দাওয়াত হচ্ছে আসক্তি ও উৎসাহ তৈরি করবার বিষয়। একজনকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবার অর্থ হল আপনি যে বিষয়ে একজনকে আহ্বান করছেন সে বিষয়ে ঝোঁক ও প্রবল ইচ্ছা তৈরি করা। সুতরাং ইসলামের দিকে দাওয়াতের অর্থ কেবলমাত্র কথা বলাই নয়, বরং ঝোঁক ও প্রবল ইচ্ছা তৈরি করবার জন্য কথা বলা ও কর্মকান্ড পরিচালনাকেও বুঝায়। অর্থাৎ দাওয়াত কথা বলা ও কর্মকান্ড উভয়কেই বুঝায়। একজন মুসলিম অবশ্যই নিজ জীবনে ইসলামকে ধারণ করবে এবং বাস্তব উদাহরণ দিয়ে লোকদের ইসলামের দিকে আহ্বান করবে এবং সত্য উপলদ্ধি থেকে ইসলামের ব্যাপারে সঠিক চিত্র তুলে ধরবে।
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
‘তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার যে আল্লাহ এর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম?’ (সূরা হা মীম সিজদাহ-৩৩)
এবং তিনি আরও বলেন,
‘সুতরাং আপনি এর প্রতিই দাওয়াত দিন এবং হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকুন।’ (সূরা আশ শূরা-১৫)
সুতরাং আল্লাহর দাওয়াত বহন করা ফরয এবং এটি এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে দাওয়াত বহনকারী আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। এর মর্যাদা অনেক উচুঁতে এবং এর মাধ্যমেই আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে সম্মান দেবেন ও আখিরাতে মুক্তি দেবেন।
দাওযাত ছিল রাসূলদের মিশন এবং এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ্ এর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক।’ (সূরা আন নাহল : ৩৬)
‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ (সূরা আল আহযাব: ৪৫-৪৬)
সুতরাং আমাদের রাসূল (সা) দাওয়াত বহনকারী ও উম্মাহর জন্য একজন সতর্ককারী ছিলেন। তিনি দুনিয়াতে লোকদের যে দিকে আহ্বান করেছেন সে ব্যাপারে একজন সাক্ষী ছিলেন। সেকারণে তিনি লোকদের এবং আল্লাহকে সাক্ষী হবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে সে কারণে তিনি বলেন,
‘…..আমি কি পৌঁছে দেইনি? হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন।’ (বুখারী)
সুতরাং দাওয়াত হল এ উম্মতের জন্য রাসূল প্রদত্ত উপহার এবং আমাদেরকে ইসলামের ভেতরে থাকতে হলে এ উপহারকে সংরক্ষণ করতে হবে।
এর কারণ হল ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য দাওয়াত দেয়া ব্যতিরেকে এর কার্যকর উপস্থিতি দর্শন করা যাবে না। এবং এই দাওয়াত ছাড়া মানুষের মনের ভেতরের বিদ্যমান অন্ধকার ও বিচ্যুত চিন্তাকে দূরীভূত করতে পারবে না। আবার ইসলাম প্রতিষ্ঠার দাওয়াত দেয়া ছাড়া ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। ইসলামকে দাওয়াতের মাধ্যমে ছড়িয়ে না দেয়া গেলে তা শক্তিশালীভাবে বিস্তারও লাভ করবে না।
ইসলামী দাওয়াত না থাকলে দ্বীন এত শক্তিশালী হত না, বিস্তার লাভ করত না, সুরক্ষিত হত না এবং আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ তার সৃষ্টির সামনে প্রতিষ্ঠিত হত না।
সুতরাং কেবলমাত্র দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলাম তার হৃত গৌরব ও শক্তিশালী অবস্থান ফিরে পেতে পারে এবং এর প্রয়োজনীয়তা আজকের দিনে ভীষণ ভাবে দরকার।
দাওয়াতের মাধ্যমে সব মানুষের কাছে ইসলাম পৌঁছে দেয়া এবং জীবনব্যবস্থাকে আল্লাহর জন্য পরিণত করা সম্ভব। পৃথিবীর জন্য আজকে দাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
ইসলামী দাওয়াতের মাধ্যমে মুসলিমদের দলিলের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় এবং কাফেরদের দলিলের ত্রুটি প্রকাশিত হয় এবং ইসলাম পরিত্যাগের জন্য অবিশ্বাসীরা যেন কোন অজুহাত দাঁড় করবার সুযোগ পায় না। এ সর্ম্পকে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন,
‘সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রসূলগণের পরে আল্লাহ্ এর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। আল্লাহ্ প্রবল পরাক্রমশীল, প্রাজ্ঞ।’ (সূরা আন নিসা-১৬৫)
সে কারণে মুসলিমদের কাছে দাওয়াত দেয়ার বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এ কারণে ইসলামের প্রথম যুগে সাহাবীগন রাসূল (সা) এর সাথে সাথে দাওয়াতের কাজে আত্ননিয়োগ করেন এবং দ্বীনের মতই এটিকে গুরুত্ব প্রদান করেন। যদি ইসলামে দাওয়াত না থাকত, তাহলে ইসলাম আমাদের কাছে পৌছত না এবং কয়েকশত মিলিয়ন লোক এটা গ্রহণের সুযোগ পেত না। সে অবস্থায় ইসলাম কেবলমাত্র রাসূলুল্লাহ (সা) এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। সে কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর সর্বপ্রথম নাযিলকৃত কথাটি ছিল
‘পড়’ (সূরা আলাক:১)
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাকে পড়তে বলেছেন এবং লোকদের পড়ে শোনাতে বলেছেন।
প্রথমদিকে নাযিলকৃত আয়াতসমূহের মধ্যে একটি ছিল:
‘উঠুন, সতর্ক করুন’ (সূরা আল মুদ্দাসির:২)
সুতরাং, রাসূলুল্লাহ (সা) দাওয়াতের সব উপকরণের দ্বারাই এ কাজটি করেছেন এবং সর্বপ্রথম মুসলমান হিসেবে যাদের পেয়েছেন তারা তাঁর পর দাওয়াত বহনকারী হিসেবে সবচেয়ে উত্তম ছিলেন। ঐ সকল মুসলিমদের দাওয়াতই পরবর্তীদের নিকট পৌঁছে। এভাবে পূর্বের মত আজকেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দাওয়াত বহন করবার কাজটি করে যেতে হবে।
পানির সাথে প্রবাহের যে সর্ম্পক দাওয়াতের সাথে ইসলামের সে সর্ম্পক । যেমন: পানি দিয়ে সেচকার্য করা হয়, পিপাসা নিবারণ করা হয় এবং মানুষের আরও অনেক কল্যাণ সাধন করা হয়। কিন্তু এই পানির দায়িত্ব কাউকে নিতে হয়। একইভাবে ইসলাম যা একটি সত্য দ্বীন ও সঠিক জীবনব্যবস্থা-এটাকে এবং এর হককে কাউকে না কাউকে বহন করতে হয়। এতে করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ, সেচকার্য পরিচালনা ও সুপথের নিদর্শন পাওয়া যায়।
সুতরাং ইসলাম ও দাওয়াতের মধ্যকার গভীর সর্ম্পক সুস্পষ্ট।
একারণে দাওয়াত ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও মৌলিক ভিত্তিসমূহের একটি। ইসলামের বিস্তার ও ইসলাম দ্বারা কাউকে প্রভাবিত করবার জন্য দাওয়াত খুব দরকার। যখন তা শুরু হয় তখন থেকেই দাওয়াতের যুগই ইসলামের যুগ, until Allah (SWT) inherits the earth and those inhabiting it. সে কারণে মুসলমানদের জীবনে দাওয়াতকে অত্যন্ত বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত। মুসলমানদের দাও’য়াতী কাজে আত্ননিয়োগ করতে হবে। এর জন্য সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করতে হবে।