ইসলামী রাষ্ট্র – পর্ব ২৮ (তাবুকের যুদ্ধ)

আল্লাহর রাসূল (সা)-এর কাছে, এ মর্মে সংবাদ পৌঁছে যে, মু’তার যুদ্ধে মুসলিম যোদ্ধাদের অসাধারণ রণকৌশলের জন্য রোমানদের বিশাল বাহিনীকে বাধ্যতামূলক সৈন্য প্রত্যাহার করতে হয়েছিল, সে অসহনীয় লজ্জাজনক স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য তারা আরব উপদ্বীপের উত্তরাংশে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে। এ সময় রোমান বাহিনীকে মুকাবিলা করার জন্য রাসূল (সা) নিজেই সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন, যেন রোমানদের এ উচ্চাভিলাসকে এমন ভাবে ধ্বংস করে দেয়া যায়, যাতে তারা ভবিষ্যতে আর কখনোই মুসলিমদের ভূমি আক্রমণ করা বা মুসলিমদের ব্যাপারে কোনরকম হস্তক্ষেপ করার দুঃসাহস না করে।

সময়টা ছিল গ্রীষ্মের শেষভাগ। অসহনীয় গরমের ফলে চারিদিকে চলছিল খরা আর অনাবৃষ্টি। এছাড়া, মদীনা থেকে আল-শামের দূরত্বও ছিল অনেক। যাত্রাপথ ছিল কঠিন আর দুরপাল্লার যাত্রার জন্য তখন অনূকুল সময়ও ছিল না। এ সমস্ত পরিস্থিতির বিবেচনায়, এ অভিযান ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আল্লাহর রাসূল (সা) এ সমস্ত বিষয় বিবেচনা করার পরে অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই শত্রুপক্ষকে মুকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর সিদ্ধান্তের কথা সাহাবাদের জানালেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিলেন। অন্যান্য অভিযান বা যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাসূল (সা) সাধারনতঃ তাঁর যাত্রার আসল উদ্দেশ্য গোপন রেখে, কৌশলগত দিক থেকে শত্রুকে ধোঁকা দেবার চেষ্টা করতেন।

কিন্তু, এ যাত্রায় তিনি (সা) পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে, প্রস্তুতির প্রথম দিন থেকেই রাসূল (সা) রোমান সীমান্তে তাদের শক্তিশালী বাহিনীকে মুকাবিলা করার ঘোষনা দিলেন। এ লক্ষ্যে, তিনি (সা) সকল গোত্রকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেবার আহবান জানালেন যেন যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদদের সংখ্যাকে যথা সম্ভব বৃদ্ধি করা যায়। তিনি (সা) বিত্তশালী মুসলিমদের নির্দেশ দিলেন যেন, আল্লাহ তাদেরকে অনুগ্রহ পূর্বক যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তারা উদার হস্তে দান করে। যাতে, মুসলিম সৈন্যদল অস্ত্র-সস্ত্রের দিক থেকে যথাসম্ভব শক্তিশালী হতে পারে। এছাড়া, রোমানদের বিরুদ্ধে এ জিহাদে অংশগ্রহন করার জন্য তিনি (সা) সাধারন ভাবে সবাইকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন। তাঁর এ আহবানে মুসলিমরা বিভিন্ন ভাবে সাড়া দিয়েছিল। যারা ইসলামের আলোকিত আহবান ও পথনির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে ইসলাম গ্রহন করেছিল, তারা আল্লাহর রাসুলের এ আহবানে প্রচণ্ড উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে সাড়া দিলো। এদের মধ্যে কেউ কেউ এতো দরিদ্র ছিল যে, তাদের যুদ্ধে যাবার জন্য একটি খচ্চরও ছিল না। আবার, অনেকে ছিল বিত্তশালী, যারা রাসূল (সা)-এর কাছে তাদের সমস্ত সম্পদ তুলে দিলো। এরা ছিল তারা, যারা স্বেচ্ছায় তাদের জীবনকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছিল, আর শহীদ হবার তীব্র আকাঙ্খাকে বুকে নিয়ে জিহাদে অংশ গ্রহন করেছিল। আর, যারা প্রাণভয়ে কিংবা দুনিয়ার ধনসম্পদের আকাঙ্খায় ইসলাম গ্রহন করেছিল (হয় তারা ভেবেছিল ইসলাম গ্রহণ না করলে তাদের ধনসম্পদ মুসলিমদের হস্তগত হয়ে যাবে, অথবা গণীমতের আশায় তারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল), তাদের কাছ থেকে তেমন কোন সাড়া পাওয়া গেল না। উপরন্তু, যুদ্ধে যোগদান না করার জন্য তারা নানারকম উছিলা খুঁজতে লাগল। তারা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা করে বলতে লাগলো, এই ভয়াবহ গরমে যদি আমরা এতো দূরে যুদ্ধ করতে যাই, তবে তীব্র গরমেই আমরা মারা পড়বো। এরা ছিল প্রকৃত অর্থে মুনাফিক। তারা একে অন্যকে বললো, “এই প্রচন্ড গরমে গিয়ে তোমরা যুদ্ধ করো না।”আল্লাহতায়ালা তাদের এই অসন্তোষ নিয়ে কোরআনের আয়াত নাযিল করলেন,

“তারা বলে, ‘এই গরমে তোমরা অগ্রসর হয়ো না।’ তাদেরকে বলে দাও (হে মুহাম্মদ), জাহান্নামের আগুন এর থেকেই অনেক বেশী উত্তপ্ত, যদি তারা তা বুঝতো।” [সুরা আত-তাওবাঃ ৮১]

আল্লাহর রাসূল (সা) যাদ্দ ইবন কায়িসকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বনু আসফারদের মুকাবিলা করতে চাও না, যাদ্দ?” উত্তরে যাদ্দ বললো, “আপনি যদি আমাকে যুদ্ধে যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ না করে পেছনে থাকার অনুমতি দেন তো ভালো। কারণ, সবাই জানে যে, আমি নারীদের প্রতি একটু বেশী আসক্ত। সতরাং, আমার ভয় হচ্ছে যে, রোমানদের সুন্দরী রমণীদের দেখে আমি আত্মসংবরণ করতে পারবো না।”একথা শোনার পর, রাসূল (সা) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর, আল্লাহতায়ালা যাদ্দ সম্পর্কে কোরআনে আয়াত নাযিল করে বললেন,

“আর, তাদের মধ্যে যে বলে, ‘আমাকে (জিহাদ থেকে) নিষ্কৃতি দিন এবং পরীক্ষা থেকে রেহাই দিন।’ (জেনে রাখো যে) অবশ্যই, তারা এক বিরাট পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে। নিশ্চয়ই, জাহান্নাম অবিশ্বাসীদের চারিদিক থেকে ঘিরে রাখবে।” [সুরা আত-তওবাঃ ৪৯]

মুনাফিকরা আল্লাহ ও রাসুলের সাথে তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় এখানেই থেমে থাকলো না, তারা অন্যদেরকেও যুদ্ধে না যাবার জন্য উৎসাহিত করতে লাগলো। এ অবস্থায়, রাসূল (সা) মুনাফিকদের কঠিন শাস্তি দিয়ে তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। যখন, আল্লাহর রাসুলের কাছে এ সংবাদ পৌঁছালো যে, কিছু মুনাফিক সুওয়াইলিম নামের ইহুদীর বাসায় বসে যুদ্ধের বিষয়ে মুসলিমদের মনে সন্দেহ ও দ্বিধাদ্বন্দ সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে, সাথে সাথে তিনি (সা) তাঁর সাহাবী তালহা ইবন ’উবাইদুল্লাহর নেতৃত্বে একদল লোক পাঠিয়ে উক্ত ইহুদীর বাড়ী পুড়িয়ে দেবার নির্দেশ দিলেন। আগুন লাগানোর পর, সব চক্রান্তকারীরা দ্রুত পালিয়ে গেল। এদের মধ্যে একজন পালাতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেললেও শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এ ঘটনা সমস্ত মুনাফিকদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হয়ে যায় এবং এ ধরনের কাজের পুনরাবৃত্তি করা থেকে তারা বিরত হয়।

সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (সা) এর এই প্রচন্ড দৃঢ়তা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টা জনসাধারনকে গভীর ভাবে নাড়া দিলো এবং শেষপর্যন্ত অসংখ্য মুসলিম যুদ্ধ অংশগ্রহন করার জন্য সমবেত হলো। মোট ৩০,০০০ মুসলিম এ জিহাদে অংশ গ্রহন করার জন্য আল্লাহর রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। এ সেনাবাহিনীর নামকরণ করা হয়েছিল আল-’উসরাহ(বিপদ অথবা সঙ্কট)। কারণ, তাদেরকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে, মদীনা থেকে বহুদূরে  রোমান সীমান্তে অপরাজেয় বাইজেন্টাইন বাহিনীকে মুকাবিলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এছাড়া, বিরাট এ সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য অনেক অর্থবলেরও প্রয়োজন ছিল। যাই হোক, সৈন্যবাহিনীকে একত্রিত করা হলো। আবু বকর (রা) এ বাহিনীকে যখন ইমামতি করছিলেন, সেই ফাঁকে আল্লাহর রাসূল (সা) মদীনাতে তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদন করছিলেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সাহাবাদের মদীনার শাসনকার্য পরিচালনার নির্দেশ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি (সা) এ সময় মুহাম্মদ ইবন মাসলামাহকে মদীনার দায়িত্বে নিযুক্ত করে এবং ’আলী ইবন আবু তালিবকে তাঁর স্ত্রীদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে তাদেরকে মদীনায় রেখে যান। এরপর, রাসূল (সা) সৈন্যবাহিনীর সাথে পুণরায় যোগ দেন এবং তাদের নেতৃত্ব দেন। এরপর, সৈন্যদলকে সামনে অগ্রসর হবার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশাল সৈন্যবাহিনী একযোগে তাদের শক্তিসামর্থ্য ও শৌর্য-বীর্য অতুলনীয় ভাবে প্রদর্শন করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আর, মদীনায় থেকে যাওয়া লোকেরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাদের নয়নাভিরাম এ যাত্রাকে উপভোগ করে। এমনকি, মদীনার মুসলিম নারীরাও তাদের বাড়ির ছাদে উঠে চমৎকার এ দৃশ্য উপভোগ করে এবং বিশাল এ বাহিনীকে বিদায় জানায়।

দ্বিতীয় কোন চিন্তা মনে স্থান না দিয়ে এবং তীব্র দাবদাহ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও রুক্ষ ধূলি-ধূসর প্রান্তরের সকল কষ্টকে অবলীলায় উপেক্ষা করে মুসলিম বাহিনী গন্তব্যের পানে বিরতিহীন ভাবে চলতে থাকে। মুসলিম সৈন্যদলের ক্লান্তিহীন দুঃসাহসী এ যাত্রা এবং অজেয়কে জয় করার দুর্দান্ত এ প্রচেষ্টা পেছনে পড়ে থাকা দলগুলোকে দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে, তারাও দ্রুতগতিতে এগিয়ে এসে মূলবাহিনীর সাথে যুক্ত হয় এবং তাবুকের প্রান্তরে যেখানে রোমান সৈন্যরা মুসলিমদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে ঘাঁটি গেড়ে ছিল সেদিকে এগিয়ে দৃঢ় চিত্তে যায়। যখন অগ্রসরমান এ মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা ও শক্তিসামর্থ্য সম্পর্কে রোমানরা অবগত হয়, সাথে সাথে মু’তার যুদ্ধের তিক্তস্মৃতি তাদের মানসপটে ভেসে উঠে। তারা স্মরণ করে, কিভাবে সংখ্যায় নগন্য ও অস্ত্রসস্ত্রের দিক থেকে অত্যন্ত দূর্বল হওয়া সত্তেও মুসলিমরা দুর্দান্ত সাহসিকতার সাথে বীরের মতো তাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। আর, আল্লাহর রাসূল (সা) স্বয়ং এবার তাঁর বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুনে তাদের মেরুদন্ডে ভয়ের শীতল স্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। সমস্ত অবস্থা পর্যবেক্ষন করে, তারা মুসলিমদের ভয়ে সাংঘাতিক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত আল-শামের অভ্যন্তরস্থ সরক্ষিত দূর্গে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। রোমান বাহিনীর এভাবে সম্পূর্ন রূপে পিছু হটে যাবার ফলে, রোমানদের আল-শামের সীমান্ত অঞ্চল অরক্ষিত হয়ে যায়। এ সংবাদ আল্লাহর রাসূল (সা)-এর কাছে পৌঁছানোর পর তিনি (সা)  বিরতীহীন ভাবে যাত্রা করে তাবুকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং কোনরকম যুদ্ধ ছাড়াই এ অঞ্চল জয় করে তাবুকের প্রান্তরে অবস্থান গ্রহন করেন। তিনি (সা) এ যাত্রায় রোমান বাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত না হবার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাবুক ও এর আশেপাশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দখল  নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। এ সময় যারা মুখোমুখি মুসলিমদেরকে মুকাবিলা করতে চেয়েছিল এবং বিচ্ছিন্ন ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তাদেরকে গুঁড়িয়ে  দেবার জন্য মুসলিম বাহিনী প্রায় একমাস তাবুকের প্রান্তরে অবস্থান করে। এ অঞ্চল জয় করার পর, রাসূল (সা) রোমানদের নিযুক্ত গর্ভনর ও এ অঞ্চলের বিভিন্ন গোত্রীয় নেতাদের কাছে তাঁর পক্ষ থেকে বার্তা পাঠান। তিনি (সা) আইলা’র গর্ভনর ইয়ুহানা ইবন রু’মাহ সহ আল-যাবরা এবং আদরাহ’র অধিবাসীদেরকে তাঁর কাছে আত্মসর্মপনের নিদের্শ দেন এবং তাঁর শাসন-কতৃর্ত্ব মেনে নিতে বলেন। তারা নিরুপায় হয়ে রাসূল (সা) এর সাথে শান্তিচুক্তি করে এবং জিযিয়া প্রদান করতে সম্মত হয়। অভিযানের উদ্দেশ্য পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবার পর আল্লাহর রাসূল (সা) মদীনায় ফিরে আসেন।

রাসূল (সা)-এর এ অনুপস্থিতির সুযোগে, মদীনার মুনাফিকরা মুসলিমদের মধ্যে মিথ্যা প্রচারনা চালায়, যার ফলে মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। তারা তু-আওয়ান এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে তাদের এ অসৎ ও বিভক্তিমূলক প্রচারনাকে শক্তিশালী করে। এ মসজিদটি ছিলো দিনের বেলায় মদীনা থেকে এক ঘন্টা দূরের পথ। যারা কোরআনের আয়াতকে বিকৃত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকতো এবং মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজের  মধ্যে বিষাক্ত কর্থাবার্তা ছড়িয়ে দিতো, এ মসজিদটিকে মূলতঃ তারাই আশ্রয় স্থল হিসাবে ব্যবহার করতো। আল্লাহর রাসূল (সা) যখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এ মসজিদের নির্মাতা রাসূল (সা)-কে অনুরোধ করেছিলেন এখানে নামাজ আদায় করার জন্য। কিন্তু, আল্লাহর রাসূল (সা) তাকে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার নিদের্শ দেন। ফিরে আসার পথে তিনি (সা) মুনাফিকদের এ সমস্ত জঘন্য কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হন এবং মসজিদ সম্পর্কে আসল তথ্য জানতে পারেন। সবকিছু শোনার পর, তিনি (সা) মসজিদটিকে সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংস করে পুড়িয়ে দেবার নিদের্শ দেন। এভাবেই, তিনি (সা) কোন দয়া প্রদশর্ন না করে, মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রকে কঠিন ভাবে মুকাবিলা করেছিলেন। এ শিক্ষা পাবার পর, তারা এতো আতঙ্কিত হয়েছিল যে, পরবর্তীতে আর কখনোই এ ধরনের কার্যকলাপ করার দুঃসাহস প্রদর্শন করেনি।

তাবুক অভিযানের সমাপ্তির পর সমস্ত আরব ভূ-খন্ডে মুসলিমদের একচ্ছত্র শাসন-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সমস্ত উপদ্বীপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো আল্লাহতায়ালার সুমহান বাণীর আলোকিত আহবান এবং শেষপর্যন্ত সমস্ত চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা করে আল্লাহর রাসূল (সা)-এ অঞ্চলে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শাসন-ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করেছিলেন। বস্তুত, এ অভিযানের পর, সমস্ত আরব ভূ-খন্ড থেকে দলে দলে বিভিন্ন গোত্রের মানুষ মুহাম্মদ (সা) কাছে আগমন করতে থাকে এবং তাঁকে বাই’য়াত দিয়ে আনুগত্যের শপথ করে ইসলাম গ্রহন করে।

Leave a Reply