৭ম অধ্যায়: দলের বিকাশ প্রক্রিয়া (Culture)

উম্মাহর দরকার হচ্ছে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনের, আর পরিবর্তনের জন্য আবশ্যক হল ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কোনো রাজনৈতিক কাঠোমোর মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। সুতরাং কাঠামোটির সঠিক বৈশিষ্ট্য ও গাঠনিক উপাদানগুলোর বিষয়ে এবং পূর্ববর্তী কাঠামোগুলোর সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা অপরিহার্য, যাতে সেসবের ব্যর্থতার কারণ বুঝা সম্ভব হয় এবং তা এড়িয়ে চলা যায়। এজন্য কাঠামোগত দিকটি পর্যবেক্ষন করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই দিকটি কায়দা বা ধরনের (style) অন্তর্গত একটি বিষয়। কায়দা বা ধরনের বিষয়টি মূলত মুসলিমদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কাজের যথার্থতা ও উপযুক্ততা অনুযায়ী তারা তা নির্ধারণ করে। এই বিষয়টি দলীয় কৃষ্টির বা সংস্কৃতির একটি অংশ।

— যে সমাজে মুসলিমরা বাস করে তাতে যেহেতু বিভিন্ন চিন্তা, আবেগ ও ব্যবস্থার মিশ্রণ রয়েছে সেহেতু ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ; এর বাস্তবতা, উপাদান, এতে প্রভাব সৃষ্টিকারী বিষয়সমূহ এবং একে পরিবর্তন করার উপায় নিয়ে কথা বলতে হবে যাতে চিন্তা, আবেগ ও ব্যবস্থার দিক দিয়ে সুসংহত ইসলামী সমাজ নির্মাণ করা যায়।

— যেহেতু ব্যক্তির বাস্তবতা থেকে সমাজের বাস্তবতা ভিন্ন, সেহেতু ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত গাঠনিক বিষয়াদি সমাজের গাঠনিক বিষয়াদি থেকে ভিন্ন। অতএব ব্যক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত শর’ঈ হুকুম সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত শর’ঈ হুকুম থেকে ভিন্ন।

— যেহেতু সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে দলটির কর্মকাণ্ড জড়িত সেহেতু এই বাস্তবতায় কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় চিন্তা ও শরঈ হুকুম দলটিকে  বিস্তারিতভাবে গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি এ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত হুকুমসমূহকে গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে সে ব্যক্তিসাধারণ এবং জনগণকে নির্দেশনা দিবে। গ্রহণকৃত এসব হুকুম তার জন্য সামষ্টিক দায়িত্ব হতে পারে যেগুলোর অবজ্ঞা করার কোনো অজুহাত তার নেই অথবা এগুলো তার ব্যক্তিগত দায়িত্বও হতে পারে, যেগুলোর আনুগত্য করতে দল তাকে আহ্বান করছে যেমন: লেনদেন, ইবাদত এবং নৈতিকতা যেগুলো ইসলামী আক্বীদাহ থেকে উৎসারিত এবং তার দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা।

— মুসলিমদের চিন্তার ব্যবহার যেহেতু বর্তমানে পাশ্চাত্য দ্বারা প্রভাবিত এবং চিন্তার সাহায্যেই তারা স্বার্থ নির্ধারণ করছে সেহেতু রাসূল (সা)-এর সর্বোত্তম অনুসরণ এবং শরীয়াহ’র সবচেয়ে সঠিক আনুগত্যের জন্য চিন্তা ও এর উপাদান নিয়ে আমাদেরকে চিন্তাভাবনা করতে হবে যাতে আক্বীদাহ, শরঈ আহকাম অথবা বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করার ক্ষেত্রে চিন্তা ব্যবহারের সীমা কতটুকু এবং কীভাবে তা ব্যবহার করতে হবে সেটি আমরা জানতে পারি। 

— যেহেতু আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়াদি দিয়ে শাসন এবং দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কিত সেহেতু মক্কায় রাসূল (সা) কীভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং কোন কোন কর্মকাণ্ডের ফলে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে সম্পর্কিত জ্ঞান আমাদেরকে অর্জন করতে হবে। এ জ্ঞান অর্জনের পর আমাদের অবশ্যই তা দ্বারা পরিচলিত হতে হবে। রাসূল (সা)-এর কর্মকাণ্ডকে যথার্থরূপে অনুসরণের জন্য পদ্ধতি সংক্রান্ত হুকুম এবং ধরন ও উপকরণ সম্পর্কিত হুকুমের পার্থক্য আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

— যেহেতু দলের কাজ হচ্ছে আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়াদি দিয়ে পরিচালিত হয় এমন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং বিদ্যমান শাসনব্যবস্থাকে পরিবর্তন করা, সেহেতু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শাসকদের কর্মকাণ্ডকে, শাসকদের বাস্তবতাকে এবং শাসকদের সাথে তাদের মিত্রদের সম্পর্কের প্রকৃতিকে বোঝা আমাদের জন্য অপরিহার্য। শাসকদের কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণকারী পরাশক্তিসমূহের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ এবং তাদের পরিকল্পনাগুলোকে জনসমক্ষে প্রকাশ করাটাও আমাদের জন্য জরুরী।

— যেহেতু মুসলিম ভূখণ্ডসমূহ পাশ্চাত্য ব্যবস্থা বিশেষত পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৃদ্ধিবৃত্তিক ব্যবস্থাসমূহ দ্বারা পরিচালিত সেজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের মতাদর্শ, আক্বীদাহ এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা  চিন্তা ও ব্যবস্থা নিয়ে আমাদেরকে পর্যালোচনা করতে হবে।

— ইসলামের বাস্তবায়ন এবং একে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যেহেতু শরীয়াহ’র উদ্দেশ্য সেহেতু শাসনব্যবস্থা, ইসলামী রাষ্ট্র, এর গঠনতন্ত্র ও প্রকৃতি, এর স্তম্ভসমূহ, সংবিধান এবং ইসলামী রাষ্ট্রে যেসব বিষয় বাস্তবায়িত হবে তার উপরে একটি সাধারণ ধারণা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। আমাদেরকে বিদ্যমান শাসনব্যবস্থাসমূহের গঠনতন্ত্রও পরীক্ষা করতে হবে যাতে এগুলো থেকে নিজেদেরকে আমরা পৃথক করতে পারি এবং তা দ্বারা প্রভাবিত না হই। পাশাপাশি আমাদেরকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন যার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে আছে।

এভাবে দলটিকে এর বিকাশ প্রক্রিয়ার (culture) উপকরণসমূহ (topics) চিহ্নিত করবে এবং যাতে সেগুলো অনুযায়ী কাজ করা যায় এবং জনসাধারনকে এ কাজের প্রতি জরুরীভাবে আহবান করে ইসলামি জীবনব্যবস্থা পুন:প্রচলন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা যায়। খিলাফত রাষ্ট্র ইসলাম দিয়ে মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে শাসন করবে এবং দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে এর বার্তা বিশ্বের নিকট পৌঁছে দিবে। 

Leave a Reply