যে কোন বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধারনা পাওয়া যায় যখন সেই বিষয়টি সামগ্রিক সামাজিক কাঠামোর অধীনে বিবেচনা করা হয়। ইসলামী ব্যাংকিং এর বিষয়টিও তেমনই। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ব্যাঙ্কিং এর একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এই বিশেষ ভূমিকার কারনে ‘ব্যাঙ্কিং ব্যবসা’ অন্যান্য ‘ব্যবসা/বাণিজ্য’ থেকে পৃথক। তার আইনি কাঠামোও পৃথক। ব্যাঙ্কিং ব্যবসা ছাড়া অন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের নামের সঙ্গে ‘ব্যাংক’ শব্দটি যুক্ত করতে পারেনা (ব্যাঙ্ক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১, ধারা-৮)। ব্যাঙ্ক-কোম্পানি বলতে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনাকারী কোন কোম্পানিকে বুঝায় (ব্যাঙ্ক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১, ধারা-৭(ণ))। এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে সকল কোম্পানি পণ্য উৎপাদন বা বাণিজ্য পরিচালনা করে এবং শুধুমাত্র এই উৎপাদন বা বানিজ্যের অর্থ সংস্থানের জন্য জনগণের নিকট থেকে টাকার আমানত গ্রহণ করে সেই সকল কোম্পানি ব্যাংক ব্যবসা করছে বলে গণ্য হবেনা। ব্যাংক ব্যবসা বলতে অর্থ কর্জ প্রদান বা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জনসাধারণের নিকট থেকে এইরূপ আমানত গ্রহণ করা, যা চাহিবা মাত্র বা অন্য কোনভাবে পরিশোধযোগ্য, এবং চেক, ড্রাফ্ট, আদেশ বা অন্যকোন পদ্ধতিতে প্রত্যাহারযোগ্য (ব্যাঙ্ক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১, ধারা-৫(ত))। অর্থাৎ কোন ব্যাংক পণ্য উৎপাদন বা প্রকৃত বানিজ্য পরিচালনা করতে পারেনা। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে ইসলামী ব্যাঙ্কিংসহ সব ধরনের ব্যাঙ্কিং এই ব্যাঙ্কিং সঙ্ঘার পরিধির ভিতর পরিচালিত হয়, যা সাধারণ ব্যবসা/বানিজ্য থেকে পৃথক। ইসলামী ব্যাঙ্কিং পরিচালনার বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার (Guidelines) প্রথম সেকশনে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। নীতিমালায় বালা হচ্ছেঃ “ This guideline has been prepared mainly on the basis of Banking Companies Act 1991, Companies Act 1994, and Prudential Regulations of Bangladesh Bank. However, this guideline should be treated as supplimentary, not substitute, to the existing banking laws, rules and regulations. In case of any point not covered under this guideline as also in case of any contradiction, the instruction issued under the Banking Companies Act and Companies Act will prevail.”
সরকারের রাজস্বনীতি (Fiscal Policy) বাস্তবায়বনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) প্রয়োজনীয় মুদ্রানীতি (Monetary Policy) গ্রহন করে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রানীতি মূলত ব্যাংক-কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংক হচ্ছে এই সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার নির্ধারণ ও বাজারে অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ব্যাঙ্কগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদান। অর্থাৎ, সংগ্রহীত আমানতের একটি অংশ গচ্ছিত রেখে বাকি অর্থ ঋণ প্রদান করা। কিন্তু এই প্রদানকৃত ঋণ আমানতদাতার (Depositor) আমানতকে হ্রাস করেনা। বরং আমানতদাতা যেকোন সময় তার আমানত উত্তোলন করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে ব্যাঙ্কিং পরিভাষায় Fractional Reserve Banking বলা হয়। এই ক্রমাগত নতুন ঋণ সৃষ্টির (Credit Creation) মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলো নতুন অর্থ সৃষ্টি ও তার প্রবাহ বৃদ্ধি করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকের কার্যক্রমকে সরকারের এই মৌল উদ্দেশ্য সাধনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হয়। ঋণ সৃষ্টির এই মৌলিক চরিত্র রক্ষার জন্যই ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে সীমিত করা হয়। অর্থাৎ, ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমকেও এই ঋণ সৃষ্টির আলোকে যাচাই করতে হবে।
কিন্তু ইসলামী ব্যাংক সরকারের এই উদ্দেশ্যের সঙ্গে বাহ্যত একমত প্রকাশ করেনা। আদর্শগত কারনে ইসলামী ব্যাংক দাবী করে যে তারা সুদ ভিত্তিক ঋণ প্রদান করেনা, বরং তারা মুলত বাণিজ্য (Trading) বা উৎপাদনে মূলধনী বিনিয়োগ (Equity Investment) করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকের এই ব্যবসায়িক দাবী আইনসংগত ‘ব্যাঙ্কিং ব্যবসার’ পরিপন্থী, যা আগেই উল্লেখ করেছি। বিপরীতমুখী দুটি ধারনার সমন্বয়ের এই অসম্ভব প্রচেষ্টার কারনে ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম ও তাদের দালিলিক উপস্থাপনার ভিতর বিস্তর পার্থক্য, অসংগতি এবং জটিলতা দেখা যায়।
উপরন্তু, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে আমাদের সমাজের ধারনার মাঝেও সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। ব্যাংকের ঋণপ্রদানকারী চরিত্রই আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষের ধারনায় উপস্থিত। ইসলামী ব্যাংক এখানে কোন ব্যতিক্রম নয়। ইসলামী ব্যাংকের সহযোগিতায় যদি আপনি একটি গাড়ি কিনেন তবে আপনি সাধারণভাবে মনে করেননা যে গাড়িটি আপনি ইসলামী ব্যাংক থেকে কিনেছেন। বরং মনে করেন আপনি ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে (অর্থাৎ ঋণ নিয়ে) গাড়িটি কিনেছেন। আমরা সাধারণভাবে বলিনা যে ইসলামী ব্যাংক ভাল গাড়ি বিক্রি করে। যদিও এখানে দালিলিকভাবে ইসলামী ব্যাংক গাড়ি বিক্রেতা এবং আপনি গাড়ি ক্রেতা। অনুরূপভাবে কোন শিল্পপতি ইসলামী ব্যাংকের সহায়তায় কাঁচামাল ক্রয় করলে সাধারণভাবে তিনি মনে করেননা যে ইসলামী ব্যাংক তার ব্যবসায়ের অংশীদার। বরং মনে করেন কাঁচামাল তিনি ইসলামী ব্যাংকের অর্থায়নে কিনেছেন। সুতরাং, দেখা যায় ইসলামী ব্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতা ও সেবা প্রদানকারীর মাঝে ধারণাগত ঐক্য নেই, যা তাদের চুক্তিকে বাতিল বা অকার্যকর করে দেয়। আলোচনাটি এখানেই শেষ করে দেয়া যায়। তবু অধিকতর অনুধাবনের স্বার্থে প্রধান অসংগতিগুলোকে আরও বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
লেনদেন ও পরিচালনার প্রকৃতি:
যেহেতু ব্যাংকিং লেনদেন একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ সুদের হার নিয়ত্রন ও ঋণ সৃষ্টির জন্য, পরিচালিত হয়, সেহেতু তার লেনদেনের প্রকৃতিকে সীমাবদ্ধ করতে হয়। আইন ব্যাংকগুলোকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পণ্যের ক্রয়, বিক্রয় বা বিনিময় ব্যবসা করতে অনুমোদন দেয়না (ব্যাঙ্ক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১, ধারা-৯)। অবশ্য এখানে ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই ধারাটি শিথিল করা হয়েছে। এখানে অনুধাবনের বিষয় হচ্ছে তাদের অনুসৃত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি অবশ্যই প্রকৃত বানিজ্যের অনুরূপ নয়। প্রকৃত বানিজ্যিক লেনদেন (Real Commercial Transaction) অর্থনীতিতে ঋণ সৃষ্টিতে কোন ভূমিকা রাখেনা। তাই এই ধরনের প্রকৃত বাণিজ্যিক লেনদেন ব্যাঙ্কিং কোম্পানির আওতা বহির্ভূত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নিয়ত্রন ও তত্ত্বাবধানের সীমার বাইরে। সুতরাং, ইসলামী ব্যাংক তাদের এই ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতিতে এমন বৈশিষ্ট্য আরোপ করে যাতে তা চূড়ান্ত বিচারে ঋণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে ব্যহত না করে। এ কারনেই প্রচলিত (Conventional) ও ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন পদ্ধতির মাঝে প্রচুর সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন,
(১) আমানতদাতাকে প্রদেয় এবং বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের হার (Mark-up) প্রচলিত ব্যাংকের সুদের হারের সঙ্গে মিল রেখে নির্ধারণ করা হয়। কারন লাভ বা সুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়। অপরপক্ষে, প্রকৃত বাণিজ্যের লাভ বাজার চাহিদা ও ব্যবসায়িক ঝুকির উপর নির্ভরশীল, কোন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় নয়।
(২) ইসলামী ব্যাংক এবং প্রচলিত ব্যাংক প্রায় একই ধরনের পুঁজির পর্যাপ্ততা (Capital Adequacy), Statutory Reserve, সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা (Asset-Liability Management), ঝুকি বিশ্লেষণ (Risk Analysis), বিনিয়োগকৃত সম্পদের শ্রেণীকরণ ইত্যাদির নীতি মেনে চলে। স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো অনুসরণের কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই।
(৩) মূলধন বিনিয়োগের (Equity Investment) ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়, বর্তমানে যা হচ্ছে মোট মূলধন (Total Equity) এর সর্বোচ্চ ২৫%। এই সীমা কোন ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের (Debt and Equity) সামান্য অংশ। বিনিয়োগের এই সীমা ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং, ইসলামী ব্যাংক এই সীমার অতিরিক্ত মূলধনী বিনিয়োগের (Equity Investment) যে সকল উপায় (Instruments) অবলম্বন করে থাকে তা মূলধনের চরিত্র ধারন করেনা, বরং চূড়ান্ত বিচারে তা হয় ঋণের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন (Quasi Debt)। যেমন, (ক) বিনিয়োগের উপর লাভের হার নির্ধারণ এবং অর্জিত লাভ বিতরণে (আমানতদাতাদের মাঝে) ‘অতিক্রান্ত সময়’ কে বিবেচনায় আনা, (খ) বিনিয়োগের উপর ইসলামী ব্যাংকের দাবী (Claim) ঐ ব্যবসায় প্রকৃত মূলধনদাতাদের দাবীর উপরে স্থাপন করা বা অন্যান্য ঋণ সরবরাহকারী ব্যাংকের দাবীর সমপর্যায়ে রাখা, (গ) বিনিয়োগ/ঋণ পুনঃতফসিল (Loan Rescheduling) এর বিধি অনুসরণ করা, ইত্যাদি। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিনিয়োগগুলোকে তাদের নীতির অধীনেই গ্রহণ করে থাকে, অর্থাৎ ধরে নেয়া হয় ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগের এই সীমা অতিক্রম করেনি।
বিনিয়োগ প্রবাহে জটিলতা:
ইসলামী ব্যাংক আমানতদাতার কাছ থেকে ব্যবসার ব্যবস্থাপক (মুদারিব) হিসেবে আমানত গ্রহণ করে থাকে এবং আমানতদাতা হয় পুঁজি বিনিয়োগকারী (সাহিব আল-মাল)। অপরপক্ষে ইসলামী ব্যাংক পুঁজি বিনিয়োগকারী হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায় অর্থলগ্নি করে থাকে, যেখানে লগ্নিকৃত ব্যবসার প্রতিষ্ঠান/মালিক হয় ব্যবসার ব্যবস্থাপক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক এখানে দ্বৈত চরিত্র ধারন করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ইসলামী ব্যাংক প্রকৃত অর্থে ব্যবসা ব্যবস্থাপকের ভূমিকা পালন করেনা। কারন অর্থ লগ্নি করা আর ব্যবসা পরিচালনা করা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। তাই আমানতদাতার সঙ্গে তার চুক্তিটি অকার্যকর।
অর্থ প্রবাহের এই ধারা এবং দলিলাদি বিশ্লেষণ করে ইসলামী ব্যাংককে বড়জোর একটি বিশেষায়িত আর্থিক মাধ্যম (Special Purpose Vehicle) বলা যায়, যা Pass-Through পদ্ধতিতে অর্থ সঞ্চারন করছে, কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হবার শর্তগুলো পূরণ করেনা।
আমানত ব্যবস্থাপনায় জটিলতা:
যেকোন ধরনের বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীর তহবিলকে সমপরিমাণে হ্রাস করে। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ইসলামী ব্যাংক যখন আমানত বিনিয়োগ করে তখন আমানতদাতার আমানত শুধু অক্ষুন্নই থাকেনা আমানতদাতা যেকোনো সময় তা উত্তোলনও করতে পারে। ইসলামী ব্যাংককে এটি করতে হয় ঋণ সৃষ্টির (Credit Creation) উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। আমানতের এই বৈশিষ্ট্যটি কোন স্বাভাবিক ব্যবসায় পরিলক্ষিত হয়না। দ্বিতীয়ত, আমানতদাতাদের যেকোনো সময় আমানত ফেরতের এই অঙ্গিকার কোন ব্যাংকেরই সামর্থ্যের অধিন নয়, অর্থাৎ ব্যাংক সকল আমানতদাতাদের আমানত এক সঙ্গে ফেরত দিতে পারেনা। সুতরাং, তাদের এই অঙ্গিকার ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।
হিসাব এবং কর কাঠামো:
প্রচলিত ব্যাংকের মতই ইসলামী ব্যাংকের হিসাব ব্যাঙ্ক-কোম্পানি আইনের অধীনে রক্ষা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত Guidelines on the Specimen Reports and Financial Statements for Banks under Islamic Shariah-য় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তাই দেখা যায় মুদারাবা এবং আল-ওয়াদিয়া হিসাবের (প্রচলিত ব্যাংকের সঞ্চয়ী এবং চলতি হিসাবের অনুরূপ হিসাব) অধীনে সংগৃহীত আমানত মূলধনী দায় (Equity Liability) না হয়ে সাধারণ দেনা (Debt Liability) হিসেবে দেখানো হয়। অর্থাৎ Accounting Standard ইসলামী ব্যাংকের আমানতকে সাধারণ ঋণের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিবেচনা করে সাধারণ দেনার শ্রেণীভুক্ত করে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে অর্থ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান সুদের মতই তার প্রদেয় লাভের উপর কর সুবিধা (Tax Benefit) পেয়ে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ ক্ষেত্রে লাভকে সুদের বৈশিষ্ট্যেই বিবেচনা করে এবং প্রদেয় লাভকে সুদের মতই আর্থিক খরচ (Financial Expense) হিসেবে গণ্য করে। লাভকে আর্থিক খরচ হিসেবে গণ্য করার কারনে ইসলামী ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রাখতে পারে। ব্যাংকিং কোম্পানির আয়কর অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়কর থেকে ৩০% থেকে ৫০% অধিক হয়ে থাকে যাতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে Return on Capital এবং Return on Labor এর মাঝে ভারসাম্য বজায় থাকে। এ ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংককে পৃথক করা হয়না। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকের আয়কে তার বিনিয়োগকৃত তহবিলের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে বলে ধরা হয়, তার ব্যবসায়িক শ্রমের (Labor) বিপরীতে নয়। সংক্ষেপে, হিসাব এবং কর কর্তৃপক্ষ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমকে মূলত ঋণ সরবরাহ হিসেবে বিবেচনা করে, কোন প্রকৃত ব্যবসায়িক কার্যক্রম হিসেবে নয়।
মুরাবাহা বিনিয়োগ:
ইসলামী ব্যাংককের ৫০% এর অধিক লেনদেন হয় মুরাবাহা পদ্ধতিতে। তাই এই প্রকারের লেনদেনের দুটো সমস্যা আলাদা ভাবে উল্লেখ করছি। প্রথমত, ব্যাংক এখানে যে পণ্যটি ক্রেতার কাছে বিক্রি করে তা বিক্রয়ের সময় তার মালিকানায় থাকেনা। দ্বিতীয়ত, ক্রেতা কোন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। এই উভয় রীতিকেই ইসলাম নিষিদ্ধ করে। উপরের আলোচনা থেকে এটা বলা যায় যে ইসলামের অর্থব্যবস্থা (Economy) এই কুফর ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কারন দুটি ব্যবস্থা দুটি বিপরীতমুখী মতাদর্শের (Ideology) ভিত্তিতে গঠিত। এই দুই মতাদর্শের মাঝে সমন্বয়ের চেষ্টা মানুষকে প্রতারিত করে মাত্র। এবং এই প্রতারনা যুলুমের গণতান্ত্রিক-ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। তাই আজ ইসলামী শাসন ব্যবস্থা তথা খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হওয়াই হবে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। খিলাফাহ রাষ্ট্রই ইসলামের ন্যায় ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত বিনিয়োগ, উৎপাদন, এবং সুষম বণ্টনের ক্ষেত্র তৈরি করবে। তখনই কেবল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হবে।
Mahmud Saadiq