বর্তমান সরকার ব্যবস্থায় মেয়রের পক্ষে নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধুমাত্র খিলাফত ব্যবস্থায় ওয়ালি এবং আমিল (মেয়র) ব্যাবস্থা নগরে প্রকৃত ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।
আমরা জানি, বাংলাদেশে বর্তমানে মেয়র নির্বাচন ও নিয়োগ হয় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর মাধ্যমে। যেহেতু, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ চিন্তার মানুষের তৈরি বৈষম্য মূলক ব্যবস্থা যেইখানে ধনী আরো ধনী হয় এবং গরিব আরো নিঃস্ব হয়ে পড়ে এবং জনগণের উপর অন্যায়ভাবে কর আরোপিত হয় সেহেতু কোনো এলাকা/পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করাও জনগণের মাঝে কিছু বৈষম্যের উপর ভিত্তি করে হয়। অর্থাৎ, যে পৌরসভার মানুষজন নিজ যোগ্যতায় তাদের এলাকার উন্নতি সাধন করেছেন এবং দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে গেছেন সেই সব সুবিধাভোগী লোকগণকে আরো কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকার ঐ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষণা করেন। সরকার কর্তৃক কোনো এলাকাকে সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার জন্য সিটি কর্পোরেশন আইনে উল্লিখিত ৩(৪) নং বিধিতে নিন্মোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করবেন,
“স্থানীয় আয়ের উৎস” “এলাকার অথনৈতিক গুরুত্ব” “বিদ্যমান পৌরসভার বার্ষিক আয়”
অর্থাৎ “তোমরা যদি সরকারকে অর্থ দিতে পার তাহলে সরকার তোমাদের উন্নততর সেবা দিবে না হয় তোমরা অধপতিত অবস্থায় থাক”। বিষয়টা যেন এমন যে সরকার এখানে সেবক নয় বরং মালিক আর জনগণ হল শ্রমিক, শ্রমিক যদি অর্থ দেয় তাহলে মালিক তার যত্ন নিবে না হলে বিতাড়িত করবে।
আবার যদিও কোন পৌরসভা সিটি কর্পোরেশন হিসেবে ঘোষিত হয় তারপর দেখাযায় এই গণতান্ত্রিক শাসন যন্ত্রের আরও দুর্বলতার কারনে শহরটি লুটপাট ও গণ্ডগোলের আখাড়ায় পরিণত হয় যেমন,
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মেয়রগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ায় দেখা যায়, সরকার হয় এক দলের এবং মেয়রগণ হয় অনেক সময় ভিন্ন দলের। ভিন্ন দল হতে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সরকার ঐ মেয়রকে সাহায্য সহযোগিতা তো করেই না বরং মামলা মোকদ্দমা করে ঐ মেয়রকে এলাকা হতে বিতাড়িত করেন এবং তৎপর ঐ সিটি মেয়রকে বরখাস্ত করেন। যা আমরা কিছুদিন আগে রাজশাহী ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনে দেখেছি। যার দরুন এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং যেহেতু দেখা যায় একই এলাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিরোধী দলের আর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (CDA বা রাজউক) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে তৎকারণে তাদের মধ্যে কাজের সময় অসামঞ্জস্য থাকে। এবং একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। যা আমরা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাঝে লক্ষ করেছি। এবং দেখেছি সরকার দলীয় লোক ও মেয়রের মাঝে নগরীতে বিলবোর্ড বাণিজ্য নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে মারামারি করতে।
ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থায় যেহেতু এটি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কর্তৃক প্রদেয় একটি ব্যবস্থা এবং যেহেতু আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি ন্যায়বিচারক” সেই ন্যায়বিচার রাসূলুল্লাহ (সা) যেইভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন আমরা ও ঠিক একই ভাবে আল্লাহর এই জমিনে রাসূলুল্লাহ (সা) কর্তৃক দেখানো পথে অনুসরণ করব। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ভূমিসমূহকে বিভিন্ন উলাইয়্যাহতে (প্রদেশ) বিভক্ত করা হবে। একটি উলাইয়্যাহকে বিভিন্ন ইমালাতে (জেলা) বিভক্ত করা হবে। উলায়্যাহতে দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিকে ওয়ালি এবং ইমালার দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিকে আমিল বা হাকিম বলা হবে।
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা) বিভিন্ন অঞ্চলকে বিভক্ত করে যেইভাবে গভর্নর (ওয়ালি) এবং আমিল (মেয়র) নিয়োগ করেছেন। যেমন মুয়াজ ইবনে জাবালকে আল জানাদের ওয়ালি হিসেবে প্রেরণ, জায়েদ বিন লাভি আল আনসারিকে হাদরামউত এর ওয়ালি, আবু মুসা আল আনসারিকে যাবিদ এবং এডেন- এর ওয়ালি, কাতান ইবনে সাসানকে ইয়েমেনের ওয়ালি এবং খালিদ ইবনে সাইদ ইবনে আল আসকে সানার আমিল হিসেবে প্রেরণ করেছেন ঠিক তেমনি আগত খিলাফাহকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করে ওয়ালি ও আমিল নিয়োগ করা হবে এবং তারা পৃথিবীতে সত্য প্রতিষ্ঠিত করবেন ও প্রত্যেকের প্রাপ্য ন্যায্যতা প্রত্যেককেই প্রদান করবেন। সর্বোপরি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত দ্বীন ইসলাম বাস্তবায়ন করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন কাউকে ওয়ালি বা আমিল হিসেবে প্রেরণ করতেন এখন বলতেন তাদের প্রতি ভালো আচরণ করিও। কঠিন হইও না তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিও না।
খিলাফাহ্ ব্যবস্থায় আমিল হচ্ছে একটি শাসক এর পদ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো আমিল নির্বাচিত হয় না বরং ওয়ালি (গভর্নর) বা খলিফা আমিলকে নিয়োগ দিবেন যার দরুণ তাদের মধ্যে কখনো বাধানুবাদ হয় না এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে কখনো ইস্তফা হয় না। বরং আমিল একাধারে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন এবং খলিফার অপছন্দনীয় কাজ করলে বা জনগণ থেকে অভিযোগ এলে বা অন্য কোনো কারণে খলিফা আমিলকে বরখাস্ত করার অধিকার রাখায় অতীত ইতিহাসে ও আমিলগণ জনগণের সাথে খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখত এবং জনগণের জন্য সকল ত্যাগ স্বীকার করত।
রাসূল (সা) আবদু কায়েস গোত্র থেকে অভিযোগ আসায় আবুল আলা ইবনুল হাদরামি কে বাহরাইনের আমিল থেকে বরখাস্ত করেন। পক্ষান্তরে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো মেয়র শুধুমাত্র সরকারের বিরোধিতা না করে এবং এলাকার কোনো কাজ না করে গণতান্ত্রিক আইনে ৫ বছর সে মেয়র হিসেবে থেকে যেতে পারবে। যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ছিল চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র।
জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে বর্তমান এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উপযুক্ত মতে শুধুমাত্র সরকারের কোনো বিরুদ্ধচারণ না করলে এই মেয়রগণের কোনো রকমের জবাবদিহিতা নাই। অথচ রাসূূল (সা) ইবনুল উতরিয়াকে বনু সালিম গোত্রের সাদাকার উপর আমিল করেন। আমিল করার পর ইবনুল উতরিয়া কাজ শেষ করার পরে রাসুল (সা) এর কাছে এসে বললেন, এইগুলো আপনার জন্য আর এইগুলো আমার জন্য (উনি যা উপহার হিসেবে ঐখানে পেয়েছিলেন) তখন রাসূল (সা) বললেন, তুমি কেন তোমার ঘরে এই উপহার গুলোর জন্য অপেক্ষা করলে না যদি তুমি সত্যবাদী হও। অর্থাৎ, কোনো আমিল তার বেতন এর বাইরে কোনো প্রকার উপহারও নিতে পারবে না কারন জনগণ তার আমিল হওয়ার কারনে উক্ত পদে তাকে উপহার দিয়েছে সে যদি উক্ত পদে না থাকত তাহলে তা সে কখনই তা পেত না। এটাই তো সেই খিলাফাহ ব্যবস্থার আমিল এর পদ যেইটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো কোনো শাসক এর খুশির জন্য কাজ করে না বরং জনগণের মাঝে ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার জন্য। জনগণের অধিকার যেমন রাসুল (সা) এর নির্দেশনা অনুযায়ী খাদ্য, বস্ত্র, বাস্থান, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন কেন্দ্র অর্থাৎ সকল মৌলিক ও নাগরিক সুবিধা বিনা মুল্যে বা নামমাত্র সার্ভিস চার্জ প্রদানের মাধ্যমে প্রদান করার জন্য। এবং একাজের জন্য তারা শুধু চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি।
হিমস এর তৎকালীন আমিল আমের ইবনু সাদ বলতেন, ইসলাম ততদিন পর্যন্ত দুর্দমনীয় থাকবে যতদিন পর্যন্ত শাসকগণ শক্তিশালী হবে। শাসকগণের শক্তি মানে এটা বুঝায় না যে, তরবারি দিয়ে হত্যা করা হবে বা চাবুক এর পিটুনি দেওয়া হবে বরং এর মানে হচ্ছে সত্য দিয়ে বিচার করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
তৌফিক কুরাইশি