আরব বসন্ত নামে পরিচিত বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে আশ-শামের আন্দোলনের পর গত বেশ কিছুদিন ধরে নুসরাহ বিষয়টি উম্মাহের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে উম্মাহ বা শাবাব, যারা দাওয়াহ করেন তারা যেসব চিন্তা বা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে তা হল:
১. হিযব যারা শরীয়া’হ ও রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সবচেয়ে সজাগ, তা সত্ত্বেও তারা কেন নুসরাহ অন্বেষনের জন্য জোড় তাগিদ দেয়?
২. কেনই বা হিযব এমন একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরী করছেনা যাদের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়া যায়?
৩. এবং কেনই বা হিযব আল-শামে সশস্ত্র ব্রিগেড বা রেজিমেন্ট গঠন করছেনা; যেটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার আর্মির জন্য নিউক্লিয়াস স্বরূপ কাজ করবে।
হিযব এমন একটি দল যেটি এক নেতৃত্বের ছায়াতলে ৫ মহাদেশে, ইসলামী বিশ্বে বা অনৈসলামি বিশ্বে তাদের কার্যক্রম থাকার ফলে এই প্রশ্নগুলো আরও গভীর হয়ে উঠে। এবং এটিই হচ্ছে একমাত্র দল যা তার চিন্তা এবং অনুভুতির মধ্যে সংগতি ও ঐক্য বজায় রেখে সমগ্র বিশ্বের এসকল অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে।
এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে আমদের একটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা প্রয়োজন। আর তা হল-নুসরাহ চাওয়ার মাসআলাহ বা ইস্যুটি দলের পছন্দ বা অপছন্দের উপর নির্ভর করে না বরং উপনীত হুকুম শরী’আহ নির্ধারন করে। এবং শরীয়া’হ যে নির্দেশ দিয়েছে তা প্রত্যেক মুসলিম পালন করতে বাধ্য যদিওবা সকল মানুষ এর প্রতিকুলে রয়েছে। এবং এক্ষেত্রে অন্য কোনো নির্দেশের দিকে গমন করা অবৈধ যেহেতু মূল হুকুমটি আল্লাহর শরী’আহ হতে নেয়া হয়েছে:
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তখন কোনো ঈমানদার পুরুষ ও কোন ঈমানদার নারীর তাদের সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের কোনো রকম এখতিয়ার থাকে না (যে তারা তাতে কোনো রদবদল করবে); যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে নিঃসন্দেহে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। (৩৩:৩৬)
এই কারণেই দল নুসরাহ অন্বেষনের কাজের জন্য জোড় তাগিদ দেয়। কেননা এটি শরী’আহ বাস্তবায়নের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটিই একমাত্র কারণ।
এবং যারা এই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসেছেন তাদের আমরা প্রশ্নের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করি:
১. রাসূল (সা) এর সীরাহ অনুসরণ করা কি মুসলিমদের উপর ফরজ নাকি ফরজ না?
২. খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল (সা)-এর হেদায়েদপ্রাপ্ত নবুয়তী জীবন অনুসরণ করতে মুসলিমরা কি বাধ্য নাকি শুধুমাত্র বাথরুমে যাওয়ার পদ্ধতি, অযু ভঙ্গের কারণসমূহ বা তাঁর জীবনের নৈতিকতা অনুসরণ করতে বাধ্য?
এবং উম্মাহর রাজনীতি করা ও শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়গুলো কি তার (সা)-এর জীবন হতেই নির্ধারিত করতে হবে নাকি পরিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারিত হবে?
এবং যারা বলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার হুকুমে পৌছানো মূলত একটি উপায় (style) যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-র দেয়া অনেকগুলো উপায় (style) থেকে বেছে নিতে পারি – তাদেরকে জবাবে বলব, একটু থামুন! আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-র দ্বীন এবং তার শরীয়া’হ-র ব্যাপারে বড় বড় দাবি করবেন না বিশেষ করে যখন সেই বিষয়ে আপনাদের জ্ঞান নেই। যে কারণে অযু ভাঙ্গে সেসব কারণ জানা না থাকলে অযু ভাঙার কারণ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কী কী হতে পারে তা বলা যেরকম সমীচিন নয় তদ্রুপ খিলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির ব্যাপারেও জ্ঞান না থাকলে উদ্ভট, নিজ চিন্তাপ্রসুত কিছু বলা উচিত নয়। যদি আমরা বিশ্বাস করে থাকি রাসূল (সা) দ্বীনের সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা ব্যাক্ত করেছেন তবে এটা কি করে সম্ভব যে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং তা বাস্তবে রূপদান করা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা দিয়ে যাবেন না? রাসূল (সা) কি বলেননি-“এটিই হচ্ছে পরিস্কার পথ যা রাত্রি দিবালোকের মত স্পষ্ট। আর তা হল আল্লাহ-র কিতাব এবং রাসূল (সা) এর সুন্নাহ”। নাকি খিলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি এই সরলপথের আওতামুক্ত এবং রাসূল (সা) থেকে আসার কথা না?
এবং আমরা সকল মুসলিমদের বলতে চাই: মুলত হিযব শরীয়া’হ এর যে দলীল এর কারণে নুসরাহ চাওয়াকে ইচ্ছা হলে পরিবর্তনযোগ্য শুধুমাত্র কোন উসলুব (style) মনে করে না [বরং অপরিবর্তনীয় তরীকা’র (পদ্ধতির) অংশ বলে গন্য করে] এবং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয তা হলো:
প্রথমতঃ সিদ্ধান্তে পৌছানোর জন্য আমাদের কাছে মক্কায় দেখানো মডেল ছাড়া আর কোন মডেল বা দলীল নাই [যা খিলাফত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির সাথে সম্পর্কযুক্ত]। সাহাবী, আত-তাবে’উন, তাবে-তাবে’ঈনদের যুগে কিংবা ফিকহের কিতাবেও এর কোন মডেল পাওয়া যায় না। এর মানে হলো এটিই একমাত্র শরীয়া’হ দলীল এবং রূপরেখা যা থেকে উৎসারিত হয় ‘কিভাবে ক্ষমতায় যেতে হবে’ এবং তা মেনে চলা ধড়া আমাদের জন্য সেভাবেই ফরজ।
দ্বিতীয়তঃ নুসরাহ’র ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল বিদ্যমান যা নির্দেশনা প্রদান করে যে নুসরাহ তলব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে আসা এক ওহী। সেটি ইবনে কাছীরের সীরাতে (১৬৩/৭), আল-বায়হাকীর দালায়েলুন নুবুওয়্যাহ (২৯৭/২), ইবনে হিব্বানের সীরাতে (পৃ-৯৩), আবু নাঈম আল আসবাহানীর মা’রেফাতুস সাহাবাহ (২৭৪/৪) এবং আল-ইখতিফায় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অভিযানসমুহ ও তিন খলীফার আলোচনায় আবু রাবী’ সুলায়মান বিন মুসা আল-কালাঈ আল-আন্দালুসি (৩৩৭/১) কর্তৃক বর্ণিত আছে।
আলি ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণিত- ‘যখন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নবী (সা)-কে আরব গোত্রদের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন তখন তিনি মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং আমি ও আবু বকর তার সঙ্গী হই…’।
এই হাদীসের ব্যাপারে আল-ইখতিফার লেখক আল-খালায়ী বলেন- ‘এটি একটি প্রসিদ্ধ (মাশহুর) হাদীস যা আমি রেখেছি তার খ্যাতির কারণে’। অর্থাৎ, হাদীসটি আলেমদের নিকট অত্যন্ত প্রসিদ্ধ হওয়ায় আল-ইকতিফা’র লেখক এর কিয়দংশ বর্ণনা করেছেন।
তৃতীয়তঃ তাফসীরে ইবনে কাছিরে নিম্নলিখিত বক্তব্য উল্লেখ আছে:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:
“(হে নবী) তুমি কি তাদের অবস্থা দেখনি, যাদের (প্রথম দিকে) যখন বলা হয়েছিলো, তোমরা (আপাতত লড়াই থেকে) নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখো, (এখন) নামায প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত প্রদান করো, তখন তারা জিহাদের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিলো, অথচ যখন (পরবর্তি সময়ে) তাদের ওপর (সত্যি সত্যিই) লড়াইর হুকুম নাযিল করা হলো (তখন)! এদের একদল লোক তা (প্রতিপক্ষের) মানুষদের এমনভাবে ভয় করতে শুরু করলো, যেমনি ভয় শুধু আল্লাহকে করা উচিত; অথবা তার চাইতেও বেশী ভয়! তারা আরো বলতে শুরু করলো, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের ওপর যুদ্ধের এ হুকুম (এতো তাড়াতাড়ি) ধার্য করতে গেলে কেন? কতো ভালো হতো যদি তুমি আমাদের সামান্য কিছুটা অবকাশ দিতে? (হে নবী) তুমি বলো, দুনিয়ার এ ভোগ সামগ্রী অত্যন্ত সামান্য; যে ব্যক্তি (আল্লাহ-কে) ভয় করে, তার জন্য পরকাল অনেক উত্তম। আর (সেই পরকালে) তোমাদের উপর বিন্দুমাত্রও কিন্তু অবিচার করা হবে না”।
ইবন আবী হাতিম বলেন, আলী বিন আল হুসাইন আমাদের বলেন যে মুহাম্মাদ বিন আবদিল আজীজ আমাদের বলেছেন, আবু জুহরাহ ও আলী বিন রামহাহ উভয়েই বলেছেন, আলী বিন আল হাসান আল-হুসাইন বিন ওয়াকীদ, সে আমর বিন দীনার হতে, সে ইকরিমা হতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন- ‘মক্কায় আব্দুর রহমান বিন আ’উফ ও তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে নবী (সা)-কে বলেন: হে আল্লাহ-র রাসূল (সা) যখন আমরা মুশরিক ছিলাম তখন সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি ছিলাম কিন্তু মুসলিম হওয়ার পর আমাদেরকে অপমানিত করা হচ্ছে তখন রাসূল (সা) বলেন: আমি ক্ষমার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। অতএব, মানুষের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না”।
যখন আল্লাহর আদেশে তিনি মদীনায় হিজরত করলেন তাকে জিহাদ ও প্রতিরক্ষার অনুমতি দেয়া হল তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়:
“(হে নবী) তুমি কি তাদের অবস্থা দেখোনি, যাদের(প্রথম দিকে) যখন বলা হয়েছিলো, তোমরা (আপাতত লড়াই থেকে) নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখো [যুদ্ধ হতে]”
আন-নাসাঈ, আল-হাকিম তার মুস্তাদরাকে এবং আল-বায়হাকি তার সুনান আল-কুবরায় অনুরূপ বর্ণনা করেন”।
উপরের আলোচনা থেকে পরিলক্ষিত হয় যে, এ বিষয়টি পছন্দ বা অপছন্দের অবকাশ দিচ্ছে না বরং এটি ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ফরযিয়াতের বিষয়।
চতুর্থতঃ রাসূল (সা) শত দূর্ভোগ ও নির্যাতনের মুখেও নুসরাহ চাওয়া বন্ধ করে অন্য পথে না গিয়ে বরং (নুসরাহ তলবই) বহাল রাখেন। যা ব্যাপারটিকে আরো পাকাপোক্ত করে যে, এটি উসলূব (স্টাইল)-এর অংশ নয় বরং তরীকা (পদ্ধতি)-র অংশ। যদি এটি স্টাইলের অংশ হতো তবে রাসূল (সা) এটি পরিবর্তন করতেন বিশেষ করে যখন তায়েফের মত (হৃদয়বিদারক) লাঞ্চনা ও ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গোত্রপতি, বনু আমির বিন সা’সা এবং বনু হানিফাহসহ প্রমুখ গোত্রদের কাছ থেকে প্রত্যাখাত হওয়ার পরও বার বার নুসরাহ চাওয়ার ব্যাপারে অটল থাকা (একটি মাত্র বিষয়ে দিকে নির্দেশ করে আর তা হলো নুসরাহ স্পষ্টরূপে তারীকার অংশ)।
আমরা এখানে প্রশ্ন করতে চাই-
১. মক্কায় রাসূল (সা) এর পক্ষে কি সম্ভব ছিল না যে, উনি একটি গুপ্তঘাতকের দল তৈরী করবেন যারা সেই সব ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবে যারা মুসলিমদের ক্ষতি করেছিল বিশেষতঃ মুসলিমদের উপর এমন কষ্ট-যাতনা আরোপিত করেছিল যেখানে তাদের অনেকে কুফর কিংবা রাসূল (সা)-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক কথার ব্যপারে (বাধ্য হয়ে) কুরাইশদের সাথে একমত হতে ধাবিত করে?
কেন তিনি গুপ্তঘাতক দিয়ে আবু জেহেল,আবু লাহাব, ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ ও অন্যান্যদের মত যারা দাওয়ার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদেরকে হত্যা করবে?
২. কেন রাসূল (সা) আবু যর গিফারী (রা)-কে তার গোত্রে ফিরে যেতে বলে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তাদের থেকে যারা ইসলাম কবুল করবে তাদেরকে দিয়ে এমন বাহিনী গঠন করলেন না যারা মক্কা থেকে আসা কুরাইশদের কাফেলা আটকে দিত ও তা লুট করত যাতে এ গনীমত মুসলিমদের সাহায্য করে এবং কুরাইশদেরকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে রাখে এবং একই সাথে মুসলিমগণ তাদের প্রয়োজনীয় ও এর অধিক সম্পদ দখলে পেত?
৩. রাসূল (সা) কি দক্ষ ব্যাবসায়ী ছিলেন না এমনকি খাদিজা (রা)-র কি যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ ছিলনা যা ব্যবসার জন্য ব্যবহার করা যায়? আবু বকর (রা), উসমান (রা), আব্দুর রহমান বিন আ’উফ (রা) কি দক্ষ ব্যবসায়ী এবং সুহাইব আল-রুমী (রা) বিপুল সম্পদের অধিকারী ছিলেন না? এই রকম ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী থাকা সত্ত্বেও রাসূল (সা) কেন ওমর বিন খাত্তাব, হামযা, যুবাইর ইবনে আল আওয়াম এবং সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের মত তীব্রতাসম্পন্ন ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের দিয়ে একটি ব্রিগেড বা রেজিমেন্ট গঠন করলেন না যার সম্পূর্ণ ব্যায়ভার রাসূল (সা) করবেন যেটি কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে? এবং এটি করলে এক্ষেত্রে (সমাজের) দুর্বল ও নিপীরিতরা কি কুরাইশদের বিরুদ্ধে রাসূল (সা)-এর পাশে এসে দাড়াত না?
৩. রাসূল (সা) –এর কাছে উপরউল্লিখিত উপায় ও পন্থা ছাড়াও অন্যান্য পথ ও উপায় প্রয়োগ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন উনি গোত্রপতিদের কাছ থেকে নুসরাহ অনুসন্ধানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করে গিয়েছেন?
এ থেকে কি প্রতীয়মান হয় না (নুসরাহ তলবের) এই কাজটি চাওয়াটা আমাদের খেয়াল-খুশির বিষয় নয় বরং এটি তারীকাহ (পদ্ধতির) অংশ যা মেনে চলা ফরজ?
৪. (শিয়াবে আবু তালিবে) কেন রাসূলুল্লাহ (সা) তারা কোনো বাহিনী তৈরি করলেন না যারা কুরাইশের বিরুদ্ধে উঠে দাড়াবে? রাসূল (সা) ও তার সাহাবীগণ কি বনু হাশিমসহ কুরাইশ কর্তৃক বয়কট হননি? আর কেনই বা নবী (সা) ও তাঁর সাহাবীগণ বনু হাশিম গোত্রের সাথে জোট গঠন করে কুরাইশদের বিরুদ্ধে সামরিক যুদ্ধ ঘোষনা করলেন না?
একটি বিষয়কে উপলব্ধি করার আহ্বানে শেষ করব, আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দলের ভালোর জন্য অনেকেই নুসরাহ চাওয়ার ব্যাপারটা অলৌকিক মনে হওয়ায় বলে থাকেন. এটিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো পন্থায় অগ্রসর হওয়া উচিত! তাদেরকে বলব শুধু আবেগ ও আকাংখা থাকলে হয় না তার সাথে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)-র শরীয়া’হ-র নির্দেশের প্রয়োজন হয়। এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ যে যারা মুসলিমদের কল্যাণ চান তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) তাঁর শরীয়া’হর পথ ও মুসলিমদের কল্যাণের ব্যপারে আরো বেশি আগ্রহী।
রাসূল (সা) কথাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন-
নিশ্চয়ই আল্লাহ যা হারাম করেছেন সে ব্যপারে অগ্রসরতার ব্যপারে তাঁর আবেগ বা ঈর্ষাকাতরতা (আল-গাইরাহ) রয়েছে।
এবং তিনি (সা) বলেন,
সা’দ এর প্রতি ঈর্ষাকাতরতা কি তোমাদের বিস্মিত করেছে? আল্লাহ’র শপথ, আমি সা’দ হতে বেশি ঈর্ষাকাতর এবং আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি ঈর্ষাকাতর। [বুখারী]
তাই নুসরাহ চাওয়া ছাড়া আর যত পদ্ধতি আছে সবই হারাম বলে গন্য হবে এবং এই হুকুমটিকে কখনোই অবহেলা করা যাবে না কেননা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) হুদুদ থেকে সামান্য পরিমান বিচ্যুতির ব্যাপারে আল্লাহ অনেক সাবধান থাকতে বলেছেন।
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন-
সেগুলোই আল্লাহ’র দেয়া সীমারেখা, সুতরাং তা লংঘন করোনা। [বাকারাহ ২:২২৯]
যার শরী’আহ’র ব্যপারে অনেক আবেগ ও আশা-আকাংখা রয়েছে কিন্তু উক্ত বিষয়ে শরীয়া’হ বিষয়াদির (বিশ্লেষনের) ব্যপারে কোনো শৃংখলা নেই তার অবস্থা সেই ব্যাক্তির মত যে জানে না কিভাবে সাঁতার কাটতে হয় কিন্তু সে পানিতে ঝাঁপ দেয় যাতে করে সে ডুবন্ত ব্যাক্তিকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেও ডুবন্ত ব্যাক্তিটির সহযাত্রী হয়ে যায়।
আল-ওয়াঈ ম্যাগাজিন, সংখ্যা-৩১৮ থেকে অনুদিত
ভাষান্তরে – কাজী সাইফুল আলম