মাগুরায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশু (আছিয়া)। গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন অবস্থায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হয়। ওই সময় শিশুটি সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ছিল। শিশুটির গলার সামনের দিকে গভীর ক্ষত এবং শরীরের অন্যান্য স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। পরীক্ষায় শিশুটির ডান ফুসফুসে বাতাস জমা হওয়া (নিউমোথোরাক্স), তীব্র শ্বাসকষ্ট সিনড্রোম, মস্তিষ্কে ব্যাপক ফোলা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা এখন মুখে মুখে। ধর্ষককে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে আন্দোলন চলছে।
ধর্ষণের মতো বিকৃত মানসিকতার ঘটনা গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। যার কিছু মিডিয়াতে আসে কিছু আসে না। নারীর প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনা বাড়ার পাশাপাশি ধরনের ক্ষেত্রেও এসেছে নিত্যনতুন মাত্রা। গত এক দশকে বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানীর ঘটনা শুনেই আসছি। আমরা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সময় টিএসসিতে প্রকাশ্যে সবার সামনে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটতে দেখেছি। এছাড়াও শুধু গণপরিবহনেই প্রতি বছর একাধিক নারী ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চলছেন। আমরা কুমিল্লার তনু হত্যার কথা শুনেছি যাকে ধর্ষন করে মেরে জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়েছিল। রাজধানীতে এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে চলন্ত অবস্থায় গণধর্ষণ করার ঘটনা শুনেছি। রাজধানীর অদূরে সোনারগাঁর আড়াইহাজারে চলন্ত বাসে এক নারী শ্রমিককে বাস ড্রাইভার ও সহকারীসহ চারজন মিলে গণধর্ষণ করার কথা জেনেছি। টাঙ্গাইলের মধুপুরে একটি বাসে নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ শুনেছি। কয়েক মাসের শিশুরাও রেহায় পাচ্ছে না বিকৃত মানসিকতার এই ধর্ষকদের হাত হতে। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এবং বলা হচ্ছে অধিকাংশ নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়না। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে, এডিস নিক্ষেপ, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, পাচার, খুন এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতন। সর্বশেষ আমরা রাজশাহীতে ডাকাতদল কর্তৃক রাতভর নারীদের ধর্ষন করার খবর জানতে পেরেছি।
বিষয়টি লক্ষনীয় যে, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন যেমন পাল্লা দিয়ে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তোড়জোড়ও তথা নারীবাদীদের কলাম লেখনী, নারী সংগঠনের সভা সেমিনার, সরকারের মহিলা ও শিশু মন্ত্রণলয়ের সচেতনতামুলক প্রকল্পের মাত্রাও বহুগুন বেড়েছে। সমাধান হিসাবে দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা বুলিসমূহ – নারীকে শিক্ষিত হতে হবে, নারীর সমঅধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে, নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে ও সর্বোপরি নারীর প্রতি সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে ঐ নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। এই সমাধানসমূহ গ্রহণের ফলাফল হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নব্বই এর গণঅভ্যত্থানের পর এদেশে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন নারী। কিছুদিন আগ পর্যন্তও স্পীকারের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন একজন নারী। নারী শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় পুরুষের সমান। নারীরা দিনে দিনে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীও হয়ে উঠছে। নারী অধিকার রক্ষাই প্রতিনিয়ত উৎপাদিত ও আমদানী হচ্ছে দেশী বিদেশী এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থা যারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রত্যেক সরকারই প্রণয়ন করছে ডজন ডজন আইন। পূর্বের আইন সমুহকে আরো কঠোর করা হচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো আমাদের সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামীদের পুরস্কৃতও করছে তাদের অবদানের জন্য। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দেশের অদম্য নারীদের হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান তিনি এ পুরস্কার তুলে দেন।
কিন্তু এত কিছুর পরও নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন বন্ধ তো স্বপ্নের বিষয়, কমার কোন লক্ষনই আপাতত: দেখা যাচ্ছেনা। বরং এই নির্যাতনের গ্রাফটা দিন দিন আরো উর্ধ্বগামী হচ্ছে। কারণ আমরা নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হয়েছি।
প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান:
একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় পশ্চিমাদের দেওয়া এই সমাাধানগুলো কত দুর্বল এবং মৌলিকভাবে কত অসার। পরিসংখ্যান বলছে, যেসব দেশ নারী উন্নয়ন সূচক হিসাবে- নারীদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা, শিক্ষা, অধিকার সচেতনতা, নারী ক্ষমতায়নকে মাপকাঠি বিবেচনা করে তারা নারীকে উন্নত জীবন দেওয়াতো দূরের কথা, নিরাপত্তাই দিতে পারেনি।
ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয় (রিপোর্টেড)। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইমস রিপোর্ট ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে ৩১,৬৭৭ জন নারী হয়রানীর শিকার হয়েছেন (The Hindu)। নারী নির্যাতনের প্রতিযোগীতায় অগ্রগামী তারাই যারা যথারীতি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ। যেমন USA এবং UK। পরিসংখ্যানের আলোকে, UK-তে প্রতিদিন ১৬৭ জন নারী ধর্ষিত হয়। USA-তে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে ১ জন নারী, স্বামী কর্তৃক শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়। ২০২৪ এর RAINN-এর রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সে বছর ৪,৩৩,০০০ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
UK ২.৫ হাজার স্বীকৃত Pedophiles (শিশু যৌন নির্যাতনকারী) লালন করেছে। বৃটেন এর ONS এর তথ্যমতে ২০২৪ সাল সেখানে ২০ লক্ষ নারী নির্যাতন কিংবা নির্যাতনের প্রচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। USA- তে প্রতিদিন ৩ জন নারী তার পার্টনার কর্তৃক হত্যা হয়। ইউরোপ প্রতি ১০ জনে ১ জন নারী যৌন হয়রানীর শিকার হয়। USA – তে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন নারী ধর্ষিত হয়। (সুত্র: মাইকেল প্যারেন্টি-২০০০ সালে প্রকাশিত The Ugly Truth)
উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলো কি যথেষ্ট নয় এটা বুঝার জন্য যে নারী নির্যাতন বন্ধের যে দাওয়াই পশ্চিমা সমাজ থেকে গ্রহণ করছি তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
অর্থাৎ আমরা সহজে একটা লাইন টানতে পারি যে, ভারত পশ্চিমাদের মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতি অনুসরন করেছে যার ফলশ্রুতিতে আজকে ভারতে পশ্চিমা সমাজের ন্যায় নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন চরম পর্যায়ে যেখানে দিল্লীকে বলা হয় ধর্ষনের নগরী। ভারতের নাম Re-public of India থেকে Rape-public of India তে পরিবর্তন করা যেতে পারে। আর আমরাও পশ্চিমাদের অনুসরন করে ভারতের পথেই হাঁটছি। যার নমুনা বাসে গণধর্ষনের মত ঘটনা।
একজন যুবক যখন দিনের পর দিন হলিউড-বলিউডের মুভি, কারিনা-ক্যাটরিনা-সানি লিওনদের আইটেম song, নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে খোলামেলা উপস্থাপন করাকে দেখে, স্মার্ট মোবাইলে কম রেটের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যাবহারে সহজলভ্য পর্ণ সাইট গুলো বিচরণ করে এবং এরপর রাস্তায় বা ক্যাম্পাসে কোন নারীকে সে কোন দৃষ্টিতে দেখবে? যেখানে নারীরাও স্বাধীনতার নামে বা অধিকার আদায়ের নামে নিজেদের উপস্থাপন করছে আকর্ষণীয় রূপে। এক্ষেত্রে নারীদেরকেও বেশি দোষ দেওয়া যায় না। কারণ প্রতিনিয়ত নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারীদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে পশ্চিমাদের বা ভারতীয় নারীদের মত আধুনিক হতে। ফলশ্রুতিতে আমাদের সামনে একজন নারী উপস্থাপিত হচ্ছে একটি ভোগ্যপণ্য হিসাবে। ফলে পরকীয়া, ধর্ষন এমনকি ৬ মাসের শিশুটিও বাদ যাচ্ছে না পর্ণ দেখায় অভ্যস্ত যুবকটির লোলুপ হাত হতে।
পশ্চিমারা মুনাফা সর্বোচ্চকরন নীতির কারনে যেকোন উপায়কে সঠিক মনে করে। এর জন্য নারীর সম্মান বিক্রি করে মুনাফা আসলেও তারা তা বৈধতা দেয়। তাই পর্ণোগ্রাফি Industry কে West প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সারা বিশ্বে এর প্রচার-প্রসার করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে। আর অন্যদিকে নারী মুক্তির বা নারী অধিকারের আন্দোলনকে উৎসাহিত করছে। এটা তাদের স্পষ্ট দ্বৈতনীতি। সর্বোপরি পশ্চিমারা ও আমাদের শাসকগোষ্ঠী নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
তাই বলা যা যে, নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ হত্যা ও নির্যাতনের মূল কারণ হলো-
– পশ্চিমারা বাংলাদেশে তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে জীবন সম্পর্কে তাদের মূল্যবোধ (জীবনটাকে উপভোগ করা যেকোন উপায়ে), ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচার-প্রসার করেছে এবং সর্বত্র নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে উপস্থাপন করেছে।
– এবং আমরা জনগন না বুঝে তাদেরকে অন্ধ অনুসরণ করছি।
সমাধান:
সময় পার হয়ে যায় অথচ যৌন হয়রানির প্রকৃত অপরাধিরা গ্রেফতার হয় না! আর হলেও আইনের ফাক-ফোঁকর দিয়ে তারা কিছু সময় পর পার হয়ে যায়। তাই অনেকে মনে করছেন যে, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিলে এই ধরনের অপরাধ কমে যাবে। কিন্তু শুধুমাত্র কঠোর শাস্তিই এই সমস্যার সমাধান করবে না। যদিও দোষীদের সনাক্ত করা ও তাদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে বর্তমান পুঁজিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার বৃটিশ আমলের আইনের ব্যর্থতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তথাপি এটা মূল কারণ নয়। অনেকেরই প্রতি বছর এমন অপরাধের জন্য যাবৎ জীবন কারাদণ্ড বা বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হচ্ছে। কিন্তু অপরাধ কমার কোন লক্ষন নেই। মূল কারণ বা সমস্যা এটাও না যে আমরা কত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করতে পারলাম। নারীর নিরাপত্তার মুল সমস্যা চিহ্নিত করা না গেলে, প্রত্যেক নারীর জন্যও একজন পুলিশ নিয়োগ করলেও নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করা যাবে না। যার উদাহরণ স্বয়ং নারী পুলিশ, পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের করুণ চিত্র আমেরিকা, বৃটেন, ভারত বা বাংলাদেশে, কোথাও এর ব্যতিক্রম নেই।
অনেকে মোল্লাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছেন যে, পর্দা করলে নারীরা যৌন হয়রানিসহ নির্যাতন হতে রেহায় পাবে। কিন্তু যখন বোরকা পরার পরও ধর্ষন হয় তখন অন্যরা বলছে – ‘পোষাকতো তাকে বাঁচাতে পারলনা’ বা ‘আরো কত পোষাক পরলে ধর্ষন করা হবে না’। আমরা ২০১৬’র ঘটনায় তনুকে হিজাব পরতে দেখেছি। এগুলো আসলে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে বলা হচ্ছে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র পোষাক পরিবর্তন করে এই ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না। বরং সমাজ থেকে পশ্চিমাদের কাছ থেকে ধার করা মূল্যবোধ (জীবনটাকে উপভোগ করা যেকোন উপায়ে), ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
এবং সমাধান হিসাবে শুধুমাত্র ইসলামী পোষাক নয় বরং পরিপূর্ণ ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে। ইসলামী মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে যা কেবল একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব।
ইসলাম মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অর্জনের জন্য। ইসলামই নারীকে দিয়েছে সম্মান, এবং নিরাপত্তা এবং এই উদ্দেশ্যে ইসলাম প্রথমত ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দ্বিতীয়ত সমাজে আল্লাহ প্রতি আনুগত্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নারীর প্রতি সঠিক মানসিকতারও দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করা যাবে। ইসলাম সমাজে যৌনতার বিস্তারকে নিষিদ্ধ করে, নারীর দেহের সকল ধরনের বস্তুকীকরন এবং শোষন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককে কখনও সস্তা করেনা এবং সকল ধরনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক সমাজ থেকে দূর করে। নারী ও পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষন বিষয়ক ও সকল চাহিদার পূরণের একমাত্র উপায় হিসাবে বিবাহকে নির্দেশ করে এবং বিবাহের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করে। যা কিনা নারী-পুরুষ ও সমাজকে রক্ষা করে। ইসলাম নারীকে সর্বাধিক সম্মান দিতে উৎসাহিত করে। ইসলাম কখনোই সস্তা দামে নারীর সম্মান বিক্রি করে না। রাসুল (সা:) বলেন- “এই বিশ্ব এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুই মূল্যবান। কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান একজন পরহেযগার নারী।”
ইসলাম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তিনি (সা:) আরো বলেন- “এমন একটা সময় আসবে যখন মহিলারা সানা থেকে হাজরে মাউত পর্যন্ত (নির্ভয়ে রাতের বেলা) পাড়ি দিতে পারবে, জীব-জন্তু ও আল্লাহর ভয় ছাড়া অন্য কোনো ভয় তাদের অন্তরে কাজ করবে না।” আল্লাহর রহমতে খলীফা ওমর (রা:) এর সময় এই হাদীসের বাস্তবতা দেখা গিয়েছিল। আব্বাসীয় খিলাফতের সময় রোমান সীমান্তে কিছু রোমান সৈন্য একজন মুসলিম নারীর কাপড় ধরে টানাটানি করে অপমানিত করলে, সেই নারীর অভিযোগ খলিফার কাছে পৌছলে খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহ সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছিল একজন মুসলিম নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য।
এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র কঠোরভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। কেউ ব্যভিচার করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে। ফলে ঐ ব্যক্তি ২য়বার অপরাধ করার সুযোগ পাবে না এবং অন্যরা ঐ ধরনের অপরাধ করার সাহস পাবে না। ১৩০০ বছরের খিলাফতের ইতিহাসে পাথর মেরে হত্যার ঘটনা অনেক বেশি না। সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে শাস্তির চেয়ে সমাজব্যবস্থা ও সমাজে ইসলামী মূল্যবোধ তথা তাকওয়ার পরিবেশ প্রতিষ্ঠার কারণেই ধর্ষনের পরিমান কমে আসে।
তাই ইসলামি জীবন ব্যবস্থা তথা খিলাফতের অধীনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিসহ সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ হবে কারণ –
– একজন মুসলিম কুরআন-সুন্নাহর সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ। একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এর ভয়ে ভীত হয়ে সমাজে নিরাপত্তার হুমকি হতে পারে এরকম ঘৃণ্য কাজ সমূহ থেকে বিরত থাকে।
– পাশাপাশি খিলাফত রাষ্ট্র কঠোরভাবে কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চালু রাখে, যার ফলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয়।
করণীয়:
রাসূল (সা) বলেছেন,
“যারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলে তাদের সাথে থেকে যারা সেগুলো (আল্লাহর হুকুম)-কে নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়ালে লঙ্ঘন করে, (এরা উভয়ই) যেন তাদের মত যারা একই জাহাজে আরোহণ করে। তাদের একাংশ জাহাজের উপরের অংশে তাদের জায়গা করে নিয়েছে এবং অন্যরা এর নীচের অংশে নিজেদের জায়গা করে নেয়। যখন নিচের লোকদের পিপাসা নিবৃত্ত করার প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের অতিক্রম করে যেতে হয়। (তাই) তারা (নিচের অংশের লোকেরা) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল, ‘আমরা যদি জাহাজের নীচের দিকে একটা ফুটো করে নিই তাহলে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের কোন সমস্যা করব না।’ এখন যদি উপরের অংশের অধিকারীরা নিচের ডেক’এর লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয় তবে নিশ্চিতভাবেই তারা সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অবশ্য তারা (উপরের অংশের লোক) যদি তাদের (নীচের লোকদের)কে এ কাজ থেকে বিরত রাখে, (তবে) তারা (উপরের অংশের লোক) রক্ষা পাবে এবং এভাবে (জাহাজের) সবাই রক্ষা পাবে।” (বুখারী )
সমাজের কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু না, পুরো সমাজ একটি ইউনিট এবং নির্দিষ্ট কিছু চিন্তা-ধারণা, চেতনা-আবেগ ও ব্যবস্থা দ্বারা চালিত হয়। সুতরাং সমাজ ব্যবস্থার একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজকে এমন সব নির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে বিরত রাখা, যা ঘটলে তা হবে পুরো জাতির জন্য ক্ষতিকর। তাই ধর্ষনের মত বাজে ঘটনার শিকার আমার পরিচিত (মা-বোন-আত্মীয়স্বজন-সহপাঠী) কেউ হওয়ার আগে এ থেকে পরিত্রানের জন্য পশ্চিমা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং প্রকৃত সমাধান ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। [সূরা নূর: ৫৫]