নাম শুজা, কুনিয়াত আবু ওয়াহাব এবং পিতা ওয়াহাব। জাহিলী যুগে তার খান্দান বনী আবদে শাࢮস এর হালীফ বা চুক্তিবদ্ধ ছিল। (উসুদুল গাবা-২/৩৮৬)।
যারা ইসলামের সূচনা পর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন, হযরত শুজা তাদেরই একজন। মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে হাবশা হিজরাতকারী দ্বিতীয় দলটির সাথে হাবশা যান। (আল ইসাবা-৩/১৩৮)।
তাদের হাবশা অবস্থানকালে যখন সেখানে এ গুজব রটে যে মক্কার সকল বাসিন্দা রাসুলুল্লাহর সা: আনুগত্য মেনে নিয়েছে, তখন স্বদেশের ভালোবাসা অনেকের মত তাকেও মক্কায় টেনে নিয়ে আসে। মক্কায় এসে দেখেন খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কিছুদিন মক্কায় অবস্থানের পর নিরাপদে মদীনায় হিজরাত করেন। এখানে হযরত আউসের সাথে তার দ্বীনী ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
বদর, উহুদ সহ সকল প্রসিদ্ধ যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন। হিজরী ৮ম সনের রবীউল আউয়াল মাসে বনী হাওয়াযিনের একটি দলকে নির্মূলের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়। এই বনী হাওয়াযিন মদীনা থেকে পাঁচ দিনের দুরত্বে ‘রসসী’ নামক স্থানে তাবু স্থাপন করেছিল। হযরত শুজা চব্বিশজন দু:সাহসী মুজাহিদকে সংগে করে দিনের বেলা লুকিয়ে লুকিয়ে এবং রাতের বেলা সদম্ভে ভ্রমণ করতে করতে একদিন হঠাত সেখানে উপস্থিত হলেন। শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে তাদের বিপুল সংখ্যক উট, ভেড়া, বকরী ছিনিয়ে মদীনায় নিয়ে আসেন। গানীমতের মালের পরিমাণ এর দ্বারা অনুমান করা যায় যে, প্রত্যেক মুজাহিদের ভাগে অন্যান্য জিনিসপত্র ছাড়াও পনেরটি উট পড়েছিল।
হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর রাসূল সা: ততকালীন বিশ্বের অধিকাংশ রাজা বাদশাদের নিকট পত্র সহ দূত পাঠান। রাসূল সা: শুজাকে একটি পত্র সহ হারেস ইবন আবী শিমর আল গাসসানী মতান্তরে মুনজির ইবন হারেস ইবন আবী শিমর আল গাসসানীর নিকট পাঠান। (হায়াতুস সাহাবা-১/১২৭)
এই হারেস ছিল দিমাশকের নিকটবর্তী ‘গুতা’ স্থানের শাসক। রাসূল সা: তাকে যে পত্রটি লেখেন তার প্রথম কয়েকটি বাক্য নিম্নরূপ: “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে হারেস ইবন আবী শিমরের প্রতি। যারা হিদায়াতের অনুসরণ করে, ঈমান আনে এবং সত্য বলে জানে তাদের উপর সালাম। আমি আপনাকে সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছি যিনি এক, যার কোন শরীক নেই। এমতাবস্থায় আপনার রাজত্ব বহাল থাকবে।”
হারেস এ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। তবে তার উযীর ‘মুরাই’ ইসলাম গ্রহণ করেন এবং গোপনে হযরত শুজার মাধ্যমে রাসুল সা: খিদমতে সালাম পেশ করেন।
ইমাম যুহরী বর্ণিত একটি হাদীসে জানা যায়, শুজা ইবন ওয়াহাব ছিলেন পারস্যের কিসরার দরবারে প্রেরিত রাসূল সা: দূত। রাসূলুল্লাহর সা: চিঠিটি তিনিই কিসরার হাতে অপর্ণ করেন। (হায়াতুস সাহাবা-১/১৩৬)
প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের খিলাফতকালে ভন্ড নবী মুসাইলামা আল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে ইয়ামামার প্রান্তরে হযরত শুজা শাহাদত বরণ করেন। (আল ইসাবা-২/১৩৮)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল চল্লিশ বছরের কিছু বেশি।