মিহরায ইবন নাদলা (রা)

নাম মিহরায, কুনিয়াত বা ডাকনাম আবু ফাদলাহ। তবে প্রধানত: আখরাম আল আসাদী উপাধিতে প্রসিদ্ধ ছিলেন।

তিনি কখন কিভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে তিনি প্রথম পর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন বলে সীরাত বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করার পর আবদুল আশহাল গোত্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং হযরত আম্মার ইবন হাযামের (রা) সাথে তার মুওয়াখাত বা ভাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

মূসা ইবন উকবা, ইবন ইসহাক ও অন্যরা তাকে বদরী সাহাবীদের তালিকায় উল্লেখ করেছেন।

ওয়াকিদী আয়্যূব ইবন নুমান থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন: বদরে মুসয়াব ইবন উমাইরের ভাই আবু আযীয ইবন উমাইর বন্দী হয়। তাকে মিহরায ইবন নাদলার হিফাজতে দেওয়া হয়। মুসয়াব মুহরিযকে বলেন: ওর হাতটি একটু কষে বাঁধ। মক্কায় ওর একজন সম্পদশালী মা আছে। আবু আযীয বলে: ভাই, আমার প্রতি আপনার এমন নির্দেশ? মুসয়াব বললেন: তোমার স্থলে মুহরিয আমার ভাই। আবু আযীযের মুক্তির জন্য তার মা চার হাজার দিরহাম পাঠায়। (হায়াতুস সাহাবা-২/৩১৫)।

উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধেও তিনি জীবনবাজি রেখে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তার জীবনের সর্বশেষ ও সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হলো ‘জী কারাদের’ যুদ্ধ। হিজরী ৬ষ্ঠ সনে বনু ফাযারাহ মদীনার উপকন্ঠে একটি চারণক্ষেত্রে হামলা চালায় এবং রাখালদের হত্যা করে রাসূল সা: উটগুলি লুট করে নিয়ে যায়। হযরত সালামা ইবনুল আকওয়া ঘটনাস্থলের নিকটেই ছিলেন। তিনি রাসূল সা: এর দাস রাবাহকে মতান্তরে আবদুর রহমান ইবন আউফের একটি দাসকে মদীনায় পাঠান খবর দেওয়ার জন্য। আর এ দিকে তিনি নিজে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে ‘ইয়া সাবাহাহ’ (বিপদের সতর্ক ধ্বনি) বলে এমন জোরে ধ্বনি দেন যে, মদীনার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি দীর্ঘক্ষণ একাকী তীর ও পাথরের সাহায্যে এই ডাকাত দলের মুকাবিলা করতে থাকেন। এর মধ্যে গাছের ফাঁকে রাসুল সা: এর বাহিনী ছুটে আসতে দেখা গেল। সেই বাহিনীর পুরোভাগে ছিলেন হযরত মুহরিয ইবন নাদলা। আর তাঁর পেছনে ছিলেন হযরত আবু কাতাদাহ আল আনসারী ও মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা)। হযরত সালামা ইবন আকওয়া হযরত আখরাম বা মিহরাযের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে বললেন: আখরাম, আগে অগ্রসর হবে না। আমার ভয় হচ্ছে, ডাকাতরা তোমাকে ঘিরে ফেলবে, রাসূল সা: ও তার সাহাবীদের সাথে তোমাকে মিলিত হতে দেবে না। তিনি জবাব দিলেন: সালামা, তুমি যদি আল্লাহ এবং কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক, আর তোমার যদি এ কথা জানা থাকে যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য, তাহলে আমার শাহাদাত লাভের পথে প্রতিবন্ধক হয়ো না। কথাটি তিনি এমন আবেগের সাথে উচ্চারণ করেন যে, হযরত সালামা (রা) তার ঘোড়ার লাগামটি ছেড়ে দেন। তিনি ঘোড়া ছুটিয়ে আবদুর রহমান ইবন ফারাযীর সামনে গিয়ে পথ রুখ করে দাড়ান। তিনি আবদুর রহমানের উপর তরবারির এমন শক্ত আঘাত হানেন যে, তার ঘোড়াটি কেটে দু টুকরো হয়ে যায়। এদিকে আব্দুর রহমানের নিক্ষিপ্ত বর্শাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো না। হযরত মিহরাযের শহীদ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। আর আবদুর রহমান লাফিয়ে মিহরাযের ঘোড়ার উপর চেড়ে বসে। পেছনেই ছিলেন হযরত আবু কাতাদাহ। তিনি সাথে সাথে আব্দুর রহমানের উপর তীব্র আঘাত হানেন। এভাবে কাতাদাহ (রা) আ: রহমানকে জাহান্নামে পাঠিয়ে বন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেন। শাহাদাতের সময় হযরত মিহরাযের বয়স হয়েছিল ৩৭ অথবা ৩৮ বছর।

উপরে উল্লেখিত ঘটনা তাঁর ঈমানী দৃঢ়তা ও শাহাদাতের তীব্র আকাংখার স্পষ্ট প্রমাণ। শাহাদাতের কয়েকদিন পূর্বে তিনি স্বপ্নে দেখেন, আকাশের দরযা সমূহ তার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি সর্বোচ্চ জগতে ভ্রমণ করতে করতে সিদরাতুল মুনতাহা পৌঁছে গেছেন। সেখানে তাকে বলা হয়, এটাই তোমার আবাসস্থল।

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) ছিলেন স্বপ্নের তাবীর বা তাতপর্য ব্যাখ্যার সুবিজ্ঞ। হযরত মিহরায পরের দিন তার নিকট স্বপ্নটি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: আখরাম, তোমার শাহাদাতের সুসংবাদ। এ ঘটনার কিছুদিন পর ‘জী কারাদ’ অভিযানে তার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয় এবং তিনি তার স্থায়ী আবাসস্থল ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পৌঁছে যান।

শুজা ইবন ওয়াহাব (রা)

শুকরান সালেহ (রা)

Leave a Reply