নির্বাহী সহকারীগণ (মু’ওয়ায়ীন আত তানফীদ)

মু’ওয়ায়ীন আত তানফীদ এমন একজন সহকারী (ওয়াযির) যাকে খলীফা তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর, তদারকি এবং নির্দেশ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তার সহযোগী হিসাবে নিযুক্ত করে থাকেন। তিনি খলীফা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ, জনগণ ও পররাষ্ট্র বিষয় সংক্রান্ত কার্যালয়ের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী ব্যক্তি। তিনি খলীফার নিকটে এবং খলীফার নিকট থেকে বার্তা বহনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খলীফার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার সহকারী, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন প্রকার ক্ষমতা তার নেই। অর্থাৎ, তার ভূমিকা বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনা, কিন্তু শাসন করা নয়। তার কার্যালয় হচ্ছে এমন এক হাতিয়ার যার মাধ্যমে খলীফা আভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক কার্যালয়সমূহে তার জারিকৃত নির্দেশসমূহ বাস্তবায়ন করে থাকেন। এবং এ সমস্ত কার্যালয়ের মাধ্যমে মু’ওয়ায়ীন আত তানফিদ এর কাছে যে সমস্ত বিষয় বা বার্তা আসবে এগুলোর প্রতিটির ব্যাপারেই তাকে খলীফার অধীনস্থ থাকতে হবে। সুতরাং, তার বিভাগ বা কার্যালয় খলীফা এবং অন্যান্যদের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী; যেখানে এ বিভাগ খলীফার পক্ষ থেকে তার বার্তা অন্যান্যদের কাছে পৌঁছে দেয় এবং সেইসাথে, অন্যান্যদের বার্তাও খলীফার কাছে বহন করে নিয়ে যায়।

নির্বাহী সহকারীকে রাসূল (সা) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের সময়ে সচিব (আল কাতিব) বলা হত। এরপর, তিনি ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় চিঠিপত্র সংরক্ষণকারী দিওয়ান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীতে, এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, তাকে সমন্বয়কারী সচিব বা সমন্বয় বিভাগের সংরক্ষক বলা হবে। পরিশেষে, আইন বিশারদগণ তাকে নির্বাহী সহকারী (মু’ওয়ায়ীন আত তানফীদ) হিসাবে আখ্যায়িত করেন।

খলীফা হলেন একজন শাসক যার কাজের মধ্যে শাসন, আইন বাস্তবায়ন এবং জনগণের বিষয়সমূহ দেখাশোনা করা অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু, শাসনকার্য পরিচালনা, আইন বাস্তবায়ন এবং জনগণের অভিভাবকত্বের সাথে প্রশাসনিক কর্মকান্ডও জড়িত। এজন্যই এমন একটি বিশেষ বিভাগ স্থাপন করা প্রয়োজন যা কিনা খলীফার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করবে এবং খিলাফতের গুরুদায়িত্ব পালনে তাকে সহায়তা করবে। এ কারণে খলীফার একজন নির্বাহী সহকারী নিযুক্ত করা প্রয়োজন যিনি প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনার ব্যাপারে খলীফাকে সহায়তা করবেন; কিন্তু, শাসনকার্যে নয়। তবে, এ সহকারী প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর মতো কোন দায়িত্ব পালন করবেন না। এটা তার জন্য অনুমোদিতও হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, তিনি ওয়ালী বা আমীল নিয়োগ করতে পারবেন না কিংবা জনগণের বিষয়সমূহ পরিচালনা করতে পারবেন না। তার কর্মকান্ড নিতাšইÍ প্রশাসনিক। যেমন: খলীফা বা প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর শাসনকার্য সংক্রান্ত কোন নির্দেশ কিংবা প্রশাসনিক বিষয়ে তাদের কোন সিদ্ধান্তকে তিনি বাস্তবায়ন করবেন। মূলতঃ এ কারণেই তাকে নির্বাহী সহকারী বলা হয়। আইনবিশারদগণ তাকে ‘ওয়াযির তানফিদ’ বলতেন যার অর্থ আসলে মু’ওয়ায়ীন আত তানফিদ। কারণ, ওয়াযির শব্দটির ভাষাগত অর্থ হল সহকারী। তারা বলেন, এ ওয়াযির বা সহকারী খলীফার সাথে জনগণ ও ওয়ালীদের সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম, যিনি খলীফার জারিকৃত আদেশসমূহ তাদের কাছে বহন করেন, তার আদেশ বাস্তবায়ন করেন, খলীফাকে ওয়ালীদের নিযুক্তির ব্যাপারে অবহিত করেন এবং সেইসাথে, টাস্কফোর্স গঠন ও রণাঙ্গনে সেনাদের অবস্থান সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। এছাড়া, এ সমস্ত কার্যালয় থেকে যে সমস্ত বার্তা তার কাছে আসে সেগুলোও তিনি খলীফার কাছে পৌঁছে দেন এবং নতুন কোন সমস্যা বা পরিস্থিতি উদ্ভুত হবার সম্ভাবনা থাকলে তিনি পূর্ব হতেই তা খলীফাকে অবহিত করেন, যেন এ ব্যাপারে তিনি খলীফার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারেন। এ সমস্ত কিছু তাকে আদেশ পালনে খলীফার সহকারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে, কিন্তু, কোন বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন ক্ষমতা দেয় না। তিনি বর্তমান কালের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের প্রধান সচিবের সমতুল্য।

যেহেতু নির্বাহী সহকারী প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর মতোই খলীফার সাথে সরাসরি যুক্ত সেহেতু তিনিও খলীফার অধীনস্থ সাহায্যকারীদের একজন। তার দায়িত্ব এমন যে, তাকে খলীফার সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে, খলীফাকে সরাসরি তার কাজের তদারকি করতে হবে এবং প্রয়োজনে তাকে খলীফার সাথে একাকী, দিনে অথবা রাতে সাক্ষাৎ করতে হবে, যা কিনা ইসলামী শারী’আহ অনুসারে একজন নারীর বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। সে কারণে নির্বাহী সহকারীকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে। এছাড়া, তিনি অমুসলিমও হতে পারবেন না, তাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে; কেননা তিনি খলীফাকে সাহায্যকারী দলের অংশ। কারণ, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুর’আনে বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে [ইহুদী, নাসারা কিংবা মুশরিকদের] অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে এতোটুকু কুন্ঠিত হয় না। তারা তো শুধু তোমাদের ধ্বংস কামনা করে। বিদ্বেষ তাদের মুখ হতে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, আর তাদের অন্তর যা লুকিয়ে রেখেছে তা আরও ভয়াবহ।”
[সূরা আলি ইমরান : ১১৮]

খলীফার অন্তরঙ্গ পরিমন্ডলে একজন অমুসলিমকে অন্তর্ভূক্ত করা যে পুরোপুরি নিষিদ্ধ তা এ আয়াতে তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং, প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর মত প্রত্যক্ষভাবে খলীফার সাথে যুক্ত থাকার কারণে নির্বাহী সহকারী কাফির হতে পারবেন না এবং তাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। এছাড়া, খলীফা ও অন্যান্যদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজনে নির্বাহী সহকারীদের সংখ্যাও একাধিক হতে পারে।

যে সমস্ত ক্ষেত্রে মু’ওয়ায়ীন তানফীদ খলীফা এবং অন্যদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সেগুলো ৪ প্রকারের:

১. আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ, খলীফা এ ব্যাপারে সরাসরি নির্দেশ দিতে পারেন কিংবা এর জন্য আলাদা একটি পররাষ্ট্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
২. সেনাবাহিনী।
৩.সেনাবাহিনী ছাড়া অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান।
৪. নাগরিকদের সাথে সম্পর্ক।

মূলতঃ নির্বাহী সহকারী এ সমস্ত বিষয়েই দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করবেন। যেহেতু তিনি খলীফা এবং অন্যান্যদের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী ব্যক্তি সেহেতু তাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হবে এবং তিনি খলীফার নিকট হতে ও খলীফার নিকটে তথ্য আদান-প্রদান করবেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় বিভাগ সমূহের কি কি কর্তব্য পালন করা উচিত তারও তদারকি করবেন।

খলীফা হলেন প্রকৃত শাসক। তিনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি শাসনকার্য পরিচালনা, আইন বাস্তবায়ন এবং জনগণের বিষয়সমূহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। সে কারণে তাকে অব্যাহতভাবে শাসনযন্ত্র, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এবং উম্মাহ্’র সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। তিনি আইন জারি করেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, জনসেবার দায়িত্ব নেন, শাসনযন্ত্র সমূহের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন করেন এবং এদের কার্য সম্পাদনে যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে ও যা কিছু প্রয়োজন হয় সে ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন। তার কাছেই উম্মাহ্’র সকল দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগ এবং বিভিন্ন বিষয়ে উম্মাহ্’র প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করা হয় এবং সেইসাথে, তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীও পর্যবেক্ষণ করেন। সুতরাং, তার এ সকল কাজের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে মু’ওয়ায়ীন আত তানফীদ এদের মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেন অর্থাৎ উম্মাহ্’র বার্তা খলীফাকে পৌঁছে দেন এবং উম্মাহ্’কে খলীফার নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত করেন।

বস্তুতঃ খলীফা বিভিন্ন বিভাগের ব্যাপারে যে সমস্ত নির্দেশ জারি করেন এবং তাদের নিকট থেকে খলীফার কাছে যে সমস্ত বার্তা আসে এগুলোর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। মূলতঃ নির্বাহী সহকারী এ দায়িত্বটিই পালন করেন এবং তিনি এ সকল কাজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করেন। তিনি খলীফার নির্দেশসমূহ বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিভাগের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সভাপতিত্ব করবেন এবং খলীফা বিশেষভাবে কোন ক্ষেত্রে তাকে নিষেধ না করলে তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। খলীফা কোন বিষয়ে দ্বিমত করলে সেক্ষেত্রে তার নির্দেশ পালনে নির্বাহী সহকারী বাধ্য; কেননা খলীফা হচ্ছেন শাসক এবং তার আদেশই বাস্তবায়ন করতে হবে।

সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো সাধারণত গোপন ও শুধুমাত্র খলীফার এখতিয়ারভূক্ত। এ কারণে নির্বাহী সহকারী এ বিষয়সমূহের বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবেন না কিংবা এ সকল বিষয়ে কোনপ্রকার তদারকিও করবেন না, যদি না খলীফা তাকে বিশেষভাবে এ ব্যাপারে অনুরোধ করেন। যদি এ ধরনের পরিস্থিতি হয়, তবে এক্ষেত্রে তিনি শুধু সে সমস্ত বিষয়ই তদারকি করবেন যে বিষয়ে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর অন্য কোন বিষয়ে নয়।

আর উম্মাহ্’র ব্যাপারে বলা যায় যে, জনগণের বিষয়সমূহ দেখাশোনা করা, তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করা এবং তাদের ভেতর হতে অন্যায় কার্যকলাপকে দূরীভূত করা – এ সবই খলীফা এবং তার নিযুক্ত প্রতিনিধিত্বকারী সহকারীর দায়িত্ব।

এগুলো নির্বাহী সহকারীর দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। সুতরাং, তিনি এ সমস্ত বিষয়ে কোন প্রকার তদারকিও করবেন না, যদি না খলীফা এ ব্যাপারে কোন অনুরোধ জানান। এক্ষেত্রে, তার দায়িত্ব হবে শুধুমাত্র বাস্তবায়নের, তদারকির নয়। বস্তুতঃ এ সমস্ত কিছুই নিরূপিত হবে খলীফার কাজের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে এবং সেই অনুসারেই মু’ওয়ায়ীন আত তানফীদ- এর কাজের প্রকৃতি নিরূপিত হবে।

রাসূল (সা) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনদের (রা) সময়ে নির্বাহী সহকারীর (যাকে তখন সচিব বলা হত) কাজের উদাহরণ নিম্নরূপ:

১. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদাহরণ:

আল মুসওয়ার ও মারওয়ানের সূত্রে আল বুখারী হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পর্কে বর্ণনা করেন যে,

‘সুতরাং, নবীজি সচিবকে ডেকে পাঠালেন…’

কিতাব উল খারাজ বইয়ে আবু ইউসুফ বলেছেন,

“মুহম্মদ ইবনে ইসহাক এবং আল কালবী আমাকে অবগত করলেন, অন্যান্যরাও এ হাদীসে যোগ করেন এই বলে: তিনি (সা) বললেন, ‘লেখ (বহুবচন)…” লেখকের নাম উল্লেখ না করে।

ইবনে কাসীর বর্ণনা করেছেন, “ইবনে ইসহাক বলেছেন, আল জুহারী বলেছেন…অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) আলী ইবনে আবি তালিবকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘লেখ (একবচন)…”

ইবনে আব্বাস হতে আবু উবায়েদ আল আমওয়াল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন,

“…এবং তিনি আলীকে বললেন, ‘হে আলী, লেখ…’’’

আল হাকীম ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন, যা আয যাহাবী সত্যায়িত করেছেন এবং গ্রহণ করেছেন:

‘…ও আলী, লিখ….’

হুদাইবিয়ার চুক্তিটি খুবই প্রসিদ্ধ এবং এ কারণে চুক্তিটির ধারাগুলো বর্ণনার এখানে প্রয়োজন নেই।

– রাসূল (সা) হিরাক্লিয়াসের কাছে চিঠি লিখেন, যে সম্পর্কে ইবনে মাজাহ্ ব্যতীত অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন। আল বুখারী হাদীসটির বর্ণনা করেন ইবনে আব্বাস থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন আবু সুফিয়ান থেকে,

“বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। আল্লাহ্’র বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদের পক্ষ থেকে, রোমানদের নেতা হিরাক্লিয়াসের প্রতি – শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা হিদায়াতকে অনুসরণ করে। অতঃপর আমি তোমাকে ইসলামের দিকে আহ্বান জানাচ্ছি। যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ কর তবে আল্লাহ্ তোমাকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দেবেন। যদি তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও তবে রোমানদের পাপের জন্য তুমিই দায়ী থাকবে। হে আহলে কিতাবীগণ, তোমরা এগিয়ে এসো আমাদের এবং তোমাদের মাঝে ন্যায়সঙ্গত, বাণীর দিকে, যে আমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারও উপাসনা না করি, আমরা তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করি এবং আল্লাহ্’র পাশাপাশি আর কাউকে প্রভূ হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়… তবে বল আমরা মুসলিম।”
(সহীহ্ বুখারী, হাদীস নং-৭)

– এ চিঠির প্রত্যুত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে লিখা হিরাক্লিয়াসের চিঠি আবু উবায়েদ তার আল-আমওয়াল বইতে বকর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ আল মুজনী থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘…এবং সে রাসূল (সা) কে লিখল যে, সে মুসলিম এবং তাঁকে (সা) কিছু দিনার পাঠাল। রাসূলুল্লাহ্ (সা) চিঠিটি পড়ে বললেন, ‘সে মিথ্যাবাদী, আল্লাহ্’র শত্রু, সে মুসলিম নয় বরং সে খ্রীস্টধর্মের উপরে আছে।’

আল হাফীজ আল-ফাতহ্’তে উল্লেখ করেন যে, হাদীসটি সহীহ্ কিন্তু বর্ণনার দিক থেকে বকর থেকে বিচ্ছিন্ন (মুরসাল)।

– উমর (রা)কে লিখা মিনবাজ-এর জনগণের চিঠি এবং উমর (রা) এর প্রত্যুত্তর, যা কিনা আবু ইউসুফ তাঁর আল-খারাজ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: “আমর বিন শুয়া’ইব হতে আব্দুল মালিক ইবন জুরাইজ বর্ণনা করেছেন যে – সমুদ্রের অপরপ্রান্ত হতে আমাদের সাথে যুদ্ধরত কিছু জাতি উমর ইবন আল-খাত্তাবকে এই বলে পত্র পাঠালেন যে: “আমাদেরকে আপনার রাজ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করার অনুমতি দিন এবং বিনিময়ে আমাদের উপর দশভাগের একভাগ কর আরোপ করুন।” তিনি বলেন, ‘উমর এ ব্যাপারে সাহাবীদের সাথে আলোচনা করলেন এবং তারা তাকে এ বিষয়ে রাজী হবার উপদেশ দিলেন। এভাবেই, প্রথমবারের মতো যুদ্ধরত জাতির লোকেরা একদশমাংশ কর আদায় করলো।”

২. সেনাবাহিনী এবং এ সম্পর্কিত কিছু ঘটনা:

– খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) কে লিখা আবু বকরের (রা) চিঠি, যেখানে তিনি খালিদ (রা)কে আল শামের দিকে যাত্রা করার নির্দেশ দেন। কিতাব উল খারাজ গ্রন্থে আবু ইউসুফ বলেছেন, “খালিদ আল হীরাকে তাঁর কেন্দ্র হিসেবে নিতে চেয়েছিল। তবে আবু বকরের চিঠি তাঁকে আবু উবায়দা এবং মুসলিমদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য আল শামের দিকে অগ্রসর হবার নির্দেশ প্রদান করে…”

– আল-শাম এর সৈন্যগণ উমরের কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠান এবং তিনি তাদের লিখেন। ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেছেন যা সহীহ্ বর্ণনা হিসেবে পরিগণিত যে, আবু হাতিম ইবনে হাব্বান সম্মাক’কে বলতে শুনেছেন, ‘আমি শুনেছি ইয়াদ আল আশারী বলেছেন, “আমি ইয়ারমুকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছি যেখানে আমাদের পাঁচজন আমীর ছিল: আবু উবাইদা ইবনে আল জারাহ্, ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান, ইবনে হাসানাগ, খালিদ ইবনে ওয়ালিদ এবং ইয়াদ (ইনি বর্ণনাকারী ইয়াদ আল আশারী থেকে ভিন্ন ব্যক্তি)। তিনি বর্ণনা করেন যে, উমর বলেন, “যদি সাংঘর্ষিক কোন অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে আবু উবাইদার সাহায্য কামনা করবে।” অতঃপর আমরা তাকে জানালাম যে, “মৃত্যু আমাদেও পেছনে ধাওয়া করছে এবং আমরা তার সাহায্য কামনা করছি। প্রত্যুত্তরে তিনি আমাদের জানালেন, “আমি তোমাদের পত্র পেয়েছি যেখানে তোমরা আমার সাহায্য কামনা করেছো। আমি তোমাদের এমন একজনের দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যার সাহায্য বহুগুন বেশী শক্তিশালী এবং যার সৈন্যদল সবসময় তৈরী। তিনি হলেন আল্লাহ্ (’আজ্জা ওয়া জ্জাল); সুতরাং, তোমরা তাঁর সাহায্য প্রার্থনা কর। কারণ, মুহাম্মদ (সা) কে বদরের প্রান্তে তোমাদের চাইতে কম সংখ্যক সৈন্য থাকার পরও বিজয় দান করা হয়েছে। যখনি আমার পত্র তোমাদের কাছে পৌঁছাবে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে এবং আমার সাথে আলোচনার অপেক্ষা করবে না। তারপর, আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করলাম এবং তাদেরকে পরাজিত করলাম। আমরা তাদের চার ফারসাখ পরিমাণ হত্যা করলাম।”

– আল-শাম এর সেনাবাহিনী উমর ইবন আল-খাত্তাবকে লিখে পাঠান যে, “যখন আমরা শত্রুপক্ষের মুকাবিলা করলাম, তাদের অস্ত্রসমূহ রেশমী কাপড়ে আবৃত অবস্থায় দেখে আমাদের হৃদয়ে ভয় সঞ্চারিত হল।” উমর প্রত্যুত্তরে তাদের জানালেন, “তবে তোমরা একই কাজ কর, অর্থাৎ অস্ত্রসমূহ রেশমী কাপড় দ্বারা আবৃত কর।” এটি ইবনে তাইমিয়া তাঁর আল-ফতওয়া গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

৩. সেনাবাহিনী ছাড়া রাষ্ট্রের অন্য কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কিছু উদাহরণ:

এক দশমাংশের ব্যাপারে মু’য়াজকে লিখা রাসূল (সা) এর চিঠি: ইয়াহিয়া ইবনে আদম শাসনকার্য  বিষয়ে লেখা তার আল-খারাজ বইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইয়েমেনে নিযুক্ত মু’য়াজকে লিখেছিলেন:

“বৃষ্টির পানি বা এ ধরনের পানির আধার দ্বারা চাষকৃত জমির উপর (উৎপন্ন ফসলের) খাজনা এক দশমাংশ ধার্য করা হল; আর, বালতি দিয়ে সেচকার্য চালানো হলে খাজনা হবে এক দশমাংশের অর্ধেক।” আশ-শী’ ও একই ধরনের বর্ণনা করেছেন।

– আল মুনদির ইবনে সাওয়াকে জিজিয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর প্রেরিত চিঠি। আবু ইউসুফ তার আল- খারাজ গ্রন্থে আবু উবাইদা থেকে বর্ণনা করেন যে,

“রাসূলুল্লাহ (সা) আল মুনজীর ইবনে সাওয়াকে লিখেন যে, “যে আমাদের মতো নামাজ আদায় করবে, কিবলা’র দিকে মুখ ফিরাবে, জবাইকৃত মাংস খাবে, সে মুসলিম বলে গণ্য হবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিরাপত্তা লাভ করবে। মাগুসদের মধ্যে যারাই ইসলাম গ্রহণ করবে তারাই নিরাপত্তা লাভ করবে। আর, যারা তা প্রত্যাখান করবে তাদের জিযিয়া কর পরিশোধ করতে হবে।”

– বাহরাইনে পাঠানোর সময় সাদাকার দায়িত্ব সম্পর্কে আনাসকে লিখা আবু বকরের চিঠি। আনাসের সূত্রে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন যে, “আবু বকর (রা) সাদাকার দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল যা বলেছেন সে সম্পর্কে চিঠি লিখেছিলেন…”

– দূর্ভিক্ষের বছরে আমরকে লিখা উমরের পত্র এবং আমরের জবাব। ইবনে খুজাইমাহ্ তার সহীহ গ্রন্থে এ ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন এবং আল হাকীম এটাকে ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ বলেছেন। বায়হাকী তার সূনান গ্রন্থে, ইবনে সা’দ তার তাবাকাত গ্রন্থে জায়েদ ইবনে আসলাম হতে এবং ইবনে আসলাম তারপিতা হতে বলেছেন, “দূর্ভিক্ষের বছরে আরবের ভূমিগুলো খরায় আক্রান্ত হয়েছিল। এ সময় উমর ইবন আল-খাত্তাব আমর ইবনুল ’আসকে লিখলেন, ‘আমিরুল মু’মিনীন, আব্দুল্লাহ্’র পক্ষ থেকে, আমর ইবনুল ’আস এর প্রতি। আল্লাহ্’র কসম! তুমি এবং তোমার অঞ্চলের জনগণ যখন স্বাস্থ্যবান হচ্ছো তখন আমি এবং আমার অঞ্চলের জনগণ শুকিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাহায্য কর!’ প্রত্যুত্তরে ’আমর জানালেন, ‘আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক! আমি সর্বদাই আপনার সেবায় নিয়োজিত; আমি আপনারই সেবায় নিয়োজিত। আপনার দিকে উটের বহর প্রেরণ করছি, যার প্রথমটি যখন থাকবে আপনার দরজায় এবং শেষেরটি থাকবে আমার দরজায়। যদিও আমি সমুদ্রপথে দ্রুত সাহায্য পাঠানোর উপায় খুঁজে বের করবো বলে আশা করছি।”

– আলীর (রা) প্রতি মুরতাদদের সম্পর্কে মুহম্মদ ইবনে আবু বকরের চিঠি এবং তাঁর উত্তর। কাবুস ইবনে আল মুখারিক থেকে ইবন শিবা বর্ণনা করেছেন, যিনি (কাবুস) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, “মুহম্মদ ইবনে আবু বকরকে ’আলী মিশরের আমীর হিসেবে প্রেরণ করেন এবং তিনি (মুহম্মদ ইবনে আবু বকর) আলীকে কিছু ধর্মত্যাগী বা মুরতাদ সম্পর্কে লিখেন। তাদের মধ্যে কিছু লোক সূর্য ও চন্দ্রকে উপাসনা করত এবং কিছু লোক অন্যকিছুকে উপাসনা করতো যদিও তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করত। এ ঘটনা জানতে পেরে ’আলী যারা অন্য কিছুর উপাসনা করা সত্বেও নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে তাদের হত্যার নির্দেশ দেন এবং অন্যদের তাদের ইচ্ছেমত উপাসনার মনযোগ দিতে বলেন।”

৪. জনগণকে সরাসরি উদ্দেশ্য করে কিছু চিঠি, যাদের কিছু নীচে উল্লেখ করা হল:

– নাজরানের জনগণের প্রতি রাসূলুল্লাহ্’র পত্র। ইবন ’আব্বাস হতে আল-সুদ্দী এবং তার থেকে আবু দাউদ বর্ণনা করেন, যে ব্যাপারে আল-মুনজিরী মন্তব্য করেছেন যে, আল-সুদ্দী সরাসরি এ ব্যাপারে ইবন ’আব্বাসের কিছু আলোচনা শুনেছেন – যে আবু উবাইদা তার আল-আমওয়াল গ্রন্থে আবু আল-মালিহ্ আল-হাদহালি থেকে বর্ণনা করেছেন, যার শেষে বলা হয়েছে: “উসমান ইবন আফ্ফান এবং মু’ওয়াক্বীব এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং লিখেছেন।” আবু ইউসুফ তার আল-খারাজ গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এর লেখক ছিলেন আল-মুগীরাহ্ ইবন আবি শুবাহ্। তারপর, আবু ইউসুফ আবু বকরের উক্ত চিঠিটি উল্লেখ করেছেন যার লেখক ছিলেন আল-মুগীরাহ্, উমরের চিঠি যার লেখক ছিলেন মুয়াক্বীব, তাদের প্রতি উসমানের চিঠি যার লেখক ছিলেন তাঁর সাহায্যকারী হামরান, আলীর চিঠি যার লেখক ছিলেন আব্দুল্লাহ্ ইবন রাফি’।

– তামীম আল দারীর প্রতি রাসূল (সা) এর লেখা পত্র। কিতাব উল খারাজে আবু ইউসুফ বর্ণনা করেছেন যে, “লাখামের এক ব্যাক্তি তামিম আল দারী যিনি তামীম ইবনে আউস নামে পরিচিত ছিলেন বললেন, হে রাসূলুল্লাহ্ (সা), ফিলিস্তিনে রোমানদের মধ্য হতে আমার কিছু প্রতিবেশী আছে। তাদের একটি গ্রামের নাম হাবরা এবং অপরটির নাম আইনুন। যদি আল্লাহ্ আল শামস অঞ্চলে আপনাকে বিজয় দান করেন তাহলে দয়া করে ঐ দু’টি গ্রাম আমাকে দান করবেন। তিনি (সা) বললেন, “এ দুটি তোমাকে দেয়া হল।” তামিম বললেন, “তাহলে এটা আমাকে কাগজে-কলমে নির্দিষ্ট করে দিন।”

তিনি (সা) তার উদ্দেশ্যে লিখলেন, “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। আল্লাহ্’র রাসূল মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে তামিম ইবনে আল আউস আল দারীর প্রতি, তামীমকে হাবরা এবং বাইত আইনুন গ্রাম দুটির সব সমতল ভূমি, পাহাড়, জলধার, কৃষিযোগ্য জমি, নাবাতিন এবং গরু সবকিছু প্রদান করা হল এবং তার পরে তার সন্তানগণ এসবের মালিক হবে। কেউ এসবের মালিকানার ব্যাপারে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না এবং কেউ অন্যায়ভাবে তার প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। কেউ যদি এর ব্যাত্যয় ঘটায়, তাহলে সে আল্লাহ্, ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকূলের অভিশাপ কুড়াবে।” এ দলিলটি আলী (রা) লিখেছিলেন।

যখন আবু বকর খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন তখন তিনি এ ব্যাপারে চিঠি লিখলেন যে, “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। এটা আবু বকরের পক্ষ থেকে, যিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর প্রতিনিধি, যাকে এ জমিনে কর্তৃত্ব দান করা হয়েছে। তিনি দারী বংশের প্রতি এটা লিখছেন যে, হাবরা এবং আইনুন গ্রামের উপর তাদের যে অধিকার রয়েছে সেটাকে কেউ অবজ্ঞা করতে পারবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ্’কে মানে এবং তাঁর আনুগত্য করে সে কোনভাবেই তাদের সম্পদে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমার কর্তৃক নিযুক্ত প্রধান ব্যক্তি সেখানে অবশ্যই দু’টি দরজা স্থাপন করবে এবং দূর্বৃত্তদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে।”

খলীফার কার্য সম্পাদনের জন্য তিনি যতজন সম্ভব সচিব নিয়োগ করতে পারেন। বস্তুতঃ যদি তাদের সাহায্য ছাড়া কাজ করা খলীফার পক্ষে সম্ভবপর না হয় তাহলে এদের নিয়োগ দেয়া বাধ্যতামূলক। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর জীবনীর রচয়িতারা জানিয়েছেন যে, তাঁর প্রায় বিশজনের মত পত্র লেখক ছিল।

সহীহ্ আল বুখারীতে উল্লেখ আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) যায়িদ বিন ছাবিত (রা) কে ইহুদীদের ভাষা শেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে করে তিনি (যায়িদ) তাদের লেখা পত্র রাসূলুল্লাহ্’কে পাঠ করে শোনাতে পারেন। সে কারণে যায়িদ ইবনে ছাবিত মাত্র পনের দিনের মধ্যে হিব্রুর ভাষা শিখে নিয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে জুবায়ের থেকে ইবনে ইসহাক বণর্না করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ (সা) আব্দুল্লাহ ইবনে আল আকরাম ইবনে আবদ ইয়াগুছকে নির্দেশনা দিতেন এবং সে অনুযায়ী তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন শাসকদের পত্রের জবাব দিতেন…।”

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে আল বায়হাকী বর্ণনা করেছেন যে, “রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর কাছে একদা এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে চিঠি আসল, তখন তিনি (সা) আব্দুল্লাহ্ ইবনে আল আকরামকে বললেন, ‘আমার পক্ষ থেকে উত্তর দাও।’ তিনি তাঁর পক্ষ হতে লিখলেন ও রাসূলুল্লাহ্ (সা) কে তা পড়ে শোনালেন। তিনি (সা) বললেন, ‘তুমি লিখেছো সঠিকভাবে ও দক্ষতার সাথে।” (আল্লাহ্ তাঁকে সফলতা দান করুন)

আলী ইবনে মুহম্মদ আল মাদাইনী থেকে মুহম্মদ ইবনে সাদ তার নিজস্ব ইসনাদসহ বর্ণনা করেছেন যে, মুহম্মদ ইবনে মাসলামাহ্ হচ্ছে একজন, যিনি একবার রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর নির্দেশক্রমে প্রতিনিধিদের প্রতি পত্র লিখছিলেন এবং রাসূল (সা) যখন কোন চুক্তি সম্পাদন করতেন তখন সাধারণত আলী ইবনে আবি তালিব চুক্তিনামা লিখতেন এবং যখন তিনি (সা) চুক্তি করতেন তিনি শান্তিচুক্তির শর্তসমূহ লিখতেন। মুয়াক্বীব ইবনে আবি ফাতিমা রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সীলমোহরের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। মুহম্মদ ইবনে বাশার তার দাদা মুয়াক্বীব থেকে এবং আল বুখারী ইবনে বাশার থেকে বর্ণনা করেছেন যে,

“রাসূলুল্লাহ্ (সা) এর সীল মোহরের আংটিটি ছিল রঙিন লোহার তৈরী যার উপরে রূপার আবরণ দেয়া ছিল। আর, এটা আমার কাছে সংরক্ষিত ছিল; মুয়াক্বীব রাসূল (সা) এর সীলমোহরের ব্যাপারে দায়িত্বশীল ছিল।”

Leave a Reply