চতুর্থ যুক্তি ও এর খণ্ডন

তাদের মতে কুরআন একবারে নাযিল হয়নি বরং ধীরে ধীরে খণ্ড খণ্ড আকারে এসেছে যা থেকে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের বিষয়টি  প্রমাণিত  হয়। এর জবাব হচ্ছে আল্লাহ বিভিন্ন পরিস্থিতি ও ঘটনা অনুযায়ী কুরআন নাযিল করতেন যাতে মুমিনদের অন্তর শক্তিশালী হয়। প্রথমে ঈমানের বিষয়ে নাযিল হতো। এজন্য প্রথমে জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা হয়েছিল এবং পরে হালাম-হারামের আলোচনা এসেছিল। কিন্তু এর মানে এই না যে নাযিলকৃত বিষয়ের অংশবিশেষ গ্রহণ করতে হবে এবং বাকি বিষয় ছেড়ে দিতে হবে। যেসব বিষয় নাযিল হয়েছিল তার পুরোটার ব্যাপারেই মুসলিমরা দায়িত্বশীল ছিল তখন এবং এর বাইরে তাদের কোনো দায়িত্ব ছিল না। যখন শুধুমাত্র ঈমানের বিষয়ে নাযিল হয়েছিল কিন্তু কোনো হুকুম নাযিল হয়নি তখন শর’ঈ দলীলের মাধ্যমে আসা বিস্তারিত বিবরণের পুরো ইসলামের ব্যাপারেই মুসলিমরা দায়িত্বশীল ছিল। সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্র থাকুক বা না থাকুক যেকোনো পরিস্থিতিতেই ব্যক্তিগত শর’ঈ হুকুমের ব্যাপারে মুসলিমরা দায়িত্বশীল থাকে। যেসব শর’ঈ হুকুম ইসলামী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত সেগুলো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। অতএব শর’ঈ দলীলের বিস্তারিত নির্দেশনাই মুসলিমদের কর্মকাণ্ডকে নির্ধারণ করে, অন্যকিছু না। সুতরাং, পিছনের দিকে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের হাতে আর নেই।

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন বলতে কী বুঝায়? এতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এর পক্ষে কী যুক্তি রয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণের পর এবার আমরা চিন্তার শরঈ প্রক্রিয়া অনুযায়ী সঠিক শরঈ মতের ব্যাখ্যা দিব।

আমরা সঠিক মতের কাছাকাছি কোনো মতের ব্যাপারে বলছি না  বরং সঠিক মতের ব্যাপারেই বলছি, কারণ ক্রমান্বয়ে ইসলাম বাস্তবায়নের ধারণাটি শরীআ’হর মধ্যে নেই এবং ভুলভাবে একে শরীআ’হতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগও নেই। ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন এবং এটি একটি শর’ঈ পদ্ধতি কিনা এর সঙ্গে এই আলোচনাটি যতটুকু সম্পর্কিত তার চাইতে বেশী সম্পর্কিত চিন্তার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে যাকে শরীআহ কোনোভাবেই অনুমোদন করে না।

কারণ, ইসলামের একটি প্রকৃতি আছে যা অন্যসব কিছু থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। ওহীর অনুসরণের উপরেই ইসলামের প্রকৃতি পুরোপুরি নির্ভরশীল, অন্যদিকে মানুষের উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতার উপরে মানবরচিত ব্যবস্থা পুরোপুরি নির্ভরশীল এবং এই উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতা যত শক্তিশালীই হোক না কেন মানুষের সমস্যার সঠিক সমাধান দেওয়ার জন্য তা অপর্যাপ্ত।

যখন মুসলিমরা শরীআ’হর আনুগত্য করে তখন আনুগত্যের ভিত্তি হিসেবে আল্লাহর উপর ঈমানকে মেনে নিতে হবে, নতুবা তাদের আনুগত্য গ্রহণযোগ্য হবে না। যখন সে অন্যদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করে তখন তার এই আহ্বানের ভিত্তি হতে হবে আল্লাহর উপরে ঈমান নতুবা তার আহ্বান গ্রহণযোগ্য হবে না। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ঈমানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তারপরে সঠিক আনুগত্যের সঙ্গে।

মুসলিমরা যদি সত্য ও সঠিক পথে  নিজেদেরকে এবং ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে এসবের আধ্যাত্মিক ভিত্তি ঊপলদ্ধি করতে হবে, যার ঊপায় হচ্ছে প্রথমে একে প্রতিষ্ঠিত করা এবং অতঃপর এর পরিচর্যা করা। তখন ইসলামের আনুগত্য করা তার জন্য সহজতর হবে চাই তা বাস্তবতা, স্বভাব বা লোকজনের ইচ্ছার অনুকূলে হোক অথবা প্রতিকূলে। আধ্যাত্মিক ভিত্তিকে গ্রহণ না করলে মুসলিমরা গুনাহগার হবে যদিও বা তা কুফরী না হয়। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক ভিত্তি আছে যা হচ্ছে আল্লাহর উপরে ঈমান এবং এ থেকে এটা বোঝা যায় না কোনো হুকুম সত্যের কতটুকু নিকটবর্তী অথবা কতটুকু দূরবর্তী। বরং কোনো হুকুমকে যদি আমরা এই ভিত্তির আলোকে বিবেচনা করি তাহলে বুঝতে পারব তা এই ভিত্তির কতটুকু নিকটবর্তী অথবা দূরবর্তী।

যারা এই ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলে এবার তাদেরকে আমরা কিছু প্রশ্ন করতে চাই; এই আহবানের আধ্যাত্মিক ভিত্তি কি? এর পিছনে আল্লাহর নির্দেশ কোথায় বিদ্যমান? রাসূল (সা.) কখন এই বিষয়টিকে গ্রহণ করেছেন যদিও তাঁর (সা.) মক্কা বা মদিনায় এর প্রয়োজন ছিল ।

নুসরাহ খোঁজার সময় রাসূল (সা.) কি বনি আমর বিন সা’সা গোত্রকে বলেননি, “বিষয়টি (কতৃর্ত্ব) আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।” [সীরাতে ইবনে হিশাম] অথচ সে সময় দাওয়াতের জন্য সাহায্য তাঁর (সা.) জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। তারা রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর নিজেদের হাতে কর্তৃত্ব চেয়েছিল। তখন কি তিনি পারতেন না তাদের অনুরোধকে মেনে নিতে এবং পরবর্তীতে ঈমান আনার পরে তাদের এই অনুরোধকে পরিবর্তন করে দিতে? এটাই কি সত্য দাওয়াত ও আল্লাহর হুকুম ছিলনা যার ফলে কোনোরকম তোষামোদ বা আপোষ ছাড়াই রাসূল (সা.) সততার সঙ্গে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন, যাতে যারা থাকে তার যেন স্পষ্ট প্রমাণ পেয়ে টিকে থাকে আর যারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে তারা যেন স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়?

চাচা আবু তালিব যখন দাওয়াতি কাজে আপোষ করতে বললেন এবং তার কাঁধে অসহনীয় বোঝা না চাপাতে বললেন তখন কি রাসূল (সা.) বলেননি যে; “আল্লাহর শপথ, চাচা! যদি তারা আমার ডানহাতে সূর্য ও বামহাতে চন্দ্র এনে দেয় যাতে আমি বিষয়টি ছেড়ে দেই তবুও আমি ক্ষান্ত হব না যতক্ষণ না আল্লাহ একে বিজয়ী করেন অথবা একাজ করতে গিয়ে আমার মৃত্যু হয়।” [সিরাতে ইবনে হিশাম] এই দলিল থেকে দেখা যাচ্ছে রাসূল (সা.) ন্যূনতম পরিমাণ আপোষও করেননি এবং তিনি দাওয়াতের জন্য সবোর্ত্তম উদাহরণ রেখে গেছেন। তিনি (সা.) কোনোরকম আপোষ বা তোষামোদ করেননি, তাদের সঙ্গে তাল মিলাননি, বিনা আপত্তিতে প্রার্থনা করেননি। বরং তার দাওয়াত ছিল প্রকাশ্য ও সাহসিকতাপূর্ণ কারণ এর ফলে সত্য চিন্তার জয় হবে এবং মিথ্যা পরাজিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কি মুসলিমদেরকে সেই স্থান থেকে হিজরত করতে নির্দেশ দেননি যেখানে তারা তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বাধ্যতামূলক নির্দেশ মানতে পারছিল না? তিনি কি সেখানে থাকতে তাদেরকে নিষেধ করেননি যখন তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“যারা নিজেদের অনিষ্ট করে (কারণ হিজরত বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও তারা কাফিরদের মধ্যেই বসবাস করছিল) ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে: এ ভূখণ্ডে আমরা অসহায় অবস্থায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলে: আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিলনা যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে?”
(আল কুরআন ৪:৯৭)

এমনকোনো ভূখণ্ড যেখানে মুসলিমরা তাদের দ্বীন কায়েম করতে সক্ষম না সেখানে থাকার উপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত একটি ইজমা বর্ণনা করেছেন ইবনে কাছির।

রাসূল (সা.) কি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” দিয়েই তাঁর দাওয়াতের সূচনা করেননি এবং লোকজনকে এর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করেননি? কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই এটি ছিল তাঁর (সা.) শেষ বক্তব্যও। তিনি কি শুরুতে অল্প কিছু হাল্কা কথা দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং ক্রমান্বয়ে তা বর্ধিত করেছেন? নাকি এটাই ছিল তাঁর (সা) প্রথম এবং শেষ আহবান।  

যাকাত প্রদান যারা বন্ধ করে দিয়েছিল আবু বকর (রা.) কি কোনোরকম দেরি করা ছাড়া অথবা তাদেরকে সন্তুষ্ট করা ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেননি? তখন তিনি সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেছেন:

“আল্লাহর কসম, রাসূল (সা.)-কে তারা যা দিত যদি তার চাইতে একটা উটের রশিও আমাকে কম দেয় তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।” তখন এভাবেই তিনি সাড়া দিয়েছিলেন যদিও মুসলিমরা সেসময় মুরতাদ হয়ে যাওয়া এবং বিদ্রোহের সূচনা করার মতো কর্মকাণ্ডের ব্যাপকতা দেখতে পাচ্ছিল।

প্রথম যুগের যেসব মুসলিম দাওয়াতি কাজ করতেন তারা কি কখনো এই ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়নের ব্যাপারে কিছু বলেছিলেন? তারা কি এই চিন্তাটিকে সেসব ভূখণ্ডে বাস্তবায়ন করেছিলেন যেগুলো বিজিত হয়েছিল এবং দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে রূপান্তরিত হয়েছিল? প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ ইসলামে নতুন দাখিল হওয়া লোকজনের পরিস্থিতিকে বিবেচনা করেননি এবং তাদেরকে মদ্যপান করার সুযোগ দেননি, ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি যতদিনে তারা মদ্য না করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সুদ খেতে এবং নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনেরও সুযোগ দেননি। বরং তারা ইসলামে পুরোপুরি প্রবেশ করেছিলেন এবং সুদ, ব্যভিচার, মদ্যপান ও অন্যসবকিছু যেগুলোর ব্যাপরে আল্লাহ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন সেগুলো থেকে বিরত ছিলেন। অনুরূপভাবে অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও মুসলিমরা সমস্ত শর’ঈ হুকুম বাস্তবায়ন করেছিলেন সেগুলো আলাদা ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে হোক, সামষ্টিকভাবে হোক, তাদের নিজস্ব বিষয়াদিতে হোক অথবা তাদের অংশবিশেষ আদয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে যায় এমনক্ষেত্রেই হোক।

ইসলামি ফিকহের প্রকৃত বইসমূহে কি এই বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে? আমাদের প্রাথমিক দিক্কার নির্ভরযোগ্য ফকিহ ও মুজতাহিদগণ কি ক্রমান্বয়িকতার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেছেন, যদিও আমরা জানি যে, তারা শরিআ’হর কুল্লিয়াত (সামগ্রিকতা) ও জুযিয়াত (শাখা) নিয়ে বিস্তারিত অলোচনা করেছেন?

শরীআ’হ সামগ্রিকভাবে এই বিষয়ের নির্দেশনা দেয় যে দাওয়াতের বাধ্যবাধকতা সততার সঙ্গে আদায় করতে হবে এবং সরলপথের উপরে থাকতে হবে;

“সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনো বক্রতা রাখেননি।”
(আল-কুরআন ১৮:১)

আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কাফিররা চায় আমরা আপোষ করি এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছাই। তারা চায় আমরা সত্যকে পরিত্যাগ করি এবং প্রকৃত সমাধানের এক চতুর্থাংশ অথবা অর্ধেক গ্রহণ করি। তারা চেষ্টা করে যাতে আমরা কুফরি কর্মকাণ্ডের সূচনা করি। এ ব্যাপারে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন: 

“আহলে কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলিম হওয়ার পর তোমাদেরকে কোনোরকম কাফির বানিয়ে দেয় ……।
(আল-কুরআন ২:১০৯)

এবং শেষে চেষ্টা করবে তাদের আইনকানুন গ্রহণ করাতে। এ ব্যাপারে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“তারা চায় যদি আপনি নমনীয় হন, তবে তারাও নমনীয় হবে।”
(আল-কুরআন ৬৮:৯)

“অতএব আপনি মিথ্যারোপকারীদের আনুগত্য করবে না।”
(আল-কুরআন ৬৮:৮)

পথভ্রষ্ট লোকদের প্রতি ঝুঁকে পড়ার ব্যাপারে আমাদের রব আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন:

“আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু নেই, আর কোথাও সাহায্যও পাবে না।”
(আল কুরআন ১১:১১৩)

প্রকৃত ঈমানের দিকে সঠিক দাওয়াত মুসলিমদের আনুগত্যকে পূর্ণতাদান করে যদিও সে ইসলামে নতুন দাখিল হয় এবং এর আনুগত্য করে থাকে। দাওয়াত বহনকারী হিসেবে আমাদের উপরে এটা বাধ্যতামূলক যে আমরা নিজেদের অন্তরে ঈমানকে প্রোথিত করব এবং নিজেদেরকে এর জন্য উৎসর্গ করব যতক্ষণনা সবোর্ত্তম আনুগত্য ও তাকওয়ার সঙ্গে তা ফল দিতে শুরু করবে। ইসলামি রাষ্ট্র যখন প্রতিষ্ঠিত হবে তখন অবশ্যই তা এমনসব লোকদের হাতে হবে না যার ইসলামি ধারণাশূন্য ও পাশ্চাত্যের ধারণায় পূর্ণ। এটি এমনসব লোকদের দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত হবে না যাদের মধ্যে দাওয়াতের কোনো প্রতিফলন হয়নি, দাওয়াত তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারেনি এবং তারা একে গ্রহণ করেনি। বরং পূর্বে আমরা যা বলেছি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে সাধারণ গণজাগরণের মাধ্যমে সৃষ্ট জনমতের উপর ভিত্তি করে যা ইসলামের ধারণা এবং এর দ্বারা শাসিত হওয়ার ধারণাকে গ্রহণ করবে। মানুষের অন্তর ও মনকে ইসলামের কাছে টানার অজুহাতে ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন ধারণাকে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই, আর না আছে মানবীয় দুর্বলতার কাছে মাথানত করার অথবা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার, কারণ আল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মানুষের অন্তর ও মন এবং পরিস্থিতিকে ইসলাম অনুযায়ী পরিবর্তন করার জন্য।

যদি আমরা কুরআনের দিকে ফিরে যাই এবং এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করি তাহলে দেখতে পাব এতে সেসব নির্দেশ দেওয়া আছে তা চূড়ান্ত এবং ক্রমান্বয়িকতার ধারণাটি পাশ্চাত্যের বিজাতীয় চিন্তাসমূহ থেকে তথাকথিত উলেমাদের দ্বারা মিথ্যা এবং ভ্রান্ততার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে।

যখনই কোনো আয়াত নাযিল হতো তখনই রাসূল (সা.) এবং তাঁর (সা.) সঙ্গের মুসলিমগণ কোনোরকম বিলম্ব না করে তা বাস্তবায়নের জন্য ছুটতেন। যেকোনো নাযিলকৃত হুকুমের বাস্তবায়ন কেবল এজন্য বাধ্যতামূলক ছিল যে তা নাযিল হয়েছে। যখন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) এই আয়াতটি নাযিল করলেন;

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”
(আল—কুরআন ৫:৩)

তখনই মুসলিমরা পুরো ইসলামের বাস্তবায়নের জন্য বাধ্য হয়ে পড়ল, তা আক্বিদা, ইবাদাত, আখলাক, মুআমালাতের ক্ষেত্রে হোক অথবা বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতি, সামাজিক ব্যবস্থা অথবা পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত হুকুমের ক্ষেত্রে হোক অথবা সন্ধি ও যুদ্ধের সময়েই হোকনা কেন।

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন,

“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”
(আল কুরআন ৫৯:৭)

অর্থাৎ রাসূল (সা.) যেসব বিষয় নিয়ে এসেছেন সেগুলো গ্রহণ করতে ও সে অনুযায়ী আমল করতে এবং তিনি (সা.) যেসব বিষয়কে নিষেধ করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকতে ও দূরত্ব বজায় রাখতে। কারণ এই আয়াতে ‘মা’ শব্দটি আম (সাধারণ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে সমস্ত ফরযকে বাধ্যতামূলকভাবে আদায় এবং সমস্ত হারাম থেকে বিরত থাকার ও দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি এতে অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের শেষদিকে উপস্থাপিত ক্বারিনা (নির্দেশনার)-এর ফলে আয়াতে উল্লিখিত বিষয়ের গ্রহণ বা বর্জন আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক, কারণ এই ক্বারিনাতে তাকওয়া অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আয়াত অনুযায়ী যে কাজ করবে না তার জন্য ভয়াবহ শাস্তির সতর্কবাণী রয়েছে।

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন;

“আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক বিষয়াদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছন, সেই অনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন যেন তারা আপনাকে এমনকোনো নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন।”
(আল কুরআন ৫:৪৯)

এই আয়াতটি রাসূল (সা.) ও তাঁর পরবর্তী মুসলিমগণকে আল্লাহর নাযিলকৃত সমস্ত হুকুম অনুযায়ী শাসন করতে  চূড়ান্ত নির্দেশ দিচ্ছে, তা আদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে হোক অথবা নিষেধ সংক্রান্ত বিষয়ে। এটি রাসূল (সা.) ও তাঁর (সা.) পরবর্তী মুসলিমদেরকে লোকজনের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ এবং তাদের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ থেকে বিরত থাকারও নির্দেশ দিচ্ছে।

পাশাপাশি এটি রাসূল (সা.) ও তাঁর (সা.) পরবর্তী মুসলিমদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছে আল্লাহর নাযিলকৃত কিছু বিষয়ের বাস্তবায়ন থেকে লোকজন তাদেরকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,

“যারা আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী শাসন করেনা তারাই কাফির।”
(আল-কুরআন ৫:৪৪)

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন করে না তারাই যালিম।”
(আল-কুরআন ৫:৪৫)

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:

“যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন করে না তারাই ফাসিক।”
(আল-কুরআন ৫:৪৫)

আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী শাসন করেনা তাদেরকে এসব আয়াতে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) কাফির, যালিম ও ফাসিক সাব্যস্ত করেছেন। কারণ এখানে উল্লিখিত ‘মা’ শব্দটি আম (সাধারণ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ফলে এতে আল্লাহর নাযিলকৃত আদেশ ও নিষেধ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

উপরোক্ত সমস্ত বর্ণনা থেকে কোনোরকম দ্ব্যর্থতা ছাড়া নিশ্চিতভাবেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে কোনোরকম বিলম্ব, গড়িমসি অথবা ক্রমান্বয়িকতা ছাড়া ইসলামের সমস্ত হুকুম বাস্তবায়ন করতে ব্যক্তিগতভাবে, দলীয়ভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিমরা বাধ্য। ব্যক্তি, দল বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসব হুকুম বাস্তবায়ন না করার কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হবে না। 

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন নীতিটি ইসলামের হুকুমের সঙ্গে পুরোপুরিই সাংঘর্ষিক। ব্যক্তি, দল বা রাষ্ট্র হিসেবে যদি আল্লাহর কিছু হুকুম কেউ বাস্তবায়ন করে এবং বাকিগুলো ছেড়ে দেয় তাহলে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে অপরাধী বলে গণ্য হবে।

কোনো ওয়াজিব বিষয় ওয়াজিবই থাকে যার উপরে আমল করা বাধ্যতামূলক এবং কোনো হারাম বিষয় হারামই থাকে যা থেকে দূরে থাকা বাধ্যতামূলক। যখন সাকিফের প্রতিনিধি রাসূল (সা.)-কে অনুরোধ করেছিল তিন বছর পর্যন্ত আল-লাত এর মূর্তি না ভাঙতে অথবা ইসলাম গ্রহণের বিনিময়ে সালাত আদায় করা থেকে অব্যাহতি দিতে। তিনি (সা.) তাদের এসব প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোনোরকম বিলম্ব ছাড়াই মূর্তিগুলো ভাঙতে এবং সালাত আদায় করতে তিনি জোর দিলেন।

যেসব শাসক ইসলামের হুকুম বাস্তবায়ন করেনা অথবা যেসব শাসক সেগুলো থেকে অল্পকিছু বাস্তবায়ন করে আল্লাহ তাদেরকে কাফির আখ্যা দিয়েছেন। এই বিষয়টি তখন প্রযোজ্য যখন সে এগুলোর উপযুক্ততায় বিশ্বাস করেনা। উপযুক্ততায় বিশ্বাস করে ইসলামের সমস্ত হুকুম বাস্তবায়ন করে না অথবা কিছু হুকুম বাস্তবায়ন করে তাহলে সে যালিম বা ফাসিক বলে গণ্য হবে।  

যদি কোনো শাসক প্রকাশ্য কুফরে লিপ্ত (যার ব্যাপারে আল্লাহর তরফ থেকে আমাদের কাছে বুরহান স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে) তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এবং তরবারি উন্মুক্ত করাকে রাসূল (সা.) আমাদের জন্য  বাধ্যতামূলক করেছেন। অর্থাৎ তারা যদি কুফরি আইন দিয়ে শাসন করে এবং এগুলোর কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না থাকে তাহলে এসব আইন অল্পসংখ্যক নাকি অধিক তা বিবেচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। উবাদাহ বিন সামিত থেকে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণিত হচ্ছে:

“কর্তৃত্বশীল লোকদের সঙ্গে তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাদে জড়াবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে এমন প্রকাশ্য কুফরে লিপ্ত হতে দেখেছ যার ব্যাপারে তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে বুরহান (স্পষ্ট প্রমাণ) আছে।”
[মুসলিম থেকে বর্ণিত]

অতএব ইসলামের হুকুম বাস্তবায়নে কোনোরকম আত্মসন্তুষ্টিতে ভোগা অথবা ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন অবলম্বন করার সুযোগ নেই, কারণ দুটো ওয়াজিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, দুটো হারামের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই এবং দুটো হুকুমের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহর সমস্ত হুকুমই একসমান। এদের সবগুলোকে একসঙ্গেই প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে কোনোরকম বিরতি, বিলম্ব অথবা কোন প্রকার ধাপছাড়া। নাহলে আমাদের উপরে আল্লাহর নিম্নোক্ত কথাটি প্রযোজ্য হবে:

“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং বাকি অংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে তাদের জন্য দুর্গতি ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
(আল-কুরআন ২:৮৫)

কোনো মুসলিম, সে শাসক হোক অথবা কোনো সাধারণ ব্যক্তি, শর’ঈ হুকুম বাস্তবায়িত না করার কোনো অজুহাতই তার কাজে আসবেনা, যদিনা শর’ঈ দলিলসমূহে তার পক্ষে কোনো শর’ঈ রুখসাত (বাধ্যতামূলক কাজ থেকে অব্যাহতির সুযোগ) বিদ্যমান থাকে। প্রকৃত এবং অনুভবযোগ্য দুর্বলতার কারণে সৃষ্ট অক্ষমতা যেমন জবরদস্তি ক্ষেত্রে অর্থাৎ কাউকে জবরদস্তি করে কোনো হারাম করতে বাধ্য করা হলে অথবা যে পরিস্থিতিতে রাসূল (সা.) মদিনায় উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ গাতফান গোত্রকে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন অথবা যখন একজন খলিফা বিদ্রোহীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন অথবা যখন অবরোধকালে মৃত্যুর আশংকা থাকলে হারাম গোশত খাওয়া বৈধ হয়ে যায়, এসব বিষয়কে শর’ঈ রুখসাত হিসেবে গণ্য করা যায়। 

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন অনুসরণ থেকে আমরা যা বুঝতে পারছি, যারা এর পক্ষে কথা বলে তাদের মধ্যে এই ধারণাটির জন্ম হয়েছে পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত চাপের ফলে। এরকম চাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তারা এর পক্ষে প্রমাণ খুঁজতে শুরু করেছে যাতে এই পদ্ধতিতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য তারা যুক্তি ও অনুমোদন প্রদর্শন করতে পারে। অর্থাৎ প্রথমে তাদের মধ্যে ধারণাটির জন্ম হয়েছে এবং পরবর্তীতে ধারণাটিকে সংরক্ষণের জন্য তারা শরিয়াকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছে যাতে এর পক্ষে শর’ঈ দলিল উপস্থাপন করতে পারে। এটই হল বিচ্যুতির সূচনা। যেসব মুসলিম এই ধারণাটিকে গ্রহণ করেছে তাদের প্রতি আমাদের উপদেশ হচ্ছে তারা যেন নিজেদের মধ্যকার দুর্বলতাকে অপসারণ করে। শরীআ’হর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এরূপ হতে হবে যেন তারা আল্লাহর উপরে ভরসা করে এবং তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) উপরে মজবুত ঈমান রাখে যিনি সমস্ত বিষয়কে তাদেরকে দান করেন। তাদেরকে এরূপই হতে হবে যাতে তারা এই ঈমান নিয়ে কঠোর বাস্তবতা ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে। তার এই ঈমান তার মধ্যে উন্নত অনুভূতির সৃষ্টি করবে এবং পরিস্থিতির তোয়াক্কা করবে না। শরীআ’হর সঠিক সীমানাতে অবস্থান এবং প্রকৃত আনুগত্যের মাধ্যমেই লোকজনকে ইসলামের দিকে ডাকতে হবে, কোন ধাপ গ্রহন করা ছাড়াই এই কাজটি সম্পাদন করতে হবে।    

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবান হচ্ছে ইসলাম ভিন্ন অন্যকিছুর দিকে আহবান, যা হারাম। এর ভিত্তিতে যখন কোনো বিষয়ের দিকে অমুসলিম ও ত্রুটিপূর্ণ মুসলিমদেরকে আহবান করা হয় তারা সেগুলো গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। এই দ্বিধাগ্রস্ততার দায়ভার তাদেরই যারা ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবান করে। কারণ, তাদের কাছে প্রকৃত ইসলামকে উপস্থাপন করা হয়নি এবং এই উপস্থাপনার ভিত্তি ইসলামের আধ্যত্মিক ভিত্তি অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা ও সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহর উপরে ঈমান এবং যে ভিত্তিতে শর’ঈ হুকুম গ্রহণ করা হয় তা থেকে অনেক দূরে। ফলে আল্লাহর হুজ্জাহ (প্রমাণ) তাদের বিরুদ্ধে যায় যারা ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবান করে; তাদের বিরুদ্ধে যায়না যাদেরকে আহবান করা হয়েছে।

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবানের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ ও আধিপত্য বিস্তার যার মাধ্যমে ইসলামের আংশিক বাস্তবায়নের পথ সুগম হয় এবং এক্ষেত্রে তাদের অজুহাত হচ্ছে শরীআ’হর পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নের মতো পর্যাপ্ত সামর্থ্য তাদের নেই। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) আামাদেরকে যা দিয়েছেন সেগুলোর সামনে নতুন কিছু উপস্থাপন না করতে অথবা সেগুলো থেকে বিচ্যুত না হতে আমাদেরকে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধান যিনি দেন, তিনি হচ্ছেন মানুষের রব, সর্বজ্ঞানী, সমস্ত খবরের অধিকারী এবং যিনি জানেন তিনি কি সৃষ্টি করেছেন। ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবানের সময় একজন মুসলিম কীভাবে নিজেকে এই অনুমতি দেয় যে সে আইন প্রণয়নের এই প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে? একজন দাঈর (দাওয়াত বহনকারী) প্রকৃত অবস্থান হচ্ছে সে কেবল সমাধানকে কার্যকর করা ও বহন করার মধ্যেই নিজেকে সীমিত রাখবে এবং একে প্রণয়ন করতে যাবে না । 

ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবান দা’ঈকে একটি নষ্ট চিন্তার পথ প্রদর্শন করে যার ভিত্তিতে যে লোকজনকে আহবান করে। ধাপে ধাপে ইসলামের বাস্তবায়ন পদ্ধতির দিকে আহবানের ফলে কেউ যদি এর দ্বারা প্রভাবিত হয় তাহলে তা তার চিন্তার প্রক্রিয়াকে দূষিত করে দিবে, যা অন্যান্য দূষিত চিন্তার মতোই পরিবর্তন করা জরুরী। যেহেতু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চিন্তার প্রক্রিয়াই শুরুতে আসে সেহেতু চিন্তা পরিবর্তন করার চেয়ে চিন্তার প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ না একটি সাধারণ উপায়ে উম্মাহর চিন্তার প্রক্রিয়াকে আমরা পরিবর্তন করতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত উম্মাহর অবস্থার কোনো নির্ভরযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হবে না। যে দূষিত প্রক্রিয়ায় সে চিন্তা করে এবং লোকজনকে আহবান করে তা প্রতিস্থাপন করে সেখানে চিন্তার সঠিক প্রক্রিয়াকে বসাতে হবে।

Leave a Reply