খবর: ‘‘কক্সবাজারের চকরিয়ার বদরল্কালি ইউনিয়নে চৌধুরি পাড়ায় আব্দুল গনি – ফাতেমা বেগম দম্পতির তিন মেয়ে এক ছেলে। গত শুক্রবার তাদের বাসা থেকে তিন মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা (৯), শিরোজান্নাত (৯), ও তহুরা জান্নাত (২০) এর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত তিন মেয়ের বাবা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি দিয়ে নিজের মেয়েদের জবাই করে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আব্দুল গনি দাবী করেন, স্ত্রী ফাতেমার অনৈতিক সম্পর্কের কারনে চরম মানসিক বিপর্যয়ে পরে তিনি নিজের মেয়েদের হত্যা করেছেন। তার স্ত্রী ফাতেমা ও গনীর বিরুদ্ধে পাল্টা পরকীয়ার অভিযোগ তুলেছেন।’’ (কালের কন্ঠ ২২মে ২০১৫)
মন্তব্য: পারিবারিক খুন, পরকীয়ার পাশাপাশি আত্বহননের ঘটনায় সমাজে আতংক ছড়িয়ে পরছে। এ রকম একের পর এক ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সমাজবিজ্ঞানী, মনস্তত্ত্ববিদ, অপরাধ বিশ্লেষক ও মানবাধীকার কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন এসব কিছুর প্রধান কারন হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন শিথিল ও দুর্বল হওয়া, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব, নৈতিক শিক্ষা ও মুল্যবোধের অভাব। যান্ত্রিক এই জীবনে এসবের ফলে বাড়ছে হতাশা। তারা আরো বলছে, পারিবারিক আইন পরিবর্তন ও আরো কঠোর করে অপরাধীদের আরো কঠিন শাস্তি দিলে এ সমস্যার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু আমরা দেখেছি এই পুঁজিবাদী ব্যাবস্থার আইন অনেক বার পরিবর্তন করা হয়েছে। তার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ও রয়েছে। এছাড়া খুন, ধর্ষন, শারীরিক নির্যাতনের জন্য অপরাধীদেরকে ফাসিও দেয়া হচ্ছে, তারপরও সমাধান হয় নি, হচ্ছে না। বরং তা আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে পারিবারিক মামলা হয় ১৭ হাজার ৭৫২টি, ২০১১ সালে তা আরো বেড়ে দাড়ায় ২১ হাজার ৩৯৮টি, ২০১২ সালে বেড়ে দারায় ২০ হাজার ৯৪৭ টি, ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৬০৯টি, ২০১৪ সালে বেড়ে দাড়ায় ২১ হাজার ২৯১টি। অর্থাৎ ২০১০-২০১৫ সালের ১৫মে পর্যন্ত শুধু মাত্র পারিবারিক আইনেই মামলা হয়েছে ১লাখ ১৮ হাজার ১৯২ টি। আর হত্যা মামলা হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। পুলিশ দপ্তরের পরিসংখানে দেখা যায় পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রতি দিন গড়ে খুন হচ্ছে ১৩ জন, আত্মহত্যা করছে ২৯ জন, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৫৭ জন। এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র এই সকল সমস্যা গুলোর সমাধান করতে গিয়ে আজ বড়ই ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পরেছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাও তাদের ব্যার্থতা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে বলছে “আমরা তো আর পরিবারগুলোর ড্রইংরুমে গিয়ে পাহাড়া দিতে পারব না!” অন্যদিকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ জাবিতে সরকারী দলের এক ছাত্র নেতার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রিকে টয়লেটে অসামাজিক অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় দেশের ভদ্র পরিবার গুলো যখন লজ্জায় মুখ লুকাচ্ছে, তখন এই সমাজ ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শিক্ষা ব্যাক্তিত্ব জাবি ভিসি সাহেব বললেন “এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এতে বিচলিত হবার কিছু নেই” যেখানে এই সমাজ ব্যবস্থার বাহক সর্বোচ্চ শিক্ষা দাতারা যৌনতাকে পরিবার ও সমাজের জন্য কোন সমস্যাই মনে করেন না সেখানে এই সমাজ ব্যবস্থা কিভাবে আমাদের পারিবারিক সমস্যার সমাধান করবে? আর এভাবেই এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধারক ও বাহক গন সমাধান তো নয়ই বরং আরো উৎসাহিত করে যাচ্ছে সমস্যাগুলোকে।
এই পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা সম্পদ অর্জনের স্বাধীনতা আর ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলে নারী পুরুষ সকলকেই উৎসাহিত করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। স্বাধীনতার পিছনে ছুটতে গিয়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষে মুক্তি তো পাচ্ছেই না বরং ব্যর্থতা আর হতাশায় অবশেষে ধর্ষণ, খুন আর আত্মহনন কেই শান্তির উপায় হিসাবে গ্রহণ করে নিচ্ছে। এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা শুধুমাত্র পুঁজি অর্জনের জন্যই দায়বদ্ধ, পারিবারিক শান্তি অর্জনের জন্য নয়। পারিবারিক শান্তি তো দুরের কথা তারা এই পারিবারিক ব্যবস্থাকেই বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এনে দাড় করেছে। এভাবে আর কতদিন? এর কি কোন সমাধান নেই?
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন-
“আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম, আর আমার নিয়ামত তোমাদের উপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনিত করলাম” (সুরা মায়েদা: ৩)
ইসলাম ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিপুর্ণ সমাধান দেয়। পারিবারিক সম্পর্কের একমাত্র ভিত্তি হলো আল্লাহ ভীতি। ফলে পরিবারের সকল সদস্য আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে। ইসলাম নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান সংযত রাখার নির্দেশ দেয়, ইসলাম যেমন স্বামীর অধিকারে কথা বলে তেমনই স্ত্রীর অধিকার ও নিশ্চিত করার হুকুম করে। ইসলামে যেই নারীর প্রতি তার পিতা দ্বায়িত্বশীল, তার ভাই দ্বায়িত্বশীল, তার স্বামী দ্বায়িত্বশীল, তার সন্তান দ্বায়িত্বশীল সেই নারী কি কখনো নিজেকে অসহায় ভাবতে পারে! আর এভাবেই শরীয়াহ আইন গ্রহণের মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে ওঠে হতাশামুক্ত, শান্তিময় ও পরিপুর্ণ।
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেরা বাঁচো এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।” (সুরা আত ত্বাহরীম: ৫)
পরিবারে শরীয়াহ আইনের বাস্তবায়ন একটি বিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া নয়। পরিবারে ও সমাজে শরীয়াহ আইনের বাস্তবায়নের জন্য সমাজ ব্যবস্থা হিসাবে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ব্যক্তির মাঝে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলবে, আল্লাহ ভীতি ও তাকওয়া গড়ে তুলবে, জীবনের সর্বশেষ গন্তব্য জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। আল্লাহর দেয়া এই ক্ষণিকের দুনিয়ায় মরীচিকার মত পুঁজির পিছনে ছুটে চলাকে , মিথ্যা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে তখন তারা তুচ্ছ মনে করবে। আল্লাহর শরীয়াহ আইন দ্বারা নিজের জীবন, পরিবার জীবন পরিচালিত করবে।
ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ব্যতিত এই দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। একমাত্র ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থাই পারে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ইসলামের শরীয়াহ আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তি নিশ্চিত করতে। সুতরাং পরিবার বা সমাজ জীবনের সকল প্রকার কলহ দূর করতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।
“হে ঈমানদারগণ; আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা (ইসলামের ব্যাপারে) কর্তৃত্বশীল তাদের; অনন্তর যদি তোমরা কোন বিষয়ে পরস্পর দ্বিমত হও, তবে ঐ বিষয়কে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ছাড়িয়া দাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখ।” (সুরা নিসা: ৫৯)
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে পারিবারিক সকল কলহ থেকে মুক্তি দান করুন। আমিন।