নাম উকবা, ডাক নাম আবু আমর, পিতা আমের। বনু জুহানা গোত্রের লোক। হযরত রাসূলে কারীম সা: যখন মদীনায় আসেন, উকবা তখন মদীনা থেকে বহু দূরে ছাগলের রাখালী করছিলেন। রাসূল সা: এর আগমন সংবাদ মদীনার অলি গলি ও তার আশ পাশের মরু ভূমি ও মরুদ্যানে ছড়িয়ে পড়ে। রাসূল সা: এর সাথে উকবার প্রথম সাক্ষাত কিভাবে ঘটে তা উকবার মুখেই শোনা যাক:
‘রাসূল সা: যখন মদীনায় এলেন আমি তখন মদীনার বাইরে আমার ছাগল চড়াচ্ছিলাম। খবরটি আমার কাছে পৌঁছার পর আমি সব কিছু ছেড়ে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য চলে আসি। রাসূল সা: এর খিদমতে হাজির হয়ে আমি আরজ করলাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাকে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করাবেন কি? তিনি আমার পরিচয় জানতে জিজ্ঞেস করেন: তুমি কে? বললাম: উকবা ইবন আমের আল জুহানী। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: মুরুবাসী বেদুঈনদের বাইয়াত অথবা হিজরাতের বাইয়াত এর কোনটি তোমার অধিক প্রিয়? আমি বললাম: হিজরাতের বাইয়াত। অত:পর তিনি আমাকে সেই বিষয়ের উপর বাইয়াত করালেন যার উপর মুহাজিরদের বাইয়াত করাতেন। রাসূলুল্লাহর সা: হাতে বাইয়াতের পর আমি এক রাত তার সাথে কাটিয়ে আবার মরূভূমিতে আমার ছাগলের কাছে ফিরে গেলাম।
আমরা ছিলাম বারো জন মুসলমান। আমরা মদীনা থেকে দূরে ছাগল চড়াতাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বললো: একদিন পর পর আমরা যদি রাসূলুল্লাহর সা: কাছে হাজির হয়ে দ্বীনের কথা না শিখি এবং তার উপর যা নাযিল হয় তা না জানি তাহলে আমাদেরে জীবনে কোন কল্যাণ নেই। প্রতিদিন আমাদের মধ্য থেকে একজন পালাক্রমে মদীনায়যাবে এবং তার ছাগল অন্যরা চড়াবে। আমি বললাম: তোমরা পালা করে একজন যাও এবং তার ছাগলগুলির জিম্মাদারি আমি নিলাম। কারও কাছে আমার ছাগলগুলি রেখে মদীনায় যেতে আমি ইচ্ছুক ছিলাম না।
আমার সঙ্গীরা পালা করে মদীনায় রাসূলুল্লাহর সা: দরবারে যেতে লাগলো, আর আমি তাদের ছাগলের পাল চড়াতে লাগলাম। তারা ফিরে এলে তারা যা কিছু শুনে বা শিখে আসতো আমি তাদের কাছে শুনে তা শিখে নিতাম। এভাবে কিছুদিন চললো। এর মধ্যে আমার মনে এ অনুভূতি জাগলো: তোমার সর্বনাশ হোক! ছাগলের জন্য তুমি রাসুলুল্লাহর সা: সুহবত বা সাহচর্য এবং সরাসরি তার মুখ নি:সৃত বাণী শোনার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছো! এই অনুভূতির পর আমি আমার ছাগল ফেলে রাসুলুল্লাহর সা: পাশে মসজিদে নববীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে মদীনার দিকে চললাম।
আমি মদীনায় পৌঁছলাম। মসজিদে নববীতে হাজির হয়ে সর্ব প্রথম শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি বলছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে ওজু করবে সে তার সকল গুনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র হবে যেমনটি সে ছিল তার মা তাকে যেদিন জন্ম দিয়েছিল।’ কথাটি আমার খুবই ভালো লাগলো। উমার ইবনুল খাত্তাব তখন বললেন: তুমি যদি প্রথম কথাটি শুনতে আরও খুশি হতে। আমি তাকে কথাটি পুনরায় বলার জন্য অনুরোধ করলাম। তিনি বললেন; রাসূল সা: বলেছেন: ‘আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরিক না করে কেউ যদি মারা যায় আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের সবগুলি দরযা খুলে দেন। জান্নাতের আটটি দরযা। সে এর যে কোনটি দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।’ এমন সময় রাসূল সা: আমাদের মধ্যে উপস্থিত হলেন। আমি তার সামনাসামনি বসলাম। তিনি আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কয়েকবার এমনটি করলেন। চতুর্থবার আমি আরজ করলাম: হে আল্লাহর নবী, আমার মা বাবা আপনার প্রতি উতসর্গ হোক! আমার দিক থেকে এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কেন? এবার তিনি আমার প্রতি মনোযোগী বলে বললেন: একজন তোমার সর্বাধিক প্রিয় না বারোজন? (হায়াতুস সাহাবা-৩/২১৪-১৫,সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা-৪/১৪৪)।
রাসূলুল্লাহর সাথে উকবা সর্ব প্রথম উহুদে কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়েন। এরপর রাসূলুল্লাহর সা: জীবদ্দশায় সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের (রা) খিলাফতকালে তিনি একজন মুজাহিদ হিসেবে সিরিয়া অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন। দিমাশক জয়ের দিনে তিনি তীর নিক্ষেপে অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। দিমাশক বিজয়ের পর সেনাপতি আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রা) তাকে মদীনায় পাঠান খলীফাকে এ সংবাদ দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তিনি মাত্র আট দিনে এক জুমআ থেকে অন্য জুমআর মধ্যে রাতদিন বিরামহীন চলার পর মদীনায় খলীফার কাছে সংবাদটি পৌঁছান। সিফফীন যুদ্ধে তিনি হযরত আমীর মুআবিয়া (রা) এর পক্ষে অংশ গ্রহণ করেন। মিসর জয়ের পর হযরত মুআবিয়া (রা) তাকে এক সময় তথাকার ওয়ালী বা শাসক নিয়োগ করেন। আবু আমর আল কিন্দী বলেন: মুআবিয়া তাকে মিসরের খারাজ (রাজস্ব) আদায় ও নামাযের ইমামতির দায়িত্ব অর্পণ করেন। পরে যখন তাকে অপসারণের ইচ্ছা করেন, তখন তিনি উকবাকে রোডস্ আক্রমণের নির্দেশ দেন। উকবা তখন রোডসের পথে অগ্রসর হচ্ছেন তখনই তিনি নিজের স্থলে মাসলামার নিযুক্তির কথা শুনতে পেলেন। তখন তিনি মন্তব্য করেন: দূরে পাঠিয়ে তারপর অপসারণ? এটা হিজরী ৪৭ সনের কথা। বরখাস্তের পর তিনি অভিযান থেকে হাত গুটিয়ে নেন। হযরত উকবার মৃত্যু সন সম্পর্কে মতভেদ আছে। সঠিক বর্ণনামতে হযরত মুআবিয়ার (রা) খিলাফতকালে হিজরী ৫৮ সনে মিসরে ইনতিকাল করেন। তাকে বর্তমান কায়রোর দক্ষিণ দিকে ‘মুয়াত্তাম’ পাহাড়ের পাদদেশে দাফন করা হয়। (আল ইসাবা-৩/৪৮৯) তাজকিরাতুল হুফফাজ-১/৪৩)।
জ্ঞান ও মর্যাদার দিক দিয়ে হযরত উকবা ছিলেন এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, ফারায়েজ ও কাব্য ছিল তার এক বিশেষ স্থান। আল্লামা জাহাবী বলেন, তিনি ছিলেন একাধারে ফকীহ, আল্লামাহ, আল্লাহর কিতাবের ক্বারী, ফারায়েজ শাস্ত্রের তত্বজ্ঞানী, প্রাঞ্জলভাষী ও উঁচু দরের এক কবি।’ (তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/৪৩)।
পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত শিক্ষার প্রতি ছিল তার বিশেষ আগ্রহ। দারুণ আবেগ ও আগ্রহের সাথে তিনি কুরআন পাকের তিলাওয়াত শিক্ষা করতেন। কোন কোন সূরা তিনি খোদ রাসূলুল্লাহর সা: নিকটেই শিখেছেন। একবার তিনি রাসূল সা: এর পায়ের ওপর পড়ে নিবেদন করেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাকে সূরা হুদ ও সূরা ইউসুফ একটু শিখিয়ে দিন। এ প্রবল আগ্রহই তাকে একজন বিখ্যাত ক্বারী বানিয়ে দেয়।
তিনি ছিলেন সুমধুর কন্ঠের অধিকারী। সুললিত কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। গভীর রাতে যখন নিরবতা নেমে আসতো, তিনি হৃদয়গ্রাহী কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করতেন। রাসূল সা: এর সাহাবীরা কান লাগিয়ে সে তিলাওয়াত শুনতেন। আল্লাহর ভয়ে তাদের হৃদয় বিগলিত হয়ে পড়তো এবং চোখ সজল হয়ে উঠতো। খলীফা হযরত উমার (রা) একবার তাকে বলেন: ‘উকবা, আমাদের কিছু কুরআন শুনাও। উকবা তিলাওয়াত শুরু করলেন। সে তিলাওয়াত শুনে উমার (রা) কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন, চোখের পানিতে তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। হযরত উকবা নিজ হাতে পবিত্র কুরআনের একটি সংকলন তৈরী করেন। হিজরী নবম শতক পর্যন্ত মিসরের ‘জামে উকবা ইবন আমের’ নামক মসজিদে এ কপিটি সংরক্ষিত ছিল। কপিটির শেষে লেখা ছিল ‘এটি উকবা ইবন আমের আল জুহানী লিখেছেন।’ এটা ছিল পৃথিবীতে প্রাপ্ত কুরআনের প্রাচীনতম কপি। কিন্তু হতভাগা মুসলিম জাতি আরও অনেক কিছুর মত এই মূল্যবান সম্পদটিও হারিয়েছে। (তাহজীবুত তাহজীব-৭/২৪৩, সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা-৪/১৪৮-৪৯, মুহাজিরিন-২/২৩৬)
রাসূলুল্লাহ সা: এর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি একেবারে পিছিয়ে নন। তার বর্ণিত হাদীসের সর্বমোট সংখ্যা পঞ্চান্ন। তার মধ্যে সাতটি মুত্তাফাক আলাইহি এবং একটি বুখারী ও সাতটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন। বহু বড় বড় সাহাবী দীর্ঘপথ ভ্রমণ করে তার কাছে হাদীস শুনার জন্য আসতেন। হযরত আবু আইউব কেবল একটিমাত্র হাদীস শুনার জন্য মদীনা থেকে মিসরে যান এবং হাদীসটি শুনেই আবার মদীনার দিকে যাত্রা করেন। হিবরুল উম্মাহ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসও (রা) তার নিকট থেকে ইলম হাসিল করেন। তাছাড়া বহু বিখ্যাত তাবেয়ী তার জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করেন। ইবন আসাকির ইবরাহীম ইবন আবদির রহমান ইবন আউফ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: আল্লাহর কসম, মৃত্যুর পূর্বে উমার ইবনুল খাত্তাব লোক পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহর সা: সাহাবী- আবদুল্লাহ ইবন হুজাফা, আবুদ দারদা, আবু যার ও উকবা ইবন আমেরকে বিভিন্ন স্থান থেকে ডেকে এনে বলেন: তোমরা রাসূলুল্লাহ থেকে এত যে হাদীস বর্ণনা কর- এগুলি কী? তারা বললেন: আপনি কি আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করতে নিষেধ করেন? তিনি বললেন: না। তবে তোমরা আমার কাছে থাকবে। যতদিন আমি জীবিত আছি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবে না। উমার যতদিন বেঁচে ছিলেন তাকে ছেড়ে তারা দূরে কোথাও যাননি। (হায়াতুস সাহাবা-৩/২৪০-৪১)
ফিকাহ শাস্ত্রেও হযরত উকবার ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। দ্বীনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত জ্ঞান তথা: খিতাবাহ (বক্তৃতা-ভাষণ), কবিতা ইত্যাদিতে তার ছিল বিরাট দখল। উকবা (রা) যদিও একজন উঁচু দরের সাহাবী ছিলেন, তথাপি দ্বীনী দায়িত্ব পালণে ভীষণ ভয় পেতেন। তিনি এক সময় মিসরে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন, তবে পরে ইমামতি এড়িয়ে চলতেন। আবু আলী হামাদানী বলেন: একবার এক সফরে লোকেরা তাকে বলে, যেহেতু আপনি রাসূলুল্লাহর সা: সাহাবী, আপনি নামায পড়াবেন। বললেন: না। আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি, যদি কোন ব্যক্তি ইমামতি করে এবং সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নামায পড়ায়, ইমাম ও মুকতাদী উভয়ের জন্য সওয়াব আছে। আর যদি কোন ত্রুটি হয় তাহলে ইমামকে জবাবদিহি করতে হবে এবং মুকতাদির কোন দায়-দায়িত্ব নেই।
হযরত রাসূলে কারীমের সা: সেবা করা ছিল তার একমাত্র হবি। সফরে, তিনি প্রায়ই রাসূলুল্লাহর সা: খচ্চর ‘আশ শুহবা’র লাগাম ধরে টেনে নেওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন। এই সেবা ও সাহচর্যকালে তিনি দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। তিনি বর্ণনা করেছেন: একবার আমি এক সফরে রাসূলুল্লাহর সা: সঙ্গী ছিলাম। আমি রাসূলুল্লাহর বাহন টেনে নিয়ে চলছি এমন সময় তিনি বললেন: উকবা, আমি কি তোমাকে পাঠযোগ্য দুটি উত্তম সূরার কথা বলবো? আমি আরজ করলাম: বলুন। তিনি বললেন: সূরা দুটি হলো: কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক ও কুল আউযুবি রাব্বিন নাস।
তিনি রাসূলকে সা: এতই সম্মান করতেন যে, তার বাহনের ওপর বসাও বে আদবী বলে মনে করতেন। একবার তিনি সফরে নির্ধারিত খিদমতের দায়িত্ব পালন করছেন, এমন সময় রাসূল সা: সওয়ারী পশুটি থামিয়ে বসিয়ে দেন। সওয়ারীর পিঠ থেকে নেমে এসে তিনি বলেন: উকবা, তুমি বাহনের পিঠে সওয়ার হও। উকবা বললেন: সুবহানাল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার বাহনে সওয়ার হব? রাসূল সা: আবারও নির্দেশ দিলেন। উকবা একই উত্তর দিলেন। অবশেষে বারবার পীড়াপীড়ির পর আদেশ পালনার্থে উকবা বাহনের পিঠে উঠে বসেন, আর রাসূল সা: পশুর লাগাম ধরে টেনে নিয়ে চলতেন। এ কারণে তাকে রাদীফু রাসুলিল্লাহ-(রাসূলুল্লাহর বাহনের পিছনে আরোহণকারী বলে ডাকা হতো)। মানুষের দোষ গোপন করা ছিল উকবার বিশেষ গুণ। কারও কোন দোষ প্রচার করাকে তিনি খুবই নিন্দনীয় মনে করতেন। একবার তার সেক্রেটারী এসে বললো, আমাদের প্রতিবেশী লোকগুলি মদ পান করছে। তিনি বললেন: করতে দাও, কাউকে বলো না। সেক্রেটারী বললো: আমি পুলিশকে খবর দেই। তিনি বললেন: খুবই পরিতাপের বিষয়! এড়িয়ে যাও। আমি রাসূলুল্লাহকে সা: বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কারও কোন দোষ গোপন করলো সে যেন একটি মৃতকে জীবিত করলো। (হায়াতুস সাহাবা-২/৪২৩)।
সামরিক বিদ্যা বিশেষত: তীরন্দাযীর প্রতি ছিল তার বিশেষ আকর্ষণ। এ বিদ্যা অর্জনের জন্য তিনি অন্যদেরকেও উতসাহিত করতেন। একবার খালিদ ইবনুল ওয়ালীদকে ডেকে তিনি বলেন: ‘আমি রাসুলুল্লাহকে সা: বলতে শুনেছি, আল্লাহ একটি তীরের বিনিময়ে তিনজনকে জান্নাত দান করবেন-তীরটির প্রস্তুতকারী, আল্লাহর রাস্তায় তীরটি বহনকারী ও তীরটির নিক্ষেপকারী। তিনি এ কথাও বলেছেন: সকল প্রকার খেলা ধূলার মধ্যে মাত্র তিনটি খেলা জায়েয- তীরন্দাযী, অশ্বারোহন প্রশিক্ষণ এবং নিজ স্ত্রীর সাথে হাসি তামাশা। যে ব্যক্তি তীর নিক্ষেপ বিদ্যা অর্জন করে ভুলে গেছে সে মূলত: একটি বিরাট সম্পদ হারিয়েছে।’ (মুসনাদু ইমাম আহমাদ-৪/১৪৮) তিনি যুদ্ধের বহু অস্ত্র শস্ত্র জমা করেন। মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির খোঁজ নিয়ে দেখা গেল তার ঘরে সত্তরের চেয়ে কিছু বেশি ধনুক রয়েছে। আর সেই ধনুকগুলির সাথে বেশ কিছু তীর ও ফলা। সবগুলিই তিনি আল্লাহর রাস্তায় দান করে যান। (সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা-৪/১৫০-৫১)।
হযরত উকবা (রা) ছিলেন সচ্ছল ব্যক্তি। তার চাকর বাকরও ছিল। তা সত্তেও নিজের সব কাজ নিজ হাতে করতেন।
হযরত উকবা (রা) মিসরে অন্তিম রোগ শয্যায়। এ অবস্থায় সন্তানদের ডেকে এই উপদেশটি দান করেন: ‘আমার সন্তানেরা! আমি তোমাদের তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করছি, ভালো করে স্মরণ রেখ। ১) নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও নিকট থেকে রাসূল সা: এর হাদীস গ্রহণ করো না। ২) আবা (সামনে খোলা ঢিলে ঢালা মোটা জুব্বা) পরলেও কখনও ঋণগ্রস্ত হয়ো না। ৩) তোমরা কবিতা লিখবে না। কারণ তাতে তোমাদের অন্তর কুরআন ছেড়ে সেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (হায়াতুস সাহাবা-৩/২০১)।
মোট কথা, ছাগলের রাখাল হযরত উকবার মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা ছিল রাসূল সা: এর স্বল্পকালীন সাহচর্যে তার সেই প্রতিভার চরম বিকাশ ঘটে। উত্তরকালে তিনি সাহাবাদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ আলেম, শ্রেষ্ঠ কারী, শ্রেষ্ঠ বিজয়ী সেনাপতি ও শ্রেষ্ঠ শাসকে পরিণত হন। যখন তিনি ছাগলের রাখালী ছেড়ে রাসূলুল্লাহর সা: খিদমতে হাজির হন তখন তিনি ঘুনাক্ষরেও এ কথা জানতেন না যে, একদিন তিনি দিমাশক বিজয়ী বাহিনীর অগ্র সৈনিক হবেন এবং দিমাশকের ‘বাবে তুমায়’ তার একটি বাড়ী হবে। যে দিন তিনি মদীনায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন সেদিন তার মনে একবারও এ কথা উদয় হয়নি যে, একদিন তিনি মিসর বিজয়ের অন্যতম নেতা, তথাকার ওয়ালী হবেন এবং কায়রোর ‘মুকাত্তাম’ পাহাড়ে তার একটি বাড়ী হবে। ইসলাম তার সুপ্ত প্রতিভার এমন বিকাশ ঘটায় যে তিনি ছাগলের রাখালী থেকে এত কিছু হন।