প্রশ্ন-উত্তর: নবীদের ইজতিহাদ প্রসঙ্গে – শাইখ আতা আবু রাশতা

নিচের অনুবাদটি সম্মানিত মুজতাহিদ ও মুফাচ্ছির শাইখ আতা ইবন খলীল আবু রাশতা (আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন) কর্তৃক দেয়া এক প্রশ্নের জবাব 

প্রশ্ন: সকল নবীই কি তাদের ইজতিহাদে সঠিক নাকি শুধু মুস্তফা (সা)?

প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় নিম্নোক্ত প্রসঙ্গে – ইবন কাছীর সূরা আম্বিয়া ৭৮ নং আয়াত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি আবদুল্লাহ বিন মাসউদ ও আবদুল্লাহ বিন আব্বাস কে উদ্ধৃত করে বলেন যে তারা বলেছেন, নবী দাউদ (আ) মেষপালক ও গৃহস্থের মালিক যার ক্ষেত মাড়িয়েছিল মেষপালকের ভেড়াটি তাদের মধ্যে ফয়সালা দিয়েছিলেন যাতে ভেড়াটি গৃহস্থকে দিয়ে দেয়া হয়।

পরে তার ছেলে সুলায়মান তাকে বলেন, এটি পরিবর্তন করুন, হে আল্লাহর নবী! অতঃপর তিনি রায়টি ব্যাখ্যা নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, গৃহস্থ ভেড়াটি তার জিম্মায় নিয়ে তা হতে দুধ আহরণ করবে, আর মেষপালক জমি চাষ করে পুর্বরূপে ফিরিয়ে আনবে অর্থাৎ, ভেড়া মাড়ানোর পুর্বের অবস্থায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, আমরা সুলায়মানকে এ বিষয়ে উপলব্ধি দান করলাম। এর অর্থ কি এই যে নবী দাউদ (আ) ইজতিহাদ করেছিলেন যা পরবর্তীতে সুলায়মান সংশোধন করে দিয়েছিলেন?

সকল নবীই হুকুম-আহকাম বর্ণনায় মা’সূম অর্থাৎ, তারা নিজেদের মস্তিস্কপ্রসুত রায় দেন না। তার নবী বা রাসূল হওয়াটি – তিনি যে শরীআহর হুকুম বর্ণনার ক্ষেত্রে মাসূম, তা অপরিহার্য করে তোলে অর্থাৎ, তিনি ব্যাক্তিগতভাবে কোনো ইজতিহাদ করে হুকুম শরীআহ বর্ণনা করেন না। অনুগ্রহপূর্বক, ইসলামি ব্যাক্তিত্ব বইটির ১ম খণ্ডে ‘নবীদের অভ্রান্তিসত্ত্বতা (ইসমাহ)’ ও ‘রাসূলের জন্য মুজতাহিদ হওয়াটি অমানানসই’ (এ অংশদ্বয়) দেখুন। সুতরাং, আহকাম শরীআহ বর্ণনায় নবীগণ নিজেদের মাথা খাটিয়ে ইজতিহাদ করেন না, বরং তারা কেবল আল্লাহ পক্ষ হতে ওহী প্রচার করেন।

وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ * فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ وَكُنَّا فَاعِلِينَ

এবং স্মরণ করুন দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল। অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম। [সুরা আম্বিয়া: ৭৮-৭৯]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বাণী:

فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ )
‘‘অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফয়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম’’

দলীলস্বরূপ যে সুলায়মান (আ)-এর ফয়সালা একটি ওহী ছিল। এবং তাঁর সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বাণী:

كُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا )
উভয়কেই আমি ফয়সালা ও জ্ঞান দান করেছি

দলীলস্বরূপ যে দাউদ (আ)-এর ফয়সালাও ওহী নির্ধারিত। যেহেতু সুলায়মানের ফয়সালা পরে এসেছে, তাই তা পুর্বের রায়কে রহিত করেছে।

আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, কোনো কোনো তাফসীরে এসেছে যে দাউদ ও সুলায়মান উভয়ে ইজতিহাদ করেছেন এবং সুলায়মানের ইজতিহাদ বেশি সঠিক। যারা এ মত পোষন করেন তারা আহকাম শরীআহ বর্ণনায় নবী-রাসূলদের ইজতিহাদ করার বিষয়টিকে অস্বীকার করেন না। তারা বলেন, আল্লাহ তাদের ইজতিহাদকে সংশোধন করে দেন যদি তারা ভুল করেন।

৬ই মুহাররাম, ১৪৩৩ হি:
১ ডিসেম্বর, ২০১১ ইং

Leave a Reply