বাস্তবতা:
ঢাকা ট্রিবিউন এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৪ মাসে ঢাকা থেকে মোট ১৪ জন নাগরিক গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে মোট ৫ জন বিভিন্ন মেয়াদে নিখোজের পর জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন। সরকার এবং পুলিশ এগুলোকে মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল বললেও তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী মনে করেন, চলমান নিখোজ প্রক্রিয়া অর্থের দ্বারা প্রভাবিত নয়; বরং এগুলো হচ্ছে সরকারের জন্য সম্ভাব্য হুমকি এবং ভীতি সঞ্চার করার উপায়। এই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক থেকে শুরু করে ফেইসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট শেয়ার করা সাবেক রাষ্ট্রদূতও রয়েছে। যারা ফিরে আসছেন তারা অজানা ভয়ে কেউই মুখ খুলছেন না।
কারণ:
১. পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়নের কারণে দারিদ্রতা, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ভিন্ন মত দমন ইত্যাদি ইস্যুতে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ম্যাকায়াভেলিয়ান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জালিম শাসক জনগনের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে।
২. খিলাফত রাষ্ট্রের মত বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা জনগনের হৃদয় মন (Heart & Mind) জয় করে শাসন করে না। সেকারণে গুম এধরনের সরকারের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
৩. যেসব গুম ও অপহরণের পেছনে সরকার জড়িত নয়, সেসবের ব্যাপারে শাসক জনগনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে তারা মোটেও আন্তরিক নয়।
সমাধান:
১. খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় খলিফা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সুনিশ্চিত এবং উম্মাহ’র অধিকার হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দিতে শরী’আহগতভাবে বাধ্য। মৌলিক অধিকার পূরণ থাকায় ও মানুষের ফিতরাতের সাথে যায় এরকম জীবনাদর্শ -ইসলাম দ্বারা শাসন করায় শাসক সহজেই জনগনের হৃদয় মন (Heart & Mind) জয় করতে পারে। একারণে খিলাফত ব্যবস্থায় জনগন ও শাসক পরস্পরের শত্রু নয়, বরং পরিপূরক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই খিলাফত ব্যবস্থায় শাসক কতৃক গুম সম্ভব নয়।
২. ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থায় শাসকগণ আল্লাহ’র ভয়ে ইবাদত মনে করে জনগনকে শাসন করে না। বরং তারা ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থে শাসনক্ষমতায় আসীন হয়। সেকারণে এসব শাসক নিজের বাসভূমি ও চলাচলের রাস্তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও জনগনের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা উদাসীন এবং এ ব্যাপারে কারও কাছে জবাবদিহী করতে বাধ্য নয়। রাসূল (সা) বলেন, ‘...এমন একটি সময় আসবে যখন সানা থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত গভীর রাতে যুবতী নারী হেটে চলে যাবে কিন্তু তার মনে দু’টি ভয় (আল্লাহ এবং চতুষ্পদ হিংস্র জন্তু) ছাড়া আর কোন ভয় থাকবে না।’ ইতিহাস সাক্ষী এ হাদীসের বাস্তবায়ন ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় সুনিশ্চিত হয়েছিল-যা পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় কল্পনাতীত।
৩. খিলাফত ব্যবস্থায় শাসককে জবাবদিহী করাকে কেবল উৎসাহিত করা হয় না, বরং এটি জনগনের জন্য একটি ফরয কাজ। খিলাফত ব্যবস্থায় সাধারণ জনগন, রাজনৈতিক দলসমূহ খলিফা বা শাসকের পদে আসীন যে কাউকে জবাবদিহী করতে পারবে এবং যে কোন নাগরিক তাদের বিরুদ্ধে মাহকামাতুল মাজালিম এর আদালতে মামলা করতে পারবেন। অথচ মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাংলাদেশের তথাকথিত পুঁজিবাদী সংবিধান স্বীকৃত হলেও বাস্তবে সরকার সমালোচনা ও ভিন্নমতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অসহিষ্ণু ও প্রতিক্রিয়াশীল। এমনকি এই তথাকথিত পবিত্র সংবিধান অনুসারে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রধামন্ত্রীর কোন অন্যায় কাজের ব্যাপারে আদালতে মামলা করা যায় না।