শিল্প বিভাগ হচ্ছে এমন একটি বিভাগ যা শিল্প সংক্রান্ত সকল বিষয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে; তা ভারী শিল্প সম্পর্কিতই হোক, যেমন: মোটর, ইঞ্জিন, যানবাহন, সরঞ্জামাদি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কিংবা হালকা শিল্পের সাথে সম্পর্কিতই হোক। রাষ্ট্রে অবস্থিত গণমালিকানাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল শিল্পকারখানা, যেগুলোর সাথে সামরিক শিল্পের সম্পর্ক রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই যুদ্ধনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর কারণ হল, জিহাদের জন্য প্রয়োজন সেনাবাহিনী; আর, সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অস্ত্রশস্ত্র। এই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র যেন সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন এবং সর্বাবস্থায় সহজলভ্য হয় এজন্য রাষ্ট্রের নিজস্ব শিল্পকারখানা থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে সামরিক শিল্পকারখানা কারণ, জিহাদের সাথে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
খিলাফত রাষ্ট্র যেন স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী হয় এবং অন্যকোন রাষ্ট্র যেন তাকে প্রভাবিত করতে না পারে, এজন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজে নিজের অস্ত্রশস্ত্র তৈরী করতে হবে এবং এগুলোকে ক্রমাগতভাবে উন্নত করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এ নীতি খিলাফত রাষ্ট্রকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী করবে এবং রাষ্ট্রকে প্রযুক্তিগতভাবে সর্বাধুনিক ও সবচাইতে শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী রাষ্ট্রে পরিণত করবে। একইসাথে, এ নীতি রাষ্ট্রকে এমন সব যুদ্ধাস্ত্রের অধিকারী করবে যা রাষ্ট্রের নিশ্চিত ও সম্ভাব্য শত্রুর অন্তরে প্রচন্ড ভীতির সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
‘আর প্রস্তূত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন ভীতির সঞ্চার হয় আল্লাহ্’র শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ্ তাদেরকে চেনেন।’
[সূরা আনফাল: ৬০]
সুতরাং, উপরোক্ত আয়াত অনুসারে, খিলাফত রাষ্ট্রের থাকবে নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি, সে উৎপাদন করবে তার প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং এগুলোকে সে ক্রমাগত এমন ভাবে উন্নত করবে যাতে করে রাষ্ট্রের নিশ্চিত ও সম্ভাব্য শত্রুর অন্তরে প্রবল ভীতির সৃষ্টি করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সর্বোচ্চ শক্তিশালী ও সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী হয়। সুতরাং, নিজের অস্ত্রশস্ত্র নিজে উৎপাদন করা খিলাফত রাষ্ট্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব এবং এ ব্যাপারে অন্য কারো উপর নির্ভর করা রাষ্ট্রের জন্য অনুমোদিত নয়। কারণ, তাহলে এ নির্ভরশীলতা অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে খিলাফত রাষ্ট্রের ইচ্ছাশক্তি, এর অস্ত্রশস্ত্র ও এর যুদ্ধঘোষণাকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ তৈরী করে দেবে।
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এটা সুস্পষ্ট যে, অস্ত্রবিক্রেতা দেশসমূহ অন্যান্য দেশগুলোর কাছে সাধারণতঃ সব ধরনের অস্ত্র বিক্রি করে না, বিশেষ করে সর্বাধুনিক অস্ত্র। এমনকি তারা বিশেষ শর্ত আরোপ ব্যতীতও অস্ত্র বিক্রয় করে না, যাতে করে তাদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। আবার অস্ত্র বিক্রয়ের সময় ক্রেতা দেশ নয়, বরং তারা নিজেরাই এর পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে। যা অস্ত্রবিক্রেতা দেশটিকে ক্রেতা দেশটির উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরী করে এবং তারা সহজেই ক্রেতা দেশটির উপর তাদের নিজস্ব ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ক্রেতা দেশটি যদি যুদ্ধরত অবস্থায় থাকে; কারণ, এ পরিস্থিতিতে তাদের ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও গোলাবারুদের প্রয়োজন হয়। ফলশ্রুতিতে, ক্রেতা দেশটি অস্ত্রবিক্রেতা দেশটির উপর ক্রমান্বয়ে আরও বেশী নির্ভরশীল হয়ে যায় এবং এ পরিস্থিতি দেশটিকে অন্যান্য দেশের চাওয়া-পাওয়ার অধীনস্থ করে তোলে। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে, অস্ত্রবিক্রেতা দেশটি ক্রেতা দেশটির স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে পুরোপুরি ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, বিশেষতঃ যুদ্ধের সময় যখন গোলাবারুদ, অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এর ফলে, ক্রেতা দেশটি অস্ত্র রপ্তানীকারক দেশটির কাছে তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি বিকিয়ে দিয়ে জিম্মি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
উপরোল্লিখিত কারণসমূহ পর্যালোচনা করে এটা বলা যায় যে, খিলাফত রাষ্ট্রকে অবশ্যই স্বাধীনভাবে নিজে নিজের অস্ত্রশস্ত্র এবং ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশসহ যুদ্ধযন্ত্রের সাথে জড়িত সমস্ত কিছু উৎপাদন করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আর এটা কখনই সম্ভবপর হবে না, যদি না রাষ্ট্রের অধিকারে ভারী শিল্প থাকে এবং রাষ্ট্র এমন সব কলকারখানা স্থাপন করে যা সামরিক ও বেসামরিক ভারী শিল্পদ্রব্যাদি উৎপাদন করে। সুতরাং, এটা অত্যাবশ্যকীয় যে, সকল ধরনের পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র, রকেট, স্যাটেলাইট, উড়োজাহাজ, ট্যাঙ্ক, মহাকাশযান, মোটরগাড়ি, নৌযান, সাঁজোয়াযান এবং অন্যান্য সকল ভারী ও হালকা অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদনের জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় কলকারখানা স্থাপন করতে হবে; এবং সেইসাথে এটাও প্রয়োজনীয় যে, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এমন সব কলকারখানা থাকবে যা যন্ত্রপাতি, মোটর, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, ইলেক্ট্রনিক পণ্য ইত্যাদি তৈরী করবে। এছাড়া, রাষ্ট্রে থাকবে গণমালিকানা সম্পদের সাথে সম্পর্কিত কলকারখানা এবং সেইসাথে থাকবে সামরিকশিল্পের সাথে জড়িত হালকা সরঞ্জামাদি উৎপাদনের কারখানা। এ সমস্ত কিছুই যুদ্ধ প্রস্তুতির আওতাধীন এবং আল্লাহ্’র বিধান অনুযায়ী এ প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুসলিমদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। পবিত্র কুর’আনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
‘আর প্রস্তূত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যরে মধ্যে থেকে’
[সূরা আনফাল : ৬০]
যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র দাওয়াতী কার্যক্রম ও জিহাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বাণী বহন করে নিয়ে যাবে, সেহেতু এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রকে সবসময় অব্যাহতভাবে জিহাদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আর একারণেই, যুদ্ধনীতির উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রকে নিজস্ব ভারী ও হালকা শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে। যেন যে কোন সময় রাষ্ট্র এ কলকারখানাগুলোকে সামরিক প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে রূপান্তরিত করতে পারে। সুতরাং, খিলাফত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ সকল ভারী ও হালকা শিল্পকারখানা অবশ্যই যুদ্ধনীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যে কোন সময় এ সকল কারখানাকে সামরিক।