বাংলাদেশের রামপাল বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের কূটকৌশল

পুঁজিবাদের বেসরকারিকরণ চিন্তার কারণেই বিদ্যুৎ আজ সামর্থের বাইরে এবং অপ্রাপ্য, যা গণতন্ত্র দ্বারা সুরক্ষিত। গণতন্ত্রের দ্বারা পুঁজিবাদের বাস্তবায়নে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকটের জন্য সরকারই দায়ী। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কিছু ব্যক্তি মালিকানায়, দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দান করে, তারাই মূলত বিদ্যুৎ সম্পদের পূর্ণ সুবিদা পেয়ে থাকে আর অন্যদিকে সাধারণ জনগণ কষ্টের সম্মুখীন হয়।

বিদ্যুৎ হলো উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও বিপননের মতো ক্রমানুসারিক সমন্বিত এবং বহু স্তরে বিন্যস্ত এক প্রক্রিয়া যার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই প্রযুক্তি। তবে বর্তমান বাংলাদেশে এই প্রযুক্তিগত বিষয়টি বেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সঙ্কট সৃষ্টি হলে তা শিল্প, কৃষি, উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ইত্যাদি সবকিছুকেই বিপর্যয়ে নিক্ষেপ করে। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে এখন প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৬ ঘণ্টা বিদুৎ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো শোচনীয়।

বিদ্যুত চাহিদা নিয়ে পিডিবি এবং সরকার সব সময়ই লুকোচুরি করে। সঙ্গত কারণে মনে করা হয় যত বেশি লোডশেডিং তত বেশি সঙ্কট। সঙ্কটের আবর্তেই ঘুরছে বিদ্যুত খাত। একের পর এক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসছে কিন্তু এর কতটা সুফল পাচ্ছে জনগণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সঙ্কট উত্তরণে সরকার প্রথম থেকেই ভুলপথে হাঁটছে। সাশ্রয়ী বিদ্যুত উৎপাদনের বদলে কম সময়ে তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রর দিকে ঝোঁকায় বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আমাদের দেশের মানুষ কতটা মূল্য বৃদ্ধি সহ্য করতে পারবে তার কোন হিসেব না করেই বিদ্যুত প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি জীবনযাত্রার প্রত্যেকটি স্তরে প্রভাব ফেলে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি শুধু এককভাবে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল বাবদ খরচই বৃদ্ধি করে না। শিল্প এবং কৃষি উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করে। ইতোমধ্যে যার প্রভাব পড়েছে প্রাত্যহিক জীবনে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ চাহিদা ও ঘাটতি:

জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ৭ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৫ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। চাহিদা ও উৎপাদনে ব্যবধান ২০০০ মেগাওয়াট। দেশে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার বিতরণ লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ সঞ্চালন লাইনের অন্তত ৪০ শতাংশই জরাজীর্ণ। বাংলাদেশে মাত্র ৪০% (Access to Electricity) বাড়িতে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। বাকি ৬০% বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি।

৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র তাদের কর্মক্ষমতার ৮৫-৯০ শতাংশ উৎপাদন করতে পারছে। আর বাকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্যাপাসিটির তুলনায় আরও অনেক কম। যন্ত্রপাতির উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার কারণে ৩৩ শতাংশ কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। তার ওপর সিস্টেমলসের কারণে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে।

সঙ্কট নিরসনে অদূরদর্শী ও আত্মঘাতী প্রচেষ্টা:

সম্প্রতি ভাড়া ভিত্তিক ও বেসকারি উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা দেশের মানুষকে দ্রুত আংশিক সমাধান এনে দেবে হয়তো কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে দামে বেড়ে গরীবের নাগালের বাইরে চলে যাবে এই কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুত। এরই মধ্যে সরকারের দুর্নীতিপরায়ণ মানসিকতা ও ফায়দা লুটার রাজনীতির স্বীকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় নিয়ে আসা হয় বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ, যা আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবানে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ খাতে বিনিয়োগ করে। কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বেসরকারিভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চড়া মূল্যে সরকারকে কিনতে হচ্ছে যা ভোক্তাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ভোগে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে।

তারই ফলশ্রুতিতে সর্বশেষ ২৯ জানুয়ারি, ২০১২ বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথ অর্থায়নে প্রায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২৯ জানুয়ারি ২০১২ সালে। চুক্তির সমস্যা হচ্ছে প্রকল্পের অর্থ আসবে বিদেশী ঋণ থেকে ৭০ ভাগ, ভারত ১৫ ভাগ আর বাংলাদেশ ১৫ ভাগ। বিদেশী ঋনের সুদ টানা এবং পরিশোধ করার দায় দায়িত্ব বাংলাদেশের। অর্থ্যাৎ ভারতের বিনিয়োগ মাত্র ১৫ ভাগ। কিন্তু তারা মালিকানা পাচ্ছে ৫০ ভাগ। পুরো অর্ধেক। উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে পি ডি বি। বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে একটা ফর্মুলা অনুসারে। কী সে ফর্মুলা? যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১০৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এর দাম হবে ৫ টাকা ৯০ পয়সা এবং প্রতি টন ১৪৫ ডলার হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। অথচ দেশীয় ওরিয়ন গ্রুপের সাথে মাওয়া, খুলনার লবন চড়া এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা তে যে তিনটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যে চুক্তি হয়েছে পি ডি বির সাথে সেখানে সরকার মাওয়া থেকে ৪ টাকায় প্রতি ইউনিট এবং আনোয়ারা ও লবন চড়া থেকে ৩টাকা ৮০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনবে। সরকার এর মধ্যেই ১৪৫ ডলার করে রামপালের জন্য কয়লা আমদানির প্রস্তাব চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তার মানে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা দিয়ে পি ডি বি এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবো সেটা নিশ্চিত।

বিদ্যুতের দাম, কয়লার উৎস নির্ধারণ না করেই এবং কৃষি জমি নষ্ট ও পরিবেশগত প্রভাব বিষয়ক আপত্তি উপেক্ষা করেই এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সুন্দরবনের কোলঘেঁষে এই তাপবিদ্যুকেন্দ্র স্থাপনে একে সুন্দরবন ধ্বংসকারী ও জাতীয় স্বার্থের বিরোধী উদ্যোগ বলে নানাভাবে আপত্তি জানিয়ে এলেও সরকার তা কানে তোলার প্রয়োজন বোধ করেনি। ফলে অব্যাহত সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের মতো নানা সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ সরকারের এই ভূমিকাকেও এখন দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া ভারতপন্থী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে মানুষ। সব আপত্তি উপেক্ষা করে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রামপাল উপজেলার সাপমারি, কাটাখালি ও কৈগরদাসকাঠি মৌজায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে।

এভাবে জনগণের বিদ্যুৎ পাওয়ার অধিকারকে উপেক্ষা করে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ভারতের সাথে নির্লজ্জভাবে এ চুক্তি করেছে। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, আই.এম.এফ ও এ.ডি.বি – র পরামর্শে বিদ্যুৎ খাতকে বেসরকারিকরণের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়েছে সরকার। আর এর প্রমাণ মিলে, সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে দুর্বল করে রাখা, বেসরকারি বিনিয়োগে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থপন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি এই পরিকল্পনার বিষয়ে বিদ্যুৎ খাত বিশেষজ্ঞ ও পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ বলেন, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো বিদ্যুৎ ও একটি সেবা খাত। এ খাতে বেসরকারি নিয়ন্ত্রণ হলে তারা যে কোন সময় সরকার এবং জনগণকে জিম্মি করতে পারে। যা অতীতে হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে বেসরকারি খাতে না দিয়ে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো ও গ্যাস ভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিবেচনা:

বিদ্যুৎ খাতের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে নতুন উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত করার বিষয়ের সাথে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের প্রশ্ন জড়িত। বড় বড় এসব দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি প্রজেক্টের ঠিকাদারী পাওয়ার জন্য বিদেশি কোম্পানিগুলো লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে। এসব প্রজেক্ট দেয়া-নেয়াকে কেন্দ্র করে আছে কমিশনের লেন-দেনের ব্যাপার। এসব কমিশনের টাকার পরিমাণ কল্পনাতীত। রাজনীতিবিদ আমলাতন্ত্র প্রভৃতি নীতি নির্ধারকদের আসল আকর্ষণ হলো এই কমিশনের ভাগ পাওয়ার দিকে। সঙ্কটের আশু নিরসনের দিকে মনোযোগ দেয়ার প্রতি তাদের সময়ইবা কই সে বিষয়ে তাদের তেমন আগ্রহই বা ততোটা থাকবে কেন। কোনো দেশীয় কোম্পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কিছু প্রজেক্ট হাতে নিয়ে সমস্যার ভার কিছুটা লাঘবের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে, তাতেও কর্তাব্যক্তিরা অনাগ্রহী। কারণ তিনটি

এক. দেশীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এসব কাজ করালে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে যেভাবে কমিশন হাতে নেয়া যায়, এক্ষেত্রে সেটা পাওয়া যাবে না।

দুই. সঙ্কট যদি লাঘব হয় তাহলে গভীর সঙ্কটের অজুহাত কাজে লাগিয়ে বেশি দামে বিদেশিদেরকে প্রজেক্ট পাইয়ে দিয়ে কমিশনের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না।

তিন. সঙ্কট লাঘবের জন্য আশু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ থেকে তেমন কমিশন পাওয়ার সুযোগ কম।

বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি, শক্তি-সম্পদ প্রভৃতি কোনো সঙ্কটই অসমাধানযোগ্য নয়। সমাধানের উপায় আছে, পথ আছে। বাধা হলো মুষ্টিমেয় মানুষের ফায়দা লুটার লালসা। দুর্নীতি পরায়ণ এ সরকার ব্যবস্থায় ভয় দেখিয়ে বা নীতিবাক্য শুনিয়ে নিবৃত্ত করা যাবে না। লুটপাটের পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থাকে বদলে ফেলতে না পারলে এই বাধা দূর হবে না।

সঙ্কট উত্তরণের উপায়:

সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং নীতি না থাকায় – মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা সব সময়ই অদূরদর্শী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আর এ ধরণের প্রবণতা শুরু হয়েছে সেই ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংসের সময় থেকেই।

মুসলিম বিশ্বের বর্তমান ব্যর্থতা দিয়ে বোঝা যায় প্রাকৃতিক সম্পদের কী পর্যায়ের অব্যবস্থাপনা এখানে চলছে। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক দূরবস্থা মূলতঃ দুটি কারণে সৃষ্ট; প্রথমত: শাসকদের আদর্শিক শূণ্যতা, দ্বিতীয়ত: আদর্শিক শূণ্যতার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অদূরদর্শীতা।

যতদিন পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে এ দু’টি বিষয়ে পরিবর্তন না ঘটবে, ততদিন পর্যন্ত যত সম্পদই থাকুক না কেন আমরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উভয়ভাবেই সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও আধিপত্য বিস্তারকারী ভারতের শিকার হতে থাকবো। কোন শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তি না থাকলে কিসের উপর আমরা আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলবো? যখন কোন সুনির্দিষ্ট আদর্শিক ভিত অনুপস্থিত থাকে, তখন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় যেসব নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হয় তা পরস্পর সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য এবং এমতাবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে অর্থনীতিকে পরিচালনা করা কখনোই সম্ভব নয়।

মুসলিম হিসেবে আমরা প্রতিটি বিষয় কুরআন ও সুন্নাহ্’র আলোকে দেখতে বাধ্য। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিকাশের ব্যাপারেও একই কথা। রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত আছে যে, খেজুর গাছের কলম করা বিষয়ক কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপারে তিনি (সা) বলেছেন, “তোমাদের দৈনন্দিন জীবনের এসব বিষয় তোমরাই ভাল জান।” [আহমদ]

ইসলাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে এবং ইসলামিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করবে। ব্যবস্থা হিসাবে ইসলাম সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করবে, এরই কৌশল বা পদ্ধতি স্বরূপ গণ মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সম্পদ, কয়লা, তেল, গ্যাসের সুষম বন্টনের মাধ্যমে এর ব্যবহার নিশ্চিত করবে। এই সম্পদ না রাষ্ট্রীয় মালিকানাদীন না ব্যক্তি মালিকানাদীন। এর উপর জনগণের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকার খিলাফত সরকার নিশ্চিত করবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ইরশাদ করেন,

“তিন জিনিষের মাঝে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, চারণ ভূমি এবং আগুন।”

এই হাদীসের আবেদন উক্ত তিন বস্তুর মাঝেই সীমিত নয়, বরং এর আওতায় প্রত্যেক ঐ সমস্ত বস্তুও শামিল, যা সমাজের সকল মানুষের সমান ভাবে প্রয়োজন। একারনে ঐ সমস্ত যন্ত্রপাতি এবং উপকরনও এর মধ্যে শামীল, যা মানুষের নিত্য দিনের প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। যেমন-পানি উত্তোলনের পাম্প, পানি সরবরাহের পাইপ লাইন, পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট, বিদ্যুতের খুটি, সরবরাহ তার ইত্যাদি।

রাষ্ট্রের নাগরিকের এই মৌলিক চাহিদা পূরণে খলীফা বাধ্য। যদি খলীফা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে তার জন্যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা)। রাসূল (সা) বলেছেন: “সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে।” ইমাম (তথা খলীফা যিনি সর্বসাধারণের উপর শাসক হিসেবে নিয়োজিত তিনি)ও দায়িত্বশীল, তাকেও তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে।”

মা’কিল (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “এমন আমীর যার উপর মুসলিমদের শাসনভার অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ্‌ তাকে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।” (মুসলিম)

সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্রে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বা স্থিতিশীল রাখা কোন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিষয় নয়। এটি প্রত্যেক খলীফার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব। তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের এইসব মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করবেন।

আসিফ রহমান আতিক

Leave a Reply