা তা করতে সক্ষম হবে না। এবং যদি তারা সর্বসম্মতভাবে এমন ব্যক্তির জীবন শেষ করতে সম্মত হয় যার সময় এখনও আসেনি, তবে তারা তা করতে সক্ষম হবে না। অতএব, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর নবীকে তাদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাকে এবং তার সঙ্গী আবু বকর (রা.) কে রক্ষা করেছিলেন এবং রক্ষা করেছিলেন যতক্ষণ না তারা মদিনায় নুসরাহপ্রদাণকারীদের মাঝে সম্মানিত ও বিজয়ী হয়ে পৌঁছেছিলেন। আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
“আর স্মরণ করো! যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল যে তারা তোমাকে আটক করবে, অথবা তারা তোমাকে হত্যা করবে, অথবা তারা তোমাকে নির্বাসিত করবে। আর তারা ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আল্লাহ্ও পরিকল্পনা করেছিলেন। আর পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে আল্লাহ্ই শ্রেষ্ঠ” [আল-আনফাল: ৩০]।
আর তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
إِلَّا تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا ۖ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَىٰ ۗ وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
যদি তোমরা তাকে (রসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখো, আল্লাহ তাঁর সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় সান্তনা নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তুতঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথাই সদা সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় [আত-তাওবা: ৪০]