দুর্যোগ-পীড়িত অসহায় মানুষের দুর্দশা সরকার কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে অবহেলিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সপ্তাহাধিককাল ধরে প্রায় সাত লক্ষ মানুষ নতুন করে বন্যা কবলিত হচ্ছে এবং কোন ধরনের সরকারি সাহায্য না পৌঁছার কারণে তারা অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটের পাশাপাশি বন্যা কবলিত মানুষেরা ইতিমধ্যেই পানিবাহিত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে।
এসব দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও আক্ষেপের সময়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কাজে সরকারের ব্যর্থতা সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করে যাচ্ছে। রাজধানীতে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে মায়া বলেছে যে: “ত্রাণ-সামগ্রীর কোন স্বল্পতা নেই”। যখন এসব দুর্নীতিগ্রস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদগণ আমাদের জীবনের প্রতিদিনকার সংগ্রাম ও ভোগান্তিকে প্রতিনিয়তই উপহাস করে, তখন বিপদকালে তাদের কাছ থেকে আমরা এর চেয়েও খারাপ কিছুর আশংকা করতে পারি।
সত্যই, ত্রাণ-সামগ্রীর কোন অপ্রতুলতা ছিল না, কিন্তু তা বন্যা কবলিত মানুষের জন্য নয় বরং কেবলমাত্র তাদের দলীয় কর্মীদের লুন্ঠনের জন্য! এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কেবলমাত্র শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অনুগামী লোকদেরই সযত্নে লালন করে। এটা আশ্চর্যজনক নয় যে, যখন ভারত প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তার ব্যারেজগুলো খুলে দেয় যার দরুণ বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়, তখন আমাদের দেশের “মেরুদন্ডহীন রাজনীতিবিদগণ” ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না। বরং এসব ভীরু ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতায় থাকার জন্য এই শত্রুরাষ্ট্রের প্রতি আজ্ঞাবহ থাকাকেই অধিকতর পছন্দনীয় মনে করে।
বন্যার পাশাপাশি ঢাকা ও বিশেষ করে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। মেয়র নির্বাচনের পূর্বের অনেক রঙিন প্রতিশ্রুতি এখন শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ের পানির নিচে ডুবন্ত অবস্থায়। উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা চড়ে জনগণ আজ অফিস করতে যায়! শহরের নালা-গুলো আবর্জনায় অবরুদ্ধ। বৃষ্টির পানি মিশে সেসব ময়লা-আবর্জনা সড়কে ও অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়ছে, জন্ম দিচ্ছে বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি।
আমরা কখনই এই সীমাহীন লোভ ও দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যবস্থা হতে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ জন্ম হওয়ার আশা করতে পারি না। এসব রাজনীতিবিদদের না আছে বন্যা সংক্রান্ত সমস্যা উৎস থেকে প্রতিরোধ করার মতো সাহস, অর্থাৎ চিরতরে ভারতের ধৃষ্টতার অবসান ঘটানো; কিংবা না আছে দুর্যোগ, জলাবদ্ধতার মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি যথাযথ বন্যা ও জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করতেও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যদিওবা আমাদের দক্ষ পরিকল্পনাকারী, প্রকৌশলী ও লোকবলের কখনই অভাব ছিল না, তথাপি একটি নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অভাবে তাদেরকে কাজে লাগানো যায়নি। ব্যর্থ গণতন্ত্রের দুর্নীতি এত বছরেও বাংলাদেশে একটি কার্যকর বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়নি, না পেরেছে শহর হতে জলাবদ্ধতার নিরসন। তাই এখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে এই ব্যর্থ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূলোৎপাটন, যেটা কেবলমাত্র জনগণের কষ্টের প্রতি উদাসীন অযোগ্য ও অসৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্ম দেয়। এ মুহূর্তে জনগণের একমাত্র আশা এবং অবলম্বন হচ্ছে খিলাফত। নবুয়্যতের আদলের খিলাফতের নিষ্ঠাবান ও সাহসী নেতৃত্বের অধীনে শক্তিশালী ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাই’ এদেশের জনগণের বহুল আকাঙ্খিত পরিবর্তন আনয়ন করতে সক্ষম হবে। আসন্ন দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্’ই পুনরায় এমন ধরনের নেতৃত্বের জন্ম দেবে যারা পূর্ববর্তী খলীফাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, যেসব খলীফারা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’কে এবং তাদের জনগণের জবাবদিহিতাকে ভয় করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
“ইমাম (খলীফা) জনগণের উপর দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহীহ বুখারি)