প্রশ্ন-উত্তর: ব্যাংক কিংবা ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে চাকরী করা

নিম্নোক্ত প্রশ্নটি আমরা আমাদের একজন পাঠকের কাছ থেকে পেয়েছি এবং আমাদের উত্তর দেয়া হলো:

প্রশ্ন: অনুগ্রহ করে ব্যখ্যা করবেন, ব্যাঙ্কে কাজ করার অনুমতি আছে কি এবং যদি তা-ই হয় তাহলে কোন ধরনের পদে, যেমন ব্যাঙ্কে আইটি বা সফ্টওয়্যার এ কাজ করা কি অনুমোদিত? এছাড়াও সাধারণভাবে আর্থিক খাতের জন্য একই প্রশ্ন, যেমন স্টক মার্কেট, বীমা, ইত্যাদি।

উত্তর: শেখ তাকিউদ্দীন আন-নাবহানী রচিত ‘ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা’-এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে বিষয়টির উপর আলোকপাত করে  নিম্নে একটি নির্যাস দেওয়া হল:

নিষিদ্ধ বিষয়ে নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত বিধান:

কোনো কাজে কারো নিয়োগ আইনত বৈধ হওয়ার জন্য, বিষয়টি অবশ্যই অনুমোদিত (হালাল) হতে হবে। অর্থাৎ কর্মচারীকে নিষিদ্ধ কিছু করার জন্য নিয়োগ দেয়া বৈধ নয়। তদনুসারে, একজন কর্মীকে দিয়ে কাউকে মদ বিক্রি করানো কিংবা মদ তৈরি করানো বৈধ নয়, কিংবা তাকে শুকর বা মৃত জন্তুর গোস্ত বহন করানোর জন্য নিয়োগ দেয়া বৈধ নয়। আত-তিরমিযী আনাস বিন মালিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদের ব্যপারে দশ প্রকার লোককে অভিশাপ দিয়েছেন, যে তা প্রস্তুত করে, যে উৎপাদন করায়, যে তা পান করে, যে তা বহন করে, যার কাছে তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, যে তা পরিবেশন করে, এর বিক্রেতা, যার জন্য তা বিক্রি করা হয়, এর ক্রেতা এবং যার জন্য তা কেনা হয়।” সুদের কোনো কাজে নিয়োগ দেওয়াও অনুমোদিত নয়, কারণ এটি একটি নিষিদ্ধ সুবিধার জন্য নিয়োগ প্রদান করা এবং কারণ ইবনে মাজাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা) সুদ গ্রহণকারীকে, যে তা দান করে, যে দু’জন এর জন্য সাক্ষী থাকে এবং যে তা লিখে রাখে তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। ব্যাংক ও কয়েনেজ (মিন্টিং) বিভাগ ও সুদ নিয়ে কাজ করে এমন সমস্ত সংস্থার কর্মচারীদের বিষয়ে বাস্তবতা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। যে কাজটি করার জন্য তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা যদি সুদের একটি কাজ হয়, সেক্ষেত্রে সুদ একচেটিয়াভাবে সেই কাজের পণ্য হোক কিংবা অন্যদের সাথে মিলে কাজের দ্বারা উৎপাদিত হোক না কেন, মুসলমানদের জন্য এ জাতীয় কাজ করা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক, নিরীক্ষক এবং প্রতিটি কাজ যা সুদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু যে কাজগুলি সুদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত নয়, যেমন কুলি, কুক, গার্ড, ক্লিনার এবং এর মতো – এই কাজগুলি অনুমোদিত, কারণ এটি একটি অনুমোদিত সুবিধার উপর নিয়োগ, এবং কারণ সুদলেখক ও সাক্ষীর ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, তাদের উপর তা প্রযোজ্য নয়। একইভাবে, ব্যাংকের কর্মচারীদের মতোই সরকারী কর্মচারী অর্থাৎ যারা সুদের লেনদেনের সাথে জড়িত, যেমন কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা কৃষকদের সুদে ঋণ দিতে কাজ করে এবং ট্রেজারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা সুদের কাজে জড়িত এবং এতিম বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা সম্পত্তি সুদে ধার দেয়; এ সকল কাজ নিষিদ্ধ কাজ; যে কেউ তাদের সাথে জড়িত সে একটি মহাপাপ করছে, যদি সে সুদলেখক কিংবা সুদের সাক্ষী হয় তবে এটি তার উপর প্রযোজ্য। একইভাবে একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো কাজে নিয়োগ প্রদান করা বৈধ নয়।

এমন কাজ যা হতে মুনাফা অর্জিত হওয়া কিংবা যার সাথে জড়িত থাকা নিষিদ্ধ কারণ তা আইনত অবৈধ, যেমন, বীমা কোম্পানী, শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানী এবং সমবায় সমিতি ইত্যাদি, তাদের ব্যপারটি পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। যদি বিষয়টি এমন হয়, যে কাজটি করার ব্যাপারে বলা হচ্ছে তা যদি হারাম হয়, কিংবা এর চুক্তির বাস্তবতা যদি  অবৈধ (বাতিল) বা ত্রুটিপূর্ণ (ফাসিদ) হয়, বা তাদের থেকে যে ফলাফল বের হয়ে আসে, তবে একজন মুসলিমকে এর অনুমতি দেওয়া হয় না, কারণ একজন মুসলিমকে অবৈধ কোনো কিছুর সাথে সরাসরি জড়িত হওয়ার অনুমতি নেই। এমন কোন চুক্তি বা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় না যা হুকম শর’ঈ (ওহীর বিধান) অনুমোদন দেয় না এমন কোনো চুক্তি কিংবা কাজের সাথে একজন মুসলিমের জড়িত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং একইভাবে এর সাথে জড়িত থাকার জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়াও নিষিদ্ধ। এটি সেই কর্মচারীর মতো যিনি বীমা চুক্তি লিপিবদ্ধ করেন যদিও তিনি তা অপছন্দ করেন, যিনি বীমার শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেন কিংবা যিনি বীমা গ্রহণ করেন। একইভাবে সেই কর্মচারীর মতো যে সদস্য হোল্ডিং অনুযায়ী সমবায় সমিতির মুনাফা বন্টন করেন, যে কর্মচারী কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে বা শেয়ার স্টক অ্যাকাউন্টিংয়ে কাজ করে, কিংবা যে সমবায় সমিতির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। তবে সে সকল কোম্পানির কর্মচারীগণ, যাদের কাজ বৈধভাবে সম্পাদন করার অনুমতি রয়েছে, তাদের এই ধরনের পদে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া বৈধ। কিন্তু যদি একজন ব্যক্তির নিজের জন্য আইনত একটি কাজ করার অনুমতি না থাকে, তবে এটি করার জন্য কর্মচারী হওয়ার জন্যও কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। কাজেই যে কাজগুলো করা নিষিদ্ধ, মুসলমানের জন্য তাতে অন্যকে নিয়োগ দেওয়া কিংবা তাতে নিজে নিযুক্ত হওয়াও নিষিদ্ধ।

একটি ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইটি ডিপার্টমেন্টে কাজ করার বিষয়ে এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রশ্নোত্তর থেকে নিম্নলিখিতগুলি পয়েন্টসগুলো দেওয়া হলো:

এ বিষয়ে তিনটি প্রাসঙ্গিক নীতি রয়েছে,

১. নিষিদ্ধ কিছু করা নিষিদ্ধ।

২. যা প্রধানত নিষিদ্ধ কিছুর দিকে পরিচালিত করে বলে ধারণা করা হয় তাও নিষিদ্ধ।

৩. যা সরাসরি নিষিদ্ধ কিছুর সাথে সংযুক্ত তাও নিষিদ্ধ।

সুতরাং একটি সুদের-চুক্তি নিষিদ্ধ। আর তা লেখা নিষিদ্ধ, যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

সুদ গণনা করে এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা নিষিদ্ধ নয়, কারণ কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি অনুমোদিত কাজ।

যাইহোক, যখন এটি সরাসরি নিষিদ্ধ কিছুর সাথে যুক্ত থাকে (যেমন সুদ), এটিও নিষিদ্ধ। উদাহরণ স্বরূপ:

যদি কেউ একটি ব্যাঙ্কের কাছ থেকে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার আদেশ পায় যা (অন্যদের মধ্যে) সুদ (রিবা) গণনা করতে ব্যবহার করা হবে, তাহলে এটি সরাসরি সংযুক্ত। এই ক্ষেত্রে, এই এপ ডেভেলপ করা নিষিদ্ধ, এটি সহায়তা হিসাবে বিবেচিত হয়। যদি কেউ এই জাতীয় কম্পিউটার প্রোগ্রাম স্বাধীনভাবে ডেভেলপ করে (কোন ব্যাঙ্কের আদেশ ছাড়াই) এবং এটি বাজারে বিক্রি করে তবে এটি অনুমোদিত হবে (এমনকি যদি ক্রেতাদের মধ্যে এমন ব্যাংক থাকে যারা সফ্টওয়্যারটি কিনে এবং ব্যবহার করে)। এটি এই কারণে যে এটি নিষিদ্ধ কিছুর সাথে সরাসরি সংযুক্ত না, তাই এটিকে সহায়তা হিসাবে বিবেচনা করা যায় না।

আরেকটি উদাহরণ: যদি কেউ ব্যাঙ্কে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন, যিনি নিষিদ্ধ জিনিসগুলির জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটারগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তাহলে এটি নিষিদ্ধ, কারণ এটি সরাসরি সংযুক্ত, তার মানে সহায়তা। যদি তাকে ব্যাঙ্কের দ্বারা তাদের কর্মীদের কাছে পিজ্জা সরবরাহ করার আদেশ দেওয়া হয়, তবে এটি অনুমোদিত হবে, কারণ এটিকে সহায়তা হিসাবে গণ্য করা হবে না এবং নিষিদ্ধ কিছুর সাথে এর সরাসরি সংযোগ নেই।

জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন বিষয় নিয়ে কাজের কথা এসেছে যা সরাসরি নিষিদ্ধ কিছুর সাথে যুক্ত।

Leave a Reply